একটা ভালো মেয়ের গল্প বলি।আমি নিশ্চিত গল্পটা শুনে আপনি বলবেন এটা একটা বলার মতো গল্প হলো! এমন তো প্রায়ই ঘটে। তারপরও আমি গল্পটা বলতে চাই।
গল্পের শুরুতেই একটা প্রশ্ন এসে যায়। ভালো মেয়ে আসলে কাকে বলা যায়? রুমকি কী এমন করেছে বা তার কী গুণ আছে যে আমি তাকে ভালো মেয়ে বলছি! গল্পটা পুরোপুরি শোনার ধৈর্য যদি আপনার হয়, তাহলে রুমকি ভালো মেয়ে কিনা এই রায় আপনিই দিতে পারবেন।
ভূমিকাতে বেশি সময় নিয়ে ফেললাম। এখন গল্পটা সংক্ষেপে বলে ফেলি।
রুমকি ছোটোবেলা থেকেই খুব শান্ত। বাবামায়ের একমাত্র মেয়ে, তিন ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন হওয়া সত্ত্বেও সে কোন অন্যায় আবদার করেনি। বাবা মা যা বলতেন, শুনতো। ওর ভাইরা খুব ভালো ছাত্র। সবাই আশা করতো রুমকিও ভালো করবে। তাই সে খুব পড়াশোনা করতো আর ক্লাসে প্রথম হতো।
দিন যায়। রুমকি একটা ভালো মেয়েদের কলেজে ভর্তি হলো। রুমকির কোনো ছেলেবন্ধু ছিলোনা। ও হয়তো ওর পরিবার, পরিবেশ থেকে এই ধারণা পেয়েছিল যে ভালো মেয়েদের ছেলেবন্ধু থাকেনা। তাই সহপাঠি ছেলেদের সাথে গল্প করলেও কারো সাথে ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়নি। রুমকি নামাজ পড়ে সেই ছোটোবেলা থেকে। ও বিশ্বাস করে আল্লাহকে আর ওর মাকে। ওর স্বভাবটা অন্তর্মূখী হওয়ায় একমাত্র মার কাছেই ওর মনের কথা বলতো। ওর কখনো কষ্ট পেলে, কোন সমস্যায় পড়লে ওর মাই ঠিকমত বুঝতে পারতো, ওকে সপোর্ট দিত। মাকে ও খুব ভালোবাসতো। তাই মা যদি কষ্ট পায় এই ভয়ে নিজের অনেক কষ্ট, সমস্যাও রুমকি চেপে রাখতো। মাকে বলতো না। রুমকি সবসময সবাইকে খুশি রাখতে চেষ্টা করতো। বাবামায়ের একমাত্র মেয়ে, তিন ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন হয়েও বেশি বেশি আদর-আহ্লাদ পাওয়ার চেষ্টা না করে নিজেই কেন যে সবাইকে খুশি রাখতে চাইতো, এটা একটা রহস্য।
যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষাটাও পাশ করার পর রুমকির জন্য পাত্র দেখা শুরু হলো। পাত্র পছন্দ হয়না। কখনো বাবামার হয়না, কখনো রুমকিরও হয়না। এইভাবে কিছুদিন যায়। অবশেষে একজনকে সবার খুব পছন্দ হলো। আর এখান থেকেই গল্পের শেষটা শুরু।
রুমকি আর ঐ লোকের দেখা হলো একদিন। কথাও হলো। সমস্যার শুরুটা এখানেই। লোকটাকে রুমকির একটুও ভালো লাগলো না। বরং খারাপই লাগলো। রুমকি ওর খারাপ লাগার কথা জানালো সবাইকে আর আশ্চর্যের সাথে দেখলো যে কেউ ওর কথাকে পাত্তা দিচ্ছে না। লোকটাকে যেহেতু সবার পছন্দ হয়েছে তাই বিয়েটা হতে হবে। রুমকির পছন্দ না হলেই বা কি! জীবনে এই প্রথম ও তীব্র প্রতিবাদ জানালো। কারন ওই লোকের সাথে তাকে সারাজীবন থাকতে হবে, ওই লোক তাকে স্পর্শ করবে ভাবতেই বিতৃষ্ণায় ওর গা গুলিয়ে ওঠে। কিন্তু কী আশ্চর্য! কেউ ওর প্রতিবাদে কান দিলো না। রুমকি ওর একমাত্র ভরসা, বিশ্বাস মাকে বললো, কেঁদে কেঁদে বললো বিয়েটা যেন না হয়। আরে! এটা কি হলো! মাও তো শুনলো না! ওর কষ্টটা অনুভব করলো না। হঠাৎ করে রুমকি বুঝতে পারলো ও একদম একা। রুমকির কান্না আর থামলো না। একদিন যায়। দুইদিন যায়। এইভাবে তিন চারদিন। রুমকির কান্না থামে না। কিন্তু তাতে কারো কিছু আসে যায় না। কারন এইসব তো silly sentiment! বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।খুব অভিমান হলো রুমকির। কিন্তু অভিমানে কার কী আসে যায়!
একটানা সাতদিন অসহায়ের মতো কাঁদলো রুমকি। আশা করেছিলো আর কেউ না হোক মা এসে বলবে এই বিয়ে হবে না। কেউ এলো না।
সন্ধ্যা। রুমকি ঘরে বসে আছে। আলো জ্বালায়নি।কাঁদছেওনা। মা ঘরে এলেন। রুমকির কাছে এসে বসলেন। রুমকি তাকালো। ওর দৃষ্টিটা ঠিক বোঝা গেলনা। মা ওকে আদর করে বুঝাতে শুরু করলেন এই বিয়েটা করলে ওর কি লাভ হবে।রুমকি অবহেলায় একটা বালিশ ফেলে দিল মেঝেতে। ভয় পেয়ে মা ভালো করে তাকালেন ওর দিকে। দুর্বোদ্ধ দৃষ্টি রুমকির। এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ বিছানার পাশে রাখা বইগুলো ফেলে দিল মেঝেতে। তারপর শূন্য, কিছুটা উদভ্রান্ত অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।.................................
এরপর হয় আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমার গল্প এখানেই শেষ। এটা কি একটা বলার মতো গল্প হলো!
মন্তব্য
অতিথি লেখক, আপনার নাম জানা হলো না।
জোর করে বিয়ে দেয়া মনে হয় আমাদের দেশে একেবারে সাধারণ একটা ঘটনা। ইদানিং অবশ্য কিছুটা কমেছে। আজকাল বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় আগের চেয়ে বেশি। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে যে জোরাজুরির ঘটনা ঘটে না, তা না। মেয়েদেরকেই এটা বেশি ফেস করতে হয়। আর এটাতে আমার ভীষণ আপত্তি আছে। বিয়ে কোনো ছোটখাট ব্যাপার না। আর একবার একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, বাকিটা জীবন তার জের টানতে হয়।
অতিথি লেখকের নামটা কি?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
- আমাদের ঐতিহ্যে বোধহয় যিনি বিয়ে করবেন তার চাইতে যিনি বিয়ে দিবেন তার মতামতটা বেশি গ্রাহ্যকর!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি দুঃখিত আমার নামটা লিখতে ভুলে গিয়েছি। নাম আমার বই-খাতা।
এটা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারন একটা ঘটনা। কিন্তু রুমকির (ছদ্মনাম) অসহায়তা, কষ্ট আমাকে এত নাড়া দিয়েছে যে share না করে পারলাম না।
কিপিটাপ...
ঠিক বিয়ে টা একান্তই নিজের ব্যাপার কারন সারাটা জীবন যার সাথে কাটাবে সে যদি নিজের মন মত না হয় তা হলে চলে না । বাবা মা কে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট হয় ।
আমি নেত্রকোনা আমার জীবন টাও এই রকম
নতুন মন্তব্য করুন