শহীদুল্লাহ কায়সারের “সংশপ্তক”-এর গল্প এদেশে সবার জানা। যারা বই পড়েননি তারা টেলিভিশনে ধারাবাহিক নাটক হিসেবে দেখেছেন। তবু গল্পের একটা অংশ আবার বলছি।
কুমারী হুরমতী সন্তানের জন্ম দিলে সমাজপতিরা তার এই ব্যভিচারের (!) বিচারের ব্যবস্থা করেন। ধর্মগুরুর সহায়তায় বিচারক তার কপালে ছ্যাঁকা দেবার রায় দেন এবং তা সাথে সাথে কার্যকরও করা হয়। যে সমাজপতি মূল বিচারকের আসনে তার ধর্ষনের ফলেই হুরমতী গর্ভবতী হয়। একজন নারী যে কোন পুরুষের ভূমিকা ছাড়া গর্ভধারণ করতে পারে না এই সত্য বিচারে উপস্থিত কারো মনে হয় না। অথবা মনে হলেও কেউ উচ্চারণ করার সাহস পাননা। কারণ, কি বিচার হবে, কি রায় হবে, কে শাস্তি পাবে আর কে পার পেয়ে যাবে সবইতো সবার জানা। দুর্বীনিত লেকু যখন এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেন তখন ধামাধরা রমজান গং লাফিয়ে ওঠে তাকে শায়েস্তা করার জন্য। আর চতুর বিচারক বলে ওঠেন, “আমরা কি আজকে খাব না? প্রায় তো আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেল!”
এই দফা আইয়্যামে জলপাইয়্যাত শুরু হবার পর থেকে তার ঠিক পূর্ববর্তী সরকারের নাড়ি-ভূঁড়ি ঘাঁটার ব্যবস্থা করা হয়। লক্ষ লক্ষ দূর্নীতির ইতিহাস আবিষ্কৃত হতে থাকে। তৎকালীন রাজনৈতিক রাঘব-বোয়ালরা একে একে ধরা পড়তে থাকেন। ঝট-পট বিচার হয়ে তাদের লম্বা লম্বা মেয়াদে কারাদন্ডও হতে থাকে। মোটামুটি বাদ পড়েননা তার পূর্ববর্তীগণও। শাসককূল গলা ফাটিয়ে বলতে থাকে সকল দূর্নীতির, অন্যায়ের বিচার হবে। এতদিন পর জনগণের হাতে ক্ষমতা এসেছে (!), এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তারা যে কথাগুলো কখনোই বলেননা তার কিছু হলঃ
১। সাঁইত্রিশ বৎসরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে আইয়্যামে জলপাইয়্যাত চলেছে। কিন্তু সেসময়ের অন্যায়-দূর্নীতি নিয়ে কিছু বলা যাবেনা। তার ফলে যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ ও দূর্নীতির চর্চা শুরু হয়েছে তাও বলা যাবে না।
২। গতকাল মাঠে থাকা রাজনীতিবিদ আজ নির্বাচিত হয়ে এমপি-মন্ত্রী হন। মন্ত্রণালয়ের (আসলে সচিবালয়ের) অন্ধি-সন্ধি, প্রজেক্ট আর বরাদ্দের মার-প্যাঁচ তার জানার কথা না। মহাসমূদ্র চুরির ব্যবস্থা করে সচিব সাহেব আর তার দল-বল মন্ত্রীকে দেয়ে ফাইল পাশ করান। মন্ত্রী মশায় একটা ভাগ পান ঠিকই কিন্তু সিংহভাগ চলে যায় সচিব সাহেব আর তার দল-বলের পকেটে। মেয়াদ শেষে মন্ত্রী মশায়ের লম্বা মেয়াদে কারাদন্ড হয় কিন্তু চুরির হোতাদের নামও কোথাও উচ্চারিত হয় না।
প্রায় দুই বৎসর পরেও যখন এসব কথা কর্তারা উচ্চারণ না করায় এখন আপনি যদি এসব কথা বলেন তাহলে কর্তারা জীভ কেটে বলবেন, “আরে আমরা কি খালি এসব বিচারই করবো নাকি? আমাদের না নির্বাচন করার কথা!”
প্রিয় পাঠক, এসমস্ত উল্টা-পাল্টা কথা বলার বা লেখার দরুন শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিণতিটা কি হয়েছিলো মনে আছে তো?
(আড্ডাবাজের পলিটিক্যাল জোকের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখার অবতারণা। ইচ্ছে ছিল মন্তব্য করার, কিন্তু নাম নিবন্ধন করার পর থেকে দেখতে পাচ্ছি নিজ নামে লগ-ইন করতে পারছিনা, মন্তব্যও করতে পারছিনা। তাই এই স্বতন্ত্র লেখা।)
ষষ্ঠ পান্ডব
মন্তব্য
সচলায়তনে স্বাগতম। আমি এখনো অতিথি সদস্য। তবু সবার পক্ষ থেকে আমিই জানিয়ে দিলাম।
লিখতে থাকেন। আমরাও পড়তে থাকি।
--------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পৃথিবীতে কেউই ফেরেশতা না; তাই বর্তমান সরকার দু'বছরে সব ঠিক করে ফেলবে আর নিজেরা ধোয়া তুলসী পাতা হয়েই বিদায় নেবে এ প্রত্যাশা অমূলক।
যদি আমলাদের বিচারের কথা বলেন তাহলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
রাফি
- হ।
খাসা হইছে। চলুক আপনের এজাতীয় লেখা পাণ্ডু মিয়া।
আইয়ামে জলপাইয়্যাতের এই যুগে তাই লোকে বলে,
বোয়াল টোয়াল ভাজা টেংরা খায়,
আর চুনো-পুঁটিরা খায় পোঙ্গামারা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনেপরে অনেক ছোটবেলায় শহীদুল্লাহ কায়সারের “সংশপ্তক” দেখেছিলাম বিটিভিতে, অন্য কোনও সিন মনে না থাকলেও অনেক ভয় পাওয়ার জন্য ফেরদৌসি মজুমদারের ঐ ছ্যাকার সিনটা মনে আছে। রাজনীতি বুঝিনা তাই আর আপনার অন্য কথায় অংশ নিতে পারছিনা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এইটাই নিয়ম, অপরাধ একই কিন্তু কেউ জেল খাটে, কারো মেরুদন্ডের হাড় ভাঙ্গে, কারো বামপাশ অবশ হয়ে যায়, কেউ পলাতক থাকে আর কেউ দেশ জনগন ফেলে বিদেশে বসে স্যান্ডউইচ খায়।
এনালগীটা বেশ ভালো হয়েছে।
আবারো এমন কিছু দেখতে চাই।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন