ছোটবেলা থেকেই কোরাল মাছের ভক্ত আমি। মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। আম্মা হাতে গোনা যে কয়েকটি মাছ খেতেন এবং ভীষন মজা করে খেতেন তার মধ্যে কোরাল মাছ একটি। তখন ঢাকার বাজারে (আমরা ছোট বেলায় গুলশান ২নং এ বাজার করতাম) মাঝে মাঝে কোরাল উঠতো। বেশীর ভাগই ৪-৫ কেজি বা তার ও বড়। খুউব মজা করে রান্না হোত। ফ্রীজে রেখে রেখে বেশ কদিন ধরে খেতাম। আহা কি স্বাদ! এখনো জিবে সেই স্বাদ লেগে আছে। শুনতাম এসব কোরাল সাগড়ে অথবা উপকূলীয় নদীগুলোতে পাওয়া যায়। পটুয়াখালীতে মায়ের সাথে নানা বাড়ী বেড়াতে এসে শহরের নিউ মার্কেটে বিশাল বিশাল কোরাল উঠতে দেখতাম। মজার স্বাদের মাছ হিসাবে সেই থেকে কোরালের প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা।
বহু বছর পরে সেই কোরালের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক টা যে হঠাত্ করে নতুন মাত্রা পাবে তা ভাবতেও পারিনি। ইতিমধ্যে শহরের কোলাহল থেকে দূরে সরে যেতে গিয়ে সেই দক্ষিনে মায়ের দেশ ছাড়িয়ে আরও দক্ষিনে একেবারে কুয়াকাটায় চলে এসেছি। সাগর পাড়ে ঘর বাড়ি বানিয়ে, জমি জিরাত কিনে একেবারে গেরস্থ সাজার পায়তারা করছি। একরকে একর ধানী জমি নষ্ট করে প্রায় দুই ডজন ছোট বড় পুকুর কাটলাম। পুকুরের পাড়ে সবজি, কলাগাছ আর পুকুরে চিংড়ী আর অন্যান্য মাছের চাষ। একেবারে পারফেক্ট ফর ”মত্স মারিব খাইব সুখে” চরিত্রটির জন্য।
পাশাপাশি বাড়ীর সামনে সাগরের গা লাগিয়ে কিছু জমি কিনে একটা বড়সর ঘেরও তৈরি করে ফেললাম। স্থানীয় লোকজনের সবাই মাছ চাষ নিয়ে কম বেশী জানে। অতএব বুদ্ধিদাতার অভাব হল না। আর আমিও আজীবন সাহিত্যের ছাত্র হয়েও রোমান্টিকতায় ভরপুর হয়ে নেমে পড়লাম চিংড়ী চাষে। এতগুলো পুকুরে ও ঘেরে নিজের হ্যাচারীর লাখ খানেক গলদা চিংড়ীর ও স্থানীয়ভাবে বাগদার পোনা সেইসাথে আশ পাশ খেকে নিয়ে আসা বিভিন্ন মাছের (স্থানীয় ভাষায় চিংড়ী বাদে সবকিছুকে বলে সাদামাছ) পোনা ছাড়লাম। জেলার মত্্স্য কমকর্তা, উপজেলার মত্্স্য কর্মকর্তারা সবাই এসে আমার এ উদ্যোগকে তারিফ করে গেলেন। সাগর পাড়ের ঘেরে পূর্নিমায়, অমবশ্যায় বড় জোয়ারের (স্থানীয় ভাষায় বলে জোবা ) পানি ঢুকাই ঘেরের স্লুইস গেট দিয়ে। সেই পানিতে আমার চিংড়ীর পোনা গুলো তরতর করে বেড়ে উঠছে। ওদিকে পুকুরেও গলদা ও সাদা মাছের পোনা গুলো বাড়ন্ত। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব ঢাকা থেকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে "হাউ ইজ ইওর চিংড়ী পোনা"? একটা পুকুরে প্রায় ২০ হাজার মনোসেক্র তেলাপিয়ার পোনা ছাড়া হোল। আমার লোকজন বললো ৩/৪ মাসেই বিক্রি করা যাবে। অংক কষে দেখলাম লাখলাখ টাকা। ওদিকে বড় ঘেরে বাগদা গলদার নিবিড় চাষ চলছে। ১৫ দিন অন্তর জোবার পানি ঢুকাচ্ছি আর বের করছি। সেখানে ও প্রায় এক লাখ পোনা। লাভের হিসাব করতে গিয়ে দেখি ছোট ক্যালকুলেটরে ধরে না । বেশী ডিজিটের বড় ক্যালকুলেটর এনে হিসেব কষে আমি তো শিহরিত! এত টাকা রাখি কই ?
বড় ঘেরে মাঝে মাঝে জাল মেরে বাগদা চিংড়ী সাইজ দেখা হচ্ছিল। বেশ ৩০ এর গ্রেডে চলে এসেছে। লোকজন বললো পরের জোবাতেই এগুলো ২০ এর গ্রেড হবে এবং মাস খানেক পরে ১৫ এর গ্রেড এ। গলদা গুলোও ২০ ছাড়িয়ে যাবে যাবে ভাব। জালের সাথে ২/১ টা করে অন্যান্য সাদা মাছ ও উঠে আসতে লাগলো। এগুলো কি? আয় হায় এ্যা দেহি কোরাল। সব চিংড়ীতো খাইয়া ফালাইবে কোরালে! গলায় আতংক নিয়ে বললো আমার কর্মী আফজাল। কোরাল? উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলাম।
এই ঘেরে কোরাল ও আছে? আমিতো কেবল চিংড়ী ছেড়েছি। কোরাল আসলো কেমনে? সাগর দিয়া জোবার পানির সাথে বৈশাখ জৈষ্ঠ্যে কোরালের পোনা ঢোকছে। হেইয়াই এহন শ্রাবনে ১-১/২পোয়া হইছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ছোটবেলায় দেখা বিশাল সাইজের কোরালের ছবি। আহ কতইনা স্বাদের এই মাছ। তাড়াতাড়ি হাতে ধরা ছোট্ট কোরালটা পানিতে ছেড়ে দিলাম, বড় হও কোরাল বাবু। বড় হও। জলদি সেই ১০ কেজি ১৫ কেজি সাইজের বড় হও। মজা করে লোকজন ডেকে তখন খাওয়া যাবে।
হা হা করে উঠলো আমার কর্মীরা। অ করেন কি আ! অ করেন কি? কেন কি হয়েছে? ছেড়ে দিলাম! বড় হোক তারপর খাওয়া যাবে? ও দেহি সব মাছ খাইয়া ফালাইবে! কোরাল থাকলে আপনের একটা চিংড়ীও থাকবেনা।
কেন, কতগুলো কোরাল আছে এই ঘেরে? বড়জোর ১০০ বা ২০০ টা ? আর চিংড়ী মাছ একলাখ আর সাইজও বেশ বড় হয়ে গেছে চিংড়ীগুলোর। এত চিংড়ীর মধ্যে আর কটা বা খাবে এই হাতে গোনা কোরাল গুলো ? আমার কান্ড দেখে আফজালরা দাত বের করে হাসতে লাগলো। বললো স্যার, দ্যাখবেন হ্যানে, শ্যাষে চিংড়ী মাছ খুইজ্যা পাইবেন না। বলে স্লৃইস গেটের সামনে (স্থানীয়রা বলে সুলিজ) জালের আর খ্যাও মারলো। অপো করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে জাল টেনে তোলার সময় আনন্দের শিহরন বয়ে যেতে লাগলো। জালের পরতে পরতে সাদা সোনা। বাগদা আর গলদার ছটকানিতে জাল যেন ছিড়ে যেতে চায়। আহ আর কদিন পরেই চিংড়ীগুলো পুরোপুরি সাইজে চলে আসবে। আর তখন বিক্রি দেব। মনকে মন চিংড়ী ধরা পড়বে, আমাদের ধারনা। লাখলাখ টাকা। সাথে সাথে নতুন কেনা বড় সাইজের ক্যালকুলেটরের কথা মনে পড়ে গেল। চিংড়ীগুলো জাল থেকে ছাড়িয়ে পানিতে ছেড়ে দিয়ে জালের ভিতরে আবার কোরাল পাওয়া গেল। এবার দুটো। আরও ছোট ছোট সাইজের, বড় জোড় ১ পোয়া ওজনের। বেশ রাগী। জাল যেন ছিড়ে ফেলে বেড়িয়ে পালাতে চাইছে । বড় বড় চোখ হলুদ রংয়ের আর মুখটা বেশ বড়।
টাক্ কইর্যা শব্দ কইরা ওরা মাছ খায়। মোয়াজ্জম দাত বের করে হাসতে হাসতে বললো। কেমন করে? টাক্ কইরা শব্দ কইরা। ঘেরে দিনে রাতে আইলে দ্যখবেন পানিতে টাক্ টাক্ শব্দ। বোঝবেন কোরালে চিংড়ী মাছ মুখে ধরছে। খাইতে আছে। মোয়াজ্জেমের এই অনঞলের মজার সুরে সুরে বলা কথাগুলো শুণে হেসে ফেললাম। ওকে নকল করে বললাম, খাইবেনা, খাইবেনা, কয়ডা আর খাইবে। কোরাল গুলোর দিকে আবার তাকালাম। দুটোই যেন হলুদ ঘোলাটে চোখ দিয়ে আমাকে বলছে, ছেড়ে দাও, আমাদের ছেড়ে দাও। আমরা বড় হলে তখন খেয়ো, এখন ছেড়ে দাও।্ আহারে! আমার মনটা নরম হয়ে গেল। মাছ দুটো নিয়ে ঘেরে না ফেলে ১ টা পুকুরে ফেললাম, যেটায় মনোসেক্র তেলাপিয়ার চাষ হচ্ছে। পুকুরের কর্মীরা তেড়ে এল কোরাল দেখে। নেহায়েত মালিক বলে আমাকে ছেড়ে দিল কিন্তু কোরাল কিছুতেই পুকুরে ছাড়তে দেবে না। আমি বল্লাম কেন। কি হবে ? বিশ হাজার তেলাপিয়া, এর মধ্যে ২টা ৫ টা কোরাল থাকলে কি আর হবে? সব খাইয়া শ্যাষ কইর্যা ফালাইবে কোরালে। ও বড় বদমাইশ মাছ। ঘেরের সবচেয়ে বয়স্ক কর্মী মতি ভাই এসে বললো। আমি যুক্তি দিলাম; এই ছোট পুকুরে ২০ হাজার মনোসেক্র তেলাপিয়া একটু অতিরিক্ত হয়ে গ্যাছে। যখন মাসখানেক পরে ওগুলো মাঝারি সাইজের হয়ে যাবে তখন এই ২/৩ বিঘার ছোট পুকুরে আটো সাটো হয়ে যাবে। মাছে ধরবে না, তার থেকে ২/৪ টা কোরাল যদি আগামী ২/৩ মাসে দু’একশ তেলাপিয়া খেয়ে কমিয়ে ফেলে তবুও ভালো। মাঝখান দিয়ে খেয়ে দেয়ে কোরাল গুলো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে সেটাও কম লাভ নয়। ৪/৫ কেজি ওজনের কোরালের ছরি ভেসে উঠতেই জিবে পানি চলে এল। মাছ দুটোকে উদ্দেশ্য করে বললাম তাড়াতাড়ি বড় হও বাবুরা। মন ভরে খেও। তাড়াতাড়ি বড় হও।
পরের কয়েকদিনে সামনের ঘের থেকে আরও ৯টা কোরাল মাছ এনে তেলাপিয়ার পুকুরটায় ছাড়লাম। মোট হল ১১টা। ১১ জনের দল বেঁধে দিলাম। তেলাপিয়ার সাথে দেয়া প্রচুর খাবার। ওতে এদেরও চলে যাবে আর মাঝে মাঝে ফাও হিসাবে তেলাপিয়া তো রইলই।
প্রতিদিন ভালোই কেটে যাচ্ছে। সামনের ঘেরে চিংড়ীগুলো আর একমাস পরেই ধরা হবে। দিনে রাতে পাহাড়া আরও জোরদার করা হোল যেন কেউ এসে জাল মেরে মাছ চুরী করতে না পারে। এই সময়টা বড় বিপদজনক। চোরেরা ও খুব তত্পর থাকে। কোন রকমে রাতে সুলিজের সামনে পানিতে এক খ্যাও মারলেই তো ২/১ কেজি চিংড়ী উঠে আসবে। পানিতে নাকি মাছ গিজ গিজ করছে। আফজাল বলছে পানির চাইয়া মাছ বেশী এহন। বেমালা মাছ অইছে। আমি খুশীতে মাঝে মাঝে থর থর করে উঠি। হায় আল্লা! এ্যাতো টাকা কি করি ? কোথায় রাখি ? হঠাত্ করে এ্যাতো টাকা হাতে এলে টাস্ক ফোর্সের মেজাজ খিচড়ে দেই কিনা, এই ভেবে রীতিমত ঘাম ঝরা শুরু হয়ে গেল।
ঢাকায় এসে পুরনো গাড়ীটা বদলে একটা প্রিমিও নেব বলে ঠিক করলাম। ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে বললাম মাস দুয়েক পরে একটা টিকেট বুকিং দিতে। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই একটু নর্থ অ্যামেরিকা ঘুরে আসবো। অন্তত একটা সপ্তাহ প্রিয় শহর সান ফান্সিসকোয় কাটাবো। অক্টোবরে সানফ্রান্সিসকোতে কত হই চই! মজা হবে।
ভাদ্র মাসটা ঢাকায় কাজ সেরেই আশ্বিনে চলে এলাম কুয়াকাটায়। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। আশ্বিনে এমন বৃষ্টি নাকি এখানে কেউ দেখেনি, বৃষ্টির পানিতে আমার সব ঘের পুকুর আর একটু হলে তলিয়ে যায় আর কি।
দিন রাত জেগে মাটি দিয়ে চারপাশের পাড় শক্ত আর উচু করে বেঁধে দিলাম । কোন কোন রাতে এমন বৃষ্টি হতে লাগলো যে পাড় ছাপিয়েও পানি গড়াগড়ি খেতে লাগলো। বাধ্য হয়ে জাল কিনে আনা হল হাজার হাজার টাকার। ঘেরের কঠোর পরিশ্রমী কর্মীরা দিন রাত খাটনী দিয়ে পাড়ের চার পাশে নেট দিয়ে ঘিরে দিল। ২/১ রাতে জোবা আর বৃষ্টির পানি মিলে ঘের তলিয়ে গেল। তবে ভাগ্যভাল চারপাশে নেট থাকাতে খুব একটা মাছ বেরুতে পারেনি বলে সবার ধারনা। রাতে ঘেরে পরিদর্শনে গেলে হঠাত্ হঠাত্ শুনতাম টাক টাক শব্দ। ঐ যে কোরালে অন্য মাছ লড়াইয়া খায়। ঘের কর্মীরা বলতো। মনে মনে ভাবতাম যাক, বেশ নাদুস নুদুস সাইজের বড় কোরালই পাওয়া যাবে।
কার্তিকের শুরুতে বৃষ্টি ধরে এলো। ভাবলাম এবার চিংড়ী গুলো উঠিয়ে ফেলি। শুরু হোল মাছ ধরার পালা। সুলিজের মুখে বড় জাল পাতা হোল। পুর্নিমার জোবায় সাগর ফুলে ফেপে উঠলো। ১২ ঘন্টা অন্তর অন্তর সাগরের জোয়ারের পানি এসে আমার ঘেরের সুলিজের মুখে ভিড় করে। আমরা সুলিজে জাল পেতে গেট খুলে দেই। পানিতে সয়লাব হয়ে যায় আদিগন্ত বিস্তৃত ঘের। সুলিজের মুখে অজস্র চিংড়ী মাছ এসে ছটকাতে থাকে। আফজালরা মুহুমুহু জালের খ্যাও মারতে থাকে সুলিজের মুখে। ছটকাতে ছটকাতে উঠে আসে চিংড়ী মাছ বাগদা আর গলদা। সাথে অজস্র ফাইলসা মাছ। এলাকার লোক ঘেরের এসব মাছকে বলে বাজে মাছ। কারন দাম কম। চিংড়ী যেখানে ৬০০-৮০০ টাকা কেজি, এসব মাছ ৪০-৫০ টাকার বেশী না। পানি ঢুকানোর প্রথম রাতে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ উঠে এলো। কিছুটা পানি ঢুকানোর সময় জাল মেরে, বাকিটা সুলিজের গেট ছেড়ে পানি নামানোর সময় গেটের মুখে জালে আটকিয়ে। খুশীতে আতœহারা হয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম এটা কিছুইনা। মাত্র ২০-৩০ কেজি এর দাম। ওনলি দ্য টিপ অফ এন আইসবার্গ। না জানি কত হাজার কেজি মাছ উঠবে এই কয়দিনে। ১ লাখ মাছের বারো আনাও যদি পাই তাহলেও ৩০ টাকা পিস ধরলে ২৫ লাখ। ও দিকে তেলাপিয়ার পুকুরটায় ২০ হাজার মাছ ৩০ টাকা করে পিস ধরলে ৬ লাখ আর বাদ বাকী ২০-২১ টা পুকুরে তো লাখ খানেক গলদার পোনা ছাড়া হয়েছেই। ওগুলোর দাম হিসেব করতে গেলে ক্যালকুলেটরে ধরে না অংকটা। প্রিমিওর বদলে একটা ছোটখাট তিন সিরিজের বিএমডব্লিউ–ই কি শেষ মেশ কিনতে হয় কিনা কে জানে। চোখে ভেসে উঠলো সাত মসজিদ রোডে আর ২৭ নং রোডের কিছু প্রিয় ক্যেেফর ছবি। বান্ধবীকে নিয়ে রোজ সন্ধ্যায় আড্ডার বিলটা এখন থেকে শুধু আমিই দেব। হা: হা:, ম্যায় রাজা ব্যান গ্যায়া !
পরের দিন রাতে আরও জাল আনা হল। আরও লোক লাগানো হলো। ১০-১৫ জন কর্মীর সবার হাতে জাল। কার্তিকের পূর্নিমায় সাগরে সেকি গর্জন। পানির তীব্র চাপে সুলিজের গেট দিয়ে হুব মুর করে পানি ঢুকছে। গতকাল জোয়ার শেষে ভাটার সময় ঘেরের পানি অর্ধেক টা কমিয়ে ফেলেছিলাম মাছ ধরার জন্য। আজ আবার পানি ঢুকানো হচ্ছে। ঘন্টা তিনেক পানি ঢুকানো হোল। ঘেরে চার পাশ পানিতে থই থই করছে। সুলিজের মুখে চাদের আলোয় চিক চিক করছে মাছ। জালের খ্যাওয়ে উঠে এল এক দেড় মন মাছ। ধূশ.. সবই ফাইলসা মাছ। চিংড়ী মাত্র ২/৩ কেজি। ব্যাপার কি? আইবে, সুলিজ দিয়া পানি নামানোর সময় বাগদা মাছ পানির লগে নাইম্যা আইবে। লোকজন আমাকে আশ্বস্ত করে। ঠিক আছে। কই বাত নেহি। পানি নামুক তখন মাছ নেমে আসলেই চলবে । পূর্নিমার ভরা আলোয় বিশাল ঘেরটা কেমন রহস্যময় ঠেকে। দুরে ঘেরের মাঝে পানিতে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে মাছ। ছলাত ছলাত শব্দে বুকে শিহরন জাগে। আসো মাছ বাবুরা আসো। এ্যাতোদিন তোমাদের পেলেছি, পুষেছি, জোবায় জোবায় নতুন পানি ঢুকিয়েছি। সেই নতুন পানিতে তোমরা মনের আনন্দে সাতার কেটেছ। নতুন পানিতে ভেসে আসা খাবার খেয়েছ। গায়ের খোলস জোবায় জোবায় পাল্টিয়ে ছোট থেকে বড় হয়েছ। এবার আমার আদর ভালোবাসার প্রতিদান দাও। দল বেঁধে চলে আসো আমার সুলিজের মুখে। পানির স্রোত ধরে নেমে আসো ভাটার টানে সুলিজের গেটে। সেখানে নরম জাল পাতা আছে। পরম মমতায় তুলে নেব তোমাদের কে। জাল ছাড়িয়ে রাখবো আমার ঝুড়িতে আর কাটা ড্রামে। সারি সারি ড্রাম তৈরী তোমাদের সযত্নে রাখার জন্য। মনকে মন বরফ আনিয়ে শোলার বাক্রে (এরা বলে ককসিট) রাখা হয়েছে। বরফ দিয়ে যত্নে রেখে দেব সারা রাত। পরদিন চলে যাবে গদীতে। সেখান থেকে বেশী হলে ট্রাকে, নিদেন পে ছোট খাট পিকাপে করে পাঠানো হবে খুলনার ফ্যাক্টরীতে। ওখানে মাছগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে প্যাকিং করে জাহাজে করে পাঠানো হবে সেই দূরে ইউরোপে, আমেরিকায়। আর তখন আমার ছুটি। প্রিমিও কিংবা বিএমডাব্লিউতে বিছ্ছিরি জ্যামের, ধূলায় ঢাকা আমার শহরে আমি পিছনের সিটে হ্যালান দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকবো। গাড়ীর ভিতরে কার্তিকেই নামিয়ে আনবো মাঘের ঠান্ডা। মাঝে মাঝে আশে পাশের গাড়ীর চোরা চোখের চাহনীর গুলোর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসবো। সনি এরিকসনের ঝকঝকে স্ক্রীনে ভেসে উঠবে বান্ধবীর পাঠানো এসএমএস, তাড়াতাড়ি আসো, কান্ট ওয়েট টু সি ইওর ন্যু কার।
জাল উডাই এহন স্যার। কে যেন অনুমতি চাইলো ও পাশ থেকে । ওর কথায় ফিরে এলাম বর্তমানে। বললাম উঠাও, উঠাও, দেখি কেমন মাছ উঠলো। সুলিজের মুখে পাতা জাল এর শেষ প্রান্তের রশি ছিল মামুনের হাতে। বিসমিল্লাহ বলে রশি পেচানো শুরু করলো। কেমন ভারী ভারী ঠেকছে জালটা। চাদের আলোয় ধীরে ধীরে জালটা টেনে উঠানো হলো, একজনে পারছেনা। শেষে দুজনে মিলে টেনে উঠানো হলো মাছে ভরা জাল টা। সাদা সাদা মাছে চিক চিক গরন। চাদের আলোয় মনে হল ফাইলসা বেশী দেখা যায়। চার পাচ জন মিলে মাছ ছাড়াতে লাগলো জাল থেকে। একেক মাছের একেকটা বড় বড় ঝুড়ি বা কাটা প্লাষ্টিকের ড্রাম। অল্পতেই যেন কয়েকটা ড্রাম ভরে উঠলো। কাছে গিয়ে টর্চের আলোয় দেখলাম ফাইলসা মাছে ১ টা ড্রাম ভরে উঠেছে। আরেকটা অর্ধেক ভরা গুলশা মাছে। আরেক ড্রামে মাছের বাড়িতে ড্রাম নড়ে চড়ে উঠছে। কাছে গিয়ে দেখি কোরাল। ওয়াও... বেশ বড় বড়। ২/৩ কেজির কমনা ৪/৫ টা উঠেছে। চিংড়ী কই? পাশের ড্রামে গিয়ে দেখলাম চিংড়ীর জন্য রাখা সেটা। কিন্তু চিংড়ীর কালেকশন দেখে মনে হল ৪/৫ কেজির বেশী না। তাও হাজার তিনেক দাম হবে। আর দেড় দু'মণ সাদা মাছ সব মিলিয়ে মাত্র আরও ৪/৫ হাজার টাকা দাম হবে। ব্যাপার কি? চিংড়ী আসছেনা কেন ? সারারাত নির্ঘুম চোখে সুলিজের পাশে চেয়ারে বসে থাকলাম, ঘন্টায ঘন্টায় জাল টেনে মাছ তোলা হোল। দেখতে দেখতে ড্রামগুলো ভরে উঠলো । কোরালের ড্রামেও বড় বড় কোরাল ১০-১৫ টা। ২/১ টা দেখতে প্রায় ৩ কেজি ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে হল। অথচ চিংড়ী ড্রাম সিকিটাও ভরলোনা। কেমন যেন বোকা বোকা লাগছে নিজেকে। লোকজন বলে কয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে এলো। ভোররাতে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। এতক্ষন বাইরে ছিলাম বলে মাথায় কখন রাতের শিশির পড়ে চুল সব ভিজে গিয়ে ছিল। বেশ ঠান্ডা লাগছে। ফ্যান না ছেড়ে কাথা নিলাম গায়ে। দোতালার জানালা দিয়ে সাগর পাড়ে টর্চের আলো দেখে বুঝলাম আমার লোকেরা এখনো মাছ ধরছে।
পরদিন বেশ কাঁপিয়ে জ্বর এল। আর ঘর থেকে নামা হোলনা। মাছ ধরার মুহূর্ত গুলো বিছানায় শুয়ে নষ্ট করতে চাইলামনা। তাই রীতি বিরুদ্ধ হলেও একগাদা ওষুধ খেয়ে জোর করে ১ দিনেই জ্বর তাড়াবাড় ব্যবস্থা করলাম। সেদিন দুপুরে মামুন খাতা নিয়ে এসে হিসেব দেখিয়ে গেল। স্যার মাছ পাইছি প্রায় ৩০ কেজি বাগদা আর ১০ কেজি গলদা, মোট ৩০ হাজার টাকা আর প্রায় ৪ মন সাদা মাছ দাম প্রায় ৮ হাজার টাকা। ১ মন কোরাল সেগুলা না বেইচ্চা আপনার জন্য বরফ দিয়া ককসিটে রাইখ্যা দিছি। আর আজকে দুপুরে বড় কোরালটা পাক করাইছি। নিজের ঘেরের কোরাল দিয়া ভাত খাইবেন। খাবারের রুচি ছিল না। তবু কোরালের নাম শুনেই শরীর নড়ে চড়ে উঠলো।
চিংড়ী মনে হয় মেলা পাইবেন না স্যার। মামুন গলা নামিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো। কেন ? যেরম কোরাল বাজতে আছে হ্যাতে চিংড়ী ব্যাক হালারা সাফ কইরা ফালাইছে মনে হয়। বল কি? গলায় আমার আতংক। ১ লাখ চিংড়ী খেয়ে ফেলবে ঐকটা কোরালে? স্যার জানেন তো না। ১০০ টা কোরালেই পারে ১ লাখ চিংড়ী খাইতে। ওরা অইলো রাস। মানে খায় ৩ ওক্তে। ওরা খায় ৩০ ওক্ত। খায় আর বলে, খায় আর বলে।
মনটা দুর্বল হতে লাগলো। তাহলে কি ঘেরে লাখ খানেক চিংড়ীর অতটা নেই? থাকলে সুলিজের জালে অসছে না কেন ? ঐ রাতে সারারাত ঘরে জেগে থাকলাম। একট ুপর মোবাইলে জিগেস করছি কেমন মাছ উঠছে। প্রচূর মাছ সার কিন্তু সবই সাদা মাছ। চিংড়ী কালকের মতই। তার বেশী না। তারমানে ঐ হাজারের অংকে হিসাব? লাখের অংকে কখন পৌছাবে? উহ বুঝতে পারছি না। চিংড়ী গুলো কোথায় ? মন হল এত বিশাল ঘেরে আনাচে কানাচে হাজার হাজার চিংড়ী ঝোপে বা ঘাসের ফাঁকে, গর্তে, কত জায়গাতেই না লুকিয়ে আছে। সুলিজের ছোট্ট একটা গেটে ২/৩ হাতের ঐ জায়গায় পানি ছাড়লে অটোমেটিক এত চিংড়ী সব ওখানে চলে আসবে এ আমার বিশ্বাস হয়না। নিশ্চয়ই চিংড়ী গুলো ঘেরের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে। কোন কারনে খুব একটা আসছেনা, আর ২/৩ দিন দেখি। সুবিধা না হলে ঘেরের পানি সব নামিয়ে দেব। প্রয়োজনে সব পানি সেচে ফেলে দিয়ে পুরো ঘের শুকিয়ে ফেলবো। কোথায় কোথায় চিংড়ী লুকিয়ে আছে, ঘাড় ধরে বের করে আনবো। বিএমডাব্লিউ না হোক, প্রিমিও তো মিস করা যাবে না। তৃতীয় রাতে মাছ আরও কম পেলাম। চিংড়ী আধামন ও না, সাদা মাছের পাহাড় হয়ে গেল সুলিজের সামনে। বিরক্তিতে মন ভরে এল। কোরাল প্রতিদিনই ১৫/২০ কেজি করে পাচ্ছি। ঢাকায় আত্মীয় স্বজন বন্ধুদের জন্য প্যাকেট করে করে কোরাল আর চিংড়ী পাঠিয়ে দিলাম। বাকীটা দিয়ে ফ্র্রীজ ভরে ফেললাম। দুপুরে সবাই মিলে কোরালের ভূনা রাতে, কোরালের গ্রীল করলাম । বহুদিন পর কব্জি ডুবিয়ে কোরাল খাচ্ছি। আহা.. কিন্তু চিংড়ী ? চিংড়ীর কথা ভাবতেই মনটা আবার দুর্র্বল হয়ে যায়। তাহলে কি চিংড়ী গুলো এই কোরালের পেটেই গেল ? কোরালের গায়ে কেমন যেন চিংড়ী চিংড়ী গন্ধ। মোয়াজ্জেম ভাত খাওয়ার সময় ডাইনিং এ বললো । সবাই হেসে উঠলো কিন্তু আমার চেহারা সুবিধার না হওয়ায় সবাই হাসি থামিয়ে ফেললো। বুঝলাম সবাই বলতে চাচ্ছে চিংড়ী খেয়ে কোরাল গুলো এত মোটা হওয়াতে ওদের গায়ে কেবল চিংড়ী চিংড়ী গন্ধ আসছে।
গম্ভীর কন্ঠে বললাম আজ সুলিজের মুখে ভাটার সময় মাটি কাটতে হবে সবাইকে। সুলিজের লেভেল ৩/৪ হাত নীচে নিয়ে যাব এবং সেখান দিয়ে রাতে সব পানি ছেড়ে দেয়া হবে। ঘের শুকিয়ে দেখি চিংড়ীগুলো সব কোথায়। আইডিয়াটা সকালেই করেছি ঘেরের ২/১ জনের সাথে আলোচনা করে। পানি শুকিয়ে না ফেললে সব মাছ পাওয়া যাবে না। ভাত খাওয়ার পর সবাই কাজে নেমে পড়লো। সন্ধার আগেই প্রায় পাঁচশ সিএফটি মাটি কেটে সুলিজের নীচে বিশাল গর্ত করে বাইরের খালের সাথে সংযোগ দেয়া হোল । সন্ধ্যায় জোয়ার আসতেই নতুন বানানো গেটের দরজা দিযে নীচ থেকে উপরে প্রায় ৬/৭ হাত সুলিজের ফাক টা আটকে দেয়া হোল। নতুন করে অর পানি ঢুকানো হবে না। ৬ ঘন্টা পরে জোয়ারের পানি ফিরে গেল। সুলিজের বাইরের খাল শুকিয়ে গেলে বিসমিল্লা বলে সুলিজের মুখে বিশাল জাল পেতে গেট খুলে দেয়া হলো। সেই মুখ দিয়ে তীব্র সোতে বেড়িয়ে আসতে লাগলো ঘেরের সব পানি। ৬/৭ ঘন্টা ধরে পানি নামানো হলো। দেখতে দেখতে ঘেরের অর্ধেক টা শুকিয়ে গেল। এর মধ্যে সাগরের জোয়ারের পানি বাড়তে লাগলো। সুলিজের গেট আবার আটকে দেয়া হোল। ভাটা এলে আবার খুলে পানি নামানো চলতে লাগলো। এভাবে টানা ২ দিন পানি কমানোর পরে সমস্ত ঘেরের ১৪ আনা পানিই শুকিয়ে শুধু ঘেরের বাঁধের ভিতরের চার পাশের খালে সামান্য কোমর পানি থাকলো। আর সবটা শুকনা। সেই খালের পানিতে কিল বিল করছে মাছ। আহা সেকি মাছ । না দেখলে বিশ্বাস হোতনা! একেই বলেই পানির চেয়ে মাছ বেশী। পরের দুদিন ধরে ঘেরে ১২-১৪ জন কর্মীরা গ্রামের আরও ২০/২৫ জন নিয়ে মহা উল্লাসে মাছ ধরলো। ড্রামকে ড্রাম মাছে ভরে যাচ্ছে। বরফের জন্য বার বার কাছেই আলীপুরে বাজারে বরফ কলে লোক পাঠাতে হচ্ছে। প্রতিদিন রাতে পিক আপ ভর্তি করে মাছ পাঠানো হচ্ছে গদিতে। এত মাছ একসাথে আমি জীবনেও দেখিনি। দিন রাত দাড়িয়ে ছিলাম সুলিজের পাশে। সমস্ত ঘের শুকিয়ে প্রায় সব মাছ ধরে প্যাকিং করে পাঠিয়ে পাইকার দের সাথে হিসাব শেষ করে মামুন আমাকে নিয়ে অফিসে বসলো। নরম কন্ঠে কললো, সার মাছ পাইছি মোট সত্তর মন। ফাইলশা চল্লিশ মন, গুলশা দশ মন, কটকইট্টা আর পুটি দশ মন, কোরাল ছয় মন আর চিংড়ী সাড়ে তিন মন। মাত্র সাড়ে তিন মন ? ও মাথা নেড়ে বললো চিংড়ী যা আশা করছিলাম তার দুই আনা ও পাইনাই। একলাখ ছাইরা পাইছি সব মিলাইয়া মোট ৮/১০ হাজার। আর তা নাই । নাই ? হয়। দ্যাখলেন তো কোরালে সব খাইয়া ফালাইছে। ক্যলকুলেটরে যে হিসাব ধরে নাই এখন মুখে মুখেই মোট হিসাব টা করে দিল মামুন। এমন সময় সেলিম অফিসের দরজায় এসে বললো সার আসতে পারি? দেখলাম ওর হাতে বেশ বড় কোরাল মাছ। দেখে মনে হয় ৩/৪ কেজি হবে। পিছনে আফজাল, মোয়াজ্জেম, মংমং নামের রাখাইন ছেলেটা আরো অনেকে। বললাম কি ব্যাপার? ওরা জানালো এটাই নাকি ঘেরে পাওয়া সবচেয়ে বড় কোরাল। প্রায় সাড়ে ৩ কেজি। তিক্ত মুখে বললাম অনেক দেখেছি। আর দেখতে চাইনা। ওটা পাইকারদের দিয়ে দাও। না সার। এডারে দিমুনা। এইডার গলায় এইযে এই বাগদা চিংড়ী পাইছি। দেখলাম ১৫ এর গ্রেডের ১ টা বড় বাগদা চিংড়ী চ্যাপটা অবস্থায় ওরা কোরালের বিশাল হা থেকে বের করলো। সার এই কোরালের ফাসি দিমু। অনুমতি চাই। ওরে টাংগাইয়া ঘেরে সুলিজের উপর ফাসি দিমু। কেউ কেউ হেসে উঠলো। আমার চোয়ালটা যেন ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠলো। আমি রায় দিলাম এটা সহ ফ্রীজের রাখা সব কোরাল কেটে পরিষ্কার করে ঘেরের সুলিজের চারপাশে তার বেধে তার মধ্যে ঝুলিয়ে কোরালের পেট এফোর ওফোর করে সব কটাকে ঝুলিয়ে রাখ। এগুলোকে শুটকী করে খাব। ভবিষ্যতে সাগরে অন্য কোরালরা যেন দ্যাখে আমার ঘেরে ঢুকলে কি পরিনতি হয়। সবাই মজা পেল। হই হই করতে করতে চলে গেল।
পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে উঠছিলাম। ৩০-৪০ লাখের বদলে মাত্র ৩-৪ লাখ টাকার মাছ পেয়েছি। এখানে থেকে আর কি করবো এই সিজনে ? ড্রাইভার বললো সার দ্যাহেন সবাই সামনের ঘেরে কিভাবে তারে কোরাল ঝুলাইয়া রাখছে। শুটকী করতে দেছে। খাইতে ভালো ওইবে। ফ্রিজে রাইখ্যা বাসী কইরা খাওয়ার চাইতে কোরালের শুটকি ভালো লাগবে। মামুন বললো মোট ১৯৭ টা। এর মধ্যে পুকুরের ১১ টা কোরালও আছে। সব গুলো সাইজে প্রায় তিন কেজি হইছে। আমি আর জানতে চাইলাম না। শুনেছি ঐ তিন বিঘার পুকুরের বিশ হাজার মনোসেক্র তেলাপিয়ার মধ্যে মাত্র ছয়শ মাছ পাওয়া গেছে। আর ফুলা ফাপা টাবুশ টুবুশ পুরাপুরি ১১ খান কোরাল । 'ওরা ১১ জন' ই বাকী ১৯ হাজার মাছ খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। ১১ জনের কোরালের এই টিম ওয়ার্ক এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।
ধূশশালা আর ভেবে লাভ লাভ নেই। গাড়ী ছাড়তে বললাম। জীবনও যদি আর কোরাল ছাড়ি বা ঢুকতে দেই আমার ঘেরে বা পুকুরে।
পরদিন সন্ধ্যায় ২৭ নম্বরের একটি ক্যাফেতে বসে আছি। বান্ধবী 'লেডী ইন রেড' এ চুমুক দিয়ে বললো, কই খাচ্ছ না কেন? ক্যাপুচিনো তো ঠান্ডা হয়ে গেল! সম্বিত ফিরে পেয়ে কফিতে চুমুক দিলাম। আসলেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। ও ওয়েটারকে ডেকে আর এক কাপ কফি বললো আমার জন্যে। উত্তরা থেকে ধানমন্ডি আসতে গিয়ে দীর্ঘ জ্যামে আটকা ছিলাম স্টাফ রোডের কাছে। আটবছরের পুরনো সঙ্গী স্টেশন ওয়াগান গাড়ীটা পিছনে মোটেই ঠান্ডা হচ্ছিলনা। তাই জানালার কাচ নামিয়ে দিয়েছিলাম। পাশে চোখ পড়তেই নজরে এলো একটা ঝকঝকে জেট ব্ল্যাক কালারের ফাইভ সিরিজের লেক্সাস এসইউভি। ইশ ... ! অল্পের জন্যে গাড়ীটা মিস হয়ে গেল। হারামজাদা কোরাল। ওয়েটার বিল দিয়ে গেল। আমি পকেটে হাত দেয়ার আগেই বান্ধবী হেসে বললো, থাক না। লেট মি পে প্লীজ। ব্যাগ থেকে প্লাষ্টিক কার্ড বের করে দিল। পাচ ছয়টা কার্ডের মধ্যে বেছে বের করতে ওকে প্রায়ই ২/৪ সেকেন্ড চিন্তা করতে হয়। কোনটা ছেড়ে কোনটা চার্জ করাবে।
গোপনে একটা লম্বা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আবার পোনা ফেলেছি। বিল দেয়া সত্যি কঠিন। দেখা যাক, সামনের ফাল্গুনে কি হয়!
তদ্দিন ঘেরের চারপাশে ঝুলিয়ে রাখবো ১৯৭ ফাঁসিতে ঝোলানো কোরাল ।
মোস্তফা শিবলী
কার্তিক, ২০০৭
মন্তব্য
এক কথায় চমত্ কার লেখা। এ নিয়ে ৩ বার পড়লাম কিন্তু একবারও শেষ না করে উঠতে পারিনি। এতখানিই engagingএই লেখা। সচলায়তনে লেখা শুরু করার জন্য অভিনন্দন! আপনার আরও লেখার প্রত্যাশায় র্ইলাম।
মৌরি নিষাদ
ধন্যবাদ। আপনিও তো খুব ভালো লেখেন। সে লেখা পড়েই তো আমি উদ্বুদ্ধ হলাম সচলায়তনে লেখা প্রকাশ করতে। যদিও আমার লেখা নিতান্তই সাধারণ। আপনারও আরও অনেক লেখা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
মোস্তফা শিবলী
হুম...........সমবেদনা জানাই ভাই । আশা করি আগামী বছর আপনার আশা সফল হবে ।
নিবিড়
সাগর পাড়ে 'আশা' অনেক বড় সম্বল ভাই। আপনার শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ।
মোস্তফা শিবলী
খুব ভাল লাগলো
ধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগছে শুনে আরও লেখার উত্ সাহ পাচ্ছি।
মোস্তফা শিবলী
wow আপনার এই মেগা লেখা পড়তে আমার কয়েকদিন লাগবে, মজা লাগছে পড়তে, চিংড়ি আমার দারুন প্রিয়।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শেষটাও চিংড়ির মতো মজার হলো কি না জানাবেন। কুয়াকাটায় এসে সত্যিকারের চিংড়ি খাবার দাওয়াত রইলো।
মোস্তফা শিবলী
এ রকম লেখা বোধহয় একটাই হয়। পাঁচতারা দাগালাম।
শুভেচ্ছা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনাকে পাঁচবার ধন্যবাদ।
মোস্তফা শিবলী
কুয়াকাটা!
স্বপ্ন দেখিয়ে কেড়ে নেয়ায় জায়গাটার জুড়ি মেলা ভার।
আপনার লেখাটা পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
তবে চিন্তা কইরেন না। নেক্সট সিজনে আবার হবে।
সেই দিন খুব শিগগিরই আসুক।
*******************************
আমার শরীর জুড়ে বৃষ্টি নামে, অভিমানের নদীর তীরে
শুধু তোমায় বলতে ভালবাসি, আমি বারেবার আসব ফিরে
আপনার নাম দেখে খুব বলতে ইচ্ছে করছে যে, কুয়াকাটায় আমার প্রায় ১২০০ হাঁসের (ছানা বুড়ো সব মিলিয়ে) একটা ছোটখাটো ফার্ম আছে। আর সেগুলো কিন্তু হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডারসনের গল্পের ছানার মতো খুব মিষ্টি দেখতে। দোয়া করবেন যেন হাঁস দিয়েই এবার প্রিমিও জুটে যায়।
মোস্তফা শিবলী
এই যে স্যার
হাঁস নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখার আগে এই অধমকে একটু জিগাইয়েন
আমার পিতাজি রিটায়রমেন্টের টাকায় সাড়ে সাত হাজার হাঁসের ফার্ম করেছিল
টাকার হিসাব করতে করতে আমাদের বাড়িতে অংক করার জন্য আর কোনো কাগজ খুঁজে পাওয়া যেত না তখন
তারপর ডট ডট ডট...
শেষ পর্যন্ত আরো চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করে হাঁসের জন্য বানানো ফাকা ঘরগুলো ভাঙতে হয়েছিল...
তারপর ডট ডট ডট
আমরা হাঁসে ফার্ম থেকে লাভের হিসেব করা প্রায় মনখানেক কাগজ ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে চানাচুর খেলাম...
আপনার বাবাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি কুয়াকাটায় বেড়াতে আসেন। হাঁসের ফার্মের ওপর একটা লেসন শেয়ারিং সেশন হয়ে যাক।
মোস্তফা শিবলী
যার সাতে হয় না তার সত্তরেও হয় না
এইবার আপনার চিংড়ি খাবে হাঙরে
এবং সেই কাহিনী দিযে আরোও একটা অসাধারণ লেখা তৈরি হবে
সেটাই মনে হয় বেশি লাভের
লেখাটা সত্যি অসম্ভব টানটান
ব্যবসায় সফল হয়ে গেলে আপনার পক্ষে ভালো লেখা মনে হয় আর হবে না
তার চেয়ে ফেল মারাটাই ভালো
খরা-কুষ্ঠ-মড়কে আপনার চিংড়ি সাফ হয়ে যাক
আর আরো একটা লেখা বের হোক এর থেকে বেশি কইলজা-জ্বলা আর ভালো
০২
সচলে সম্ভবত আপনার প্রথম লেখা এটি
অভিনন্দন
ঠিক বলেছেন ভাই। সেজন্যই গত এক বছরে কিছু লিখতে পারিনি। মা লক্ষীর কিঞ্চিত্ প্রসন্ন দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে স্বরস্বতীর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
আপনার এমন টানটান প্রশংসা পেয়ে আমি আবার লেখায় টান বোধ করছি।
মোস্তফা শিবলী
অভিনন্দন এত চমৎকার লেখার জন্য।
ধন্যবাদ।
মোস্তফা শিবলী
আমি লীলেন ভাইয়ের সাথে একমত পোষন করছি যদিও চিংড়ী আমার খুবই প্রিয়, যতোবড় হয় ততো বেশী প্রিয়। লেখা দারুন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
চিংড়ি আমারও খুব প্রিয়। দু'চারটা ভালো রেসিপি পাঠাবেন?
মোস্তফা শিবলী
দারুন লাগল লেখাটা। পরের বছরের জন্য শুভকামনা থাকল। সচলে স্বাগতম।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আপনার belated শুভকামনার ফল একটু একটু করেই পাওয়া শুরু করেছি। তাই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মোস্তফা শিবলী
সব্বনাশ! মাছ-মাছ যেভাবে কর্তাসেন, পরে না আবার আপনের শরীর থাইক্যা মাছের গন্ধ আসে! ইজমালী পুকুরে মাছ চাষ করে এমন দূর্নামের ভাগী হইসিলাম।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
Thanks to Ralph Loren। মাছের গন্ধ ঢেকে রাখতে দারুন কার্যকর। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে দেয়া আপনার সতর্কতা বাণীর জন্য ধন্যবাদ।
মোস্তফা শিবলী
Ralph Lauren
Ralph Lauren; sorry some one else wrote the mistane spelling of my cologn brand:-)
Shiblee
এমনকি আপনিও সচলায়তনে?
And are you the same Snigdha? I mean my Ali Bhai's sister?
হ্যাঁ, আমিই। তবে আপনাকে দেখে সেদিন মোটেই বুঝিনি যে আপনি এমন দয়ার সাগর - ছোট ছোট কোরালদের যে দরদে বড় হওয়ার জন্য ছেড়ে দ্যান (পরে আপনার পেটপূজোর জন্যই হোক, কি যাই হোক), তাতে বুঝলাম আপনার হবে
কি হবে স্নিগ্ধা? সত্যি বলছেন, হবে তো? তাহলে শিগগিরই ঢাকায় আসছি । হা...হা....হা....
মোস্তফা শিবলী
আমার সাথে পরিচয় হয়েছে কিন্তু আমাকে 'চেনেন' নি এখনও, তাই এসব মিষ্টি মিষ্টি কথা বেরুচ্ছে
যাই হোক, দেখা হচ্ছে ঈদের সময় -
লেখাটা একদম জাঝা
আপনার এগারো কোরালের টিমওয়ার্ক দেখে ভাবছি, এদেরকে বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম হিসেবে পাঠালে কেমন হয় !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বুদ্ধিটা নেহায়েতই খারাপ না!
মোস্তফা শিবলী
খুব সুস্বাদু লেখা। একটানে পড়ে গেছি ফাঁসিকাঠ অবধি। কামনা করি সামনের বছর মাছের চাষ ভালো হোক। তবে আশাকরি পরের লেখাটি পোস্ট করতে ততদিন দেরী হবেনা।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আরে দারুণ লেখেন তো আপনি!
চমত্কার বলার ভঙ্গি! ভারী মুগ্ধ হলাম।
লীলেন ভাইয়ের সঙ্গে একমত। একজন সফল চিংড়ি ব্যবসায়ীর চেয়ে একজন ধারালো লেখকই আমার কাছে বেশি লাভজনক। তারপরও আশা করছি সামনের বার ফাটিয়ে ফেলতে পারবেন...
তবে আমাদের মতো দু-চারজন পাপি-তাপীকে নিয়ে আপনার ঘেরের ভাগ্যদোষ না কাটালে সেরকম লাভ হবে না আগেই বলে দিচ্ছি মশাই! কী, নিয়ে যাচ্ছেন তো আমাদের?
ভালো থাকুন। প্রথম লেখার জন্য অভিনন্দন। লিখে যান সমানে। মুগ্ধ পাঠকেরা অপেক্ষায়।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই
সত্যি সত্যি ঘেরের মালিক হয়ে থাকলে (লেখক তো? না দেখলে বিশ্বাস নেই) আমরা নিজ দায়িত্বে গিয়ে তার নাম ভাঙিয়ে থেকে আসতে পারব
কারণ একবার একদল পাবলিক শ্রীমঙ্গল যাবার আগে কয়েকটা চা বাগানের নাম বলে আমাকে জিজ্ঞেস করল ওখানে পরিচিত কেউ আছে না?
আমি বললাম পরিচিত কেন? এর মধ্যে কয়েকটার মালিক তো আমি নিজেই
গেটে গিয়ে আমার নাম বললেই হবে
তারপর তারা গেলো এবং গেটে গিয়ে আমাকে ফোন করল- কই আপনাকে তো কেউ চেনে না
আমি বললাম চেনার তো কথা না। কারণ ওগুলোর মালিক তো আমি মনে মনে
আমার মনের খবর তারা জানবে কী করে?
ইনিও যদি মনে মনে চিংড়ি ঘেরের মালিক হন তাহলে একটু বিপদই হবে
লীলেন, ট্রুথ ইজ স্ট্র্যেইঞ্জার দ্যান ফিকশন! - বাক্যটি আমার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যায়। চাইলে ফেস বুকে আমার ফার্মের ছবি দেখে নিতে পারেন। আপনি সহ সকল সচল এবং সচলাদের আমার ডেরায় নেমন্তন্ন রইলো ।
মোস্তফা শিবলী
মৃদুল, আপনার আমার পাপ মোচনের জন্য এসে এক রাউন্ড বেড়িয়ে যান।
মোস্তফা শিবলী
একটু বোধহয় মিস ফায়ার হয়ে যাচ্ছে লীলেন ভাই । মোস্তফা শিবলীর চাপায় জোর আছে জানি তবে চাপাবাজিতে আপনি এখনও এগিয়ে! জানেন না তো কার ব্যপারে সন্দিহান আপনি! বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ গলদা চিংড়ির হ্যাচারী উনার - সদ্য এওয়ার্ড পাওয়া! তার ওপর হাঁসের ফার্ম, মাছের ফার্ম, ফলের বাগান, এনজি ও, training centre....কুয়াকাটার কিং উনি!!
এই জন্যই তো সন্দেহ করছি
যে সবকিছু করে তার কোনো কিছুই ঠিক থাকার কথা না
দেখা যাবে এনজিও আছে ফান্ড নাই
হাঁসের খামার আছে হাঁস নাই
চিংড়ি চাষের পুরস্কার আছে চিংড়ি নাই
(এটা অলরেডি প্রমাণিত)
ফলের বাগানে ফল ধরে না কিংবা ধরলেও বিচি কলা
আর কিংশিপ আছে কিন্তু রাজ্য চালাতে হয় মনে মনে...
বস, আপনে পারেনও বটে!
এরচেয়ে চলেন, সরাসরি গিয়ে দেখে আসি আমরা। তাহলে আপনের সন্দেহেরও অবসান হবে, আমরাও কোরাল মাছ দিয়ে একটু পেটপূজা করতে পারব
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
Apni Bichi Kola ke phal manchhen Na dekhe khub-e dukhkho pelam.. ato mojar phal
Mostafa Shiblee
Managing Director
Shiblee Hatchery & Farms Ltd.
Kuakata
লীলেন ভাই... আপনি পারেনও!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মোস্তফা শিবলী ,
এতো দীর্ঘ লেখা !! তবু পড়ে মুগ্ধই হতে হলো ভাই !
নিয়মিত লিখুন , এমন সব ভালো লাগা লেখা লিখুন ।
---------------------------------------------------------
'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সুন্দর লেখা । "কুবেরের বিষয় আশয়" (শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়) এর কথা মনে পড়িয়ে দেয় ।
কিছু মনে করবেননা।
জুবায়ের ভাইকে নিয়ে লেখার মাঝে
আপনার লেখাটা ছিল দেখে এতো বিরক্তি লেগেছিল।
পড়া হয়নি তাই।
এখন পড়লাম।
চমতকার লেখা।
শুধু পরেরবার একটু ছোট প্যারা করে দিলে
পড়তে সুবিধা হয়
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
মাঝখানে কয়েকদিন সচলে না আসতে পেরে বেশ কিছু দারুণ লেখা মিস করেছি।
কিন্তু এটা তো সাংঘাতিক লেখা; পড়তে পড়তে খেয়ালই করিনি যে মেগাপোস্ট। ইর্ষা করার মত লেখার হাত আপনার; ব্যস্ততার ফাঁকে সচলে নিয়মিত লিখবেন, এটা পাঠক হিসেবে আমার দাবি।
রাখতেই হবে....
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
স্যার,
আমি আপনার অফিসের একজন কর্মচারী। আমি আপনার লেখা ছাপা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু আমি পড়তে পারিনি। তাই আমার পড়ার স্বাদ ছিল। আমি আপনার এই আত্মজীবনী পড়ে খুবই মুগদ্ধ হলাম। আমি আগে কখনো এমন লেখা পড়িনি। আপনার লেখাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটা যেহেতু আপনার জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা তাই আমি বলব আসলেই আপনার জীবনে যা হয়েছে তাই লিখেছেন কোন কিছু লুকাননি বলে আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
নতুন মন্তব্য করুন