শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ঘুরে আসার পর থেকেই শাহজাদপুর যাবার তীব্র ইচ্ছায় ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যাবো। শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ জেলার অধীনে একটি উপজেলা যেখানে জোড়াসাঁকো ঠাকুরদের একটি কুঠিবাড়ি আছে। শাহজাদপুরের বাস ছাড়ে কল্যাণপুর থেকে।শাহজাদপুর ট্রাভেলসএর টিকেটও কাটলাম।পরদিন সকাল আটটায় বাস। বাস ছাড়লো আটটা কুড়ি তে,সাড়ে এগারটা নাগাদ শাহজাদপুর পৌছেঁ গেলাম।বাস থেকে নেমে রিক্সা নিলে দশ মিনিটে শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি পৌঁছান যায়। ছুটির দিন বলে কিনা কুঠিবাড়িতে দর্শনার্থী ভিড় নেই বললেই চলে। শুধু কোন এক ব্র্যাক স্কুলের ছেলে মেয়েরা এসেছে পিকনিকে।
কুঠিবাড়িটিকে মোট তিনটি অংশে ভাগ করা যায় প্রবেশ পথ থেকে হাতের বায়ে নব্যনির্মিত প্রত্নতত্ব বিভাগের অডিটরিয়াম,মূল দ্বিতল বাড়ি যেখানে কবিগুরু অবস্থান করতেন এবং জরাজীর্ণ একটি কাছারীবাড়ি। এই কুঠিবাড়ির বাগানটি শিলাইদহ কুঠিবাড়ির থেকে অনেক বড়, প্রচুর গাছপালা সেই তখন থেকেই।
সাপ্তাহিক শাড়ির হাট ও বাজার বসে বলে কুঠিবাড়ির প্রধান ফটকটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুঠিবাড়ির নীচতলাতে সেই সময়ে ছিলো শাহজাদপুরের পোষ্ট অফিস এবং সেই ‘পোষ্টমাষ্টার’ গল্পটি সেসময়ের পোষ্টমাষ্টার মহেন্দ্রলাল বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা।‘সমাপ্তি’র মৃন্ময়ী বা ‘ছুটি’র ফটিক চরিত্রগুলো সব শাহজাদপুরের রচনা। শাহজাদপুরে কবির রচনা সম্ভার নিতান্ত ছোট নয় সে বর্ণনায় এখন আর যাচ্ছি না। দোতলায় কবি যেখানে থাকতেন সেখানে সংরক্ষিত আছে ব্যবহায টেবিল হারমোনিয়াম, কাঠের বেসিন, আরাম কেদারা থেকে শুরু করে নানা জিনিষ। ৬ ও ৮ বেহারার পালকি আছে দুটো। খড়খড়ি দেওয়া বিশাল জানলাগুলোর সামনে একবার দাঁড়ালে মনের ভেতর কেমন করে ওঠে।প্রায় দশ বিঘা জমির উপর কুঠিবাড়িটির উপস্থিতি।কুঠিবাড়ির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম তিন দিকে বেষ্টিত ছিল একটি খাল বর্ষার সময় কবির পদ্মা, চিত্রা বোট এখানে এসে লাগতো।
কাছাড়িবাড়িটির কোন সংস্কার করা হয়নি এর জীর্ণতা মনে কষ্ট দেয়।
কুঠিবাড়ি দেখার পর বেরিয়ে পড়লাম সাহজাদপুর শহরটিকে দেখবো বলে,ছোট্ট ছিমছাম শহরটির যেদিকেই যাবেন প্রায় সবদিক থেকেই যে আওয়াজটি ভেসে আসে তা হলো তাঁতে কাপড় বোনার শব্দ। তাঁতীদের পাশে দাঁড়িয়ে কাপড় বোনা দেখতে দারুণ লাগে। আছে করতোয়া নদী যে দূরে মিশে আছে নীল আকাশে মেঘের সাথে গা লাগিয়ে।
যারা এখনো শাহজাদপুর কুঠিবাড়িটি দেখেন নি, ইচ্ছে করলে তারা একটি দিন হাতে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে ইচ্ছে হলে কিনতে পারেন পছন্দসই কাপড় বা হাটের দিন যদি যান তবে তো আর কথাই নেই। এখানকার দুধ,ঘি,মিষ্টি সেসময়কার নামকরা।এখনো কিন্তু সে ঐতিহ্যটি রয়েছে।
এবার ফেরার পালা। তিন ঘন্টার ভেতর আমাকে পাততাড়ি গোটাতে হলো। আমার কোথাও যাওয়া মানেই খুব তাড়াহুড়ো করে,সময় বেঁধে নিয়ে ঘোরা,এত তাড়া নিয়ে কিছু দেখা যায় না। এভাবে কিছুটা হয়তো নজরে,বোধে,অনুভবে আসে, বেশীরভাগই অজানার অন্তরালে। তবু এভাবেই আমার দেখা হয়ে গেছে ছেউড়িয়া,শিলাইদহ,শাহজাদপুর,দক্ষিণডিহি,জোড়াসাঁকো।
সদস্য নাম: মেঘের কথকতা
মন্তব্য
প্রথমে নাম দেখে ভেবেছিলাম ঢাকার গুলশানের কাছে যে শাহজাদপুর আছে তার কথা বলছেন........
হাট বার কোন কোন দিন সেটা বলেন ...আমার নেক্সট মিশন শাহজাদপুর
( জয়িতা )
বুধবার।
মেঘের কথকাতা
নতুন মন্তব্য করুন