হাসিব জামান
তেল, সাবান, রঙ ফর্সা করা ক্রিম আর মোবাইলের অ্যাডের মডেল তিশা-নিরব-মোনালিসা-ইমন ছাড়াও আরেক জাতের মডেল আছে। এরা হচ্ছে SSC আর HSC পরীক্ষার্থী। বোর্ড পরীক্ষার তিন-চার মাস আগে মডেল টেস্ট দেয়া এখন খুব কমন একটা বিষয়। এককালে আমি দিয়েছি, এখন আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা দেয়।
আমার প্রথম মডেল টেস্ট দেয়া দেলোয়ার স্যারের কাছে। ক্লাস টেনে সায়েন্সের বিষয়গুলো স্যারের কাছেই পড়া এবং সেই সূত্রে মডেল দেয়া। পরীক্ষা ভাল দিলাম কিন্তু খাতা দেবার সময় দেখি সব ছাত্রের লজ্জায় মাথা হেট হবার মত অবস্থা। খাতার কোন পৃষ্ঠা স্যার কেটেকুটে বাদ রাখেননি। সব প্রশ্নের উত্তর কিংবা অংকে তিনি কোন না কোন ভুল ধরেছেন। নাম্বারের অবস্থা আরো খারাপ। যারা এ প্লাসের স্বপ্নে বিভোর তাদের পাশ ফেল নিয়ে টানাটানি।
বেশী চেনা মুখ ছাত্রদের খাতা দেবার সময় স্যার সেইরকম ঝাড়ি দিলেন। আমি সাধারণ মানের ছাত্র হওয়ায় বেঁচে গেলাম। তবে এই খাতা বাসাতে দেখাই কেমনে? স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় যেখানে অংকে পেয়েছি পুরো একশ, সেটা নেমে এসেছে সত্তরের ঘরে। বাকীগুলো মনে নেই, তবে তা পাশ মার্কের আশেপাশেই ছিল। ভীষন হতাশ হয়ে গেলাম, এদিকে আসল পরীক্ষার মাত্র সপ্তাহখানেক বাকী। স্যারের অনেক পজিটিভ দিক ছিল, কিন্তু আমার মনে হয় ছাত্ররা কিছু পারে না এটা প্রমান করে তিনি বেশ তৃপ্তি পেতেন। টিউশনি করাতে গিয়ে আমিও স্যারের সেই বিশেষ গুণ আয়ত্ত করেছি।
এইচ এস সি পরীক্ষার মাস তিনেক আগে আবার মডেল হওয়ার প্রবল উত্তেজনা। রসায়নের রস আস্বাদন কত প্রকার ও কী কী তার পুরোটা জানতে পারি গুহ স্যারের বাসায়। মডেল টেস্ট দেবার জন্য আমাদের সবার নামে একেকটা মোটা খাতা ছিল। নিয়ম হচ্ছে সব পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত খাতা স্যারের বাসায় রক্ষিত থাকবে। মহা উৎসাহে পরীক্ষা শুরু হল। বেশ কিছুদিন পর আবিষ্কৃত হল, আমারসহ চার-পাঁচ জনের খাতা নেই। স্যার লজ্জিত ভাবে বললেন, “তোমরা ভাল লিখছ দেখে মনে হয় কেউ নিয়ে গেছে, পরে ঠিক দিয়ে দেবে।”
আমরা বুঝলাম ঘটনা আসলে অন্যখানে। আমাদের NDC গ্রুপের সাথে VNC এর একটা গ্রুপের ক্যাঁচাল লেগেই থাকে। ওরাই আমাদের শিক্ষা দিতে খাতা সরিয়েছে। কিন্তু প্রমান ছাড়া তো অ্যাকশনে যাওয়া যায় না। স্যার আমাদেরকে সুন্দর দেখে নতুন খাতা দিলেন। পরের সপ্তাহে আবার সেই খাতা গায়েব। এবার সদা হাসিখুশী স্যার ও খেপে গেলেন। আমরা সরাসরি মেয়েদের দায়ী করলাম। লেগে গেল ঝামেলা। পরে কিভাবে যেন এবারের খাতা উদ্ধার হল। কিন্তু এরপর থেকে আমাদের কয়জনার খাতা স্যার আর জমা রাখতেন না।
ফিজিক্সের জন্য নাম লেখাতে যাই এলাহী স্যারের কাছে। আমাকে দেখে বললেন, “পড়াশোনার খবর নাই, এখন আমরা সবাই মডেল হব!!!” আসলে ফিজিক্স সোজা লাগত বলে স্যারের কাছে টানা পড়তাম না। ফার্স্ট ইয়ার- সেকেন্ড ইয়ার দুবারেই কয়েক মাস পড়ার পর নোটপত্র নিয়ে ভাগতাম। এজন্য আমার উপর স্যারের রাগ ছিল। স্যারের এখানে কড়া নিয়ম ছিল ছেলেরা পরীক্ষা দেবে বিকেলে আর মেয়েরা সকালে, কোন মুখ দেখাদেখি নেই। কিন্তু এক ছেলে নাম লেখাতে আসল তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে, তারা একসাথে পরীক্ষা দেবে। স্যার চোখ গরম করে বললেন, “সারাবছর ঘুরে বেড়াও আবার মডেল হতে আসছ একসাথে? দূর হও।”
এত মডেল টেস্ট দিতে দিতে আর ভাল্লাগে না। রচনামূলক প্রশ্ন লিখতে সবসময় আমার অনীহা। দুষ্ট বুদ্ধি আসল মাথায়, বেশীরভাগ গানিতিক প্রশ্নাবলী উওর দিতে শুরু করলাম অথবাসহ। অল্প পরিশ্রমে সর্ব্বোচ্চ মার্কস পেতে থাকি কারন এলাহী স্যার প্রশ্ন মিলিয়ে খাতা দেখতেন না। সঠিক হলেই নাম্বার দিতেন। কিন্তু একদিন গিয়ে দেখি স্যার অগ্নিশর্মা। বললেন, “যা ইচ্ছা তাই করবা নাকি? তোমার আর পরীক্ষা দেয়া লাগবে না।” খাতা নিয়ে দেখি পেয়েছি ৫০ এর মধ্যে ৫৫। এজন্যে ধরা খেয়েছি। আরে আমি কি আর জানতাম সবগুলো অংক রাইট হয়ে যাবে!! “স্যরি স্যার, আর হবে না।” বলে কোনরকমে পার পেলাম। এরপর থেকে আমি সোজা হয়ে গেলাম, আর স্যার নিজেও কড়াভাবে আমার খাতা দেখতে থাকলেন এবং নাম্বার নেমে আসল ত্রিশের ঘরে।
মডেল টেস্ট দেয়ার ভাল-মন্দ দুটোই আছে। তবে বেশি জায়গায় দৌড়াদৌড়ি না করাই ভাল। আমার অনেক ফ্রেন্ডদের দেখতাম বোর্ড-পরীক্ষক, মূলবই এর লেখক এদের কাছে সাজেশনের আশায় আট-দশ হাজার টাকা খরচ করে টেস্ট দিচ্ছে। এতে অযথা বাবা-মার টাকা খরচ করা ছাড়া কাজের কাজ আসলে কিছুই হয় না।
মন্তব্য
ওরেব্বাপ!!
মূল পরীক্ষার চেয়ে দেখি মডেল পরীক্ষাই বেশি কঠিন
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হুম তবে আলাদা একটা মজা আছে। লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
হাসিব জামান
আহারে !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সমবেদনা জানাইলেন নাকি ঠিক বোঝা গেল না:(
মডেল টেস্ট দিছি অনেক । তয় সেই টেস্টগুলো দেবার পরে কেউই বলে নাই আমি পাশ দিতে পারবো । বুঝাই যাইতেছে কথা সত্য আছিলো না ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আয়হায়!! আপনার আর আমার নাম দেখি একই।
হাসিব জামান
আহা, পুরানো সেই দিনের কথা...
কোন স্যারের নাম কি ভাই মনে টনে পড়ে না?
দুএক্টা কমন পাইলে গল্প করে আরাম পাইতাম:)
শহরময় ছড়ানো-ছিটানো হরেক রকম ফেরদৌসী ম্যাডাম, রানা স্যার, কবির স্যার, নিমাই স্যার, বণিক স্যার, ইত্যাদি ইত্যাদি কত নাম যে বলবো!!
প্রায় সবাই দেখি common পড়ল।
এমন শহরে আমি ঘুরি , নাকি শহরটাই ভবঘুরে?
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷
বাংলা দুজন ফেরদৌসী ম্যাডাম ছিলেন, একজন ঢাকা কলেজের আরেকজন vnc এর। মনে আছে একমাস vnc ম্যাডামের কাছে ব্যাকরন শিখতে গিয়েছিলাম, তবে শিখেছি অন্য কিছু। তবে বাংলা মডেল আর দেই নাই।
রানা স্যার মনে হয় অনেকেরই কমন পড়বে।
আমার অসহ্য লাগত মডেল টেস্ট দিতে। বন্ধুদের দেখাদেখি আমিও ভর্তি হয়েছিলাম এক স্যারের কাছে। একটা টেস্ট দিয়েই বুঝছি আমার দ্বারা এই আজাইরা পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। এরপর থেকে ঐ সময়টা আমি বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকতাম।
তবে বাসায় জানত আমি সবখানে মডেল টেস্ট দিচ্ছি।
জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ!! বাহ্ বেশ বেশ। ভাল কাজেই টাইমটা লাগাইছিলেন;)
আমি মডেল টেষ্ট দেই নাই ।
কন কি? আপ্নে কোন জমানার লোক ভাই!!
- মডেল টেষ্ট হইলো একটা সিসটেম লস।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ, সহমত। কিন্তু আজকাল্কার পোলাপান কিংবা তাদের অভিভাবকেরা তো সেইটা বুঝে না।
- তাইলে পোলাপানদের পাশাপাশি অভিবাবকদেরকেও মডেল টেষ্ট দিতে পাঠানো হোক। বুঝুক ঠ্যালা, কতো ধানে কতো ভাত।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আহা, দেলোয়ার স্যারের কথা মনে পড়ে গেলো, কী ঝাড়িটাই না দিতেন! মনে আছে, ক্লাশ টেনে ওঠার পর উনি আমাদের সবাইকে যোগ-বিয়োগ শিখালেন (আগে মনে করতাম লোক দেখানো, পরে বুঝেছি ওটা আমাদের ধাক্কা মারার জন্য)। কী দাগাদাগিটাই না করতেন পরীক্ষার খাতায়!
মডেল টেস্ট কম দিইনি জীবনে, তবে সবচেয়ে বেশী দিয়েছি বাসায়; টেস্ট পেপার থেকে একেকদিন একেক স্কুলের প্রশ্ন ধরে, দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ করে। কাজেও দিয়েছিলো বেশ! তবে হ্যা, স্যারদের উপর সাড়ে-স্যার হতে চাইনি কোনোদিন।
----------------------------
অসাধারনভাবে সাধারন
অসাধারনভাবে সাধারন
আহা, দেলোয়ার স্যার তো আমাকে ক্লাশ টেনে হাতের লেখা শিখাইসেন যেমন x, f, b এইসব আরকি। সেইসব দিন এখনো মনে পড়ে। উনি পোলাপানরে ধাক্কা দিতে ভালোবাসেন।
কিন্তু পরীক্ষা শেষে, এ্যলিফেন্ট রোডের সেই বিখ্যাত ডালপুরি আর আড্ডার জন্য মডেল টেষ্ট গুলোকে খুব বেশী খারাপ লাগতো না।
এমন শহরে আমি ঘুরি , নাকি শহরটাই ভবঘুরে?
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷
আমিও কখনও মডেল টেস্ট দেইনি। আমার কাছে মনে হয় না ভাল রেজাল্ট করার জন্য দশটা পাঁচটা স্যারের বাসা ঘুরে ঘুরে মডেল টেস্ট দেয়া খুব বেশি জরুরি। কলেজের টেস্ট পরীক্ষার পর বাকি সময় নিজে নিজেই পড়েছি।
যাই হোক, আপনার লেখাটা পড়ে মজাই লাগল। পরে কি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আপনাদের খাতা কারা গায়েব করে দিত?
মডেল টেস্ট না দিয়ে ভালই করসিলেন, অনেক সময় ও অর্থ বেঁচে গেছে।
নারে ভাই, ঐ খাতা আর উদ্ধার হয় নাই, প্রমান ও করতে পারি নাই, কারন জানেন তো মেয়েরা কোন প্রমান রাখেন না।
আমি কোন মডেল টেস্ট দেই নাই; তাই মডেল হইতে পারি নাই.
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আহা মডেল হইতে পারলেন না আর এই জীবনে, আপনার জন্যে আফসুস হয়
-------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
- ভাই, আপনেই সেই ডেঙ্গু লেখক? আপনারে
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জ্বী ভাই, আমিই সেই।
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
নতুন মন্তব্য করুন