কাজলরেখা সিনড্রোম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ২৯/০৬/২০০৮ - ১০:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“কাজলরেখা” ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন কর্তৃক সঙ্কলিত “মৈমনসিংহ গীতিকা”র অন্যতম জনপ্রিয় আখ্যান। কাজলরেখার গল্পটি কম-বেশী সবার জানা। তবুও পরবর্তী আলোচনার সুবিধার্থে সংক্ষেপে তা একবার বলে নিচ্ছি।

“ভাটি দেশের সওদাগর ধনেশ্বর জুয়া খে...“কাজলরেখা” ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন কর্তৃক সঙ্কলিত “মৈমনসিংহ গীতিকা”র অন্যতম জনপ্রিয় আখ্যান। কাজলরেখার গল্পটি কম-বেশী সবার জানা। তবুও পরবর্তী আলোচনার সুবিধার্থে সংক্ষেপে তা একবার বলে নিচ্ছি।

“ভাটি দেশের সওদাগর ধনেশ্বর জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হলে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শরণাপন্ন হন ধর্মমতী শুকপাখীর। শুকপাখীর পরামর্শে ধনেশ্বর হীরার আংটি বিক্রি করে পুনরায় বাণিজ্যে যান। এবার ভাগ্যলক্ষী তার উপর সদয় হন। তারপর ধনেশ্বর তার বিবাহযোগ্যা কন্যা কাজলরেখার বিবাহের জন্য পরামর্শ চাইলে শুক পরামর্শ দেন চম্পানগরের হীরাধন সাধুর অভিশপ্ত রাজকুমার সূঁচরাজার সাথে বিবাহ দেবার।

সূঁচরাজা সর্বাঙ্গে সূঁচগ্রথিত অবস্থায় বনবাসী। ধনেশ্বর ব্যাপারটিকে ললাট-লিখন বিবেচনা করে কাজলরেখাকে সূঁচরাজার কাছে বনবাসে রেখে আসেন। এবার কাজলরেখা সূঁচরাজার সর্বাঙ্গ থেকে একে একে সূঁচ তুলে নেন। শুধু দুই চোখের দুটো সূঁচ বাকী থাকে। এই দুটো সুঁচ তুলে একটি বিশেষ পাতার রস লাগালেই সূঁচরাজা জীবন ও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। নবজীবনপ্রাপ্ত কুমার তখন ধর্মমতে প্রানদায়ীনিকে বিবাহ করতে বাধ্য হবেন।

এসময় কাজলরেখা নিজেকে আসন্ন বিবাহের উপযুক্ত করে তুলতে চোখের সূঁচ না তুলেই স্নান করতে যান। স্নানের পূর্বাহ্নে এক দাস-ব্যবসায়ী একজন দাসী নিয়ে আসেন। দাস-ব্যবসায়ীর আহ্বানে কাজলরেখা তার হাতের কঙ্কনের বিনিময়ে দাসীটি ক্রয় করেন। ক্রীত দাসীর নতুন নামকরণ করা হয় কঙ্কন-দাসী। কাজলরেখা কঙ্কন-দাসীকে সূঁচরাজার বিবরন এবং তার নিরাময়ের রহস্য জানিয়ে স্নান করতে যান। ইতোমধ্যে কঙ্কন-দাসী কাজলরেখা বর্ণিত পদ্ধতিতে সূঁচরাজাকে নিরাময় করে তোলে। সত্যবদ্ধ সূঁচরাজা তখন কঙ্কন-দাসীকে বিবাহ করতে বাধ্য হন। স্নানশেষে কাজলরেখা ফিরে এসে দেখেন তার যা সর্বনাশ হবার তা হয়ে গেছে। কঙ্কন-দাসী সূঁচরাজার কাছে কাজলরেখাকেই কঙ্কন-দাসীরূপে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিরূপায় কাজলরেখা নিশ্চুপ থাকেন।

সূঁচরাজা স্ত্রী এবং দাসীসহ দেশে ফিরে আসেন। তার রাজ্যাভিষেক হয়। কঙ্কন-দাসী রানীরূপে আর কাজলরেখা দাসীরূপে দিন অতিবাহিত করতে থাকেন। প্রথম দর্শন থেকেই সূঁচরাজা কাজলরেখার রূপমুগ্ধ ছিলেন। এমন সময় চম্পানগরে আসেন সূঁচরাজার এক বন্ধু। বন্ধুটিও কাজলরেখার রূপে মুগ্ধ। বন্ধুকে চমৎকৃত করতে সূঁচরাজা আয়োজন করলেন এক অভিনব প্রদর্শনীর। প্রদর্শনীতে রানী আর কাজলরেখা উপস্থাপন করলেন তাদের রান্না, সূঁচীকর্ম এবং পটচিত্র।

সুশিক্ষিতা কাজলরেখার কাছে অশিক্ষিতা রানীর সকল বিষয়ে পরাজয় ঘটল। বন্ধুটি এবার কাজলরেখার গুণমুগ্ধও হলেন। রূপে-গুণে মুগ্ধ বন্ধুটি এবার কাজলরেখার কৌলিণ্যে নিঃসন্দেহ হয়ে কাজলরেখার পাণিপ্রার্থনা করলেন। কিন্তু অন্যপূর্বা কাজলরেখা তাকে বিবাহ করতে অক্ষম। একইসাথে তিনি পরিচয়ের এই রহস্যও জানাতে অক্ষম। নাছোড়বান্দা বন্ধুটি কাজলরেখাকে অপহরণ করে নদী পথে রওয়ানা হন। কাজলরেখা তার সতীত্বের দোহাই দিয়ে নদীর সাহায্য প্রার্থনা করেন। নদীতে চড়া পরে নৌকা আটকে গেলে কাজলরেখা দ্বীপবাসিনী হন।

কাজলরেখার ভাই রত্নেশ্বর ইতোমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বাণিজ্যে বের হন। পথিমধ্যে দ্বীপবাসিনী কাজলরেখাকে দেখে তাকে না চিনতে পেরে তার পাণিপ্রার্থনা করেন। কাজলরেখা তাকে রত্নেশ্বরের দেশে নিয়ে গিয়ে প্রথমে উন্মূক্ত সভায় শুকপাখীর কাছ থেকে তার জীবন-বৃত্তান্ত শোনানোর আহ্বান জানান। উক্ত সভার সংবাদ পেয়ে সূঁচরাজাও উপস্থিত হন।

শুকপাখী কাজলরেখা-বৃত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণনা করে শূন্যে মিলিয়ে যায়। লজ্জিত রত্নেশ্বর বোনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অনুতপ্ত সূঁচরাজাও কাজলরেখার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে তার পাণিপ্রার্থনা করেন।

এবার স্ত্রী কাজলরেখাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার আগে সূঁচরাজা তার পূর্বতন রানীর (কঙ্কন-দাসী) সাথে এক প্রতারণার আশ্রয় নেন। প্রাসাদে ফিরে সূঁচরাজা কঙ্কন-দাসীকে বলেন যে পূর্বোক্ত বন্ধুটি সদলবলে প্রাসাদ আক্রমণ করতে আসছে তাই পরিখাতে ধন-রত্নসহ আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় নেই। ধন-রত্নসহ কঙ্কন-দাসী পরিখায় আশ্রয় নিলে রাজার ইঙ্গিতে তার লোক-জন কঙ্কন-দাসীকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করে। এবার সূঁচরাজা কাজলরেখাকে সসম্মানে তার দেশে নিয়ে আসেন। অতঃপর তারা সুখে দিন কাটাতে লাগলেন।“

“কাজলরেখা” আখ্যানের এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর চরিত্রদের নাম। প্রত্যেকটি নাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চরিত্রের ধারক। যেমন, ধনেশ্বর, রত্নেশ্বর, কঙ্কন-দাসী, হীরাধন, সূঁচরাজা এমনকি কাজলরেখা। নামগুলো বোধগম্য এবং ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। মৈমনসিংহ গীতিকার আর কোন আখ্যানে চরিত্রদের এমন অর্থবহ নাম দেখা যায় না।

শুকপাখীকে যদি দৈবত্ব, অলৌকিকত্ব বা সীমিত অর্থে ধর্মের প্রতীক হিসাবে দেখি, তাহলে দেখতে পাই তার ভূমিকা শুধু প্রয়োজনের সময়। বিপদে সহায়তা করা ছাড়া তার আর কোন ভূমিকা নেই। যে মুহূর্তে তার প্রয়োজন শেষ, সেই মুহূর্তে সে শূণ্যে মিলিয়ে গেছে। অর্থাৎ আখ্যান-রচয়িতা ধর্মকে শুধু পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়াররূপেই ব্যবহার করেছেন।

সূঁচরাজার অভিশপ্ত জীবনে দেবতাদের অভিশাপ থাকলেও তার শাপমুক্তির প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি লৌকিক। সূঁচ তুলে নেয়া এবং তারপর ভেষজ চিকিৎসাতে কোন অলৌকিকত্ব নেই। আখ্যান-রচয়িতা এখানে পুরোপুরি বস্তুবাদী, আকাশের মুখাপেক্ষী নন।

মৈমনসিংহ গীতিকার সব আখ্যানই ট্রাজিক আপাত ব্যতিক্রম শুধু “কাজলরেখা”। আসলে কাজলরেখাও ট্রাজিক যদি তা কঙ্কন-দাসীর প্রেক্ষিত থেকে দেখি। মানুষ দাস হয়ে জন্মায় না, পরিবেশ-পরিস্থিতি তাকে দাসত্বে বাধ্য করে। তাই সুযোগ পেলে সে যদি তার দাসত্বকে মোচনের চেষ্টা করে তাকে অন্যায় বলা যায়না। কঙ্কন-দাসীর সুযোগ গ্রহন তাই অন্যায় নয়। কঙ্কন-দাসীর করুন পরিনতি ঐ সময়কার বাস্তবতা, কিন্তু তা কি ট্রাজিক নয়? তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতে আবদ্ধ আখ্যান-রচয়িতা ভবিষ্যতের পাঠকদের কাছে তাই কৌশলে ট্রাজেডিকে উপস্থাপন করেন। দেবতা আর রাজা-রানীদের গল্পের বাইরে নিম্নবর্গের মানুষের আশা আর বঞ্চনার গল্প “ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী”র শত শত বৎসর আগেই এভাবে এদেশে রচয়িত হয়েছে।

মৈমনসিংহ গীতিকা উজান অঞ্চলে প্রাপ্ত আখ্যান হলেও এই গল্পটি ভাটি অঞ্চলের। ভাটির সাথে উজানের ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং ভাটি সম্পর্কে উজানের মানুষের অসীম আগ্রহ এধরনের গল্পের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি নিজ সমাজের বাস্তবতাকে অন্য সমাজের প্রেক্ষিতে বা ভিন্ন আঙ্গিকে দেখানোর চেষ্টার আধুনিক প্রচেষ্টাও আছে।

“কাজলরেখা” আখ্যানের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে পরিশ্রমের শেষ মুহূর্তে ক্রেডিট অন্যের ঘরে চলে যাওয়ার পরিহাস। এখনকার প্রবাদে যাকে বলে “নেপোয় মারে দৈ”। নেপোর ঐতিহাসিক এবং অক্ষয় উপস্থিতি প্রবাদটি জন্মের বহু আগেই জন্ম দেয় “কাজলরেখা সিনড্রোম” -এর। কাজলরেখার আবেদন তাই চিরায়ত। এটি নতুন নতুন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনেরও দাবী রাখে। সম্ভাব্য ফললাভ থেকে আমাদের বার বার বঞ্চিত হবার ইতিহাসকে পরিবর্তনের জন্য “কাজলরেখা সিনড্রোম”-এর সতর্ক অধ্যয়ণও প্রয়োজন।

বিঃদ্রঃ এই লেখাটি যদি সচলায়তনে প্রকাশিত হয়, তাহলে পূর্বাহ্নেই সকল পাঠক ও মন্তব্যকারীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি তাদেরকে ধণ্যবাদ জানানো বা তাদের মন্তব্যের উত্তর দেবার অসামর্থতার জন্য। কারন নিবন্ধনের পর থেকে দেখছি নিজ নামে আমি লগ-ইন করতে বা মন্তব্য পোষ্ট করতে অক্ষম। যদিও নিবন্ধনের আগে নিজ নামে মন্তব্য পোষ্ট করতে পারতাম। সমস্যাটির সমাধানের জন্য প্রিয় মডারেটরদের সুপরামর্শ আশা করছি।

ষষ্ঠ পান্ডব


মন্তব্য

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ইন্টারেসটিং তো কাহিনীটা, ময়মনসিংহ শহরের সাথেকি এর কোনও যোগ আছে? ময়মনসিংহ আমার নানী বাড়ি হাসি
“মৈমনসিংহ গীতিকা"র কথা আগে কখনও শুনিনি, ধন্যবাদ জানানোর জন্য।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

কীর্তিনাশা এর ছবি

পান্ডব ভাই ভালো লিখেছেন। চালিয়ে যান।

------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায়, খুব সম্ভবত ক্লাস এইটের বাংলা সহপাঠে এই গল্পটার খন্ডাংশ পড়েছিলাম। খূব একটা ভাল লাগে নি তখন।
এই বয়সে পড়ে মনে হল পাঠকের পুনর্জন্ম হয়েছে।

দারুণ লেগেছে।

রাফি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কাজল রেখার গল্প ছোটোবেলায় পড়ি চয়নিকা নামের পাঠ্যপুস্তকে। বড়বেলায় জানি দীনেশবাবুর বরাতে।
আপনার পর্যবেক্ষণ ভাল লাগলো। আমাদের আগের সমাজের চৈতন্য এ গল্পটায় অনেকটা ধরা পড়ে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলা ভাষার একটা পুরোনো গল্প বর্ণনা করে তার বিশ্লেষণে যে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, তাতে যারপরনাই চমৎকৃত হয়েছি। চালিয়ে যান!

~ ফেরারী ফেরদৌস

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল... গল্পটার খন্ডাঙশ আগে পড়া ছিল .. আপনার কল্যানে এখন আবার পড়া গেল। অনেক ধন্যবাদ।:)
-ইনান

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মৈমনসিংহ গীতিকা উজান অঞ্চলে প্রাপ্ত আখ্যান হলেও এই গল্পটি ভাটি অঞ্চলের।

যদি আমার ভুল না হয়ে থাকা, ময়মনসিংহ গীতিকা'র আখ্যান গুলো বৃহত্ত্র ময়মসিংহের কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা অঞ্চলকে ঘিরেই । এই অঞ্চল আদতে ভাটি বলেই বিবেচ্য ।

ভালো লাগলো আপনার তুলনামুলক আলোচনা । গল্প তো আসলে সেই একই । সময়ে কেবল রূপকগুলো বদলায় ।

আরো লিখুন ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অনেক ছোটবেলায় বিটিভিতে 'হীরামন' দেখাতো।
তখন এই কাজলরেখা, কমলা সুন্দরী, ভেলুয়া সুন্দরী, নদের চাঁদ... খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। গল্পটা আবার পড়ে মনে হলো ভালোলাগাটা একইরকম আছে।
অনেক পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সেইসাথে ভালো লাগলো আপনার তীক্ষ্ন দৃষ্টিভঙ্গিও।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব...
ভালো লাগলো আপনার সুন্দর বিশ্লেষণ। কাজল রেখা নিয়ে নতুন করে ভাবনার খোড়াক দিলেন। ধন্যবাদ।
আপনার আরো লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

তবে সবচেয়ে বেশি ভাবনার খোড়াক বুঝি পেলাম মুমুর মন্তব্য পড়ে। এই তাইলে অবস্থা?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আগেকার সব লোককাহিনীর কাহিনীর বিন্যাস একই সুরের। গল্প বলার যুগ প্রায় শেষ , শুরু হয়েছে না-বলে গল্প বলার যুগ।

আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

শুভাশীষ দাশ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প বলে গল্প বলার যুগ শেষ হয়নি, বরং এখন প্রতিদিন নতুন নতুন কায়দায় আজব আজব সব গল্প বানানো হচ্ছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে এই মুহূর্তে টিভি খুলে একটা নিউজ চ্যানেল দেখুন।

লোক কাহিনীর বিন্যাস, চরিত্র, ঘটনার বিস্তার, নামকরণ ইত্যাদি প্রত্যেকটা বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এই গল্পগুলো এত বৎসর টিকে থাকার কারণগুলোও ওই বিষয়গুলোতে নিহিত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা পাণ্ডব,

ঠিক আছে। আপনার কথা সহি। টিভি আর সচলদের হাজার হাজার গল্পের কথা বেবাক ভুল মেরে গেছিলাম।

আর একখান কথা - আপনেরে কেরমে মুখবহিতে বান্ধব করি। আমারে পাবেন Subasish Das (Baton Rouge) দিলে। যদি দেন তায়লে আর কি।

শুভাশীষ দাশ

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ! খুব ভালো লেগেছে লেখাটা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। মেম্বরসাব এতদিন পর গরিবের এই পোস্টে পদার্পণ করলেন!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

আগে পড়ি নি লেখাটা, গল্প পড়ার আনন্দ পেলাম এদ্দিনে (সাথে মুমুয়িত কমেন্ট হাসি )।

এই গল্পটা ছোটোবেলায় অমর চিত্র কথায় পরেছিলাম, মনে পড়লো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ! অমর চিত্রকথার কথা আমারও মনে আছে - সুরদাস, অঙ্গুলীমাল আরো কত কি! অনেকদিন হয় আপনার কমিক স্ট্রীপ পাচ্ছিনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কাঁকন / কঙ্কন দাসী এর ছবি

আমার কাছেও গল্পটিকে ট্রাজেডি মনে হয়। আমরা যারা চিরবঞ্চিত তাদেরই প্রতিনিধি যেন কঙ্কন দাসী অথবা আমি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে ধন্যবাদ।

সোহেল ইমাম এর ছবি

সুঁচরাজার কাহিনিটা সেই ছোট বেলায় পড়েছিলাম, বোধহয় টিভিতেও দেখেছিলাম। স্মৃতিটা আবার উসকে উঠলো। মুগ্ধতা নিয়ে লেখাটা পড়লাম। সচলায়তনে ফোকলোর, নৃতত্ত্ব এই ক্যাটেগরি গুলো সংযোজিত হওয়া উচিত। তাহলে এই রকম চমৎকার লেখা গুলো আগ্রহীরা সহজেই খুঁজে পেতো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

হিমু এর ছবি

“কাজলরেখা” আখ্যানের এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর চরিত্রদের নাম। প্রত্যেকটি নাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চরিত্রের ধারক। যেমন, ধনেশ্বর, রত্নেশ্বর, কঙ্কন-দাসী, হীরাধন, সূঁচরাজা এমনকি কাজলরেখা। নামগুলো বোধগম্য এবং ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

এমন নামকরণের জন্যে একটা ইংরেজি শব্দ আছে, Charactonymy। বাংলায় বলা যেতে পারে স্বভাবনামকরণ। পুরনো গাথা-কাব্য-গীতিকায় এগুলো বোধহয় বেশ প্রচলিত ছিলো (মহাভারতের চরিত্রগুলো যেমন, যুধিষ্ঠির বা দুর্যোধন, পাণ্ডু বা শকুনি)। ইংরেজিতে ব্যাপারটা অনেক পরে এসেছে সম্ভবত, ডিকেন্সের হাত ধরে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রাজশেখর বসু এই কৌশলটা বেশ ব্যবহার করেছেন (গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া, সরেসচন্দ্র নিরেসচন্দ্র, লালিমা পাল (পুং), বিপুলা মল্লিক)। এখন ফ্যান্টাসি গল্পে এটা বোধহয় আবার আমচর্চা হয়ে গেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।