বাংলাদেশ এবং একজন সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপতি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৯/১১/২০০৮ - ৭:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশ এবং একজন সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপতি

নন্দিনী

সম্প্রতি আমেরিকার নির্বাচনে বারাক ওবামা নির্বাচিত হওয়ায়, বাংলাদেশী কারো কারো মাথায় সঙ্গত কারণেই একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । এই কদিন আগেও যেখানে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি আমেরিকার মত দেশে কখনো কোন কালো মানুষ সাদা ঘরটিতে সর্বময় কর্তৃত্ব নিয়ে অধিষ্ঠিত হবেন - সেখানে আজ সত্যি সত্যি তাই ঘটেছে । ইতিহাসের এই পট পরিবর্তনকে কোন বিচারেই হেলাফেলা করে দেখার সুযোগ নেই ।

যদিও অনেকেই ওবামাকে সম্পূর্ণ কালো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হিসেবে মানতে রাজী নন –তারপরও তাঁরা অবশ্যই এটা স্বীকার করবেন, ওবামা বিশুদ্ধ সাদাও নন । সে যাই হোক । কথা হচ্ছে আমাদের দেশে কি কখনও এমনটা সম্ভব? অনেকের মত আমার মাথায়ও এই প্রশ্নটি গত কিছুদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ দেখছিনা । অন্তত নিকট ভবিষ্যতে তার কোন চিহ্ন তো দূরে থাক - দূর ভবিষ্যতে যে সম্ভব হতে পারে তার সামান্যতম আভাসও তো নেই । স্বীকার করতে হবে এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্ব করার মতো কোন বিষয় নয়। দেশটার জন্মলগ্নে একটা ভালো সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল প্রগতির পথে, আলোর পথে হাঁটার । অথচ অতি অল্প সময়ে নিদারুণ দুঃখজনক ভাবে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। পরিসমাপ্তি ঘটায় পাকিস্থানীদের রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারাই। কত সহজেই না আমরা উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করেছিলাম – যার খেসারত আমাদের এখনো দিতে হচ্ছে । আর কতকাল দিতে হবে কে জানে ।

আমরা, বাংলাদেশের মানুষেরা নিজেদের মোটামুটি প্রগতিশীল ভাবতে পছন্দ করি। আমার এখন সন্দেহ হয় এটা আসলে শহুরে মধ্যবিত্তদের বাইরের খোলসমাত্র । এরা নিজেরাও তা জানে। খানিক চায়ের কাপে ঝড় তোলা, গল্পে আড্ডায় বড় বড় কথা বলে গুলতানী মারা - কাজের বেলা সুখী গৃহকোণ আঁকড়ে পরে থাকা, এই মধ্যবিত্ত এখন যেনো বড় বেশী রকম ম্লান । হয়ত এমনটা হয়েছে পুঁজিবাদী সমাজের প্রবল ভোগবাদীতার কল্যাণে । দেশ জাহান্নামে যাক, কে ক্ষমতায় এলো গেলো, অথবা যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের বাড় বাড়ন্ত কোন কিছুই যেনো এদের গায়ে তাপ-উত্তাপ ছড়ায় না আর ! এমন আশ্চর্য্যরকম নির্জীব সময় বোধ এর আগে আর দেখেনি বাংলাদেশ । একটি দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী এমন নির্জীব হয়ে গেলে , সে দেশের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয় ।

অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা, যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করায় অভস্থ্য ছিলনা কোনকালে –তারাও কি আর আগের মতো এতটা সরল আছে? গ্রামে পথে ঘাটে হাটে মাঠে সর্বত্র মাদ্রাসা নামক এক উদ্ভট শিক্ষা ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সুকৌশলে । গ্রামীণ এই সরল মানুষগুলোর মগজের ভিতর ঢুকে মোল্লারা ঘূণ পোকার মত খেয়ে চলেছে । নানা নামে দেশের আনাচে কানাচে ইসলামী এনজিও ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়ে নিজেদের জালে গরীব মানুষগুলোকে আটকে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে বেশ আটঘাট বেঁধেই । পেট্রোডলারে সয়লাব এদের পকেট । তার থেকে উচ্ছিষ্ট কিছু দিয়ে সহজ সরল মানুষগুলোকে যেকোন কিছু বলে সহজে উত্তেজিত করা সম্ভব । সেটা যদি ধর্মের নামে হয় তাহলে তো কথাই নেই । এমন মোক্ষম সুযোগ মোল্লারা ছাড়বে কেন? এদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাদের সন্তানদের বিপথগামী করা হচ্ছে, জংগী বানানো হচ্ছে। বোঝে না বোঝে এরা জেহাদ ঘোষণা করে কথায় কথায় । অথচ এসব দেখার যেনো কেউ নেই ! আমরা দেখতে পাই দরকার হলেই মাদ্রাসা থেকে শয়ে শয়ে ছাত্রনামধারী তাদের ‘পোষা’ বাহিনী এনে ছেড়ে দেয় মাঠে । নির্দেশ পাওয়ামাত্র ঝাপিয়ে পড়ছে ওরা যেখানে সেখানে, যার তার উপর । এর সামান্য নমুনা তো আমরা দেখলাম এই কিছুদিন আগেই । লালন ভাস্কর্য সরানো নিয়ে যা কান্ড হয়ে গেলো এসব বিষয়গুলোকে তুচ্ছ করে দেখার কোন উপায় নেই। যারা বলেন এসব অল্প কিছু মানুষের কাজ, তারা আসলে আসল সত্য আড়াল করেন।

জামায়াত যে কৌশলে এগুচ্ছে, তাতে আগামীতে তারাই যে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হবেনা তাই বা কে জানে ! এখনি তো অনেক আলামত ফুটে উঠেছে ! যাই হোক, এবার আমাদের সুশীল (!) সমাজ এবং আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কথায় আসি। বিএনপির কথা এখানে আমি আনবো না, কারণ এদের কাছে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। এরা যখন যেমন তখন তেমন । ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়া পারেন না হেন কিছু নেই। তিনি এখন আবার হাস্যকর ভাবে আপোষহীন নেত্রীর ভেক ধরার চেষ্টা করছেন। আমাদের মধ্যে যারা আওয়ামীলীগ এবং এই দলটির নেত্রী হাসিনাকে মনে করেন প্রগতিশী্লতার ধ্বজাধারী –তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। এই দলের মুখোশ মাঝে মাঝেই খুব নগ্নভাবে খসে পড়ে। ক্ষমতার জন্য কখনও এরা নিজামীদের দ্বারস্ত হয়, কখনো খেলাফত মজলিসের সাথে ফতোয়া চুক্তি করে। আবার সময়ে সময়ে নিজেদের সুবিধানুযায়ী নীরব দর্শক সাজে । বক বক করা হাসিনার জবানে তখন কূলুপ আঁটা থাকে । ওদিকে নামে বেনামে জামায়াতীরা দেশের মানুষের নার্ভ পরীক্ষা করে দেখছে অহরহ ! কখনও বলে দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই ! কখনো দেশকে ভাস্কর্য শুণ্য করার ঘোষোণা দেয় । লালন এর মুর্ত্যি টেনে হিচড়ে নামায়- দেশের প্রবল প্রতাপশালী সরকার মুখে রা খাড়েনা । আমাদের হাসিনাও এক্কেবারে চুপ ! আর আমাদের সুশীল সমাজের কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো ।

বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ব্যক্তি, কিছু প্রতিষ্ঠান মিনমিনে প্রতিবাদ জানায়, তাদের কিইবা সাধ্য আছে! যারা কথা বলার, অন্তত বললে কিছু হবে, তারা চুপ করে, ঝিম মেরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, সবসময় । ধর্মবাদীদের তান্ডব তাই শৈনে শৈনে বেড়েই চলেছে । ভাবসাব দেখে মনে হয় ভীষন মজা পেয়ে গেছে আমিনী হুজুররা ! হবে নাইবা কেন? দেশের তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবি, সরকার বাহাদুর থেকে শুরু করে মহা পরাক্রমশালী আমাদের নেতা-নেত্রীরা যেহারে আমিনীদের পায়ের কাছে বসে জী হুজুর, জী হুজুর করেন –তাতে সব ব্যাটাকে ক্ষমতা থেকে ঘাড় ধরে নামিয়ে, মাদ্রাসার তালেব এলেম দের নিয়ে নিজেরাই যে এতদিনে রাজ্যপাট চালাতে শুরু করেননি হুজুররা, এই তো তাদের বাপের ভাগ্য ! তবে আরও কদিন পর ভাগ্যে কি আছে বলা যায়না । বটমূলে বসে একদিনের সখের পান্তা খাওয়া বাঙ্গালীয়ানা তখন বাপ বাপ করে পালাবার পথ পাবেনা !

আজকাল নিজামী মুজাহিদদের চকচকে চেহারা মোবারকের জেল্লা এবং বাতচিতের জোষ দেখলে ভীরমি খাই ! এত সাহস এদের বুকে ! কোত্থেকে আসে? এরা আজ ভাস্কর্য ভাঙ্গার কথা বলছে একদিন শহীদ মিনার ভাংতে গাইতি শাবল নিয়ে হাজির হবে - স্মৃতি সৌধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে মানুষকে লেলিয়ে দেবে, ধর্মের নামে ! ধর্ম বলে কথা ! কেউ টু শব্দটি করবেনা। কার এতো সাহস যে জাহান্নামের আগুণে পুড়তে রাজী হবে !

এদিকে আমদের বাম দল গুলোর কথা বলার কিছুই নেই আসলে। কেন যেনো আমার মনে হয় ‘উহারা পথ হারাইয়াছেন’ কি যে তাঁরা চান, হয়তো নিজেরাই জানেন না । অন্যদের আর জানান দেবেন কি !
আমাদের মিডিয়া মোঘলদের কথা একটু অবশ্য বলা দরকার । আমেরিকায় ওবামার জয়ে তারস্বরে বিজয় উল্লাস করতে পারবেন, কিন্তু নিজের দেশের কোন সংখ্যালঘুকে রাষ্ট্রপতি হতে সমর্থন দেবেন, এতটা আশা না করাই ভালো । আমেরিকায় এবার ওবামা সেখানকার মিডিয়ার যে সাপোর্ট পেয়েছিলেন তা তো অতুলনীয় । আমাদের মিডিয়া এমনটা করবে তা কি ভাবা যায়? প্রিন্ট মিডিয়ায় দুইদলের ধামাধরা ‘সম্মানিত’ সাংবাদিকরা তাদের নেত্রীর বন্দনা গেয়ে যে ভাবে কলম ধরেন - তাতে এদের চেতনার স্তর কোন পর্যায়ে আছে ভাবলে লজ্জাই লাগে । তথাকথিত প্রগতিশীল সাংবাদিকেরাও দেখেছি নারী নীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন। ধর্মের দোহাই পারেন । যদিও ঠীক আমিনীদের ভাষায় নয়, তাদের ভাষা আরও পরিমার্জিত, আরও মোলায়েম – আসল সুর কিন্তু একই ! চেহারার বিরক্তিকর কুঞ্চন তো আর লুকানো যায় না !
আর টিভি চ্যানেলগুলো? আছে কিভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মহাতারকা বানানোর অছিলায় নিজেদের পকেট ভরার ধান্ধায় ! জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বাদ দিয়ে ছেলেমেয়েরা এখন ক্ষেপে উঠেছে সবাই তারকা হবে ! ভাবি, এতো ‘তারার’ জায়গা কোথায় হবে ! অন্যদিকে আছে আরেক উৎপাত, পারলে সবাইকে মুসলমান বানিয়ে ছাড়বে যেনো পণ করেছে ! ‘ইসলামী সওয়াল জওয়াব’ এর পশরা সাজিয়ে বসার বহর দেখলে মাথা ঘুরে যায় ! কি সওয়াল জওয়াব নেই তাতে? যেনো এই দেশে আর কোন ধর্মের মানুষ নেই । এরা করবে সংখ্যালঘু কোন মানুষকে রাষ্ঠ্রপতি? তবেই হয়েছে !

আমাদের এইসব রাজনীতিক, এইসব শিক্ষক, এইসব সাংবাদিক, এই সব সুশীল সমাজ (নিজেরা নিজেদের সুশীল নাম দিয়ে জাতে উঠার কি নগ্ন চেষ্টা!) সব পচে যাওয়া, পোকায় খাওয়া, ঘুণে ধরা বাতিল মাল । হ্যা, তবে স্বপ্ন তো দেখতেই পারি ! নতুন কিছুর জন্য আমাদের তাই দরকার নতুন রক্ত, নতুন জন্ম, নতুন মানুষ ! খোলনলচে পালটে ফেলা নতুন সব......


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

বানানভুলগুলি রীতিমতো পীড়াদায়ক। ক্ষমা করবেন, কিন্তু আমি মনে করি লেখার সময় বানানের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি, বিশেষ করে এ ধরনের প্রবন্ধমুখী লেখার জন্যে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নন্দিনী  এর ছবি

দুঃখিত ! অবশ্যই সচেতন থাকা উচিত ছিল ।

নন্দিনী

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বড়ো সত্য বলেছেন, এই মধ্যবিত্ত এখন বড়ো বেশি ম্লান। আর স্বাধীনতার পরেই প্রগতিশীলতায় হোঁচট খাওয়ার পেছনে শুধু পাকিস্থানী প্রেতাত্নাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমাদের দোষ কোন অংশে কম নয়। আমরাই তাদের অনেকসময় কোলে টেনে এনে দুধ কলা খাইয়েছি। আর নতুন রক্ত, নতুন প্রজন্মের ব্যাপারে আমি তেমন একটা আশাবাদী হতে পারি না। হয়তো তারা পারবে নতুন পথে হাঁটতে, নতুন আলোর দিগন্তে এনে দাঁড় করাবে প্রিয় দেশটিকে, এমনটি ভাবতে অবশ্য ভালোই লাগে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভারতে হর-হামেশাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তাতে কী ভারতের জাতীয় চরিত্র অসাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে? রাষ্ট্রপতি পদে আবদুল কালাম আর সংসদে বিজেপি-শিবসেনা থাকলে কী হয় তা আমরা দেখেছি। প্রয়োজন রাষ্ট্রের চরিত্রটিকে অসাম্প্রদায়িক করা। তাহলে রাষ্ট্রের কোন আসনে কোন ধর্মের লোক বসলেন তা কোন সমস্যা হয় না। প্রতিকী পদ প্রদান মানসিকতার পরিবর্তন বুঝায় না। বরং এতে সংখ্যালঘুদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বঞ্চিত করার পথ খুলে দেয়।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় চরিত্রটির পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই। রাষ্ট্র যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাযুজ্য না রেখে রাষ্ট্রিয় দর্শন নির্মান করার চেষ্টা করে তখন এমনই হবার কথা। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং রাজনৈতিক ইনস্টিটিউশনগুলোর দর্শন নিয়ত পরিবর্তনশীল। আমি একথা বলছি না যে তাদের দর্শন আসমানী কিতাবের মত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তবে তাদের দর্শনের মূলনীতিগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন না থাকায় তারা বৃষ্টি হলেই ছাতা মেল ধরনের নীতিতে পরিচালিত হয়। এটি মেরুদণ্ডহীনতা, নীতিহীনতার পরিচায়ক। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও প্রথমে মেরুদণ্ড সোজা করে নিজের বিশ্বাসের কথা বলার ও কাজ করার চেষ্টা থাকতে হবে। কথাটা কেতাবী শোনালেও এপর্যায়ে তার কোন বিকল্প দেখতে পাচ্ছিনা।



তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সহমত।

স্নিগ্ধা এর ছবি

একমত। ওবামা নির্বাচিত হওয়াটা নিঃসন্দেহে একধরনের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে, সত্যি ব্যক্তিগতভাবে আমার ভাবতেই ভালো লাগে যে অ-শ্বেতাঙ্গ কেউ ওভাল অফিসে বসেছে - কিন্তু এটা মোটেই যথেষ্ট নয়। এমনও তো হতেই পারে, যে কার্যক্ষেত্রে তেমন কিছুই বদলালো না, তখন?

বরং আমার সবচেয়ে বড় আশঙ্কা, এই রিসেশনের চ্যালেঞ্জটা যদি ভালো ভাবে সামলানো না যায়, তাহলে সংখ্যালঘু হবার ব্যাপারটা জনমতের/জনপ্রিয়তার দিক থেকে পুরোপুরি ব্যাকফায়ার করতে পারে।

নন্দিনী এর ছবি

স্নিগ্ধা,

আমি কিন্তু এটা বলিনি যে সংখ্যালঘু কেউ রাষ্ট্রপ্রধান হলেই কোন দেশের রাতারাতি পরিবর্তন ঘটে যায়। আমিও মনে করিনা ওবামা নির্বাচিত হওয়ায় আমেরিকা দেশটা তার সব কালিমা ধূয়ে মুছে একেবারে সাফ-সূতরো হয়ে গেছে ! কিন্তু, যেটা হয় বলে মনে করি, তাহলো ( যদিও সংখ্যালঘু শব্দটাই আসলে আমার পছন্দের না) মানুষের মনে এক ধরণের ভরসা তৈরি হয় -'আমিও পারবো বা আমারাও পারি' । তখন সে অন্তত আর কিছু না হোক, হীনমণ্যতা থেকে বাঁচে । মানুষের এই ‘বোধ’ কিন্তু সামগ্রিকভাবে যেকোন দেশের জন্য-ই পজেটিভ ভূমিকা রাখে । বাংলাদেশ, আমেরিকা কোন দেশই তার থেকে ব্যতিক্রম নয় ।
আর রিসেশনের জন্য আমেরিকানরা ‘সংখ্যালঘু’ বলে ওবামাকে যদি দায়ী করে সেটা তো অবশ্যই হবে দুঃখজনক ! রিসেশন তো শুধু আমেরিকার জন্য আসেনি - ইউরোপেও তার ভয়াল থাবা বসিয়েছে ইতোমধ্যে । আসলে একজন মানুষের পক্ষে ম্যাজিকের মতো কিছু করে ফেলা বোধ হয় সম্ভব নয়।
ঠীক আছে । আর বক্ বক্ না করি ঃ-)

নন্দিনী

আলমগীর এর ছবি

এই রিসেশনের চ্যালেঞ্জটা যদি ভালো ভাবে সামলানো না যায়,

সবাই পুঁজিবাদের সমর্থক হলে কেমনে হবে দেঁতো হাসি ?

দিগন্ত এর ছবি

একমত। শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে কিছুই হয় না হাসি ভারতের সবথেকে খারাপ দাঙ্গাটা একজন মুসলিম রাষ্ট্রপতি থাকা কালেই হয়েছে। সুতরাং ... আজই কাগজে পড়লাম ওবামা নির্বাচিত হবার পর নাকি আমেরিকায় 'হেট ক্রাইম' বেড়ে গেছে। তাহলে আর লাভ কি হল কালো রাষ্ট্রপতি নিয়ে।

তাও কখনও কখনও মনে হয় যুগ যুগের ট্রাইবাল কালচারগুলো ছেড়ে কিছুটা তো এগোচ্ছে ... মানে একশো বছর আগের তুলনায় কিছুটা হয়ত সবই ভাল হয়েছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তানবীরা এর ছবি

বাংলাদেশী মধ্যবিত্তের মতো সুবিধাবাদী জাতী বোধকরি আর দুনিয়ায় একটাও নাই। দেশ কোনদিকে যাচ্ছে কারো কোন পরোয়া নেই, সবাই আছে বসুন্ধরায় শপিং, ফ্ল্যাট আর অন্য মজা লোটার তালে। সেই সুযোগে আছে সুযোগ সন্ধানীরা।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নন্দিনী এর ছবি

হুম!

নন্দিনী

অভিজিৎ এর ছবি

আমার হিন্দুত্ব আমি বিসর্জন দিয়েছি অনেক দিন হল হাসি তাই কোন হিন্দু কোন দিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলে আমি যে খুব বেশি আনন্দিত হব, বা এ নিয়ে মাথা ঘামাবো তা নয়। তারপরো অন্ততঃ বিষয়টা নিয়ে যে একটা প্রত্যাশা এবং প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে অনেকের মনে সেটাও কম নয়। সোনা বড়ুয়ার লেখা পড়লাম একটা এ নিয়ে। লেখাটার সব বিষয়ের সাথে একমত না হলেও মূল থীমের সাথে আমি একমত। এছাড়া কিছু মন্তব্য আছে এখানে

নন্দিনীকে ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে লিখবার জন্য।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নন্দিনী  এর ছবি

অভিজিৎ,
আপনাকেও ধন্যবাদ । একটা কথা না বলে পারছিনা - আপনি যতই নাস্তিক হোন না কেন, বাংলাদেশী মুসলমানদের কাছে কিন্তু আপনি একজন হিন্দুর-ই প্রতনিধি ! আপনার নামটাই এক্ষেত্রে বড় বাধা ঃ-)। আর হ্যা, দেখুন আপনি কখনো বাংলাদেশের নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন কিনা ! বন্যাকে নিয়ে আমরা ক্যাম্পেইন এ নামবো – যদি অবশ্য সে রাজী থাকে ঃ-)!!!

নন্দিনী

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নন্দিনী,
আপনার কথাটি খুবই আপত্তিকর কিন্তু। তবে খুবই সত্যি কথা। সেই "মুসলিম" সমাজের একজন হয়ে লজ্জ্বায় মাথা নামিয়ে নিলাম আমি।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সমান অধীকার প্রতিষ্ঠিত হোক এই স্বপ্ন দেখে যাবো চিরকাল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দুঃখিত, মানতে পারছি না।

ধর্মীয় লেবাসে মানুষকে একটা ছাঁচে ফেলার প্রবণতা বাংলাদেশীদের না বরং এটা উপমহাদেশের প্রতিটা অঞ্চলেই প্রকট। আর এর শুরুটা করে দিয়ে গেছে বৃটিশরা। এককভাবে তাই বাঙালীদের ওপর বিশেষ করে বাঙালী মুসলমানের ওপর অভিযোগের তীর ছুঁড়া কিছুটা অন্যায়।

পলিটিক্সটাকে আলাদা করে দেখতে পারলে অন্ততঃ গোটা উপমহাদেশে কেবল বাংলাদেশেই তুলনামূলকভাবে কম ডিসক্রিমিনেশন চোখে পড়বে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আলমগীর এর ছবি

এটা মানুষের প্রবৃত্তি।
নাস্তিক, সারা জীবন বাম রাজনীতি করেছেন। আমার শিক্ষক সহকর্মী।
আরেক হিন্দু সহকর্মীর বিয়ের সময় "পিতা" হয়ে সব আচার পালন করলেন। আমাদের কারোর কোন সমস্যা হয়নি যদিও।

অনেকে বলেন পুরনো লেনদেন। আমরা নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিলাম। নিগৃহীত হয়েছি, এখন কালের বিবর্তনের আগ্রাসীর ভূমিকা নিয়েছি।

আগে আরেকটা লেখায় এসব নিয়ে লিখেছিলাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বাংলাদেশে একজন সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার চেয়ে জরুরী বিষয় হলো সংখ্যালঘুদের প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দৃষ্টিভংগী ও আচরনের পরিবর্তন ।

সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের জন্য তৈরী করা অর্পিত সম্পত্তি আইন এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নির্বাক এর ছবি

খাঁটি কথা!

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সহমত।

নন্দিনী এর ছবি

জরুরী বিষয় হলো সংখ্যালঘুদের প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দৃষ্টিভংগী ও আচরনের পরিবর্তন ।

দৃষ্টিভংগী বদলালে অনেক কিছুই সম্ভব। মূল কথা আসলে এটাই । দৃষ্টিভংগীর বদল...

নন্দিনী

আলমগীর এর ছবি

মোর্শেদ ভাই
এটা নিয়ে কিন্তু বিতর্ক আছে।
মূল প্রশ্নটা হলো হিসাবটা কখন থেকে শুরু করবেন? ৭১ থেকে নাকি আরও আগে থেকে? যেসব সম্পত্তি হিন্দু জমিদারদের ছিল সেগুলো তারা কীভাবে অর্জন করেছিলেন? ব্রিটিশরা আমাদের জমির উপর কর্তৃত্ব কীভাবে পেল? সবমিলিয়ে হিসাবটা সহজ না। (তার মানে যে আমি অর্পিত আইনের সমর্থক তাও না।)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাসান মোরশেদ | বুধ, ২০০৮-১১-১৯ ২১:১৩
বাংলাদেশে একজন সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার চেয়ে জরুরী বিষয় হলো সংখ্যালঘুদের প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দৃষ্টিভংগী ও আচরনের পরিবর্তন ।

একমত।

নির্বাক এর ছবি

তানবীরা লিখেছেন:
বাংলাদেশী মধ্যবিত্তের মতো সুবিধাবাদী জাতী বোধকরি আর দুনিয়ায় একটাও নাই। দেশ কোনদিকে যাচ্ছে কারো কোন পরোয়া নেই, সবাই আছে বসুন্ধরায় শপিং, ফ্ল্যাট আর অন্য মজা লোটার তালে। সেই সুযোগে আছে সুযোগ সন্ধানীরা।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

আপনি শুধু সত্যি কথা বলে ফেলেন ...

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী... এগুলো কোনো ব্যক্তি না... প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি নিজে সেখানে খুব বড় কিছু না। রাষ্ট্র চরিত্র'র তিনি একজন বাহক মাত্র।

যে কারনে বাংলাদেশের শীর্ষাসনে বছরের পর বছর নারী চেপে থাকলেও নারী জাতির কোনো লাভ তাতে হয় না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নন্দিনী এর ছবি

প্রতিষ্ঠান এর বদল ও তো হবে না মানুষের মানসিকতাই যদি না বদলে থাকে ।

নন্দিনী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই প্রসংগে একটা পুরনো কথা আবারো বলিঃ
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার মুলনীতির একটা কিন্তু ' আল্লাহর উপর পূর্ন বিশ্বাস' ।
খেয়াল কইরা ।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রের নাগরিক মানেই একজন 'পূর্ন বিশ্বাসী' এবং সেই 'পূর্ন বিশ্বাস' অবশ্যই ' আল্লাহ'র উপর ।

যাদের ঈশ্বর, গড কিংবা অন্য কারো উপর 'পূর্ন বিশ্বাস' আছে কিংবা যারা সংশয়বাদী, আল্লাহ বিষয়ে নির্মোহ কিংবা অবিশ্বাসী - এই 'পূর্ন বিশ্বাস' এর রাষ্ট্রে তাদের অবস্থান কোথায়- ভেবে দেখা জরুরী ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভাল লাগল লেখাটা। ধন্যবাদ চিন্তাটা তুলে ধরার জন্য।

নন্দিনী এর ছবি

আপনাকে ও ধ্ন্যবাদ।
নন্দিনী

ধুসর গোধূলি এর ছবি

-

তথাকথিত প্রগতিশীল সাংবাদিকেরাও দেখেছি নারী নীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন।
এই এরাই কিন্তু দুই দলের নেত্রীদের পক্ষ নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন, যেমনটা আপনি বলেছেন। নারী নীতি- পুরুষ নীতি এখানে ফ্যাক্টর না, মূল কথা হলো বিকিকিনি। নিজের বিবেক বোধের কেনাবেচা হয় এখানে।

যদি সংখ্যালঘুকেই নেতা হিসেবে দেখতে চান তাহলে সন্তু লারমা'র পক্ষে প্রচারণা চালানো হোক। পিঠের পরে ডান্ডা ছাড়া এই মুহূর্তে আমাদের 'সিধা' হওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। প্রচলিত রাজনীতিবিদেরা মানুষের পর্যায়ে নেই। সবাই বিকিয়ে গেছেন। এদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করা ফলহীন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নন্দিনী এর ছবি

এই এরাই কিন্তু দুই দলের নেত্রীদের পক্ষ নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন,

বলবেনই তো ঃ-)
তাদেরই হাতের 'পুতুল' যে এনারা, তাই !

নন্দিনী

আলমগীর এর ছবি

সবই মোহ
কলিন পাওয়েল বা কন্ডালিজা রাইস কী করেছেন?
অন্যায় যুদ্ধে তাদের অবদান কতটুকু? ওবামা সব কালিমা ধুয়ে সাফ করে ফেলবেন এই তো মার্কনিরা আশা করছে? দেখা যাক।

পাকিস্তানের মতো দেশে হিন্দু প্রধান বিচারপতি হয়েই বা কী হলো?

সংখ্যার হিসাব কোন হিসাব না। মানুষ কখনই নির্মোহ নয়। আমাদের সবারই মনের কোণে কিছু একটা আছে। ইরাকে নারী-শিশু মরলে আমি যত উহু আহা করি, অন্যত্র করি না। আবার, শুধু মার্কিনীরা অবরোধ করেছে বলে যারা গলা ফাটান তারা সোভিয়েতকালে সমর্থন করেছেন।

দারিদ্র্য যতদিন আছে, মানুষের শিক্ষার খুব ভাল সুযোগ না সৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় না কিছু হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা ক্ষুদ্র প্রসঙ্গে বলি। আমরা এদেশের ইতিহাস বলার সময় বলি পাল আমল, সেন আমল, মুসলিম আমল, ব্রিটিশ আমল ইত্যাদি। আমরা কিন্তু ব্রিটিশ আমলকে খৃষ্টান আমল বা সেন আমলকে হিন্দু আমল বলি না। আমাদের মানসিকতা এভাবেই তৈরী করা হয়েছে।



তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।