আমার সোনার ময়না পাখী ও একটি খন্ড স্মৃতি
-শামীম রুনা
হঠাৎ করে কানে ভেসে এলো আধুনিক সংস্করণে অর্ণবের কন্ঠে গাওয়া , “ মনপুরা ” ছবির “ আমার সোনার ময়না পাখী ” গানটি । সাথে সাথে মনটা উচাটন হয়ে উঠে । বুকের পাঁজর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘ শ্বাস গাছের গায়ে করাতের আঁচড়ের মত আমার বোধকে কাটতে লাগল । সেই সঙ্গে খন্ড খন্ড স্মৃতি মনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে উঠে । বিবাগী হয়ে পড়ে আমার মন। ভাবনার হাওয়ার ঘুর্নিপাকে আমি পত্ পত্ করে ওড়াউড়ি করি চৈত্রের ঝরা পাতার মত করে । উন্মনা হয়ে কান পেতে গান শুনি ...... বিকালের শেষ রোদ্দুর বাঁশের বেড়ার ঘরের কাঠের ছোট জানালার গুলগুলি দিয়ে এসে ঘরের ভেতরটায় আলো-আঁধারির মায়াময় আলো । সেই জানালার ধারে মোড়া পেতে আম্মা বসে , কোন সুদূরে তাকিয়ে আছে , চোখে তার হাহাকার করা উদাসিনতা ! সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল নিজের ভেতরে বুঁদ হয়ে আছেন তিনি । আসরের নামাজ শেষে মাগরেবের নামাজও এক অজুতে করবেন বলে অপোরত । হাতের তসবীহ জপতে জপতে কখন যেন তা নিজের অজান্তে জপা বন্ধ করে দিয়েছেন । খুব নীচু স্বরে , সুরেলা কন্ঠে গাইছেন তিনি “ আমার সোনার ময়না পাখী .....” অদ্ভুৎ বিষন্ন আর অপার্থিব সে সুর ! গানের মায়াবী সে সুর মনের গভীরে নোঙ্গরের মত দাগ কেটে বসে যায় চিরদিনের মত।
কান পেতে আম্মার অর্ধেক গাওয়া গান শুনতে শুনতে এই কিশোরী আমি গানের মাধুর্য্যটুকু শুধু অনুভব করতাম । সে বয়সে তাঁর কন্ঠের হাহাকার বা দৃষ্টির উদাসিনতা আমাকে স্পর্শ করতো না । আম্মা আমাদের ছেড়ে গেছেন অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে , আমি আজ যখন ফেলে আসা স্মৃতির দিকে তাকাই , তখন আম্মার দৃষ্টির উদাসিনতা অনুভব করি । তাঁর কন্ঠের হাহাকার ঠিক ঠিক আমার কর্ণগোচর হয়। মনে ভাবনার একটি চোরা-স্রোত তিরতির করে বয়ে যায় , আম্মা কার জন্য এত দরদ দিয়ে এই গান গাইতেন ? অন্য শহরে চাকুরীরত আব্বার জন্য তাঁর কন্ঠ দিয়ে এই গান বেরিয়ে আসত নাকি আরো সুদূর অতীতের মনের কোনে জমে থাকা কোন একটি স্মৃতি তাঁর হৃদয়কে আলোড়িত করে যেত ! যার কারনে আম্মার কন্ঠ চিরে বেরিয়ে আসা বিষন্ন গানের সুর আজো আমার প্রাপ্ত বয়স্ক হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়ে যায় । আমাদের মা ছাড়াও তো তাঁর আরো কিছু সম্পর্ক ছিল , তিনি একজনের স্ত্রী ছিলেন । তারও আগে কারো কন্যা , বোন ছিলেন । হয়ত বা আমাদের জানার বাইরে তাঁর আরো কোন সম্পর্ক ছিল ! সে মোহময় স্মৃতি গোধূলী বেলার আলোয় তাঁকে বিবাগী করে তুলতো। তাঁর কন্ঠের বিষন্ন সুর গোধূলীর আলোকে আরো খানিকটা বেদনাতুর করে দিত ! কি জানি , হয়ত এই সব কিছুই না ।হয়ত বা একটি গানের প্রতি অনুরক্তির কারনে তিনি বার বার গাইতেন গানটি হৃদয়-মন দিয়ে । তবে এখন , তাঁর থেকে বহু দূরে দাড়িয়ে অজানা সেসব উত্তর খুব জানতে ইচ্ছে করে । উপায় নেই গোলাম হোসেন , আমরা সময়ের আবর্তনে পড়ে গেছি । জানি না কখনো কোন মহা-মিলন মেলায় , আবার দেখা হবে কিনা সব চেয়ে আপন , সব চেয়ে আÍার আÍীয় মানুষটির সাথে ? দেখা হলে আমি কি তাঁর কাছে জানতে চাইবো , কার জন্য তাঁর আবেগ এমন আকুল-ব্যাকুল করে উঠত ? জানি না । এখন শুধু আধুনিক কালের গায়কের গাওয়া স্মৃতি ভরাক্রান্ত পুরনো গানটি শুনি আর জানালার গ্রীলের ফাঁকে দূরের নীলাকাশে উদাস দৃষ্টি বিছিয়ে কিছু না জানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজি !
মন্তব্য
"সোনার ময়না পাখি" গানটা আমার কাছে অসাধারণ লাগে। খুবই পছন্দের একটা গান।
আমার কাছে মনে হয়, একেকটা গান একেকটা সময়কে ধারণ করে, ধারণ করে অনেক স্মৃতি। অনেক সময়ই আমরা বাঁধা পড়ে যাই কিছু কিছু গানের মধ্যে।
লেখাটা চমৎকার লাগল।
চমৎকার লিখেছেন!
হুম...
কদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলাম আপনার লেখা পড়ার।
সচলে স্বাগতম টমবয় নিশো ও তার বন্ধুরা'র লেখক শামীম রুনাকে
লেখাটা অনেক ভালো লাগলো। গানটা আমারও সেই অনেক আগে থেকে খুব প্রিয়। আর অর্ণবটা গাইছেও দূর্দান্ত... কণ্ঠভর্তি হাহাকার...
কিন্তু লেখার মধ্যে এতোবার গোধূলী শব্দটার ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ধূসর গোধূলী মিয়া এখনি ঝাঁপায়া পড়বে আপনার ছোটোবোন, চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুপাতো, নানাতো বোন কে কে আছে জানতে।
এখানে আপনার অনেক ফাজিল দেবররা আছে। এদের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হইয়া আবার সচলায়তনে লেখা বন্ধ কইরেন্না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- আমিতো লেখাটা আগেই পড়ছিলাম, কিছু কইছি? হুদাকামে আমার 'ইমেজ' নষ্ট করেন নজু ভাই!
আমি তো জানিই ভালো ছেলের 'দাম' সবাই দেয়। নিজের মামাতো বোনটা, খালাতো বোনটা কিংবা ফুফাতো অথবা নিজের ছোট বোনটার জন্য সবাই ভালো ছেলেকে চায়। আমি যে অতীব ভালো ছেলে এটা আর নিজের মুখে ক্যামনে বলি! চেয়ারম্যানের সাট্টিফিকেটেই তো উল্লেখ আছে সব।
আমি তো এই কথা কখনো বলি নাই যে আমার মতো ভালো ছেলে এই গোটা সচল টর্চ লাইট দিয়ে খুঁজেও আর একটা পাওয়া যাবে না। এটা সত্য কিনা আপনেই বলেন ডিয়ার নজু ভাই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জ্বি
আপনারা দেখলেন তো?
ধুগো কখনোই নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করে না।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
লেখাটার মধ্যে একটা চমৎকার স্মৃতিকাতরতা রয়েছে...
সচলায়তনে সুস্বাগতম !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার দাদুর চিরকালের প্রিয় গান এইটা। গান শুনলেই দাদুকে মনে পড়ে।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
- মূল গানটা বোধহয় নীনা হামিদের গাওয়া। মজার ব্যাপার হলো, ছোট বেলায় শুনতাম আমার মা'ও গুনগুন করে গানটা গাইতেন। কে জানে, হয়তো মায়ের মনের কোণেও কিছু না বলা কথা লুকিয়ে ছিলো কোনো এক অতীতের!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ছেলেবেলায় আমার মা-কেও এই গান গাইতে শুনেছি।
ভালো লাগাটা হয়তো তখন থেকেই।
মায়ের কোনো এক অজানা বিষাদ ছুঁতে চাইছেন রুনা, ব্যাপারটা ভালো লাগলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
খুব চমতকার লিখেছেন।
সচলে স্বাগত
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আজকে মন্তব্য করার মত কোন শব্দই পাচ্ছি না;
সচলে স্বাগতম।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
এই অংশটুকু পড়তে পড়তে খুব বিখ্যাত কোনো লেখকের লেখা বলে ভ্রম হয় --- শুধু এটুকুর জন্যই পাঁচতারা পেতে পারেন আপনি ----
খুব চমতকার সু্প্রিয়া শামীমা রুনা !
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
দারুণ নস্টালজিক লেখা। এমন করেও তাহলে লেখা যায়!
বেশ লাগলো।
চলুক।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
নতুন মন্তব্য করুন