বাংলাদেশ জিতেছে। সাম্প্রতিক সময়ের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমাদের ক্রিকেট টিম নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। আগামীকালের (১০.১০.০৮) সংবাদপত্রগুলোতে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সুললিত সাহিত্যিক ভাষায় জুনায়েদ-আশরাফুল-মাশরাফির বন্দনা ছাপা হবে, কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে আমার মতো কীটাসাংবাদিকের (কীট+অসাংবাদিক) আর কিছু না বলাই ভালো। বরং অন্য কথা বলি।
জুনায়েদ সিদ্দিকীর খেলা দেখলাম; শুরুর দিকে অবশ্য দেখতে পারিনি, যখন টিভির সামনে বসি তখন জুনায়েদের রান ২৮ বলে ১১ - তামিম আউট। রহিমকে নিয়ে ছেলেটা ঢিমেতালে খেলে যাচ্ছে। তা যাক - রাণীক্ষেত মড়ক না লাগলেই হলো। বাংলাদেশের ইনিংসটা যখন শুরুর ফাস্ট বোলারদের পার হয়ে স্লো আর স্পিন বোলিংয়ের অংশে ঢুকল তখন জুনায়েদের একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগলো - ছেলেটা নিয়মিত সিঙ্গেল রান তুলে রানের গতি চালু রাখছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটসম্যান এই জিনিসটা পারেনা (বা পারতে চায়না), তাদের মনে হয় ধারনা, শুধু চার-ছক্কাতেই দ্রুত রান ওঠে। অবশ্য কাপালী, সাকিব আর হালের রকিবুলকে এর বাইরে রাখতে আমার আপত্তি নেই।
ক্রিকেট খেলা যখন থেকে বুঝি, সেই থেকে আজ পর্যন্ত, আমার মতে, ক্রিকেটে ৩টি রেভোলুশন এসেছে - এক, জন্টি রোডসের ফিল্ডিং; দুই, জয়সুরিয়া-কালুভিথারানার পিঞ্চ হিটিং; আর তিন, মাইকেল বেভানের সিঙ্গেলস। অষ্ট্রেলিয়ার মাইকেল বেভানের কথা বলি। তার খেলা দেখতে যতই বিরক্তিকর লাগুক, সেই কিন্তু প্রথম দেখিয়েছে শুধু সিঙ্গেলস নিয়েও ম্যাচ জেতা যায়। ২৫০/২৬০ তুলতে অযথা মারামরি না করে এক/দুই করেও এই রান তোলা যায়। আর যদি টার্গেট বেশি হয়, তখন নাহয় একটু মারামারি কর - খারাপ বল তো আসবেই। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক যেমন করেই মাঠ সাজাক না কেন, ফাঁক ফোকর তো থাকবেই। তাহলে ৬ বলে ৬টা ১ রান তুলতে অসুবিধা কোথায়! এমনও দেখেছি, স্কোরবোর্ডে লেখা - মাইকেল বেভান, ৪৩ বলে ৪৯ রান, চার - ১, ছয় - ০... কী আশ্চর্য!
সেখান থেকে শুরু। এখন তো বড়-মাঝারী খেলোয়াড়রাও ইনিসের মাঝে এসে সিঙ্গেলসই নেয়; কী দরকার ঝুকি নিয়ে আউট হবার! মনে আছে, '৯২-এর বিশ্বকাপে কোনো এক খেলায় ইমরান খান বেহুদা ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলো। গ্যালারিতে কোনো এক রসিক কার্টুন এঁকে ফেলল, ইমরান নিজেকে নিজেই ছক্কা মেরে মাঠের বাইরে!
খালি বাংলাদেশই শিখলো না। প্রতিবার দেখি, ইনিংসের মাঝে স্পিন কিংবা স্লো বোলাররা এলেই ব্যাটসম্যানরা হয় মারতে যায়, (ইমরান খানের মতো হলে) আর নাহয় ঠেকায় - মাঝে মাঝে যাও বা শট খেলে, বেশিরভাগই ফিল্ডারের দিকে চলে যায় আর নাহয় ব্যাটের কানায়কুনায় লেগে এক/দুই হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অলক কাপালীর ৯৩ বলে ৮৯ রানের সেই ইনিংস (কত সালে মনে নেই) দেখে মনে হলো, নাহ! বাংলাদেশও শিখছে।
কিন্তু কোথায়? আর তো কেউ পারছে না। মাঝখানে কার্ডিফে অষ্ট্রেলিয়াকে হারানোর সেই খেলায় আশরাফুল-বাশার জুটিতে সেই সিঙ্গেলস নেয়ার কারিশমা দেখেছিলাম। বিশ্বকাপে ভারত-বধেও তার ছিটেফোঁটা ছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ইদানিং অবশ্য দেখি, সাকিব আর রকিবুল যখন জুটি বাঁধে তখন রান ভালোই এগোতে থাকে। এখানে বলে রাখি, ক্রিজের দু'পাশেই যদি রান তোলায় চটপটে ব্যাটসম্যান না থাকে, তাহলে এক সাকিব বা এক রকিবুলও দ্রুত রান নিতে পারবে না। জুনায়েদ আর বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো, আশরাফুল আজকে মাথা গরম করেনি।
কিন্তু ভাগ্যের ওপর আর কতদিন?
--- ভাঙ্গা মানুষ ---
মন্তব্য
সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ।
কষ্ট করে পড়েছেন, এজন্য আপনাকেও ধন্য(না)বাদ
ভাল হয়েছে।
তাই নাকি!! ধন্য(না)বাদ
ভাল হয়েছে।
হুম...... বিশ্লেষণ ভাল লেগেছে ।
নিবিড়
বিশ্লেষণ করলাম কোথায়!!! আমি তো খালি লিখে আমার মনের কথা বোঝালাম। যাই হোক, নিবিড় ভাই, আপনাকে ধন্য(না)বাদ
স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি।
ভালো লাগলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ওরে বাবা, আপনিও!!
সংসারে সব হুঙ্কারে, ভ্রষ্ট শুধু সন্ন্যাসী
অশ্ব লেখায় স্বচ্ছ পেলেন! কী পেলেন, কন আসি।
একমত আমিও। দারুন লাগল লেখাটা।
_______________
বোকা মানুষ
ধন্য(না)বাদ আপনাকে। দারুন বলাতে আমিতো নিদারুন লজ্জায় পড়ে গেলাম।
এরকম হুটহাট জয় তো মাঝে মাঝেই এসেছে। এবার চাই সিরিজ জয়।
ইয়া হাবিবি!
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আমরা সবাই চাই... সুম্মা আমিন
ভাল্লাগলো।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আপনাকে ধন্য(না)বাদ
গতকাল রকিবুলকে নামানো হলোনা কেন, কেউ বলতে পারবেন? ইনজুরি? অনেকদিন পর এই ছেলেটার ব্যাটিংয়ে আশা পাইছিলাম।
হে হে... তার আগেই তো কাম সারা! সাউথ আফ্রিকার পর আবার দেখলাম বাংলাদেশ এভাবে হেসে খেলে জিতেছে
লেখা ভাল্লাগছে...।
দারুণ...
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ভাই, আপনাকে ধন্য(না)বাদ
আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনাকে অসংখ্য ধন্য(না)বাদ
লেখা ভাল হচ্ছে শিপলু দাদা !
চালিয়ে যান, এমন লেখা আরো চাই !
খুব ভাল লাগল লেখাটা পড়ে।
আমিও বলছি এবার সিরিজ জয় চাই, সুম্মা আমিন !!!
--------------------------------------------------------
আরে! তুমি কোন চিপার থনে আইয়া পড়লা!!! আবার আমারে চালাইতেও কও!! বলি, একা পারতাছো না বইল্যা আমারেও ভূতের দলে লইতে চাও??
চমৎকার ঝরঝরে লেখা।
দারুন লাগল।
আরো আসতে থাকুক।
শুভেচ্ছা।
অনিকেত ভাই, আগে বলি, আমি আপনার অ-বিজ্ঞানী ছড়ার ভক্ত ..
আপনাদের মতো আমি তো লিখতেই পারিনা, যাও বা লিখার চেষ্টা করি, তাতে প্রসব-বেদনার যন্ত্রনা অনেক বেশি লাগে, তাই রয়ে-সয়েই হয়ত লিখে যাবো।
আরো যখন আসতে বলেন, দোলটা লাগে প্রাণে
দু'আঙ্গুলে লাগে না সে দোল, কী জানি, কে জানে?
নতুন মন্তব্য করুন