গাড়িটাকে গ্যারেজে দিয়ে আমি সবে মাত্র হোটেলে এসেছি। এমন সময় বক্কর এসে খবর দিল যে, একটা নাকি নতুন মাল আছে। বক্করকে আমি ভালভাবেই চিনি এবং এটাও জানি যে খবরটু হয়তো পুরোটাই মিথ্যা। তাই আমি বক্করের কথায় কান না দিয়ে আয়েশে একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে পড়লাম। আমার এরকম নির্লিপ্ত ভাব দেখে বক্কর সম্ভবত আমাকে উৎসাহিত করার জন্যই বলল, কি ওস্তাদ আনমু? আমিও এবার কোন ভনিতা না করেই বললাম, কিন্তু তুমি টাকা ঐ একশই পাইবা। কি কন , ওস্তাদ পুরা নতুন মাল। এর আগে যেখানে ছিল সেখানে দিন পনের থাইকা ভাইগ্যা আইছে। ব্যবসায়ে পুরা নতুন মাল। - বেশ একটা উল্লাসের সাথেই বলে উঠলো বক্কর। কিন্তু আমি বক্করকে ভালভাবেই জানি। এর আগেও সে আমাকে এ ধরণের সাত পাঁচ নানা কথা বলে মেয়েদের এনে দিয়েছে; কিন্তু ব্যবহারের পর বুঝেছি এরা এ ব্যবসায় বহু পুরানো। তাই তার উপর এবারও খুব একটা আস্তা রাখতে না পেরে বললাম, ঠিক আছে, আগে কাম তার পর দাম। মাল নতুন হইলে দেড়শই পাইবা। কিন্তু উল্টাপাল্টা হইলে বুঝবা তোমার আগেও আমি নাই পাছেও নাই। খোদার কছম, আমি মিথ্যা কইতাছি না, আগে একবার দেখেন, পরে বুঝবেন যে এই বক্করের কথার কেমন দাম - বলল বক্কর। তা তো আমি ভালভাবেই জানি। আমি বেশ বিদ্রুপের সাথেই বললাম। এরই মধ্যে হোটেল ম্যানেজার চলে এসেছে। আমি রেজিস্টার খাতায় নাম সই করে চাবি নিয়ে রুমে চলে গেলাম। এ হোটেলে গত সাত বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দু’দিন ধরে থাকতে হচ্ছে। এবার আমার কথাটা একটু বলে নেয়া যাক। আমি সুমন ব্যাপারী। পেশায় একটা কোচের সুপারভাইজার। ঢাকা-রাজশাহী রুটের এম. এম. পরিবহণের কোচে আমি সুপারভাইজারি করি। সপ্তাহে দু’দিন করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা যাওয়া হয়। ইনকাম মোটামুটি ভাল। রাতে ঢাকায় আমাকে মহাখালীর এ হোটেলেই থাকতে হয়। আমার মেয়েদের নিয়ে রং তামাশার অভ্যাসটা খুব একটা বেশি দিনের পুরানো নয়। প্রথমদিকে অবশ্য একটু একটু লজ্জাই লাগতো। কিন্তু ইদানিং এ ব্যাপারটায় আমি বেশ অভ্যস্ত- হয়ে পড়েছি। এজন্য আপনারা কেউ যদি ভাবেন যে, এ ব্যাপারে আমার কোন অনুশোচনা আছে, তবে ভুল করবেন। যাহোক, রাত এগারোটার দিকে সবে খাওয়া-দাওয়া সেরে আমি রুমে ঢুকেছি। এমন সময় দরজার বাইরে বক্করের গলা শুনে দরজাটা খুলে দিলাম। দেখি একটা মেয়ে বক্করের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েদের দেখে বয়স অনুমান করা শক্ত। তবুও ধারণামতে এ মেয়েটি বিশ-বাইশ বছরের বেশি হবে না। ওস্তাদ একেবারে খাসা জিনিস, বুইঝা লন। কথাটি বলেই বক্কর চলে গেল। আমি মেয়েটিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর কিরকম ব্যাপার-স্যাপার ঘটবে তার সাথে আমি ভালভাবেই পরিচিত। জড়তা এড়ানোর জন্য প্রথমেই আমি সাধারণত বাথরুমে যাই। এটাকে আমার এক ধরণের কৌশলই বলা চলে। পুরানো পেশাদার মেয়েরা সাধারণত এসময়েই তাদের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলার কাজটা করে ফেলে। ফলে আমাকেও আর আরষ্টতায় ভুগতে হয় না। নতুন মেয়ে হলে অবশ্য অন্য কথা। নতুন মেয়েরা প্রথম দিকে কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুখ নীচু করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় কাপড় খোলার আগে তারা লাইট বন্ধ করতে চায়। আমি অবশ্য এ রকম ছেলানীপনায় পাত্তা দেই না। মেয়েটা ঘরে ঢুকে খাটের উপর মাথা নিচু করে বসে রইল। আমি পূর্ব নিয়মানুযায়ী বাথরুমে গেলাম। ফিরে এসে দেখি মেয়েটা ওরকমই বসে আছে। বুঝলাম মেয়েটি ব্যবসায় নতুন, এবং সেই সাথে ভেতরে ভেতরে এক ধরণের আনন্দ জাতীয় ব্যাপার অনুভব করলাম। সেটা কি জন্য তার ব্যাখ্যাটা অবশ্য আমার বন্ধুবান্ধবদের আমি প্রায়ই দেই। কিন্তু এই ভদ্র সমাজের সম্ভবত সেটা শোনার দরকার নেই। আমি সাধারণত এ ধরণের নতুন মেয়েদের সাথে প্রথমে কিছুক্ষণ আলাপ করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। আমি এক ধরণের তরল গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার নাম কি? বিউটি, বিউটি খাতুন - বেশ বিব্রতভাবেই জবাব দিলো মেয়েটি। বাড়ী কোথায়?বরিশাল। কথাটা বলার পরই কেমন যেন গুটিয়ে গেল মেয়েটি। হয়তো ভাবল, বাড়ীর কথা বলা ঠিক হয়নি। নিয়মানুযায়ী এরপর আমার জিজ্ঞাসা করার কথা এপথে সে কিভাবে এলো। কিন্তু মেয়েটার অতিরিক্ত লজ্জা দেখে আমার ভেতরে এক ধরণের ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। আমি বেশ মেজাজের সাথেই বলে উঠলাম, শোন মেয়ে, তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনেছি। এখানে এতো লজ্জা শরম থাকলে চলবে না। দেখি তোমার মুখটা উপরে তোল দেখি।মেয়েটা মাথা উপরে তুললো। খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটার চোখ অতিরিক্ত সুন্দর এবং তাকে মোটামুটি সুন্দরী বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। আমি খাট থেকে উঠে শার্টটা খুলতে লাগলাম। শোনেন, একটা কথা রাখবেন?কি কথা?আমি জানি, আপনি আমার দেহ নিয়ে খেলবেন। দয়া করে আমার ঠোঁটকে ব্যবহার করবেন না। এ ধরণের কথা কোন বাজারী মেয়ের কাছ থেকে শুনতে হবে বলে আমি চিন্তা করতে পারলাম না। যখন বিশ্বাস করলাম তখন জানতে চেষ্টা করলাম কেন সে এ ধরণের আপাত হাস্যকর কথা বলছে। আমি বেশ উৎসুকভাবেই জিজ্ঞাসা করলাম, কেন?মেয়েটি বলল, আমি আপনাকে শুধু একটা অনুরোধই করলাম। এইটা রাখা না রাখা আপনার ব্যাপার। এটা কেন করলাম সেটাও কি আপনার জানা দরকার?ধরে নাও অনুরোধ রাখতে গেলে সেটাও জানা দরকার। কেন? টাকা দিয়ে কিনেছেন বলে?না, না, তা হবে কেন। ধরে নাও, জানার ইচ্ছা হচ্ছে বলে জানতে চাচ্ছি। আপনি কি কাউকে ভালবাসেন?না। কখনও কাউকে ভালবেসেছেন?না, তাও না। আসলে কাউকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সেই ব্যাপারটা আমার জানা নেই। বলা যায় আমি জিনিসটায় বিশ্বাসও করি না। ভালবাসলে বুঝতেন আমি কেন এ ধরনের অনুরোধ করছি। মেয়েটি এক রকম হতাশা নিয়েই বলল। আমি ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারলাম না। বললাম, একটু খোলাসা করে বলতো। যারা আমাকে টাকা দিয়ে কিনে তারা আমার দেহকেই পায় - মনকে পায় না। মনটা যার জন্য আমি রেখেছি আমার দুই ঠোটের স্পর্শ শুধু তারই জন্য। এটাকে আমি অপবিত্র করতে চাই না। মেয়েটির কাছে এ ধরণের কথা শুনে আমার আর তাকে ছুঁতে ইচ্ছে করল না। তার ভালবাসাকে সম্মান করতে ইচ্ছা হলো। আমি কখনও কাউকে ভালবাসতে শিখিনি। আমি সাতাশ বছরের যুবক সুমন ব্যাপরী সেই রাতের পর থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যে, পৃথিবীতে ভালবাসা বলতে একটা পবিত্র জিনিসও আছে।
----
ব্লুজ
মন্তব্য
গল্প ভালোই লাগলো।
তবে, লেখা এক প্যারায় না লিখে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিলে চোখের জন্য আরাম।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
অসাধারন !!!!!!!!!!!!!!
শিরোনামটা জোস্ হইছে। সাথে গল্পখানাও।
সুন্দর। বেশ সুন্দর। আরেকটু সময় দিলে আরেকটু ভালো করে লিখতে পারতেন।
আর... ‘নরকে লাল গোলাপ’ নামে কি বিখ্যাত কোনো গল্প বা উপন্যাস আছে? কোথায় যেন পড়েছি, ঠিক মনে পড়ছে না... কৃষণ চন্দরের কোনো উপন্যাস আ গল্পের অনুবাদে কি?
আরো লেখা চাই এমন...
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ভাল লাগল। কিন্তু কথোপকথনটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিলে ভাল হত।
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
একটু তাড়াহুড়োয় লেখা মনে হলো, এই ঠোঁটে চুমু না খাবার ব্যাপারটি সম্ভবত: প্রিটি উওম্যান এবং অন্যান্য কয়েকটি সিনেমাতে ব্যবহৃত।
লিখতে থাকুন।
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
দারুন লাগল
ফরম্যাটিং-য়ের কথা তো উপরে অনেকেই বলেছেন, তাই আর বললাম না। নিয়মিত লিখুন আপনি।
হুম...... ভাল লাগল তবে গল্পের পরিণতিতে যাবার জন্য আরেকটু সময় দিলে গল্প টী মনে হয় আরেকটু সুন্দর হতে পারত । ভাল থাকবেন । দেখা হবে আপনার অন্য কোন লেখায় ।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
সবাই সব বলে ফেলছে, তাই আমি শুধু স্বাক্ষর রেখে গেলাম।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
কিন্তু আমার তো মনে হয় অন্য কথা।
এটা কি আসলে গল্প, নাকি সত্য ঘটনা?
যদি সত্য হয় তাইলে.........
আমার বুকটা ধক ধক করছে, খারাপ লাগছে......
/ছোট মানুষ
গল্পের সততা টুকু মন ছুঁয়েছে ।
নতুন মন্তব্য করুন