একটি "প্রায়" প্রেমের গল্প

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/১০/২০০৮ - ৮:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিবিড়
.............................................

বলেন তো বাংলাদেশের প্রত্যেক টা মফস্বল শহরের মধ্যে মিল কোথায় ? এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে সুন্দরী , প্রত্যেক মফস্বল শহরে এমন কিছু সুন্দরী মেয়ে থাকে যাদের জন্য পুরা শহর পাগল থাকে । একেবারে ক্লাস সেভেন এর পিচ্চি পুচকি থেকে বড় ধামড়া কেও বাদ থাকে না । এরা প্রতি মাসে পাওয়া নীল খামের চিঠি গুলো বিক্রি করে নাকি মাস শেষে কটকটি খায় । এদের বাসার সামনে সকাল সাতটা থেকে রাত বারটা পর্যন্ত শহরের ফাউল থেকে ভাল সব রকম পোলাপাইন টহল দেয় ।

আমাদের শহরেও এরকম একজন ছিল , অন্তরা । কম বয়সী সব ছেলেপেলে অন্তরার অন্তর পাওয়ার জন্য মারামারিতে যত রক্ত দিল তার সামান্য খবর অন্তরার কাছে পৌছিয়েছিল কিনা তা কার জানা নেই । কিন্তু তাই বলে রক্ত দেওয়ার লোকের অভাব পরে নি । যদিও রক্ত আমি একটু ভয় পাই তাও অন্তরার জন্য দুয়েক ফোটা রক্ত দেওয়ার ইচ্ছা যে আমারো ছিল না তা কিন্তু নয় । আর তাই আমার ম্যাথ খাতা কবিতায় ভরে যায় । বিকেলে হাটতে গেলে হঠাত দেখি অন্তরা বাসার সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছি যদিও যাওয়ার কথা উল্টা দিকে শিপলুদের বাসায় ।

তবে আমি ভাই ভীতু মানুষ তাই আমার নীল খাম আর অন্তরার কাছে যায় না বরং আমার বিছানার তলে জমা পরে । জমতে জমতে স্তূপ হয়ে যায় কিন্তু একই ক্লাসে পড়া এই মেয়ে কে আমার আর কিছু বলা হয় না । স্বপ্নে কত কথা হয় কিন্তু বাস্তবে ‘ভাল আছ ?’ এই কথার বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না ।

সময় বড় খারাপ জিনিস তাই আমার কিছু না বলা হতেই সামনে এগিয়ে যায় । আর আমার আফসোসের দিনলিপি আরেক টু বড় হতে থাকে, সাথে বয়স । তাই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছায় রঙ্গিন সব স্বপ্ন গুলো হাতে নিয়ে চলে আসি ঢাকায় কিন্তু অন্তরা পরে থাকে আমাদের ছোট্ট শহরে পুরান সেই কলেজে ।

ভর্তি পরীক্ষার চাপে আর সব স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায় কিন্তু একশ আটটা নীল পদ্ম হাতে হাটু গেড়ে বসা এই আমি প্রতিদিন হাজির হই অন্তরার সামনে আমার স্বপ্নে । সব আউলা লাগে আর তাই ম্যাথ খাতায় আমার কবিতা বাড়তে থাকে । বিছানার তল থেকে নীল খাম গুলো প্রাপকের কাছে পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠি । মনে মনে বলি যা থাকে কপালে। ঠিক এই সময় সুযোগ আসে । বাড়ি থেকে চিঠি আসে ভাইয়ের বিয়ে তাই তাড়াতাড়ি আস ।

একদিন সকালে বুকের বাম পকেটে একটা খাম নিয়ে রওনা হয়ে যাই । ট্রেন একটার পর একটা স্টেশন পার হয় আর আমি কালকের জন্য কথা সাজাই । কিন্তু আমার কথা সাজানো শেষ হবার আগেই আমাদের ছোট শহর এসে পরে । ভাইয়া ডাক দেয়- রাশেদ , এই যে এদিকে । স্টেশনের ভীড় বাঁচিয়ে আমরা হেটে বের হতে চাই এর মাঝে বুক চাপড়ে দেখে নিই চিঠিটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা । হইচই এর মধ্যে ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করি পাত্রী কে উত্তর আসে - কেন ? তোদের সাথে পড়ত যে ঐ অন্তরা ।

নিবিড়


মন্তব্য

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি

গভীর শোক ও সমবেদনা রইলো। কিন্তু চমৎকার লিখেছেন।

প্রত্যেক মফস্বল শহরে এমন কিছু সুন্দরী মেয়ে থাকে যাদের জন্য পুরা শহর পাগল থাকে । একেবারে ক্লাস সেভেন এর পিচ্চি পুচকি থেকে বড় ধামড়া কেও বাদ থাকে না । এরা প্রতি মাসে পাওয়া নীল খামের চিঠি গুলো বিক্রি করে নাকি মাস শেষে কটকটি খায় - ইহা অতিশয় সত্য পর্যবেক্ষন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ তবে শোকের কারণ বুঝলাম না কারণ আমারতো কোন বড় ভাই নাই । অ্যাঁ
নিবিড়

পরিবর্তনশীল এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি
নিবিড়

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

পঞ্চ তারকা!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ জুলিয়ান ভাই ।
নিবিড়

আকতার আহমেদ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ আকতার ভাই ।
নিবিড়

রাফি এর ছবি

এক কথা বারবার লিখতে ইচ্ছে করে না।
আপনার গল্প বরাবরই আমার ভাল লাগে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম...... লইজ্জা পাইছি লইজ্জা লাগে
নিবিড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আহারে মফস্বল
মনে মনে কতবার যে শহীদ হয়ে উচ্চারণ করেছি-
অন্তরগলি পার হয়ে এলে পৃথিবীর অর্ধেক ফাঁকা হয়ে যায়...

সেই মফস্বলও নেই আর অন্তরগলিও নেই
উদ্বাস্তু নগরী ভর্তি কানাগলির ফাঁদ...

অতিথি লেখক এর ছবি

মফস্বল...... হারিয়ে যাওয়া সেই মফস্বল ।
নিবিড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বস, বেশি না, এই ইকটুর লাইগা মিস হয়ে গেছে। ব্যাপার না। বেটার লাক নেক্সট টাইম! চোখ টিপি

আমি কিন্তু আপনারে লাক উইশ করি নাই, করছি আপনার গল্পের নায়করেই! চোখ টিপি

নিচে দেখেন সুপান্থদা কেমনে কটাক্ষ করতাছে। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে ধুগোদা লাক উইশ করে ভালই করলেন নায়ক বেচারার এখনো তো ভাইয়ের শালী পাওয়ার চান্স আছে । দেঁতো হাসি
নিবিড়

প্রফাইল এর ছবি

কাজটা কি ঠিক হল? আপন ছোটভাইয়ের স্বপ্নের নায়িকাকে শেষপর্যন্ত নিজেই বিয়ে করে বসলেন??

অতিথি লেখক এর ছবি

এই গল্পের কোন চরিত্রের সাথে লেখকের কোন সম্পরক নাই । চিন্তিত
নিবিড়

সুমন সুপান্থ এর ছবি

অনুগল্প ট্যাগ দেয়া তবু প্রায় সবাই এটাকে আপনার গল্প ই বলে ধরে নিলো ! কী আর করা ! ভালো যে লিখছেন , তা -ই জানিয়ে যাই, নিবিড় ।

---------------------------------------------------------

'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল হয়ে গেছে সুমন ভাই এইটার নাম দেওয়া উচিত ছিল প্রায় প্রেমের অণুগল্প । তবে ধুগোদা জানি আপনাকে কি বলতে চায় :S। আর পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
নিবিড়

মুশফিকা মুমু এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি দারুন লিখেছেন, খুবি মজা লাগল, *****
এমন গল্প আরো লিখেন হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপু ।
নিবিড়

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

০১.
গল্পের নায়কের প্রতি সহানুভূতি। আহারে বেচারা।
০২.
বলি বলি করে পছন্দের জনকে আমিও বলতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। সেসব পছন্দনীয়া কেউ কেউ বিয়ে করে বসেছেন আমারই কোনো বড়ো কাজিনকে কিংবা পাড়াতুতো কোনো বড়ো ভাইকে।

০৩.
ভালো লিখেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম... আপনার প্রতিও আমার সহানুভূতি রইল ।
নিবিড়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত লিখেছেন!

অতিথি লেখক এর ছবি

লইজ্জা লাগে
নিবিড়

কীর্তিনাশা এর ছবি

আপনি যতই না করেন, আমি জানি এইটা আপনার জীবনের গল্প।

ব্যাপার না। ধুগো ভাইর পিছনে লাইনে খাড়ান। দুই একটা শালী আপনার পাতেও পড়তে পাড়ে। খাইছে

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই ধূগো ভাইয়ের পিছনে লাইনে দাড়ালে আমার আর শালী প্রাপ্তি হবে না তাই সামনে দাড়াবো বলে ঠিক করছি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি
নিবিড়

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আহারে !
আপনার না, গল্পের নায়কের জন্য।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সহানুভূতি যথা স্থানে পৌছানোর ব্যাবস্থা করব ।
নিবিড়

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা এটাই প্রথম পড়লাম। ভাল লেগেছে। যদিও পড়তে পড়তে গল্পের পরিণতি বোঝা যাচ্ছিল। তবুও লেখার গুণে তা একধরণের সরসতা পেয়েছে। আরো ভাল লিখুন, এই প্রত্যাশায় ----

অপরাজিতা।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম .........আপনাকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
নিবিড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।