কাল মুশফিকা মুমুর “ক্যার্নস ট্রিপ” লেখাটি পড়ে এবার নিজেকে নিয়ে একটু দুঃখ হচ্ছে । সচলের উপর একটু অভিমান দেখা দিচ্ছে যে লিখবো না ভেবেও বসে গেলাম আবার লিখতে। আমরা কি অতিথি লেখক বলে আমাদের প্রতি সচলের এত অনীহা ! মুমুর মত আমিও কিছুদিন আগে একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সচলে জমা দিয়েছিলাম কি কারণে জানিনা সেটি সচলে অচল হয়ে পড়ে থাকলো। পরবর্তীতে আরো কিছু লেখা দিয়েছি সেগুলোর কোনটাই যে সচলে আসেনি তা বলছি না যেমন কালই কুসুমকলি পদ্যটি দেখা গেছে যদিও সেখানে আমার একটি বড় ভুল আমি নিজের নামটাই দিইনি। এখানেও আমার একটু বলার আছে এরকম অসচেতনাজনিত ভুল হয়তো আমি একাই করি কিন্তু এমন ভুল যাতে না হয় সেজন্য লেখাটি কিউতে জমা হবার সময় সতর্কতামূলক কোন ম্যাসেজ দেখানো যেতে পারে। আমি ফেব্রুয়ারীর সেই লেখাটি আরেকবার ব্লগে দিচ্ছি আশা করছি এবার এটি অচল হয়ে থাকবে না।
২৯ জানুয়ারী
সারাদিন নানারকম ঝামেলাপূর্ণ ব্যস্ততা আমায় ঘিরে রেখেছিলো,সন্ধ্যেতে আমার ট্রেন। আপাত গন্তব্য খুলনা। আমার সাথের ভদ্রলোকটি আমাকে একবারো মনে করিয়ে দেন নি যে বরাবরকার মত কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ছে না, ছাড়বে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে। সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ আমি মোটামুটি যাবার জন্য তৈরী । আমাকে একবার শুধু তিনি বললেন এবারে যাবে কি? এদিকে আমি মনে ভেবেছি কমলাপুর তো সে আর কতদূর বাড়ী থেকে বড়জোর দশ মিনিট ।ট্রেন হলো ৭:২০ হাতে ঢের সময় । বলেও বসলাম এখুনি কি, যাবো আরো পরে। এই করে যখন বেরোলাম তখন ৬:১৫। গাড়িতে যখন বসলাম তখন শুনি স্টেশন এটা নয় আর বিপত্তি টা সেখানেই কেননা সেখানে পৌছাতে হলে হাতে ঘন্টাদেড়েক সময় তো চাই। শুরু হলো টেনশন, সাথে ভদ্রলোকটির মধুবাক্য বর্ষণ। তিনি নাকি দেখছিলেন আমি কি করি। আমি যে সারাদিন ব্যস্ততার জন্য ব্যাপারটা তার ওপর ছেড়ে দিয়ে নির্ভার হয়ে ছিলাম সেটা তিনি বুঝতেই চাইলেন না। পুরো রাস্তা জুড়ে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে চলেছি। ঠিক যে সময় আমরা স্টেশনের কাছে পৌছালাম,ঠিক তক্ষুণি সিগনাল পরে গেট বন্ধ করে দিলো। এখন ভাবতে হাসি পাচ্ছে কিন্তু তখন মনের অবস্থা সত্যি শোচনীয়। আমাদের গাড়ীর চালকটিও তার যতটা হাতযশ দেখানো যায় সে চেষ্টা করছিলেন সহসা গেট পড়ে যাচ্ছে দেখে যে কাজটি এই চালক করলেন তাতে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিলো। হিন্দী মুভি স্টাইলে গেট পড়ে যাবার মাঝের সময়টা তিনি কাজে লাগিয়ে ঢুকে গেলেন গন্ত্যবে। ৭:১৭ তখন। দৌঁড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ট্রেনের কাছাকাছি পৌঁছালাম,ততক্ষণে সিগনাল পড়ছে কোনরকম করে ট্রেনে উঠে আর দম ফেলতে পারছি না। শেষে থিতু হয়ে বসবার জায়গা খোঁজা শুরু । দেখা গেল ঠিক আমাদের সিট টি দখল করে আছেন যে পরিবারটি তারা বেশ জাঁকিয়ে বসেছেন। তাদের সরিয়ে বসে প্রথম যে কাজটি করলাম আটকে থাকা শ্বাসটি সজোরে ফেলে ভারমুক্ত হলাম।রাত কেটে গেলো আধো ঘুমে আধো জাগরণে ।
৩০ জানুয়ারী
ভোর বেলায় পৌছে গেলাম বৃহত্তর খুলনা বিভাগে। সার্কিট হাউজ পৌঁছে রুমে ঢুকে সোজা কম্বলের নীচে ভীষণ ঠান্ডায় কাবু কিছুটা। সকাল ১০টা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম বাগেরহাট জেলার দিকে উদ্দেশ্য ষাট গম্বুজ মসজিদ। একটা ব্যাপার আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগে সেটা হলো প্রত্নতত্ব বিভাগ যে সব প্রাচীণ কীর্তি গুলো সংরক্ষণ করেছেন তার সবগুলোই বর্তমানে বোধহয় পিকনিক স্পট। আচ্ছা ব্যাপারটা এই আপনি যখন আমার এই লেখাটা পড়বেন আপনিও একটু ভাববেন কি? কেন এসব স্মৃতিময় জায়গাগুলো কে পিকনিক স্পট করবে? আমি তো যখন এরকম কোন জায়গায় যাই আমার চোখে ভেসে ওঠে এপথে সেইসব লোক হেঁটেছেন বসেছেন- যারা আজ আমাদের ইতিহাস, যারা আমাদের প্রেরণা, সেখানকার একটু ধূলিকণা মাথায় ছোঁয়ানো সেটাই তো কাম্য হওয়া উচিৎ,নয় কি? তার বদলে এক দঙ্গল ছেলে পেলে সেখানে দৌড়ঝাপ করবে, তাদের অনুভুতিতে কখনো ছায়াও পড়বে না সেই মানুষগুলো। বড়জোর ইতিহাসের পাতা আর কিছু কবির কবিতা মুখস্থ করবে.....পরীক্ষায় পাশের জন্য। যাক সে কথা ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখা হয়ে গেলে আবার কিছুটা পথ পরে খান জাহান আলীর দরগাহ্। ছেলের আবার সাধ জেগেছে সেখানকার কুমিরদলের সাথে সে সাক্ষাৎ করবে। তো কুমিররা তখন ঠিক কি মুডে ছিল জানা গেলো না কেননা তারা কেউই রোদে শরীর মেলে দিতে তীরে এসে বসেনি অগত্যা ফের কুমির দর্শনে ছোট। বেশ খানিকটা হাঁটার পর একজনের দেখা মিললো। তিনি বেশ রোদে পিঠ ঠেকিয়ে একটু শুকনো জায়গাতে এসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সাথে সাথে আমার ক্যামেরার লেন্স যতটা জুম ইন করা যায় করে তার অলস ভঙ্গীর ছবিটি স্মৃতিবন্দী করে নিলাম। কুমির দর্শন শেষেএবার ফেরার পালা। পিছনে বাগেরহাটকে ফেলে তার স্মৃতি বুকে পুরে ফিরে এলাম খুলনাতে।
ফুলতলা
খুলনার ফুলতলার অন্তর্গত দক্ষিণডিহি গ্রাম যার তাগিদে আমার খুলনা আসা সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আজি প্রণমি তোমারে ব্লগটিতে আমি কবিগুরুর পূর্ববঙ্গীয় অবস্থানকালীণ সময়কে নিয়ে কাজ শুরু করার পর থেকেই তাঁর সাথে সম্পর্কিত স্মৃতিমাখা জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। পৌছাবার পর আগে যা জানতাম তার থেকেও বাস্তব অবস্থা আরো করুণ দেখলাম। বাড়িটি সংস্কারের প্রোজেক্ট বেশ কবার হাতে নিয়েও কেন তা সম্পন্ন হয়নি বুঝলাম না। স্রেফ একটি পোরোবাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে একটি খোলা মাঠে কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে।বড় বেদনাদায়ক সে দৃশ্য।
৩০ তারিখের ভ্রমণবৃত্তান্ত এখানেই শেষ।
৩১ জানুয়ারী
সাতসকালেই উঠে যেতে হলো এবারে যেতে হবে সাতক্ষীরা। সেখান থেকে সুন্দরবন। খুলনা থেকে সাতক্ষীরা বেশ লম্বা সময়ের যাত্রাপথ ফুরোতেই চায়না যেন। বুড়ি গোয়ালিনী বলে একটি জায়গা আছে যেখানে পৌঁছে আমাদের বন সংরক্ষণ অফিসে যেতে হলো। তারা আমাদের একটি মাঝারী ট্রলার সাথে গার্ড দিয়ে দিলো বেশ লাগলো ট্রলারে করে যাচ্ছি চারদিকে অথৈ জলরাশি। নীল আকাশ জুড়ে নানা রকম পাখি ডানা মেলেছে আর চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। কথা ছিলো আমরা আর নামবো না জল থেকেই স্থলভাগ দেখবো, তবে পরে একটু না নেমে পারাও গেলো না। বেশ লাগলো । সেখান থেকে খুলনা ফিরতে সময় পার কথা ছিলো মাঝে যশোরের সাগরদাড়িতে মধুমেলা হচ্ছে সেখানে মেলা দেখে তবে ফিরবো কিন্তু সময় এত পালাই পালাই করলো তাকে মিনতি করেও ধরে রাখতে পারিনি,মধুমেলা আর কপোতাক্ষ নদ দুটোই আমার কাছে অচেনা রয়ে গেলো জানিনা ঠিক এই সময়টাতেই আমি আবার যেতে পারবো কিনা। হিরণ পয়েন্ট এ না গেলে নাকি সুন্দরবন দেখা হয় না, জানিনা ঠিক আমি। নৈসর্গিক দৃশ্য ভালো তো লাগেই তবে পাহাড় বা বনের থেকে আমাকে বেশী টানে সমূদ্র। আর যা বেশী টানে তা হলো পুরোনো স্মৃতির গন্ধ মাখা যে কোন স্থান।
রাত ৮টায় আমাদের ফিরতি ট্রেন। বেশ আগে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েও বিপত্তি কিন্তু এড়াতে পারিনি, এ বোধহয় আমার সবসময়ের সঙ্গী। ট্রেন লাইনে এসে দাঁড়াবার পরই আমরা তৈরী,কিন্তু মাঝে এক উপকারী আত্মীয় আমাদের সাহায্য করার জন্যই টিকেট হাতে নিয়ে কম্পার্টমেন্ট খুঁজতে বেরিয়ে গেলেন কিন্তু ফেরার নামটি তার নেই এদিকে ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে আবার সেই ছুটোছুটি করে সামনে না পেছনে যাবো সেই চিন্তা শেষে সামনে বেশে কিছুটা এগুতে তাকে পেলাম তখনো তিনি কিছু খোঁজ পাননি ট্রেন ছেড়ে দেবার মুহূর্তে যা থাকে কপালে বলে সামনে যা পেলাম উঠে গেলাম পরে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলেও শেষে নিজের জায়গায় পৌঁছে যেতে পারা গেলো।
আর এখানেই দুদিনের ঝটিকা সফরের ইতি।
মেঘ
মেঘের কথকতা
মন্তব্য
- বেশ লাগলো ভ্রমন কাহিনী। বলিউড স্টাইলের গাড়ি ঢুকানোর পারদর্শীতার জন্য আপনাদের চালক ভাইকে
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বলিউড স্টাইলের গাড়ি চালানোর পাশাপাশি একদম শেষে আপনার উপকারী আত্মীয়ের কাহিনী পড়েও মজা পেলাম খুব। আর পিকনিক স্পটের পয়েন্টে আপনার সাথে বিরক্তি প্রকাশ করে গেলাম আমিও।
লেখা ভাল্লাগল।
এমন দৌঁড়ের উপর ভ্রমণটা সারলেন যে, ডিটেলস কিছুই দেখলেন না, নাকি আমাদেরকে দেখালেন না, তা বুঝতে পারলাম না !
বিষয়গুলোর আরো ডিটেলস পেলে হয়তো ভালো লাগাটা বেড়ে যেতো আরো।
অভিনন্দন আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কিছুটা দৌড়ের উপর ভ্রমণ সেরেছি সত্যি কিন্তু একেবারে দেখিনি তা নয়। আপনাদেন জন্য আরো ডিটেলস এ লেখা যেত কিন্তু এক তো ভয় সচল আমার লেখা ফেলে রাখতে পারে আর দ্বিতীয়ত বেশ বর্ণনা দিলে লোকে পড়ার সময় পাবে না।
চাইলে ডিটেলস দিতে পারি।
খুলনা কখনো যাওয়া হয়নি, একবার যাব, আর আপনার কথায় একমত আসলেই এমন ঐতিহাসিক যায়গা গুলো পিকনিক স্পট করা ঠিক না। বরং গার্ড দিয়ে প্রোটেক্ট করে রাখা উচিত। তবে সুন্দরবনের মাঝারি ট্রলারের কথা শুনে ভয় পেলাম, একটা ডকুমেন্টারিতে দেখেছিলাম, রয়েল বেঙ্গল টাইগারগুলি নাকি পানিতে লুকিয়ে থাকতে পারে আর পানি থেকে লাফ দিয়ে অনেক সময় নৌকা থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়।
আপনি অনেক ভাল লিখেন, এমন অভিমান না করে আরো অনেক বেশি লিখবেন আশা করছি।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
গাড়ি ঢুকানোর কায়দাটা বিপজ্জনক বটে !!! আর লেখাটা বেশ সংক্ষিপ্ত। আরেকটু ডিটেইলস হয়ত হতে পারত।
এই "সময় নাই সময় নাই" যুগে কমপেক্ট না দিলে আপনারা পড়বেন? সেই ভেবেই আর বিশদে যাইনি।
মেঘ
ইহা একখানি সচল লেখা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুল সচল বলছেন কেন বলবেন কি?
বাহ !
এইটা ঘরের কোণে পড়ে থাকলে না অচল লেখা বলতাম।
এটা তো দিব্যি সচলায়তনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
তাই না? তাই সচল লেখা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেশ মেনে নিলাম। আসলে লেখাটা তো আগেও একবার দিয়েছিলাম তখন তো অচল হয়ে পড়ে রইলো তাই এবারেও ভয়ে ছিলাম, কিছু ছবি ছিলো সেগুলোও দিই নি।
মেঘ
মেঘের কথকতা
নো প্রবলেম।
মন্তব্যের সাথে জুড়ে দিন।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন