তখন রাত দুইটা হইবে। এক হাতে মাথা চুলকাইয়া, নিচের দুই হাতে কলা ছিলিতে ছিলিতে ডালে বসিয়া লিখিতেছিলাম। দাদু ব্যাটা দেখি পাশের ডালখানাতেই বেশ ফোররর-ফোৎ জুড়িয়া দিয়াছে। যেইভাবে ডাল টাল কাঁপাইয়া পাশ ফিরে, ভাবি বুড়ো পড়িয়া না মরে আবার! একবার ঘুমের ঘোরেই বলিয়া উঠিল, 'না না! .. ইউরিয়া কলা খাব না!' .. কি ছাইপাশ স্বপ্ন দেখে কে জানে..। ঘুম বোধ করি ছুটিয়া গিয়াছিল। আড়মোড়া ভাঙ্গিয়া দেখি উঠিয়া বসিল। একখানা ডাল ভাঙ্গিয়া পিঠ চুলকাইতে চুলকাইতে বলিল,
- হ্যাঁ রে চতু, তুই পেত্তেক রাত্তিরে কোথায় যাস বল দেখি? যাসই বা কি করিয়া?
লিখিতেছিলাম, তাই প্রশ্নোত্তরে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইলাম। বলিলাম,
- ও তুমি বুঝবে না।
- আহা বুঝাইয়া বলিবি তো..
- পরে বলব খন।
বুড়া কিয়ৎক্ষণ থামিল, আবার বলিল,
- হ্যাঁরে, ঐ পাশের খাঁচার লজ্জাবতী মেয়েটাকে দেখিতে যাস বুঝি? কিন্তু ও বেটি তো মুখই ফিরায় না .. কাছে গেলেই আঁ আঁ করিয়া যেন ফিট খায়, আর পাতার জঙ্গলে মুখ লুকায়!
বুঝলাম বুড়াকে কথায় পাইয়াছে, এখনে তাহার সহিত ভ্যাজর ভ্যাজর করিতে হইবে। যতটুকু লিখিয়াছিলাম রাখিয়া, কলায় এক কামড় দিয়া বলিলাম,
- আমার কথা বাদ দাও, মনে তো হইতেছে তোমারই আগ্রহ বেশী। তো বল তো কথা টথা পারি .. তা বুড়ো হাড়ে বিয়ে সইবে তো?
- এই হল তোদের সমস্যা.. কিছুই বলা যায় না, খালি ডেপোমি।
- তো ডেপো হইয়াছি, ডেপোমি করিব না? তা হঠাৎ লজ্জাবতী বানরীর কথা কেনো?
বুড়ো গা চুলকাইল, বলিল,
- নাআআ.. বলিলাম আরকি ..। কিন্তু আমাকে একটা কথা বল, এইগুলা কোন জাত রে ভাই? ইগুলি ইভাবে ভয় পাইয়া শিঁটিয়া থাকে কেনো? আরে বেটি .. তুই হইলি বানর, এরে কামড়াবি, ওরে খামচি দিবি, তারে ভেংচাবি, তোরা তো দেখি বানর নামেরই কলঙ্ক রে ...
আমি বলিলাম,
- ইহাদের ভয়তো জিনেটিক, আর যে দিনকাল পড়িয়াছে ভয় পাইবে না কেন?
- কি নেটিক বলিলি? উহা আবার কি?
- ও তুমি বুঝিবে না .. মজ্জাগত বুঝো? ওই ..
- অ ! তা তাদের ভয়খানা কিসে, সেতো বুঝিনে। আর তারা ভয় পাইলেই বা কবে?
- হবে কোন কালে, হয়ত কেউ চাউল ভাজিয়া খাইয়াছিল, তাই ভয় পাইয়া আর কাউকেই সহ্য করিতে পারে না।
বুড়া দেখি নড়িয়া উঠিল, বলিল,
- সে কিরকম ? সে কিরকম?
- তুমি এইডস সম্পর্কে জানো তো?
- তা জানি বইকি, বেলেল্লাপনার রোগ, মনুষ্যের হয়, বলতে শুনিয়াছি।
- আফ্রিকা মহাদেশ চেনো তো?
- যাহ! চিনিব না কেন!
- তো ঐখানের সবুজ বাঁদরদের সাথে পরিচয় আছে তোমার?
- সেতো নেই! ইরা কারা?.. ইরা কি প্রকৃতই সবুজ ?.. বলিস কিরে? ..পাতলা সবুজ না কটকটে সবুজ?
- আহ! সে যে সবুজই হোক, শুনো আগে। অনেকেরই ধারনা ওই সবুজ বাঁদরদের হইতেই নাকি এইডসের উৎপত্তি। তো আমি বলি যে মনুষ্যজাত যদি ওই সবুজ বাঁদরদের পোদেই চাউল ভাজিয়া খাইতে পারে, আর এইডস ছড়াইতে পারে, তাহলে ত ইহাদের ভয় পাওয়াই উচিৎ নাকি? তবে লজ্জাবতীদের ইতিহাস আমি জানি না, ওই সবুজদের বংশধরও মনে কর হইতে পারে। কে জানে, দেখ ইহাদের সবুজ রঙ হয়ত ভয়েই এরূপ মিয়া গেছে।
দেখি বুড়া চুপ করিয়া গেছে, বেশ ভয় পাইয়াছে। বুঝিলাম কথায় কাজ হইয়াছে। বুড়া দেখি আর কথা বলিল না, আবার ডাল লেজে পাকাইয়া শুইয়া পড়িল। আর আমিও লেখতে বসিলাম।
আজ সকালে কেয়ারটেকার খাবার নিয়া আসিয়াছিল। বুড়া কাছেই ঘেষিলো না।
----------------------------------------------
চতুর্ভুজ
মন্তব্য
ভালোই তো !!
মজাক পাইলাম...
লেখাখানা প্রকৃতপক্ষেই জটিল হইয়াছে।
উপস্থাপনার ঢংখানা বেশ ভালই বলিতে হইবে। তবে শেষটা ঠিক ধরা গেল না। মনে হইল যেন চলিবে গোছের লেখা।
তবে খুব সম্ভব শেষ হইয়াও হইলনা শেষ করিতে চাইয়াছেন লেখক।
হা হা হা মজা পাইলাম!
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চমৎকার সিরিজ। চলতে থাকুক।
কাজ হওয়াই আসল কথা
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
:]
লেখাখানা দারুন লাগিল। হাসিতে হাসিতে ডাল ভাঙ্গিয়া নীচে পরিবার উপক্রম হইয়াছে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বাঁচতে হলেই জানতে হবে। তারমানে বেঁচে থাকার জন্যে তথ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম- এটাই মনে পড়ছিল পড়তে পড়তে। চমৎকার বলনভঙ্গী!
হুম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দারুন লিখেছেন তো? খুব মজা পাইলাম।
নতুন মন্তব্য করুন