যুক্তরাষ্ট্রে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হল ৮ মুসলিম যাত্রীকে : কেমন হবে অভিবাসীদের মনের বোঝাপড়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৭/০১/২০০৯ - ৭:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ২ জানুয়ারি ওয়াশিংটন থেকে ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার ইস্যুতে একটি মুসলিম পরিবারের আট সদস্যকে এয়ার-ট্র্যানের একটি ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি এফবিআই তাদেরকে সম্পুর্ন নির্দোষ এবং সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষনা দেওয়ার পরও ওই যাত্রীদের এয়ার-ট্র্যানের অন্য কোনো ফ্লাইটে গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায় এয়ার-ট্র্যানের কর্মকর্তারা।
আসলে নাইন-ইলেভেনের পর এ জাতীয় ঘটনা আরো ঘটেছে। আমেরিকার বাইরেও ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্টি-মুসলিম সেন্টিমেন্ট লাফ দিয়ে বেড়ে গেছে সে সময়টাতেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টা আরো ভাল হবে না খারাপের দিকে যাবে সেটা বলা বেশ কঠিনই মনে হচ্ছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে গাজায় ইজরায়েলি আগ্রাসন। প্রতিদিন নিহত হচ্ছে শত শত নারী, পুরুষ, শিশু। পোলারাইজেশন হয়তো আরো বাড়বে।
মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম হলেও ধর্মীয় আচারের থেকে আরো আনেক আগে থেকেই আমি চ্যুত। হুজুরদের মার্কিন বিরোধী সেন্টিমেন্ট আমাকে স্পর্শ করার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এরকম ঘটনা মনে যেন একটা অস্বস্তির বারতা পৌঁছে দিয়ে যায়। হয়ত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হচ্ছে বলেই। কিংবা সেইসব কাছের লোকদের কথা ভেবে একসময় যারা কাছেই ছিল কিন্তু এখন প্রবাসী।
বিমান থেকে মুসলিম পরিবারের আট সদস্যকে নামিয়ে দেওয়ার খবরটি পড়ার পর আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে আমার সেইসব বন্ধুদের কথা যারা আরো ভাল জীবনের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয়েছে। আমি জানি এদের অনেকেই মনোজগতে ঘোরতর মুসলমান। আমি জানি ইউরোপ বা আমেরিকার সমাজে খাপখাওয়ানোর মতো ধর্মীয় বা সামাজিক লিবারেলিটি এদের অধিকাংশেরই নেই। এইসব মানুষদের যখন নিরাপত্তার ইস্যুতে প্লেন বা বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বা হেনস্থা হতে হচ্ছে অন্য কোনো ক্ষেত্রে তখন তাদের মনের অবস্থাটা কেমন দাঁড়াচ্ছে! এই অপমান সহ্য করা তাদের জন্য সহজ হওয়ার কথা নয় কারন এদের অনেকেই নিজদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থায় থেকেও যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাতে মাইগ্রেট করেছে। নিজের সাথে বোঝাপড়াটা তাদের কঠিন হওয়ারই কথা।
(যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যারা সচলায়তনে লিখে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে এরকম ঘটনায় মনের অন্তর্জাত প্রতিক্রিয়াটা জানতে চাই)।

ধানসিঁড়ি


মন্তব্য

এনকিদু এর ছবি

খবরের রেফারেন্স ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক রেফারেন্স, একটা দিচ্ছি,

http://edition.cnn.com/2009/US/01/01/family.grounded/index.html

সুবিনয় মুস্তফী যে ঘটনার রেফারেন্স দিয়েছেন সেটা কিন্তু অন্য একটি ঘটনা

ধানসিঁড়ি

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আরো কিছু কেস আছে - তবে এই ছেলে পেমেন্ট পেয়েছে

http://news.bbc.co.uk/2/hi/americas/7814250.stm

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অদ্ভুত তো ! মন খারাপ

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

একটি ভাল খবর সেটা হচ্ছে এয়ার-ট্র্যান এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছে, দেখুন

http://www.iht.com/articles/ap/2009/01/02/america/Muslim-Passengers-Removed.php

ধানসিঁড়ি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খবরটা দেখেছি অনেক আগেই। ভোঁতা হয়ে গেছে অনুভূতি। এই স্টিরিওটাইপগুলো এমনি এমনি যাবে না এদের।

আমার নিজেরই একটা পুরনো লেখায় চোখ বুলালে বুঝে যাবেন কেন আমি এই প্রসঙ্গে নির্বিকার। দ্বিতীয় অংশে, "০৭:১৪"-তে আছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খবরটা পড়ে যতটা খারাপ লেগেছিল, বিস্তারিত পড়ে ততটা লাগেনি।


One of the Muslim passengers, Kashif Irfan, told The Washington Post the confusion began when his brother was talking about the safest place to sit on an airplane.

"My brother and his wife were discussing some aspect of airport security," Irfan said. "The only thing my brother said was, 'Wow, the jets are right next to my window."'

সূত্র

৯-১১ ঘটনার পরে আপাতদৃষ্টিতে মুসলিম কাউকে এধরনের মন্তব্য করতে শুনলে পাশের যাত্রীর অভিযোগ জানানোকে আমি খারাপ মনে করতে পারছিনা। এটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তবে যেটা খারাপ লেগেছে সেটা হলো এফবিআই ক্লিয়ারেন্স দেবার পরেও ঐ এয়ারলাইন্স তাদের নেয়নি, এমনকি অন্য ফ্লাইটেও নয়। পরে তারা US Airways এর ফ্লাইটে গন্তব্যে পৌঁছে।

ডমেস্টিক ফ্লাইটে কি বোর্ডং পাসের ব্যাপারটা নাই? সীট নাম্বার কি ইচ্ছামত নেয় নাকি।

দ্রোহী এর ছবি

এই বালের দুনিয়ায় এইসব আর ভাল লাগে না।

আপনি কি সামহোয়্যারইনের ধানসিঁড়ি?


অতিথি লেখক এর ছবি

না

ধানসিঁড়ি

দ্রোহী এর ছবি

আমেরিকায় আসার সময় আমার ট্রানজিট ছিল হিথ্রো'তে। তার কয়েকদিন আগে সেই লিকুইড ঘোড়ার ডিম ধরা পড়েছে তাই হিথ্রোর পরিস্থিতি বেশ গরম।

বোর্ডিং হচ্ছে। আমি একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি। পাশ দিয়ে দুইজন মুশকো জোয়ান ও একজন বেঁটে বামন এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আমি বুঝতে পারলাম কী ঘটতে যাচ্ছে! আমি আসলে একদল সমকামীর হাতে ধরা পড়েছি। ওরা এখন আমার ইজ্জত লুটে নিবে।

প্রচন্ড আতংকিত হয়ে নিজেকে গালাগাল দেয়া শুরু করলাম—আগেই কইছিলাম আম্রিকায় যাওনের কাম নাই। এখনো বোঝো। খাও, পোঙামারা খাও এখন।

আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে লোকগুলো আমাকে পোঙামারা দিল না। এখানে ওখানে কিছুক্ষন টিপেটুপে ছেড়ে দিয়েছিল। সেদিন বোধোদয় হল খারাপ চেহারাসুরৎ সব সময় খারাপ না। মাঝে মাঝে উপকারে দেয়। কে জানে আমার চেহারাসুরৎ যদি ভাল হত তাহলে হয়তোবা সেদিন পোঙামারা খেয়ে আসতে হত!


সুমন চৌধুরী এর ছবি
প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এরপর থেকেই আপনার নাম দ্রোহী নাকি?

দ্রোহী এর ছবি

না বস, আরও কিছুদিন পর থেকে!

জিজ্ঞাসু এর ছবি

সেদিন বোধোদয় হল খারাপ চেহারাসুরৎ সব সময় খারাপ না।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

জিজ্ঞাসু এর ছবি

হো হো হো

হাসিটা যদিও দ্রোহীর মন্তব্যে কিন্তু আমেরিকানদের এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক আমি এর প্রতিবাদ করছি।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সৌরভ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
মেম্বর, আপনি এইগুলান হিশটিরি গোপন রাখছেন? তাড়াতাড়ি নামান।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দুর্দান্ত এর ছবি

লন্ডন সিটি আর কোপেনহাগেন এয়ারপোর্ট দুটিতে ২০০৭ সালে কয়েকবার যাওয়া হয়েছিল। প্রতিবারই ইমিগ্রাশন থেকে বোর্ডিং এর পথে এয়ারপোর্ট নিরাপত্তার কেউ না কেউ এগিয়ে এসে আমাকে থামিয়ে আমার কাগজপত্র আবার খূঁটিয়ে দেখেছেন। আদব সালামত জানা লোকজন। জাপ্টাজাপ্টি করেননি।

শুরুর দিকে কোপেনহাগেনে তো একবার ইমিগ্রেশনওয়ালাদের সাথে বসে চাও খেলাম। প্রোফাইলিং ভুল একবার হতে পারে, কিন্তু বার বার একই ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক।

লন্ডন সিটি থেকে ফেরার পথে আমাকে থামানোর জন্য অবশ্য আমি কিয়দংশ দায়ী। সাধারানত ব্রিক লেন থেকে পটলটা, সিমটা, লাল শাকটা নিয়ে ফিরি। সাথে একটা বেঢপ বাজারের ব্যাগ থাকলে তো লোকে থামাবেই। এ আর অস্বাভাবিক কি?

তবে কে এল এম থেকে নামিয়ে দেয়নি কখনো।

দিগন্ত এর ছবি

বছর দুয়েক আগে ভারতগাম একটি বিমানেও একই ঘটনা ঘটছে। যাত্রীরা গ্রেপ্তারও হয়েছিল। শেষে সেই বিমান কর্তৃপক্ষও ক্ষমা চেয়েছিল।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নদী এর ছবি

আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে আমার সেইসব বন্ধুদের কথা যারা আরো ভাল জীবনের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয়েছে। আমি জানি এদের অনেকেই মনোজগতে ঘোরতর মুসলমান। আমি জানি ইউরোপ বা আমেরিকার সমাজে খাপখাওয়ানোর মতো ধর্মীয় বা সামাজিক লিবারেলিটি এদের অধিকাংশেরই নেই।

আপনার এই বোধটা অসাধারণ । তবে এর উত্তরটাও অসাধারণ (?)। মানুষ এক বিচিত্র চিজ; সে সব জায়গাতেই অভিযোজন করতে পারে । তার মধ্যে তেলাপোকা অংশটা অসাধারণভবে অতিমাত্রায় অভিযোজনশীল।
চোখে ঠুলি পরা লোকজন, অন্য ঠুলি পরাদের দেখতে পারেনা (বড়ই বিস্ময়কর; সাধারণ
তত্ত্বের একেবারেই বিপরীত)। এই "ঘোরতর মুসলমান" রা কিন্তু রিপাবলিকানদের সাপোর্ট করে না (কিন্তু করা উচিৎ), করে ডেমোক্র্যাটদের (সেলুকাস বড়ই বিচিত্র এই দুনিয়া)। কারন মুসলমানদের "প্যাদানি" দেবার ব্যাপারে এদের উৎসাহ বড়ই বেশী। আবার "প্যাদানি" টা সব সময় যে কাজ করে তাও না। ক্যালিফোর্নিয়ার ভিয়েতনামীদের এক বিরাট অংশ রিপাবলিকানদের সাপোর্ট করে ; কেন করে তা অবশ্য জানিনা। আমাদেরকে ৭১ এ পাকিরা যে "প্যাদানি" দেবার চেষ্টা করেছিল (অবশ্য ওরা শেষে নিজেরাই প্যাদানি খেয়ে পালিয়েছে), সেই "প্যাদানি"কে আমাদের একটা অংশ "চুমা" ভেবে এখনও হাহুতাশ করে । এই "প্যাদানি-চুমা"ওয়ালাদের আসলে টিকে থাকার কোন আদর্শিক রাস্তাা নাই।সেটা যেমন বাংলাদেশে নাই, তেমনি আমেরিকাতেও নাই। তেলাপোকা পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর টিকে আছে।আর তেলাপোকার টিকে থাকার কৌশল সবাই জানে।

নদী

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ঘটনার নিন্দা জানাই।

অনিশ্চিত এর ছবি

সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকলে মানুষ উল্টাপাল্টা আচরণ করে। আর মার্কিন প্রশাসনের পুরোটাই তো এখন কোন না কোন জুজুর ভয়ে আছে! তাদের আচরণের প্রভাব তো অন্যদের ওপর পড়বেই। নিজে ভয় তৈরি করে নিজেই ভয় পাওয়ার কৌশল যতোদিন থাকবে, ততোদিন মানুষকে এই ধরনের আরো অনেক ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।