এ শহর ছেড়ে আমি আজ কোথাও যাবো না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৬/২০০৮ - ৬:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আকাশ মেঘে ঢাকা। গুরুর গুরুর ডাক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এই নামলো বুঝি ঝুম বৃষ্টি। মাঠ ঘাট ছেয়ে গেল অঝোর ধারার বর্ষণে। আপনার কবি কবি মনটা মুহূর্তে নেচে উঠলো। কানের কাছে গুনগুনিয়ে গেল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে...
'এই যে ভাই, বৃষ্টির প্যাঁচাল অনেক পেড়েছেন। এইবার থামেন।'

কে বলে এ কথা। সামনে পিছে তাকাই। নাহ্, কেউ নেই। তবে কী আমি নিজের সাথেই কথা বলছি। বৃষ্টি তো আমি দারুণ ভালোবাসি। মনে আছে, যখন ইশকুলে পড়ি, বৃষ্টি নামা মাত্রই ক্লাস থেকে এক ছুটে বেরিয়ে মাঠে গেছি। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলে কতবার যে জ্বর বাঁধিয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই! তবে আজ বৃষ্টিকে কেন অসহ্য প্যাঁচাল বলছি?

আমি বলেছি, না অন্য কেউ? তাদের সমূহবাস্তবতা আমাকে দিয়ে বলালো এই কথা। এই তো আজকের ঘটনার কথাই বলি। সকালবেলা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। এখন মেঘ গুরগুর করছে। যেকোনো সময় নামতে পারে ঝমঝমিয়ে। কিন্তু এক পশলা বৃষ্টির তান্ডব ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে শহরজুড়ে। এই সাতসকালেই ভয়ানক জ্যাম। অফিসে যাওয়ার পথে বাংলামোটরেই পড়ে গেলাম বিশাল যানজটে। গাড়ি এক পা কী আগায়, তারপর ঠাঁয় বসে থাকে অনেকক্ষণ। ঘড়িতে তখন সকাল আটটা বাজতেই আরও কয়েক মিনিট বাকি। গাড়ির ড্রাইভার আবুল ভাই বললেন, এই হলো ঢাকা শহরের অবস্থা। একটুখানি বৃষ্টি হলেই খাইছে, কোথাও হাঁটু পানি জমে, কোথাও জ্যাম লেগে যায় দিনজুড়ে। নাহ্, আর থাকমু না ঢাকায়। গ্রামে যামু গা। আবুল ভাইয়ের কথা ছড়িয়ে পড়ে আমাদের অন্যান্য কলিগদের মাঝে। তাদের কথায়, ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য, কী ভাবে যে থাকে মানুষ! এই তো সেদিন দুপুরে কী তুমুল বৃষ্টি। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি গলিতে কোমর পানি। বোঝেন। কেউ কেউ জানায়, গ্রামে গেলে তাদের আর ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না। ফিরে আসার সময় কেমন দম আটকে আসে।

বিপুল জনসংখ্যার ভারে নু্ব্জ ঢাকা শহর। অন্তহীন সমস্যা নিয়ে তার দৈনন্দিন যাপন। সবাই কেমন এ শহর থেকে পালিয়ে যেতে চায়। কেউ ভালোবাসে না শহরটিকে। একবার কথা প্রসঙ্গে এই কথাটি তুলি দেশের একমাত্র পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা আসিফের সমীপে। দেখি, আসিফ ভাইও আর সবার মতো ঢাকা শহর নিয়ে হতাশ। সবাই শহরটিকে শুধুই তাদের জীবিকা অর্জনের জায়গা মনে করে। কেউ এই শহরটিকে মনে করে না আপন বাড়ি। কারোরই নাড়ি পোঁতা নেই যেন এই শহরের মাটিতে।

ঢাকা শহরের মাটিতে আসলেই আমাদের নাড়ি পোঁতা নেই। এইজন্যই আমাদের বুঝি মনে হয়, এই শহর থেকে পালিয়ে গেলেই বাঁচি।

সবাই পালিয়ে বাঁচলেও ঢাকা শহরকে আমার বেশ ভালো লাগে। নগরীর যাবতীয় ব্যস্ততা আমাকে সবসময় মুগ্ধ ও মুখর রাখে। এই যে গেল শুক্রবারে, বন্ধুর বিয়েতে গেছি গ্রামের বাড়ি। মাত্র দু'দিনের জন্য। কিন্তু হায়, একদিন যেতে না যেতেই অস্থির হয়ে পড়ি ঢাকা ফেরায়। শুধু যে এবার, তা নয়, প্রতিবারই ঈদের ছুটিতে আমাদের বন্ধুদের মাঝে আমিই সবার আগে ঢাকায় ফিরি। প্রতিবার ভার্সিটির সামার ভ্যাকেশনও আমি থেকে গেছি নিঃসঙ্গ হলে। বিকেলবেলা হয়তো নির্জন মল চত্বরে একা একা হেঁটে বেরিয়েও নির্মল আনন্দ পেয়েছি। কিংবা কখনো তুমুল জনস্রোতের ভিড়ে মিশে গিয়ে খুঁজেছি জীবনের ভিন্ন মানে।

জানি না, এই উপলদ্ধি বোধ আমার একার কী'না। তবে একদিন এই শহরে এসেছিলাম অপার কৌতুহল নিয়ে। পরে, এসেই বিস্ময় নিয়ে দেখেছি সবকিছু। চিনে নিতে চেয়েছি তা আপন করে। একটু একটু করে ভাব জমিয়েছি শহরটির সাথে। গড়তে চেয়েছি সখ্যতা। আজ কিছুটা সখ্যতা তো হয়েছেই। তাই এই শহর ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না আর।

পান্থ রহমান রেজা


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কেন যেন এখনো এই শহরের সাথে একাত্ম হতে পারিনি। হয়তো আমার ব্যর্থতা, হয়তো এই শহরের! ঢাকায় আছি প্রায় সাত বছর ধরে। কিন্তু কেন জানি না, এখনো মনে হয় না খুব আপন কোথাও আছি! অবশ্য এতকিছুর পরও এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বেশিদিন থাকতেও আবার ইচ্ছা করে না। কি অদ্ভুত ব্যাপার!

বেশ লিখেছেন। ভাল লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

এতকিছুর পরও এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বেশিদিন থাকতেও আবার ইচ্ছা করে না।

এটা আমার বন্ধু ও পরিচিত অনেকের মাঝেই দেখেছি। সত্যি অদ্ভুত ব্যাপার!

পান্থ রহমান রেজা

দ্রোহী এর ছবি

নাহ। আমি ঢাকা শহরকে অসম্ভব ভালবাসি। বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।


কি মাঝি? ডরাইলা?

রায়হান আবীর এর ছবি

আমিও যাবোনা।
---------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।