ধুসর পাণ্ডুলিপির কবি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০২/২০০৯ - ১০:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯। আজ থেকে ঠিক ১১০ বছর আগে এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যাকাশের ধ্রুবতারা, ধূসর পাণ্ডুলিপির কবি জীবনানন্দ দাশ। যশ ও খ্যাতির প্রতি চরম উদাসীন এই কবি জীবদ্দশায় তাঁর কর্মের প্রকৃত মূল্যায়ন দেখে যেতে পারেননি। তাঁর মরণের পর তাই তাঁকে নিয়ে বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তাঁর মৃত্যুর ৫৫ বছর পরও তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য মানুষের মনে দাগ ফেলে যায় সমান ভাবে। এই মহান কবির জন্মদিনে আমি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বাঙালী হিসেবে আমাদের সবারই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত বলে আমি মনে করি।

তাঁর রচিত একটি কবিতা আমি সকলের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি।

সূর্যতামসী

কোথাও পাখির শব্দ শুনি;
কোনো দিকে সমুদ্রের সুর;
কোথাও ভোরের বেলা র'য়ে গেছে - তবে।
অগণন মানুষের মৃত্যু হ'লে - অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয়
বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে;
এ কোন সিন্ধুর সুর:
মরণের - জীবনের?
এ কি ভোর?
অনন্ত রাত্রির মতো মনে হয় তবু।
একটি রাত্রির ব্যথা সয়ে -
সময় কি অবশেষে এ-রকম ভোরবেলা হয়ে
আগামী রাতের কালপুরুষের শস্য বুকে ক'রে জেগে ওঠে?
কোথাও ডানার শব্দ শুনি;
কোন দিকে সমুদ্রের সুর -
দক্ষিণের দিকে,
উত্তরের দিকে,
পশ্চিমের পানে?

সৃজনের ভয়াবহ মানে;
তবু জীবনের বসন্তের মতন কল্যাণে
সূর্যালোকিত সব সিন্ধু-পাখিদের শব্দ শুনি;
ভোরের বদলে তবু সেইখানে রাত্রি করোজ্জ্বল
ভিয়েনা, টোকিও, রোম, মিউনিখ - তুমি?
সার্থবাহ, সার্থবাহ, ওইদিকে নীল
সমুদ্রের পরিবর্তে আটলাণ্টিক চার্টার নিখিল মরুভূমি!
বিলীন হয় না মায়ামৃগ - নিত্য দিকদর্শিন;
যা জেনেছে - যা শেখেনি -
সেই মহাশ্মশানের গর্ভাঙ্কে ধূপের মত জ্ব'লে
জাগে না কি হে জীবন - হে সাগর -
শকুন্ত-ক্রান্তির কলরোলে।

(সাতটি তারার তিমির, ১৯৪৮)


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

লেখার নিচে নাম এবং ইমেইল ঠিকানা উল্লেখ করলে ভালো হয়।



অজ্ঞাতবাস

তানবীরা এর ছবি

শ্রদ্ধা ও প্রনাম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

বিপ্রতীপ এর ছবি

কবির প্রতি জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

অনিকেত এর ছবি

ভাগ্যিস, জীবনানন্দ এসেছিলেন আমাদের মাঝে----
জীবন কবি এসে বদলে দিয়েছেন আমাদের অনেক কিছু---
জীবন কবির জন্যে আমরা আমাদের রুপসী বাংলাকে নতুন করে জেনেছি
আরো অনেকে অনেক কিছু বলেছেন
কেবল জীবন কবি বলেছেন---

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/ খুঁজিতে যাই না আর;"

শুধু জীবন কবির জন্যে আমাদের জানা হয় :

"অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়--
আরো এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে"------

জীবন কবি না এলে এই বাংলার হাজার বুক ভাঙ্গা, মন পোড়া তরুন জানতে পারত না প্রেমের স্বরুপ ব্যথার অরূপ কাঠি, তাদের কখনোই জানা হত না নাটোরের বনলতা সেনের কথা, জানা হত না---

"পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে--সব নদী---ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন"

জীবনানন্দ এসেছিলেন বলেই আজ আমাদের দুঃখের ভাষা কাব্যময়
শুধু জীবনানন্দের জন্যেই এখনো হাজার বুকে অবাক সূর্যোদয়

দেবকোটির এ কবির চরণে শতকোটি প্রনাম!

প্রায় ভুলতে বসা এ দিনটিকে সামনে নিয়ে আসার জন্যে অতিথি লেখক কে শ্রদ্ধা।

মাল্যবান এর ছবি

ধূপের গন্ধময় মৃত্যু
জীবনের গর্ভ থেকে লোভ বয়ে আনে ।
হে জীবনানন্দ, পৃথিবীর সব ট্রামগাড়ী হত্যাকারী নয়
এই ভেবে দুঃখ আমার
তেমন গন্ধের কারন হবো কবে ।

না, আমার প্রিয় কবির জন্মদিন ভুলিনি,ভুলবোও না কোনদিন।
এই পোস্টটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

রাফি এর ছবি

আমাদের জানা ছিলো কিছু;
কিছু ধ্যান ছিলো;
আমাদের উৎস-চোখে স্বপ্নছটা প্রতিভার মতো
হয়তো-বা এসে পড়েছিলো;
আমাদের আশা সাধ প্রেম ছিলো; - নক্ষত্রপথের
অন্তঃশূণ্যে অন্ধ হিম আছে জেনে নিয়ে
তবুও তো ব্রহ্মাণ্ডের অপরূপ অগ্নিশিল্প জাগে;
আমাদেরো গেছিলো জাগিয়ে
পৃথিবীতে;
আমরা জেগেছি - তবু জাগাতে পারিনি;
আলো ছিলো - প্রদীপের বেষ্টনী নেই;
কাজ ছিলো - শুরু হলো না তো;
তাহলে দিনের সিঁড়ি কি প্রয়োজনের?
নিঃস্বত্ব সূর্যকে নিয়ে কার তবে লাভ!
স্বচ্ছল শাণিত নদী, তীরে তার সারস-দম্পতি
ঐ জল ক্লান্তিহীন উৎসানল অনুভব ক'রে ভালোবাসে;
তাদের চোখের রং অনন্ত আকৃতি পায় নীলাভ আকাশে;
দিনের সূর্যের বর্ণে রাতের নক্ষত্র মিশে যায়;
তবু তারা প্রণয়কে সময়কে চিনেছে কি আজো?
প্রকৃতির সৌন্দর্যকে কে এসে চেনায়!

অতিথির নামটা জানার খুব ইচ্ছা ছিল, জানাবেন??

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দুই দাড়িওয়ালা আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। আর এই দাড়িবিহীন লোকটা মৃত আমাকে স্বগের দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কালকে সারাদিন ভেবেছি প্রিয় কবিকে নিয়ে একটা পোস্ট দিবো। কিন্তু কী লিখবো? প্রকাশের কোনো ভাষাই খুঁজে পাইনি।
ধন্যবাদ আপনাকে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক এর ছবি

স্মরণ করলাম প্রিয় কবিকে হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

রায়হান আবীর এর ছবি

শ্রদ্ধা।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ...

=============================

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।