বাঁশিন্দা
ক
চলো KFCথেকে বার্গার নিয়ে যাই- হঠাত্ করেই শরমিতা বলে ওঠে।
গ্রেট আইডিয়া- রবিন সায় দেয়। রাতে ছবি দেখার পর খাওয়া যাবে। বলতে বলতেই গাড়িটা ঘুরিয়ে কেএফসির রাস্তায় নেয় সে। রেডিওতে চলা হিন্দি গানটা শেষ হবার আগেই গাড়ি ঘ্যাচ করে KFC'র সামনে এসে থামে।
সাবাস ! শরমিতা রবিনের পিঠ চাপড়িয়ে বাহবা দেয়। তুমি কীভাবে যে এতো ভালো ড্রাইভ করো!
রবিন হাসে। তুমি পাশে থাকলেই কেবল এমন চালাতে পারি।
আবার তেল দিচ্ছো-শরমিতা চোখ পাকায়!
রবিন দুষ্টুমীর হাসি হেসে শরমিতার দিকে মুখ বাড়াতেই শরমিতা ঝট করে মুখ সরিয়ে মাথা নাড়তে থাকে। উহু এখানে নয়। বাসায় চলো তারপর।
রবিন খানিকটা যেনো হতাশ হয়। তারপর বাংলা সিনেমার ভিলেনের মতো মখভঙ্গি করে বলে-আচ্ছা উসুল করে নেবোনে...
শরমিতা হাসে।
খ
গাড়িটা খানিক দূরে পার্ক করে ওরা দুজন নেমে আসে।KFC'র গেট দিয়ে অসংখ্য লোক ঢুকছে বেরোচ্ছে। দেখলে বোঝাই যায় না এরা তৃতীয় বিশ্বের ঝড়-বন্যা,ক্ষুধা,দারিদ্র, মঙ্গা পীড়িত, বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত একটি দেশের বাসিন্দা।
শরমিতা অবাক হয়। এতো ভিড়!
ভিড়তো হবেই আজ হলিডে না-রবিন বলে।
তাই বলে এতো! বাংলাদেশে না চালের কেজি ৫০ টাকা! লোকজন না খেয়ে আছে।
আছেতো কী হয়েছে! ওদের জন্য আমরা শখ-আহ্লাদ পূরণ করবো না নাকী!-রবিন খানিকটা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে ওঠে। শরমিতা কথা বাড়ায় না। সে জানে রবিন একবার রেগে গেলে তাকে থামানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় হঠাত্ বাঁশির শব্দে সে চমকে ওঠে। এখানে আবার বাঁশি এলো কোথা থেকে! শরমিতা খুবই অবাক হয়। ঘাড় ফেরাতেই সে বাঁশীর উৎস আবিষ্কার করে। গেটের একেবারে পাশেই পুরোনো ময়লা পাঞ্জাবী পরে ঝাকড়া চুলের এক যুবক আপন মনে বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে। শরমিতার ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আবার দাঁড়ালে কেনো?রবিন শরমিতার হাত ধরে টান দেয়।
গ
২০০ টাকা করে দুটো কর্নেল বার্গারের অর্ডার দিয়ে রবিন লাইনে দাঁড়ায়। শরমিতা এদিক ওদিক তাকায়। প্রচুর লোক। যে যার ইচ্ছামতো খাচ্ছে। শরমিতা খাবারের মেন্যুতে চোখ বোলায়। ১০০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ২০০টাকা ..এর নিচে কোনো দাম তার চোখে পড়ে না। আচ্ছা লোকগুলো কী বাংলাদেশের? শরমিতা ভাবতে থাকে। কারো চেহারায়ইতো কোনো অভাব, অনটন, অসুখীর ভাব নেই! তাহলে বাংলাদেশ কেনো এতো গরিব দেশ? শরমিতা ভেবে পায় না। সে তার এলাকা বারিধারায়ও দেখেছে মানুষের কোনো অভাব নেই। গাড়ি বদলিয়ে গাড়ি কিনছে, বাড়ি বদলিয়ে বাড়ি কিনছে, হিন্দী ছবির মতো করে ফ্যাশন বদলাচ্ছে, প্রতিদিন মৌজ-মাস্তি চলছেই! কীভাবে সম্ভব!পত্রপত্রিকায় নির্ঘাত মিথ্যা কথা লেখা হয়। শরমিতা ভাবে। যতো গরিব বলা হয় বাংলাদেশ আসলে ততো গরিব না। ভাবনাটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়। সে আপন মনেই হাসতে থাকে।
ঘ
কী, একা একা কার কথা ভেবে হাসছো! রবিনের ডাকে শরমিতার সম্বিত ফেরে। সাথেসাথেই নিজেকে সামলিয়ে নেয় ও। কার কথা আর ভাববো, তোমার লাইনে দঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে হাসছিলাম। ও আচ্ছা-রবিন যেন একটু মজা পায়। চলো, বার্গারের প্যাকেটটা শরমিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রবিন এগিয়ে যায়। তুমি এখানে একটু দাঁড়াও,আমি গাড়িটা বের করে নিয়ে আসছি-বাইরের সিঁড়িতে এসে রবিন শরমিতাকে বলে। শরমিতা মাথা নাড়ে।
বাঁশিয়ালা লোকটি এবার একটা দু:খের সুর ধরেছে- আমার গায়ে যতো দু:খ সয় বন্ধুয়ারে.......শরমিতার ভেতরটা আবার মোচড় দিয়ে ওঠে। সে বাঁশিয়ালার দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে সে একমনে বাঁশি বাজিয়েই যাচ্ছে। বাঁশি ধরা হাতটা খানিকটা কাঁপছে। মনে হয় কদিন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া হয়নি। লোকজন খাবারের প্যাকেট হাতে যাচ্ছে আসছে। কেউ আইসক্রিম খাচ্ছে, কারো হাতে কোকের বোতল, কেউ ঢেকুর তুলছে- লোকটার এতা সুন্দর বাঁশির সুরে কারো মনোযোগ নেই। শরমিতার কানের কাছেই কেউ একজন বললো- এইসব আউল ফাউল লোকজন কীভাবে যে KFC'র আশেপাশে আসে...বাঁশি বাজছে...শরমিতা তন্ময় হয়ে শুনছে...এতো অসাধারণ একজন শিল্পী এভাবে ভিক্ষা করছে!...কেউ যেনো মুচড়িয়ে মুচড়িয়ে শরমিতার ভেতরটা তছনছ করে দিচ্ছে...হাতের বার্গারের প্যাকেটটাকে শরমিতার বমি ভরা প্যাকেট বলে মনে হয়... বাঁশিয়ালা খানিকটা থামে, হাত পাতে...কেউ ফিরেও তাকায় না... শরমিতার চোখ ফেটে কান্না আসে...সে ব্যাগ হাতড়িয়ে টাকা খোঁজে...
ঙ
সিঁড়ির সামনে গাড়িটা ঘ্যাচ করে থামে। কই এসো-রবিন হাঁক ছাড়ে। শরমিতা আতিপাতি ব্যাগ হাতড়াচ্ছে...কই তাড়াতাড়িকরো... ঝড়ের দমকা বাতাস শুরু হয়েছে ...রবিনের গাড়ির পেছনের গাড়িগুলো হর্ন বাজাতে থাকে...শরমিতা তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দিকে এগোয়...ব্যাগের ভেতর আঙ্গুলে টাকার একটা নোট বাধে তার...তাড়াতাড়ি ...শরমিতা গাড়িতে উঠে জানালা দিয়ে টাকাটা বের করতে না করতেই বাঁশিয়ালা মাথা উঁচু করে তাকায়...শরমিতার বুকটা ধ্বক করে ওঠে...১০ বছর আগের মতোই রঞ্জু একদৃষ্টিতে শরমিতার চলে যাওয়া দেখে...
১৩/০৬/০৮
মন্তব্য
ভালো হয়েছে চালিয়ে যান। তবে খুব দ্রুত শেষ করে দিলেন মনে হলো।
-------------------------------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ডুয়াল পোস্টিঙের কারণে পোস্টটিকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে অতিথি লেখকের নিজের ব্লগে প্রকাশ করা হলো।
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
ভাল হয়েছে। শেষের ধাক্কাটাও চমৎকার। তবে বাঁশিওয়ালার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাঝে 'যুবক' শব্দ ব্যবহার করে পাঠককে আগেই এরকম একটা কিছুর আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। এটা না হলে হয়ত আরো ভাল হত। আমার নিজের কাছে যা মনে হয়েছে তাই বললাম।
~ ফেরারী ফেরদৌস
নতুন মন্তব্য করুন