মাছের যা চড়া দাম! তাই রুই মাছের ভাজা টুকরোটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটা আর্তনাদ করে উঠল! 'বউ' ফোন করেছে!
- হ্যালো
- হ্যাঁ। কি করতেছো?
- খাওয়া-দাওয়া পর্ব চলতেছে। ইতস্তত করে বলি। উদীয়মান ভুরির খোঁচাটা এখনই শুনতে হবে।
- ভাল। একটু কম খাইতে পারো না? তুমি তো চাকরি শুরু করার আগেই ভুরি বানিয়ে ফেলবা!
- ব্যাপার না। মোটা হবার চান্স নাই। জিম করার মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিছি। নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করি আমি।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দুই প্রান্তেই। নীরবতা ভাঙল ওপার থেকেই।
- শুনো। একটা ব্যাপার বলার জন্য ফোন করছি।
আমি প্রমাদ গুনি। ঘটনা কি? বলে কয়ে "একটা ব্যাপার" বলার জন্য তো ফোন কখনো করে নাই। আজকে করল!
- বলো
- আমি কিন্তু বিয়ের পর চাকরি করব। তখন কিন্তু তুমি আমার সাথে স্বামীসুলভ মাতব্বরি ফলাইতে পারবা না। আগেভাগেই বলে রাখলাম।
আমি হো হো করে হেসে উঠি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। উল্টা-পাল্টা কিছু বলেনি অন্তত। আন্দাজ করলাম - কোন বান্ধবীর সাথে এই ব্যাপার নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেটার 'জোশ' এখনো যায় নি। তার গলায় এখনো সে জোশের রেশ রয়ে গেছে। আমি একটুও যে অবাক হয়নি তাও না। যাই হোক, আমি তাকে আশ্বস্ত করি,
- আমি কখনো বলছি এরকম কিছু আমি করব? তোমার নিজের সিদ্ধান্ত তুমি নিজে নিবা। এতে আমার কি বলার আছে? সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমার সাথে তুমি আলোচনা করতে পারো। কিন্তু তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ক্ষমতা তো তোমার হাতেই। আমি তোমার স্বাধীন ক্যারিয়ারে বাধা দিবো, এরকম তোমার মনে হইল কেন?
- না। এমনি। বলা তো যায় না।
- চাকরি নিয়ে হঠাৎ এই ভাবনা-চিন্তার কি কারণ?
- ভেবে দেখলাম, চাকরি না করলে, স্বাবলম্বী না হইলে কোথাও ন্যায্য সম্মান পাওয়া যায় না। আর এতদূর পড়াশোনা করেও যদি 'গৃহিণী' পেশায় ঢুকি, তাহলে পড়াশোনা করে লাভ টা কী?
- তোমার সাথে একমত হইতে পারলাম না। গৃহিণী পেশার অপমান আমার পছন্দ হল না।
- কেন? সন্দেহের সুরে জিজ্ঞাসা করে।
- একজন নারীর যোগ্য সম্মান টাকা উপার্জন করাতেই? তোমার শিক্ষাটা শুধু চাকরির জন্য তো না। তুমি তোমার শিক্ষা নিজের জীবন, তোমার চারপাশের মানুষের জীবনের উপকারে কাজে লাগাবা। চাকরি করার দরকার হলে করবা। তুমি যদি আমাদের সংসার সুন্দরভাবে সামলে রাখো, আগলে রাখো সেটাও কিন্তু একটা বিরাট অর্জন। ইনশাল্লাহ সন্তান হলে তাদের দেখাশোনার ব্যাপারও আছে। আমার সহযোগিতা সবসময় থাকবে। এখন তুমি যদি মনে করো, সবকিছু সামলে তুমি ফ্যামিলিতে আরো অবদান রাখতে পারবে, তাহলে চাকরি না করার কোন কারণ দেখি না। ন'টা পাঁচটা অফিস করে মাস শেষে এক বান্ডিল টাকা বগলদাবা করে বগল বাজিয়ে বাসায় এসে স্বামী তার গৃহিণী বউ এর চেয়ে বিরাট কিছু করে ফেলল - তা কিন্তু নয়। আমার মতে সংসার সামলানো একটা বিরাট জটিল কাজ। অফিস করার চেয়েও। অনেক দিক খেয়াল রাখতে হয়। একটা সংসারের বিভিন্ন দিক আছে। এসব দিক সামলানোর কাজ দু'জন ভাগাভাগি করে নিতে হবে। দু'জনই আয়-রোজগারের কাজ করতে গিয়ে যদি ছেলেমেয়ে উচ্ছন্নে যায়, তাহলে লাভ কী?
আমার মধ্যবিত্ত মানসিকতা নগ্নভাবে বেরিয়ে আসে।
- আচ্ছা। তাইলে আমি চাকরি করব, তুমি সংসারের অন্যান্য দিক দেখবা। রাজি?
- মানে? আমি ফুঁসে উঠি।
- মানে আবার কি? তাচ্ছিল্যের ভাব স্পষ্ট।
- মানে কিছু না। আমি অবশ্যই চাকরি করব। তুমি কর আর নাই কর!
- তুমি.... তুমি.... তুমি..... আমি আগেই বুঝছিলাম। তোমার মতলব সুবিধার না।
সংযোগ কেটে দেয় ওদিক থেকে।
রাগে ফুঁসে উঠেছে দুই পক্ষই। চূড়ান্ত ফয়সালা হবে রাত ১২ টার পর 'রাতের সংবাদে'। সকলের দোয়াপ্রার্থী।
আমি আধ-খাওয়া ভাজা রুই মাছের টুকরোটাতে আবার কামড় বসাই। কেমন যেন বিস্বাদ ঠেকে।
ফেরারী ফেরদৌস
মন্তব্য
তাড়াতাড়ি বলেন ইয়েস ইয়েস ইয়েস ম্যাডাম
রাজি রাজি রাজি আমার চৌদ্দগুষ্টি রাজি
পরের বুদ্ধি হলো সে চকরিতে যাবে শর্ত অনুযায়ী আর শর্ত অনুযায়ী আপনি সামলাবেন সংসার
এবং সেখানেই আছে চির মুক্তির টেকনিক
টেকনিটা হলো যে কাজ আপনি এমনিতেই পারেন সেটাও ইচেছ করে করবেন আনাড়ির মতো
এমনভাবে করবেন যেন যে কেউ দেখলেই বিগড়ে যায়
ব্যাস
এভাবে কয়েকদিন গেলেই আপনার সংসারী চাকরিটা চলে যাবে
কিন্তু যেহেতু সংসার ছাড়া আপনার অন্য কিছু করার কথা না তাই বাইরেও নো চাকরি
ঘরেও নো সংসার
পুরোপুরি ১০০% ফ্রি
খাও আর ঘুমাও
গুরু, আপনার পদধুলি নেবার সুযোগ দেন! এত্ত বুদ্ধি আপনার মাথায়! বুদ্ধিটা অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োগ করব!
~ ফেরারী ফেরদৌস
রাত ১২ টার খবরে কী দেখালো?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বিদ্যুতের অভাবে ও পক্ষের মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোবাইল অফ পাওয়া গেছে।
~ ফেরারী ফেরদৌস
হুম্ম....
নন্দিনী
ভুল, বলা উচিত ছিল, "ইচ্ছে হলে করবা"
দুজনের সংসার তাই দুজনকেই সমান সমান ভাবে দেখতে হবে
ভাই এইসব কি বলেন? বৌ ফ্যামিলিতে সবকিছু সামলে তারপর আরো অবদান রাখার চিন্তা করবে, আর তখন আপনি চাকরি না করার কোনও কারণ দেখেন না???
... বেচারা আপনার বৌ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
সংসার সামলানোর ব্যাপারে স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে ইনশাল্লাহ! কিন্তু চাকরি ফেলে সংসারের দায়িত্বটা যদি প্রধানত স্বামীর ঘাড়ে ফেলা হয়, আমার মনে হয় না সংসারের চাকাটা ঠিকমত চলবে। এত্ত ধৈর্য পুরুষ জাতির আছে বলে মনে হয় না!
~ ফেরারী ফেরদৌস
পড়লাম। আপাতত আর কিছু বলা যাইতেছেনা। পিসিতে অভ্র নাই। সচলের যেটা আছে সেটা দিয়া লিখতে পারিনা ঠিক মত।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
আপনার সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
~ ফেরারী ফেরদৌস
এই ঘটনা আমার জীবনেও ঘটছে । আপনি এত সুন্দর করে মেয়েদের গুরুত্বপূর্ন কাজের কথা তুলে ধরলেন কিন্তু কথা হল সেগুলো কি আর বিয়ের পর মনে থাকে ?? আমরা মেয়েরা নিজেদের আর ও যোগ্য করে তুলি যেনো আরো ভালো করে অনন্যের পাশে দাড়াতে পারি । বাবা যেনো ছেলের অভাব বোধ না করে । স্বামীহীনা কোন বিধবা নারী কে যেনো তার সন্তানদের নিয়ে কারো দানের আশায় বসে থাকতে না হয় । নারীর অসহায়ত্যের সুযোগ নিয়ে যেনো বিয়ের আগে পাশে থাকা ভালোবাসার ছেলেটি বিয়ের পর যেনো পশুর মত আচরণ না করে,আর এসব যেনো নিরবে সহ্য করতে না হয়..................
(জয়িতা)
নতুন মন্তব্য করুন