অর্থনীতির নতুন একটি উপশাখা গেম থিওরী। আমাদের চারপাশের অনেক ঘটনার পেছনের কারন গেম থিওরী দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, যার পেছনে কাজ করে যার যার নিজস্ব যুক্তি ও মতামত। এসব যুক্তি ও তার ভিত্তিতে নেয়া সিদ্ধান্ত গেম থিওরী দিয়ে বিশ্লেষন করে চমৎকার উপলব্ধীতে পৌঁছানো যায়। যেমন ধরুন পুলিশ কেন ঘুষ খায়? গেম থিওরী কি বলে দেখা যাক।
ধরা যাক একজন পুলিশের বেতন ১৫,০০০ টাকা। দেশের যা অবস্থা তাতে এই টাকা দিয়ে মোবাইল ফোনের বিলই তো দেয়া যায়না! মনে করি পুলিশ অফিসারের মাসে আরাম করে বেঁচে থাকতে চাই ৩০,০০০ টাকা। কত কম পড়লো? ১৫,০০০ টাকা। এখন তার সামনে দুটো উপায়, ঘুষ খেয়ে ১৫,০০০ টাকা যোগাড় করা অথবা কষ্টেসৃষ্টে বেতনের টাকা দিয়েই চালিয়ে দেয়া। ঘুষ না খাওয়ার পক্ষে তার কি কারন থাকতে পারে? ধরুন তিনি একজন ধার্মিক মানুষ, তার বিশ্বাস ঘুষ না খেলে তিনি অনেক নেকী পাবেন। ভাল কথা। সুতরাং পুলিশ অফিসারের ঘুষ খেলে মোট আয় (৩০,০০০ টাকা + ০ নেকী), ঘুষ না খেলে মোট আয় (১৫,০০০ টাকা + ১৫,০০০ নেকী)।
এইবার খেলার দ্বিতীয় পর্যায়। পুলিশ অফিসার পরকালের চিন্তাও করেন, নেকী অর্জন করাও তার কাছে টাকার মত সমান গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ী-বাড়ী তো হলো, এবার পরকালে যেনো চৌদ্দ কোটি বছর জাহান্নামে পচতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হয়। ঘুষ যদি খান তাহলে ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা জমার কথা, তা থেকে যদি হজ্ব করতে যান তাহলে খরচ হবে এক লাখ টাকা আর পাওয়া যাবে চৌদ্দ কোটি নেকী (মনে করি)। অতএব ঘুষ খেলে পরবর্তীতে টাকাকে নেকীতে রূপান্তর করার ব্যবস্থা আছে। ঘুষ যদি না খান, তাহলে ইহকালে কষ্টে থাকবেন আর পরকালে সিধা জান্নাত।
সুতরাং টাকা দিয়ে নেকী পাওয়া গেলেও যেতে পারে কিন্তু নেকী দিয়ে টাকা পাওয়া যাবেনা। এখন সিদ্ধান্ত পুলিশ অফিসারের নিজস্ব। তিনি ঘুষ না খেয়ে সৎ অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতে পারেন, অথবা এত ত্যাগ স্বীকার না করে ঘুষ খেয়ে আরামে থাকতে পারেন ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কপালে দাগ বসিয়ে ফেলতে পারেন। গেম থিওরী অনুযায়ী, একজন সাধারন মানুষ দ্বিতীয়টিই বেছে নেবেন। তাই আমাদের দেশের পুলিশ এত ঘুষ খায়।
অনেকে বলেন, লন্ডনের পুলিশ কত ভাল ঘুষ খায়না আর আমাদের পুলিশ খুব খারাপ। অর্ধসত্য। লন্ডনের পুলিশ ঘুষ খায়না আর আমাদের পুলিশ ঘুষ খায় এইটা সত্য, ওরা ভাল আমরা খারাপ এইটা সত্য না। লন্ডনের পুলিশের বেতনও ৩০,০০০ টাকা ওরা চায়ও ৩০,০০০ টাকা, ফলে তাদের ঘুষ নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। আমাদের পুলিশের বেতন বাড়িয়ে দিন তারাও ঘুষ নেওয়া কমিয়ে দেবে। অংক তাই বলে। আপনি কি বলেন?
পাদটীকাঃ বাংলাদেশের সকল সত্যিকারের সৎ পুলিশ অফিসারের প্রতি রইলো আমাদের শ্রদ্ধা। এতো অংক কষেও যিনি ঘুষ খাননা তিনি সত্যিই পুলিশ হবার যোগ্য।
সত্যপীর
মন্তব্য
খুবই চমৎকার!
অর্থনীতির মাধ্যমে ব্যপক বিস্তার হলেও এটি কিন্তু ফলিত গণিতের একটি শাখা, অর্থনীতি, এ আই, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদী বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যপক ব্যবহার হচ্ছে।
সংজ্ঞা অনুসারে মানুষের "অভিজ্ঞতা নির্ভর কৌশলগত সিদ্ধান্তকে" গণিতে রূপান্তর ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা প্রয়োগই এই তত্বের কাজ।
আপনার উদাহরণটি সরল পাটিগাণিতিক হয়ে গেছে। কোন পুলিশ যদি ঘুষ খায় তবে কৌশলগতভাবে সে চাকুরিতে ভাল অবস্থানে যেতে পারবে; উপরওয়ালাকে খুশী রাখতে পারবে ভাগ দিয়ে, গিন্নীকে খুশী রাখতে পারবে গয়না দিয়ে, আবার ধরা পড়লে সেখানে ঘুষ দিয়েও পার পেয়ে যাবে। আবার নৈতিক ও ধার্মিক দিক দিয়েও তাকে ধরা যাবে না কারন সে নিয়মিত নামাজ পড়বে, সবচেয়ে বড় গরুটা কোরবানী দেবে ও পেনশনে যাবার আগেই হজ্জ করবে। এই হিসাব সে চাকুরিতে ঢোকামাত্রই শিখে ফেলে, এর জন্য গেম থিয়োরীর প্রয়োজন নেই। বরঞ্চ এর পরেও যে সব পুলিশ ঘুষ খায়না তারই বরং গেম থিয়োরী অনুসরন করে, তারা জানে ধরা একদিন পড়তেই হয়, মান ইজ্জত একদিন ঠিকই যায়।
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
একমত
আমারও পড়ে এটাই মনে হয়েছে যে এখানে গেম থিওরীটা ঠিক কোথায় কাজ করছে। এটা সরল পাটিগণিতের সমস্যা হয়ে গ্যাছে।
তবে লেখাটা পড়ে একটা মজার কাহিনী মনে পড়ে গেলো:
এক ভদ্রলোকের প্রচুর টাকা পয়সা ধনদৌলত ... আবার তাঁর সন্তান, নাতি-নাতনী, ভাই -বোনের ছেলেমেয়ে আর সেসব ঘরের নাতিনাতনীর সংখ্যা মানে উত্তরাধিকারীর সংখ্যাও অনেক ... প্রতিবছর রোজার মাসে ভদ্রলোক যাকাত দেন ... তো যাকাতের সময় ঘনিয়ে আসলে ভদ্রলোক মনে মনে "ইরাদা" করে তাঁর উপরোক্ত উত্তরাধিকারীদের সবার মাঝে নিজের সম্পদকে এমনভাবে ভাগ করে দেন যে কারো ভাগে সাড়ে সাত ভরি বা তার বেশী স্বর্ণের সমপরিমাণ সম্পদ পড়েনা ... তাঁর বড়ই ভুলোমন, রোজা চলে গেলে তিনি সবকিছু ভুলে যান
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
পুলিশবাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় নিয়মিত, জামাতে ও টাইম মত নামাজ পড়া বাস্তব সম্মত না। তাই 'সেইদিনের সেই হাইকোর্টেতে' নেকির পিওরিটি নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। অন্যদিকে বেহেশতে যেতে কয়টা নেকির দরকার এবং ঐ পুলিশের জীবদ্দশায় বেহেশতের অভিবাসন আইনে কোন পরিবর্তন আসবে কি না, তাও ভেবে দেখার বিষয়। তার উপর ধরেন ... রোয়ান এটকিন্সনের মতানুসারে 'ইহুদিরাই সঠিক' হলে নেকি আর নাকের লোমের মজমা সমান সমান হয়ে যায়।
আবার ঘুষদাতাও যে যা চাইবেন, সবসময় তাই দেবে - তারও কি নিশ্চয়তা?
আমার তাই মনে হআপনার এই গেম ন্যাশ সমীকরনে না হলেও এপ্সেলন সমীকরনে পৌছে গেছে।
ভাল লাগলো। আরো লিখুন।
- পুলিশের চাকরিটাই তো একটা এবাদত। মজলুমের জানমাল নিশ্চিৎ করা। তারে আবার ডিউটিতে কামাই দিয়া জামাতে নামাজ পড়ানোর দরকার কি?
তবে হ্যাঁ, মাগরেব আর এশা যদি কোনো কামেল পুলিশ জামাতে না পড়ে তাইলে হালার খবরই আছে। অভিবাসন আইনে যতোই রদবদল হোক, জায়গামতো গিয়া ঠিকই মাইরা খাইয়া যাবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এত সরল হিসাব হলে তো কথাই ছিল; যতগুলো এসাম্পসন ধরছেন সেগুলো ঠিক কী-না সেটা আগে প্রমান করতে হইবো, তার পরে কনক্লুশন।
একদম ঠিক কথা। আমি কিন্তু বলিনি পুলিশের ট্রেনিং এ গেম থিওরী শেখান হয়...বরং খুব সহজ লজিক ব্যবহার করে যা ঘটে যাচ্ছে তা প্রমান করার চেষ্টা করলাম। জীবন অনেক জটিল কিন্তু সহজভাবে বিশ্লেষন করতে হলে একটু সহজ করে নিতে হয়।
আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন একটু ভাল করে। কটা ঘুষখোর ধরা পড়ছে বলেন তো, মান ইজ্জত পরের কথা। যাহোক আসল কথা হলো ঘুষখো্র ও অঘুষখো্র দুজনেই গেম থিওরী ফলো করছে, পার্থক্য টা হলো কে কিভাবে তাদের দেনা-পাওনা হিসেব করে মূল সিদ্ধান্তে যাচ্ছে।
পড়ে মন্তব্য করবার জন্য ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন