তুমি যে আমার: কোপেনহেগেন ডিনার (সিফুড)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৯/২০০৮ - ৬:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

কোপেনহেগেনের খানা খাদ্য নিয়া বাতচিতের আগে এক দোস্তের বিষয় দুই একটা কথা কই। সে শখের বসে রেসিপির বড় বড় কিতাব পড়ে শুরু করে পরে হইছিল শেফ। তার সাথে একদিন আড্ডাতে.

আমি লক্ষ করলাম তোমরা বাঙালিরা নতুন কোথাও গিয়েই দেশি রেস্তরা সার্চ শুরু করো। আরে বাবা নতুন শহরের লোকাল ট্রেডিশনাল ফুড ট্রাই করা কত এক্সাইটিং!! আরেকটা বিষয়, নতুন খাবার খেতে গিয়ে তোমরা ওটার বাঙালিকরন না করে থাকতে পারো না - একটু আদা রসুন দিয়ে আইটেম ডা কসাইতে পারলে হেভি হইতো রে

তার কথা আমি এখন ফলো করি - মাঝে মাঝে। কোপেনহেগেন হোস্ট মনের হাউশ জানতে চাইলে সাথে সাথে বললাম ট্রেডিশনাল ডেনিস কুজিন। শুনেছি এদের সিফুডে নরওয়ের ফ্রেস সেলমন ব্যবহার করা হয়, ডেনমার্ক ত্যাগের আগে একবার খেয়ে দেখা দরকার।

রেস্তরাতে ঢুকে মনটা একটা খারাপ হলো। গেটআপ দেখে বুঝলাম আপস্কেল জায়গা তার মানে একগাদা ফেশান, ৩০ টাইপ কাটা চামুচ, আর স্বাদ হবে মেনুর বাহারি বর্ননায়, প্লেটের খাবারে নয়। এই ধরনের রেস্তরার খানাপিনার ধরনটা অনেকটা উচ্চাং সংগিত/গজল সন্ধ্যার মত।

১। উপস্থাপকের গজল নিয়ে গম্ভির বক্তৃতা - ওয়েটারের মেনু অব দে ডে স্পিচ
২। ওস্তাদের সাগরেদের তবলচি সেতার নিয়ে প্রস্তুতি - এপিটাইজার
৩। ওস্তাদের রেওয়াজ বা গলা পরিষ্কার করা - মেইন কোর্সের জন্যে অপেক্ষা
৪। মুল সংগিত পরিবেশন - মেইন কোর্স
৫। শেষের দিকে অকারনে আ আ করে গান বড় করা - ডেজার্ট

যা ভেবেছিলাম, শুরুটা হল হেড ওয়েটারের (পরে শুনেছি স্পেশালি ট্রেইনড) বাহারি শানে নজুল আর গল্প দিয়ে - মেইন কোর্সের আলু বাবাজি কে কোথা হতে আনা হয়েছে, মাছটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কোন সমুদ্রে, টমেটো জন্মছে কোন দ্বিপে!!! আমি শুনি আর মনে মনে বলি "মেইন কোর্সটা আন, খায়া দেহি"

প্লেট আসলো। মাছের একটা বড় টুকরা। দুইতিনটা আলু সিদ্ধ। নানার সাথে নাতি: মাছের কোল ঘেষে পিচ্চি দুইটা গাজর। আরো আছে ছোট গাছের মত কি জানি। রাইস কই? রাইসের বদলে আসলো ডেনিস ব্রেড (বিখ্যাত??)। রেস্টুরেন্টের নিজেদের বেইক করা। মেয়েরা পার্লারে গেলে চোখে শসা টাইপ কি দিয়া যেন বসে থাকে - সেই রকম এক ধরনের কি জানি দুই পিস বসে আছে মাছের উপরে।

মন মেজাজ যা খারাপ হয়ছিল তা ভাল হল মাছ মুখে দেয়ার পর। অসাধারন বলব না, তবে দেখতে সাদামাটা হলেও স্বাদটা ভালো। আসল ঝাকানাকা হল রুটিগুলো -- ছোট ছোট পিস করে কাটা হালকা অলিভ ওয়েলের স্প্রেড বুলানো মচমচে বস্তু। ক্রানচটা নিখুত হয়েছে বলে কামড় দিলেই মুখে আরামের মচমচ, আর গলায় যেতে যেতে অলিভের কারনে সেই মচমচ পরিনিত হয় সুরসুরিতে। স্বীকার করতেই হবে মেইন কোর্সটা মন্দ না। আর অবাক করা ব্যপার হলো পরিমানে কম, কিন্তু পেট ভরে গেল - মাছটাতে ক্রিম দেয়া আছে, তাই হয়ত। জিরা, মাস্টার্ড আর নাম না জানা কিছু মসল্লা ব্যবহার করাতে ভেরিয়েশনটা ভালই হয়েছে। দোপেয়াছি করলে কেমন লাগতো? সরি সরি - নো বাঙালিকরন হাসি খাইছে

ডিজার্ট - নো থেংকস (মাছ-মচমচে রুটির স্বাদটা মুখে লেগে আছে, ডিজার্ট ফেজার্ট খেয়ে ফিলিংসটা নষ্ট করতে চাই না...বেশি বেশি ফিলিংস এর জন্যেই না পশ্চিম দুনিয়া)

I am Tusar


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

এজন্যই আমি ফ্রেন্চ রেস্তোরায় পারতপক্ষে যাই না। তয় একবার কি জানি একটা সুপ খেয়েছিলাম। আহা!!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ভিনদেশী নানান খাদ্য খেয়ে দেখা আমার অন্যতম হবি। ম্যালা টাকা-পয়সা থাকলে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতাম মূলত বিচিত্র ধরনের খাবারের লোভে।

মজা পেলাম লেখাটি পড়ে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হিমু এর ছবি

নতুন স্বাদের লেখা, পড়ে ভালো লাগলো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কীর্তিনাশা এর ছবি

আপনার লেখাটাও খুব উপাদেয় হয়েছে। চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সবুজ বাঘ এর ছবি

হ। খারাপ লেকস নাই। তা মাত্র এক পিলেটই খাইলি? এইডা কিন্তু ভাল্লাগলো না।
পুনশ্চ: তয় যে বর্ণমা শুনলাম, তাতে মুনে হইল, খিছুরির নগে খুম জমতো।

রেজওয়ান এর ছবি

হা হা। গজলের সাথে তুলনাটা ভাল হইছে। তা বার্লিনে কি খেলেন জানার ইচ্ছা আছে। হাসি

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

রেজওয়ান এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।