বিশ্বাসীদের ধর্ম বিশ্বাস এবং বাস্তবতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৫/১২/২০০৮ - ৮:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(লেখাটি মুক্তমনায় ৮/১২/২০০৮ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে)
===================================
ধর্মের অলৌকিক বানী বিশ্বাস হয় নাই কখনোই। কিন্তূ চারপাশের সবাই এমন অবলীলায় সব বিশ্বাস করে কিভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর আজো পাই নাই। মোল্লাদের নাহয় এটা একটা ব্যবসা, কিন্তু সাধারন যারা আছে তারা কেন এই গাজাখুরি বিশ্বাস করে? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার সাধারন ধার্মিক বন্ধুবান্ধবের সাথে আমার জীবন যাত্রায় কোনো তফাত নাই। এদের প্রায় সবাই বাস্তববাদী, উচ্চশিক্ষিত জীবনমুখী মানুষ। বিশ্বাস এরা যাই করুক, বছরে কয়েকদিন জুম্মাঘরে যাওয়া ছাড়া আচার-আচরনে এবং অন্য সমস্ত ব্যাপারে চিন্তাভাবনায়ও এদের সাথে আমার কোনো তফাত নাই। চারপাশের এই সাধারন মুসলমানদের ধর্মীয় চিন্তাভাবনা, বানী, আদর্শ ও বিশ্বাসের সাথে তাদের আচার-আচরন এবং জীবনযাত্রার পার্থক্য তুলে ধরার আগ্রহ থেকে এ লেখা।
===================================

ধর্ম নিয়ে মুক্তমনার প্রথম দিকের লেখাগুলোর মধ্যে অনন্তর অনুলিখনে সুমিত্রা পদ্মানাভান এর মানুষের ধর্ম- মানবতা তে ধর্মের ধর্ম নিয়ে উনার লেখাটা আজো হৃদয় ছুয়ে আছে। চলন্তিকা বাংলা অভিধানে ধর্ম কথাটার অর্থ করা হয়েছে এভাবে;

প্রথম অর্থেঃ সৎকর্ম, সদাচার, পূন্যকর্ম, কর্তব্যকর্ম, সমাজ হিতকর বিধি

দ্বিতীয় অর্থেঃ পরস্পরাগত সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্বতি, সংস্কার রীতিনীতি এবং ঈশ্বর পরকাল বিষয়ক মতামত

তৃতীয় অর্থেঃ বস্তু বা ব্যক্তি নির্বিশেষে- স্বভাব, গুন বা শক্তি

ধর্মের এই প্রথম সংগাটি সব ধার্মিকরা আদর্শ হিসাবে মানে। সৎকর্ম, সদাচার, পূন্যকর্ম, কর্তব্যকর্মের কথা সব ধর্মেই বলা আছে। যদিও এই আদর্শ গুলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো তাদের পৈত্রিক আদর্শ বলে দাবি করে, বাস্তবতা হচ্ছে, এই আদর্শগুলো বুদ্ধিভিত্তিক সমাজব্যবস্থার। সমস্ত সভ্য সমাজব্যবস্থাই সৎকর্ম, সদাচার, পুন্যকর্ম, কর্তব্যকর্ম, সমাজ হিতকর বিধিকে ঊৎসাহিত করে। যে কোন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষই সৎকর্ম, সদাচার করে। আর বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অসৎকর্ম, অসদাচার রোধের জন্য আছে আইন আদালত। কোন সমাজব্যবস্থাই অসৎকর্ম, অসদাচার ঊৎসাহিত করে না, ধর্ম যার যাই হোক না কেন। এই আদর্শগুলো ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের মোড়ক হিসাবে ব্যবহার করে। আর সাধারন ধার্মিকরা এই মোড়কটাকেই সমস্ত ধর্মীয় মিথ্যা আর কুসংষ্কারের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে।

ধর্মের দ্বিতীয় সংগাটি হচ্ছে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক সংগা। ধর্মগুলোর মধ্যে আদর্শগত মৌলিক কোন তফাত না থাকলেও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্বতি, সংস্কার রীতিনীতি ও ঈশ্বর পরকাল বিষয়ক মতামতে বয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। আদর্শগুলো ধর্মের মুলমন্ত্র হিসাবে প্রচার করলেও এবং আদর্শগত তেমন কোন তফাত না থাকলেও এই বিশ্বজনীন আদর্শগুলো কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর আসল রূপ নয়। বরং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্বতি, সংস্কার রীতিনীতি ও ঈশ্বর পরকাল বিষয়ক মতামত গুলোই হয়েছে ধর্মের মূলরূপ।

তথাকথিত সাধারন ধার্মিক মুসলমানগনও মুখে বলে ধর্মের আদর্শগত রূপের কথা, আর আকরে ধরে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক রূপটাকেই। আদর্শ ভুলে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক রূপটাকে আকরে ধরার ফলেই আজকের এই বিভেদ, হিংসা, মারামারি। ধর্মগুলোতে খোদার যে সর্বশক্তিমান, মহানুভব রূপের বর্ণনা দেয়া আছে, যা এই ধার্মিকের দল সকাল বিকাল জিকির করে, তারা কখনো ভাবে না যে এ কেমন মহানুভব খোদা যে সৎকর্ম, সদাচার, কর্তব্যকর্ম, সমাজ হিতকর কর্মের চেয়ে উপাসনা পদ্বতি, সংস্কার রীতিনীতি আর পরকাল বিষয়ক মতামতে বেশি মূল্য দেয়।

মৌলিক বিশ্বজনীন আদর্শগুলাকে এরা ধর্মের লেবেলে মুড়িয়ে এরা যেমন নির্লজ্জ ভাবে প্রচার করে ঠিক তেমনি সামাজিক ভন্ডামির সহিত পালনও করে। উদাহরন??? কুরবানির উদ্দেশ্য নাকি আত্মত্যাগ, এই আত্মত্যাগ হলো ইসলামের আদর্শ। আর এই আত্মত্যাগ এরা করে লোক দেখানো গরু খাওয়ার মত সামাজিক ভন্ডামির মাধ্যমে। রোজা হচ্ছে আত্মসংযম। আর এই আত্মসংযম এরা করে দিনে না খেয়ে। আর ভন্ডামি শুরু হয় মাগরিবের পর। সৎকর্ম, সদাচার এই গুলা নিয়া প্রতিযোগিতা হয় না, প্রতিযোগিতা হয় গরু খাওয়া নিয়া। আর রায়ট হয় গরুখোর আর গরু যারা খায় না তাদের মধ্যে। হায়রে আদর্শ।

ধর্ম বিশ্বাস

বিশ্বাস একটা একান্ত ব্যাক্তিগত অনুভুতি। বিশ্বাস মানুষ তখনি করে, যখন প্রমান করতে পারে না বা প্রমান করতে চায় না। মনে করেন আমি বললাম যে আমার কাছে কোন টাকা নাই এবং আপনি চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনি যদি পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে পরীক্ষার পর এটা প্রমান হয়ে যাবে আমার কাছে টাকা আছে কি নাই, বিশ্বাসের আর কিছু নেই। আর যদি বিশ্বাস করেন, তার পেছনে যত কারনই থাক না কেন ফাকির একটা সম্ভাবনা থেকেই যাবে। আজকাল শিক্ষিত মুসলমানরা চোখের গঠন, নাকের গঠন মার্কা ভুয়া যুক্তি দিয়া প্রমান করার চেষ্টা করে যে খোদা আছে। তারা এইটা আমলে নেয় না যে যখন তারা বলে তারা খোদায় বিশ্বাস করে, এই বিশ্বাস শব্দটাই প্রমান করে যে তাদের কাছে কোন প্রমান নাই এবং এই বিশ্বাসটা সত্যি না হওয়ারও একটা সম্ভাবনা সবসময়ই আছে। এই ফাকির সম্ভাবনাটা গ্রহন করার অক্ষমতাটার কারনেই বিশ্বাস হয়ে যায় অন্ধবিশ্বাস। আর এই অন্ধবিশ্বাস তাদের বানিয়ে দেয় ধর্মান্ধ।

বিশ্বাসের আরেকটা ব্যপার হচ্ছে আপনি বিশ্বাস না করেও বলতে পারেন যে আপনি বিশ্বাস করেন। আপনি চাইলে একই সাথে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস দুইটাই করতে পারেন। যখন আমি বলেছি যে আমার কাছে কোন টাকা নাই এবং আপনি চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, আপনি হয়তো ভদ্রতা করে পরীক্ষা করলেন না। এই ক্ষেত্রে আপনি বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস দুইটা একই সাথে করতে পারেন। আপনার একটা অংশ বিশ্বাস করতে পারে আমার কাছে টাকা নেই, পাশাপাশি আপনারই আরেকটা অংশ বিশ্বাস করতে পারে যে আমার কাছে টাকা আছে আমি শেয়ার করব না। এই ব্যপারটা স্বভাবিক। যেটা স্বাভাবিক না সেটা হচ্ছে আপনি যখন পুরাপুরি বিশ্বাস না করে বলেন বিশ্বাস করেন। এটা হচ্ছে নিজের সাথে প্রতারনা, ভন্ডামির উৎস। যে মানুষ নিজ এর সাথে প্রতারনা করে তার দ্বারা সৎকর্ম, সদাচার ও কর্তব্যকর্ম খুব বেশি হওয়ার কথা না।

চারপাশের উচ্চশিক্ষিত মুসলমানরা

এই মুসলমানের দলের প্রায় সবাই বাস্তববাদী, উচ্চশিক্ষিত জীবনমুখী মানুষ। এরা সবাই গর্বিত মুসলমান। বিশ্বাস এরা যতটুকুই করুক না কেন কথায় পুরা ১০০% বিশ্বাসী। নাকের মিরাকল, চোখের মিরাকল মার্কা সমস্ত ডকুমেন্টারি এদের আয়ত্তে। বিজ্ঞানের সমস্ত ব্যখ্যা যে কোরানে আছে এটা আয়াত সহ ব্যখ্যা করে বু্ঝিয়ে দিতে পারবে। কোরান হাদিস পুরা ঝাড়াঝাড়া। টেরোরিস্টরা এদের মতে কোরানের ভুল ব্যখ্যাকারী আবার ৯/১১ সম্পর্কে এদের মতামত হচ্ছে আমেরিকার একটা শিক্ষার দরকার ছিল। আমেরিকার ইরাক আক্রমন হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে আক্রমন আর ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলযির বাংলা আক্রমন হচ্ছে মানবতার জন্য আক্রমন। এরাই হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত মুসলমান।

অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে উচ্চশিক্ষিত মুসলমানদের প্রাথমিক ধারনা হচ্ছে এরা কোরান পড়ে না তাই অবিশ্বাসী। কোরান এর আয়াত নিয়ে কথা বললে এরা বলবে শানে-নজুল জানে না তাই অবিশ্বাসী। শানে-নজুল আর আয়াত একত্র করে দেখলে এরা বলে এই আয়াত রূপক অর্থে লেখা, এর আসল ব্যখ্যা জানে আলেমের দল। আর যে আলেমের লেখা তাদের ভালো লাগে না তারা হচ্ছে ভুল ব্যখ্যাকারী। আর এই ভুল ব্যখ্যাকারী আলেমের দল থেকেই হয় টেরোরিস্ট।

আবিশ্বাসীদের সম্পর্কে এদের প্রাথমিক ধারনাটা ভুল। মুসলমান থেকে যারা অবিশ্বাসী হয়, কোরান পড়েই এদের অবিশ্বাস শুরু হয়। শানে-নজুল, হাদিস আর আলেমদের লেখায়ও যারা বিশ্বাস যোগ্য কিছু খুজে পায় না তারাই হয় অবিশ্বাসী। এই অবিশ্বাস দৃঢ় হয় যখন তারা বিবর্তনবাদ সম্পর্কে জানে, আল্লাহ তাদের দিলে তালা মেরে রেখেছে এই জন্য না। অবিশ্বাসীরা প্রশ্ন করে, জানতে চায়, বুঝতে চায়। এই জানতে চাওয়া, বুঝতে চাওয়া কাউকে ভুল ব্যখ্যাকারী বানায় না, বানায় সত্যসন্ধানী। আর এই মুক্তমনা সত্যসন্ধানীদের মধ্যে যারা পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের উর্ধ্বে উঠতে পারে তারাই হয় অবিশ্বাসী, কোরানের ভুল ব্যখ্যাকারী না।

যখন উচ্চশিক্ষিত মুসলমানরা বলে যে তারা নিয়মিত কোরান পড়ে, অবিশ্বাসীরা বরং অবাক হয়, অবাক হয় উচ্চশিক্ষিত মুসলমানদের প্রশ্ন করার, জানতে চাওয়ার এবং বুঝতে চাওয়ার অক্ষমতা দেখে, অবাক হয় তাদের শিক্ষার মান দেখে; পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংকীর্নতার জালে জড়িয়ে পরা দেখে। এই মুসলমানের দল যখন অবিশ্বাসী আর কট্টর বিশ্বাসীদের বলে ভুল ব্যখ্যাকারী, তখন এদের ঠিক-ব্যখ্যা (!!!) সম্পর্কে জানার আগ্রহ একটুতো হয়ই।

এদের ঠিক ব্যখ্যা হচ্ছে কোরান একটি পূর্নাংগ জীবনাদর্শন। এই জীবনে যা জানার আছে তার সবই কোরানে আছে। দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য যা জানা দরকার তার সবই আছে কোরানে আর হাদিসে। জ্ঞান বিজ্ঞানের চাবিকাঠি এই কোরান। যেহেতু কোরান আল্লাহর বানী এবং হাদিস নবীর বানী, তাই এখানে কোন ভুল থাকতে পারে না। এই ঠিক ব্যখ্যাকারীর দল হচ্ছে স্বঘোষিত বিশ্বাসীর দল।

এই ঠিক ব্যখ্যাকারী উচ্চশিক্ষিত,স্বঘোষিত বিশ্বাসী মুসলমানরা বিশ্বাস করে ঠিকই, কিন্তু কতটুকু। বিশ্বাস মাপার কোন দাড়িপাল্লা নাই, তাই বিশ্বাস মাপতে হয় কর্মকান্ড দেখে। এদের অধিকাংশের কর্মকান্ড দেখে বুঝার কোন উপায় নাই যে এরা বিশ্বাসী। বছরে কয়েকবার জুম্মা পরা আর কয়েকদিন না খেয়ে রোজা থাকা ছাড়া জীবনযাত্রায় এদের সাথে অবিশ্বাসীদের কোন তফাত নাই। এক ওয়াক্ত নামাজ না পরার শাস্তি নাকি ১ লক্ষ ৮৪ হাজার বছর দোযখে পোড়ানো। একটা মানুষ যে বলে সে মনে প্রানে ইসলামে বিশ্বাস করে, সে কিভাবে নামায পরে না। দোযখের শাস্তির বর্ণনা এবং কারন জানার পরও এরা ধর্ম পুরাপুরি পালন করে না। অথচ এই একই লোক আবার দুনিয়াদারীর কোন ব্যপারে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয় না। ধর্ম এরা মনমত মানে, কিছু মানে, কিছু মানে না। অথচ ইসলাম ধর্মে এমন ইচ্ছা মত মানার কোন সুযোগের কথা বলা নাই। সব জানার পরেও, ধর্মের কোন কিছু ঠিক ভাবে পালন না করলেও, এরা মুসলমান। এই ঠিক ব্যখ্যাকারী বিশ্বাসীর দলই আবার আবিশ্বাসীদের নৈতিকতা এবং আদর্শ নিয়ে প্রশ্ম তোলে। এরা মনে করে সুপারমলে এরা চুরি করে না খোদায় ভয়ে (!!!), মলকপ এর ভায়ে না।

বিশ্বাসী মুসলমানদের এই কোরান হাদিস না মানার কোন অজুহাত নাই। এরা বলতেও পারেনা যে কোরান মেনে জীবন যাপন সম্ভব না, কারন এইটা বলা আবার ধর্মে নিষেধ আছে। এরা তাই বলে “চেষ্টা করি”। এই চেষ্টা করি বলাটাও তাদের বিশ্বাস করি বলার মত আরেকটা মিথ্যা। এরা দুনিয়াদারীর কোন সামান্য জিনিসের জন্য যতটুকু চেষ্টা করে, তার কানাকড়িও করে না ধর্মের জন্য। এরা হচ্ছে সেই ইমামের মত যে সারাদিন মসজিদে বসে জিকির করে আল্লাহ রাজ্জাক আল্লাহ রাজ্জাক (আল্লাহ রিজিকদাতা), আর মহল্লার মানুষ যখন বলে হুযুর সামনের মাসে বেতন দিতে পারবনা তখন এই মসজিদ বাদ দিয়া অন্য মসজিদে চলে যায়। সারাদিন যে জিকির করল আল্লাহ রিজিকদাতা, সেই আল্লাহ যে রিজিক দিতে পারে এই বিশ্বাস নাই, বিশ্বাস আছে সামনের মাসে এই মহল্লার মানুষ যে বলছে বেতন দিতে পারব না তার উপর, বিশ্বাস আছে নতুন মসজিদের মুসুল্লিদের উপর।

চারপাশের উচ্চশিক্ষিত বিশ্বাসী মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস আর ধর্ম পালনের চেষ্টারও একই অবস্থা। এরা জানে এদের বিশ্বাসে ঘাপলা আছে, বিশ্বাস এদের যায় যায় অবস্থা, তাই এদের ধর্মানুভুতি খুব বেশি। তাইতো ধর্মের কথায় এর ঝাপিয়ে পরে, সহনশীলতার ধার ধারেনা। কথায় কথায় এরা মনে করিয়ে দেয় ইসলামের ইতিহাস, নবীর উপর ধর্মের কারনে অত্যাচার, আর নবীর সব মাফ করে দেয়া। আর কেউ “মহাম্মদ কদু” নামের কার্টুন ছাপালে শুরু হয় জ্বালাওপোড়াও। ইসলামে বিশ্বাস করি, চেষ্টা করি বলে এরা এদের খোদা, ধর্ম আর নিজের সাথে শুধু প্রতারনাই করে।

এই মুখে খোদায় বিশ্বাসী, এবং কাজ কর্মে খোদার আদেশের ধার ধারিনা মার্কা নিজের সাথে প্রতারনা করা, ভন্ড, নাম- স্বর্বস্ব মুসলমানরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। এরা টেরোরিস্ট না, কারন এরা কোরান হাদিস পুরাপুরি মানে না, এবং আত্মঘাতী হওয়ার মত অসৎ সাহস এদের নাই। এই সংখ্যা গরিষ্ঠ ভন্ড বিশ্বাসীদের আপত দৃষ্টিতে নিরীহ গোবেচারা মনে হলেও এরা তা না। এরাই ধর্মীয় সমস্ত অপকর্মের সামনের সাড়িতে থাকে। অন্ধবিশ্বাসে ধর্মান্ধ এরা নিজের ও তাদের খোদার সাথে বছরের পর বছর প্রতারনার ফলে এদের ভিতর জমতে থাকে ক্ষোভ। এই ক্ষোভ নিয়া ঘাপটি মেরে থাকে এরা, তাই ধর্মীয় রায়টে এরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। আজকে দেশে ধর্মের নামে যে উন্মাদনা, বকের ঠ্যাং ধরে টানাটানি, এই সংখ্যা গরিষ্ঠরাই তার উৎসাহ দাতা। এরা টেরোরিস্টদের কর্মকান্ডে পুলকিত হয়, লজ্জায় কাঠমোল্লাদের সাথে মিছিলে যায় না। কিন্তু এরাই ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার। মৌলবাদের মদতদাতা।

প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই রাজনীতিবিদদের নির্লজ্জ দুর্নীতির বর্ননা দেখি। এর দায় কিন্তু রাজনীতিবিদদের একার না। গনতন্ত্রে জনগন তেমন সরকারই পায়, তারা যার যোগ্য। এই নির্লজ্জ দুর্নীতিপরায়ন অসৎ রাজনীতিবিদরা যেমন সাধারন মানুষের সহায়তায় প্রতি নির্বাচনে দুর্নীতি করার সুযোগ পায়, তেমনি ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদি আর টেররিস্টরাও সংখাগরিষ্ঠ ধর্মান্ধ মুসলমানদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যায়।

আজ সময় এসেছে এই সত্য উপলব্ধি করার, সময় এসেছে নিজের সাথে প্রতারনা বন্ধ করার; ধর্ম ব্যাবসায়ী, মৌলবাদী আর টেররিস্টদের বিরুদ্ধে দাড়ানোর। টেররিস্টদের কোন ধর্ম নাই বা টেররিস্টরা কোরানের ভুল ব্যখ্যাকারী, এই সমস্ত মিথ্যা ঝেড়ে ফেলে মৌলবাদের মূল সহ উপড়ে ফেলার এখনি সময়।
==========
আবদুল্লাহ আল মামুন
সদস্যনাম: songsoptok


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।