(নিবিড়)
...................................................................
আমি যে বদ এ ব্যাপারে আমার বাপ মা ছোট কাল থেকেই নাকি নিশ্চিত ছিল । আরো ভাল করে বললে আমার দুই বছর বয়সে যখন আমি আমার পাঁচ বছরে বড় বোন কে কামড়ে রক্ত বের করে দিলাম তখন থেকেই তারা আমার বজ্জাতির ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন । কিন্তু ব্যাপার হল বদ হিসেবে আমার সুনাম শুধু আমার বাবা মার মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না আস্তে আস্তে এটা আত্মীয় স্বজন থেকে পাড়া প্রতিবেশী সবার মধ্যে ছড়িয়ে পরতে থাকল যাদের প্রধান কাজ হল তাদের ন্যাদা ন্যাদা পোলাপাইন গুলারে আমার কাছ থেকে যত সম্ভব দূরে রাখা । আর এভাবে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে আমার বদ গুণাবলী আরো অক্ষুন্ন হল আরো ভাল করে বললে ভার্সিটির কিছু ফাউল নাখাস্তা টাইপ পোলাপাইন আমাকে গুরু মাইনা নিল ।
অবশ্য আমি যে কখনো ভাল ছেলে হইতে চাইছি তাও কিন্তু না । আমাদের ক্লাসের মাসুদের মত গুডু গুডু পোলাপাইন গুলার মত আমি কখন ক্লাসে বেশি নাম্বার পাইতে চাই নাই কিংবা একটু লায়েক হবার পর থেকে নিজের মা বোন ছাড়া আর কোন মেয়ে কে মা বোনের নজরে দেখি নাই । আর মাঝে মাঝে রাত্রে বেলা আওলা লাগলে যে মাল টানি নাই তা বলবো না । ক্লাসে আমি কখনোই ঠিক মত যাই নাই আর গেলেও লাস্ট বেন্চ ছাড়া বসি নাই । ক্লাসের মেয়েরা কখনো আমার পাশে বসার সাহস করে নায় কিংবা কথা বলতে চায় নায় কারণ মেয়েদের সুন্দর ফিগার নিয়ে জোরে কমেন্ট দিতে আমি কখনো ছাড়ি নাই । তবে এইগুলা আমি কখনো অস্বীকার করি নাই কেননা আমি কখনো ভাল ছেলে হইতে চাই নাই ।
ক্লাস টেনের পর থেকে কোন মেয়ের শরীর ছাড়া তার অন্য কোন দিকে তাকাই নাই তবে এক পহেলা বৈশাখে কেন জানি আমাদের ক্লাসের রিনি মেয়েটা যখন শাড়ি পড়ে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হেটে যাচ্ছিল তখন আমার মনের মধ্যে একটা করুন হিন্দি গানের সুর বার বার চিড়িক মারতে লাগল । তখন কিছু না বুঝলেও পরে যখন বার বার ঐ গানের সুর মনের মাঝ খানে চিড়িক দিতে লাগল তখন বুঝলাম যে আমার রিনিরে কিছু কথা বলা দরকার । মাল খাইয়া টাল হইয়া আমি যখন এই কথা দোস্তদের বললাম তখন দোস্তরা বলে - মামা তোমার তো হয়ে গেছে , শালা তোমারতো ইশক হয়ে গেছে । সেই রাত্রেও আমি ভাল ছেলে হইতে চাই নাই , এমনকি যখন রিনিরে নিয়া রাতের বেলা গরম স্বপ্ন দেখলাম তখনো না ।
কিন্তু ............ কিন্তু যখন আমি তারপরের দিন রিনিকে লাইব্রীরির কোণায় আমার স্টাইলে সরাসরি বললাম - রিনি আমি তোমাকে ভালবাসি । তখন রিনির উত্তরে আমি চমকায়ে গেলাম কারণ কোন মেয়ে আমার সাথে এইভাবে কথা বলে নায় তারা সবসময় আমার এইসব ফাউল কথাবার্তার পর আমাকে এড়ায়ে গেছে কিন্তু সরাসরি কিছু বলে নায় তবে রিনি বলল । এই মেয়ে আমাকে বলে কিনা তোমার মত এত বড় ফাউল ছেলে কিভাবে আমাকে প্রোপোজ করার সাহস পাও । আমি বললাম আমার মধ্যে তুমি খারাপ ছেলের কি দেখলা ? মেয়ে বলে কিনা আমি গাঞ্জাখোর , বেয়াদপ , মেয়েদের সম্মান করতে জানি না । হায় হায় , মেয়ে বলে কি ? বলে কিনা মাসুদ কে দেখে আমাকে শিখতে ভদ্র ছেলে কি রকম , প্রেম করলে এইসব ছেলের সাথে করবে যাদের কিনা মাসুদের মত উজ্জল ক্যারিয়ার আছে । এইসব শুইনা আমি কিছুটা টাসকি খাইয়া গেলাম আর আমারে সেই রকম টাসকি খাওয়া অবস্থায় রাইখা মেয়ে আবার চলে গেল মাসুদের সাথে লাইব্রীরির কোণায় গল্প করতে ।
সব শুনে দোস্তরা বলল - তুই খালি একবার বল , মাসুদরে রিনি কেন নিজের বাপের নাম ভুলাইয়া দিমু , শুধু তুই একবার বল । কিন্তু আমি বললাম - থাক বাদ দে । এইটা বললাম কারণ তখনো আমার মনের মাঝখানে ঐ হিন্দি গান টা বাজতেছিল । তবে আমি তখনো ভাল ছেলে হইতে চাই নাই ।
আমি ভাল ছেলে হইতে চাই নাই তাই ঐ দিন রাত্রেও সবার সাথে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাড় অন্ধকারে মাল খাইতে বসে যাই । তবে মাল খাইলে আমরা সবাই সত্যবাদী হয়ে যাই আর আমাদের মুখ বন্যার মত খুলে যায় । তাই আমরা মাল খাইতে বসলে রায়হানরে সাথে আনি না কারণ ব্যাটা কখনো মাল খায় না । কিন্তু শালা আমাদের ঠিকই খুজে বের করে ফেলে । আমরা তখন আর কিছু বলি না কারণ আমরা সবাই তখন সত্যবাদী হয়ে যাই ।
ঐদিন রাত্রে কয়েক ঢোক পেটে পরতেই আমি সত্যবাদী হয়ে যাই । তখন কথার বন্যায় আমি সবার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত ভাসিয়ে দিতে চাই কিন্তু কেও কিছু বলে না কারণ বাকি সবার তখনো সত্যবাদী হতে আরো অনেক ঢোক বাকি । তখন হঠাত আমি আরো সত্যবাদী হয়ে যাই । আমি বলি আজকের বোতলটা ফাউল, তোরা সব ফাউল আর আমি সবচেয়ে বড় ফাউল । তখন সবার সত্যবাদী হতে আর মাত্র কয়েক ঢোক বাকি তাই সবাই কয় - কেন কেন ? এমন কি মিথ্যুক রায়হানো বলে- কেন কেন ?
তখন গলায় কয়েক ঢোক ঢাইলা আমি বলি - কারণ রিনি কইছে আমি ফাউল । সব কয়টা এক সাথে কয় ঠিক ঠিক কিন্তু রায়হান শালার পুত কিছু কয় না ।
আমি আবার বলি- এই হারামির বাচ্চারা আইজ থাইকা আমি আর তোদের সাথে থাকুম না , আমি ভাল হইয়া যামু আমি লেখাপড়া করুম । বাকি সব শালাই কয় আমরাও তোর সাথে থাকুম না আমরাও ভাল হইয়া যামু । কিন্তু রায়হানের বাচ্চা কিছু কয় না শুধু আন্ধার মাঠের মধ্যে গান ধরে চান্নি পসর রাইতে যাতে আমার মরণ হয় । আমার মাথায় রক্ত উইঠা যায় আমি কই- ঐ হারামি না ভাল হইয়া আমি মরুম না ।
এই সময় একটু দূরে লাইটপোষ্টের নিচে এক মাইয়া হঠাত এক ছেলের জামা ধরে চিতকার দেয়- এই খানকির পোলা আমার বাকি বিশ টেকা দিয়া যা । ছেলেটা তখন মেয়টাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ঠিক তখন রায়হান পোলা মাইয়া দুইটার দিকে দৌড় দেয় । মারুফ কয় শালা একা একা ভাল হইতে ভাগতাছে । আমিও ভাল হমু এই বইলা আমিও পিছে পিছে দৌড় দিই সাথে বাকি সবাই । তখনো মাইয়া টা চিতকার করতাছে- ঐ হারামি কাজের আগেতো ৫০ টেকা দিবি কইছিলি এখন বাকি ২০টেকা দে । আমরা এই সময় রায়হানের পিছে পিছে পোলা মাইয়া দুইটার সামনে দাড়াই ঝাপসা চোখে বুঝার চেষ্টা করি কি হচ্ছে । পোলাটা তখন কয় - এই মাগী ভাগ , যা দিছি তা নিয়া ভাগ । ঠিক এই সময় রায়হান বলে - কিরে মাসুদ তুই ?
নিবিড়
মন্তব্য
গল্পটা ভালো হইছে।
হুম ............ আর লজ্জা দিয়েন না ।
নিবিড়
শেষে টুইস্টের চূড়ান্ত। ভালৈছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু ।
নিবিড়
থাপ্পড়টা খাইলাম শেষে আইসা !
খুবই চমৎকার হয়েছে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হুম ............ আপনার প্রথম লাইনের জন্য বলব সরি । আর দ্বিতীয় লাইনের জন্য বলব ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে ।
নিবিড়
গল্প না জীবনী? ধান্ধা লেগে গেল।
হুম ......... চিন্তার কিছু নাই এইটা গল্পও না জীবনীও না শুধু অণুগল্প ।
নিবিড়
খুবই চমৎকার হয়েছে গল্পটা, নিবিড় ।
দারুণ লাগলো।
কিন্তুক এইটারে কি অনুগল্প বলা যায়?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ শিমুল আপা । আসলে এইটা অণু গল্প হিসেবে লেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে বড় হলেও আর ট্যাগ টা চেন্জ করি নাই ।
নিবিড়
- হ ভালা হইয়া যামু ঠিক করছি। ফাউল হইয়া মরুম না হালায়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূগো দা তাইলে তো সমস্যা কারণ ভাল হইলেই মরতে হবে তার থেকে বাদ দেন যাই আছেন তাই থাকেন ।
নিবিড়
চমৎকার লেখা। তবে গল্প হলেই খুশি হব....
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আমি একদম খাঁটিছেলে । এই নিয়া সন্দেহ করা ঠিক না ।
নিবিড়
আসলেই গল্প তো?
শেষের টুইস্ট'টা দারুন। ভাল লাগলো।
_______________
বোকা মানুষ
হুম ............ধন্যবাদ । তবে এইটা সত্য না গল্প এই নিয়া মন্তব্য পড়ে এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে ।
নিবিড়
গল্পের থেকেও ট্যাগটা বেশি interesting হয়েছে।
তাইলে লেখক হিসেবে এইটা আমার ব্যার্থতা কারণ পণ্যের থেকে তার বিজ্ঞাপন আমার মতে ভাল হওয়া উচিত না ।
নিবিড়
আমারো কিঞ্চিত ধান্ধা লেগে গেলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কোন ব্যাপার টা নিয়ে ধান্ধা লাগল ?
নিবিড়
ওয়েল ডান নিবিড়।
তবে শেষটা ভালো লাগেনি।
মনে হয়েছে মাসুদের চরিত্রটাকে শুরু থেকেই
এই পরিনতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছিল।
কিছু মনে করবেন না আশা করি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হুম ......... চেষ্টা করব সামনে গল্প গুলো আর ভাল লেখার বিশেষ করে শেষ টা আর পরিণত করার কারণ একটি ভাল গল্পের অন্যতম শর্ত একটি ভাল ফিনিশিং । আর সুপরামর্শে কিছু মনে করার মত বোকা আমি নই । আবার দেখা হবে ব্লগে অন্য কোন লেখায় ।
নিবিড়
চমৎকার লাগল নিবিড়।
ধন্যবাদ আপু ।
নিবিড়
নতুন মন্তব্য করুন