খুব কাছের বন্ধু বলতে যা বুঝায় আমার সাথে জাফর এর সম্পর্ক সে রকম। মানসিকতার অদ্ভুত মিল, এক সংগে সুনীল, পূনের্ন্দু আবৃত্তি, “তুই কখনো কনডেন্স মিল্কে চা খেয়েছিস, ” “হু, বদ গন্ধ”, বিখ্যাত লেখকের মুন্ডুপাত, এইসব হাবিজাবি। মধ্যরাতে ঘুরতে বেড়ানো, সোডিয়ামের মায়াবি আলোয় শহরের পোড়োবাড়ির জানালায় ঝুলে থাকা পাকুড়, ন্যাড়া গাছের ফাঁকে পুর্নিমার আলো, শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানের ছাদে উঠে ব্যাস্ত রাস্তার মাতামাতি, অলস দুপুরে বিলের পানিতে ঢিল, ছুটিতে এইগুলো ছিল পছন্দের প্রথম দিকে। আমরা তিন দিনের ছোট বড়, মধ্যবিত্ত পরিবার, কাছাকাছি বাসা, ক্যাডেট কলেজ এর পরিবেশ, যেখানে বন্ধু মানেই অন্য কিছু, এইসব গাঢ় করেছিল সর্ম্পকটা।
জাফরের বাড়ির অন্দরে ছিল আমার অবাধ যাতায়াত। ওর বিছানায় সটান শুয়ে দুপুরের ঘুম, টেবিলে বসে খাবার বায়না নিত্যদিনের ব্যাপার। খালার (জাফরের আম্মা) কাছে আমি ঘরের ছেলে, জুঁই (জাফরের বোন) এর কাছে “ভাইয়ার বন্ধু” এর বাধা অতিক্রম করে আর একটা “ভাইয়া”।
ছুটির দিন গুলো খুব মজা করতাম আমরা। ছোট শহর। দল বেধে ঘুরতাম। ক্যাডেটের বন্ধু, বাহিরের বন্ধু, বেশ বড়সর দল হত প্রায়ই। আমাদের একটা প্রিয় কাজ ছিল মেয়েদের রেটিং করা।
একটু খুলে বলি।
০ থেকে ১০ এর মধ্যে আমরা রেটিং করতাম। ৬ এর উপর কেউ নম্বর পেলে সে সুন্দর, মানে সুন্দরী আর কি। তারা চিকি গ্রুপ এর সম্মনিত সদস্যা। এর নীচে যাদের নম্বর তারা পয় গ্রুপ। চিকি শব্দ টা সম্ভবত চিকস এর অপভ্রংশ। কিংবা উল্টোটা। সুন্দর মেয়েরা সাধারনত চিকন চাকন হয়। চিকস হচ্ছে চিকন এর ইংরেজী ভার্সান। পয় এসেছে পয়মাল শব্দ থেকে। “খুলি হাল, তুলি পাল, আগুয়ান, পয়মাল, পয়মাল”। পয়মাল শব্দ টা কানে লাগে। অর্থ জানিনা। অর্থ জানে কবি আর বাংলার মাড্যাম। আমরা নিলাম পয় শব্দটা, অসুন্দরদের জন্য।
তো আর কি। সারাদিন ঘুরি আর রেটিং করি। রাস্তায়, মোড়ের দোকান, শপিং সেন্টার, স্কুলের সামনে। দলের কেউ চিকস দেখতে পেলে চিতকার করে অন্যদের দেখাই, এই সৌন্দর্য্য থেকে যাতে কেউ বঞিত না হয়। আর দিনশেষে হিসাব করি, দিনের পারফরমান্স কেমন।
একদিন বিকালবেলা। আমি আর জাফর সাইকেলে চড়ে শহরের অলি গলি ঘুরছি। উদ্দেশ্যবিহীন অলস ঘোরা। যদি কোন মেয়ে চোখে পড়ে তো রেটিং করা। তেমন কাউকে চোখে পড়ছেনা। কয়দিন পরে আবার কলেজে ডুকতে হবে, কি কি জিনিস স্টাফ এর চোখ ফাকি দিয়ে কলেজে ডুকানো যায় তার একটা লিস্ট মনে মনে রেডি করছিলাম আর আলোচনা করছিলাম জাফর এর সংগে। এমন সময় দূরে একটা হুডখোলা রিক্সা দেখে আমরা নড়ে চড়ে উঠি। ছোট রাস্তার দুই পাশে দুই জন কাভার নেই যাতে রিক্সাটাকে অবশ্যই আমাদের মাঝখান দিয়ে যেতে হয়। ফ্রন্ট ভিউ, সাইড ভিউ দুটোই পাওয়া যাবে। রেটিং হবে নির্ভূল। সাইকেলের স্পিড কমে দিয়েছি একদম শুরুতে। আরোহীনি বসে আছে রিক্সাচালকের একদম পিছনে, মুখ দেখা যায় না। চুলটা চোখে পরে। বেশ কালো।
“নিশ্চয় চিকস” আমি আশা করি। জাফর চুপচাপ, মন্তব্য একটু ধীরে দিতে পছন্দ করে ও।
আরোহীনির হাতের ব্যাগটা চোখে পড়ে এরপর। ধুর, পুরান মডেল।
“নির্ঘাত পয়”। ব্যাগটার কারনেই মত পালট্টাই।
খুব কাছে চলে এসেছে রিক্সা। একটু পরেই নজরে পরবে অতিকাঙিত মুখ। কেমন হবে মুখটা? আঙুল গুলোতো খুব সুন্দর।
“না, এ চিকি”। অনুমান বদলাই আবার। জাফর তখনো চুপচাপ।
রিক্সা আমাদের ক্রস করে চলে যায়।
আরোহীনিকে দেখে আমি চুপসে গেছি। আমার অবস্থা আনেকটা “ধরনী দ্বিধা হও, আমি তোমার গর্ভে মুখ লুকাই”এর মত। আড়চোখে জাফর কে দেখি। যেকোন মূর্হুতে মাইর টাইর দিতে পারে। কিছু বাংলা গালি তো নির্ঘাত। আর জাফর যদি কিছু নাই বলে, আমি নিজেকে কি বলব।
“দোস্ত, অইটা তো জুঁই”। প্রায় ৩০ সেকেন্ড পর জাফর বলে।
সেই আমার শেষ রেটিং।
সদস্যনাম: ধূসর মানব
email:
মন্তব্য
খুঁইজা দেখেন যে সময় আপনারা রেটিং রেটিং খেলা চালাইতেন ওই একই সময় আপনাগোরে লইয়া অপজিট পার্টি গজ ফিতা লইয়া পুংখানুপুংখভাবে রেটিং রেটিং খেলা চালাইত।
----------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
রেটিং আসলে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখার মত। সমস্যা হলো অন্যেরা আমাদের কী রেটিং দিচ্ছে তা আমাদের অজ্ঞাত।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
- হেহ হেহ হেহ
এইরম বহুত হৈছে। ব্যাপার না!
রেটিং জিন্দাবাদ।
ইয়া হাবিবি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হাহাহা এরকমই হয়
আমরাও স্কুলে থাকতে এমন করতাম, ইউনিতে গিয়ে লেকচারে বসে লেকচার বাদ দিয়ে দেখতাম কোন ছেলে দেখতে বেশি কিউট, তাই আপনারাও সাবধান, ফিটফাট হয়ে বের হয়েন।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
অনেকদিন 'কত্তোরকম ভালো লাগা'পড়ি না। এইবার আপনার কিউট'দের নিয়ে ওই পর্বটা শুরু করুন না...প্লিইইইইজ!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
চিকি শব্দটা অনেকদিন পর শুনলাম। ভাই কোন কলেজ?
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
Rangpur
হুমম।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
একদিন এক অতিথি লেখক "সন্নাসী"-র (বানান অবিকৃত রেখেছি) মন্তব্য দেখেছিলাম। আজ দেখি আরেক "ধূসর"।
ক্যাম্নে কী?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হাঃ হাঃ হাঃ
কেমন ধরাটা খাইলেন ভাই !!!
মাইয়ারা শুধু মনেহয় কিউট পোলাদের রেটিং দেয়না মুমু, রাস্তার কোন কুত্তা কত কিউট ওগুলারেও রেটিং দিয়া বেড়ায়। তারপর কারণ ছাড়াই হাসাহাসি !!! যাই হোক রেটিং বন্ধ হইছে কি সাময়িক নাকি চিরদিনের জন্য ?
--------------------------------------------------------
ভাইরে, ধূসর দিয়া রেজিষ্টার করার পর টের পাইলাম নাম টা কপি কইরা ফেলছি। সচল হইতে এত প্যাচ। নাম টা বদলাইলে তো একটা লেখা মনে হয় বাদ দিতে হইবো। কি যে করি?
নতুন মন্তব্য করুন