আচিলবাড়ির বসতি স্থাপন অথবা কংনা নদীর মৃত পাতারা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০৪/২০০৯ - ৮:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাষ্ট্রীয় মূর্খতা আর সারমেয়দল ভারি হয়ে গেলে নিতাই ছোটে মেঘালয়। রূপালী জন্মস্থান বহুদিন দর্শনে বিষন্ন রেখেছিল দূরের পর্বত কন্যা। সন্ধ্যে নামে জন্ম নিবাসে রোজদিন। আকাশে তারা তাকালে পর্বত কন্যার আলোমিটমিটে সিমেন্ট কারখানাগুলো দেখা যায়। এমনি এক কারখানায়- যদিওবা তা নিজ ভূমিতে; কাজ করে নিতাই। সঙ্গে অকাজের ফুলঝুরি কবিতা। ফুলঝুরি; কেননা ক্রেতা অভিমানে গ্রন্থে জন্ম হয়নি বলে পদ্যগুলো নিজ গৃহে এককোনে ফুলের ঝুরিতে স্থান পায়। আর নিতাই ততক্ষনাত আরেকখানি পদ্য প্রসব করে-

পদ্য গুলে খা

পদ্যে হাস পদ্যে নাচ

পদ্য হয়ে যা

তো সেই প্রসবের ব্যথা সইতে না সইতে পদ্যকার ছোটে মেঘালয়। একহাতে নীল খাতার পদ্য, আর হাতে পদ্ম। একগুচ্ছ। পথে সারমেয় গং এবং গল্প লেখক গোষ্ঠীর নাক সিটকানো সয়ে কিছু দূর হেটে পদ্যকার পরিবহনে চড়ে। উচ্চ কণ্ঠে কিছু সারমেয় এবং এক কথিত দার্শনিক তখন সুরমা নদীর বরষ কালের পলির তোরের মত কথা বলে এক সঙ্গে। পদ্যকার কুঞ্চিত হয়। সংকুচিত এককোনায় পদ্ম আর পদ্য সমেত বসে পরে। শব্দ না করার তুমুল ইচ্ছা থাকা সত্তেও পুরোনো রেক্সিনের গদিখানি নির্লজ্জের মত জানান দিয়ে উঠে। আর তাতেই দার্শনিক হইহই করে তার পাশে বসে। পর্বত কন্যায় গমন চিন্তা পদ্যকার বেশীক্ষণ পেটে ধরে রাখতে পারেনা। দার্শনিক হেসে হেসে গমনে সঙ্গী হবার আকাক্ষা প্রকাশ করে। লাজুক পদ্যকার বুঝে অথবা কিছুটা না বুঝেই সঙ্গহীনতা ত্যাগ করে দার্শনিকের সঙ্গে হাসতে হাসতে সীমানা অতিক্রম করে।

সামনে সীমাহীন পাহাড় আর জলধারা দেখে কবি পদ্যের খাতাখানি ভরাবার চেষ্ঠা করে। দার্শনিক তখন রূপকথার রাজাদের মত শিকারে ব্যস্ত। খাসিয়া কন্যারা দার্শনিকের কাছে শিকার হতে হতে পদ্যকারের দিকে তাকায়। পদ্যকার দেখেনা। পদ্যের ফাকে কবির হাতে তখন নতুন চকচকে একখানা কলকি দেখা যায়। তারপর, অনেক তারপরের আরেক তারপর শেষ হলে মৃদু ঢুলু চোখে পদ্যকার আর দার্শনিক দূরের কারখানার বাতি জ্বলে উঠতে দেখে। উদ্দেশ্য ভুলতে বসা কবি নিজেকে কিছু তিরস্কারের সঙ্গে উঠে দাড়ায়। খলখল কণ্ঠে নব্য শিকাররা দার্শনিককে বাধা দেয়ার চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়্। সে তখন তাদেরকে সেই পুরোনো বাণীগুলো শুনায়; যা সে প্রতিবার শিকার ফেলে যাওয়া পথে বলে।

-অত:পর আমি যাব। ফিরে আসব কোন এককালে। তোমাদের জমানো সর্ষেদানারা তরল হয়ে যাওয়ার আগেই ফিরে আসব।

বলে হাসতে হাসতে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে দর্শনবিচরী হাসান হসিত চলে।

রাতে মেঘালয় কন্যার প্রিয় পুত্র শিলং পেৌছে কবি ও দার্শনিক সুড়িখানায় নিজেদের জায়গা করে নেয়। পিঠে পিঠ লাগানো বিছানায় শোয়ে কোন এক অজানা কারনে মহান শিকারী দার্শনিক দর্শনের খাতা মেলে ধরে কবির সামনে। বিচলিত কবি, কিম্ভুত পদ্যকার বাকহারা কাকের চরিত্রে কিছুক্ষন অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে চোখ বোজে। দার্শনিকের অজানা দর্শন আর তার জানা হয়না। কিছু ক্লান্তি, কিছু কলকি সেবনের দায়ে পদ্যকার সেদিন প্রথমবারের মত স্বপ্নে দেখে। সচরাচর স্বপ্নহীন নিতাই জেগে উঠে। আর তার কানে দার্শনিকের শেষ বাক্যটি তখনি দ্রুত ঢোকার চেষ্ঠা করে সংকীর্ণতা হেতু আটকে পরে। পুনরায় একই বাক্য উক্ত করে দার্শনিক ততধিক গম্ভীর হয়ে বলে-

  • এগুনো মানে পিছেয়ে আসার রাস্তা তৈরি করে রাখা। সময়ের ব্যবহার করো। দেখ আমাকে: রোজদিন আগুপিছু আছি। ধরেনা কেউ পারেনা বলে। পারেনা কেউ পালাই বলে।
  • পালানোর মণ্ত্রত শিখিনি। দীক্ষার প্রয়োজন নাই। এসেছি দর্শনে। ফিরব স্মৃতি নিয়ে। যদি সে আসে তবে ভাসবে আমার পাশে। যদি না আসে তবুও ভাসবে সে আমার কাছে।

ছোট শহরের বড় দার্শনিক এইবার বিরক্ত হয় আর তার পুরোনো পালানোর সব গল্প বলে। কোথাও তখন তক্ষক ডেকে উঠে কবিকে সাবধান করে দেয়। কবি তবু বন্ধু ভাবে দার্শনিককে। তর্ক অপারগ কবি বাকপটু দার্শনিকের চোখের দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ তেজে বলা কথাটাই ব্যক্ত করে আবার। তখনি ভোর হয় কংনার পারে। সুড়িখানার জানালা গলে সূর্য ঢুকে। কবি ও দার্শনিক যারযার ইচ্ছে পুরনে রোয়ানা দেয়। কবি যায় কারখানার আলো দেখতে দার্শনিক নতুন শিকারে। তাৎপর্যহীন মেঘালয় দর্শন শেষে দুজনই ফিরে আসে ছোট শহরে। কবির থলিতে শুকিয়ে যাওয়া পদ্ম- দার্শনিকের হাতে রঙিন তরলের বোতল।

পদ্যকার কিছুদিনেই রিক্ততায় সবাইকে ছাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায় নিজের ছায়াকে। শুধু নিরানন্দের আলো হয়ে তার শুকিয়ে যাওয়া পদ্মের অংশীদারিত্ব মিলে। কবি মাঝেমধ্যে শুনে দার্শনিকের হুন্কার। কিন্তু মন-দেহের দূরত্বকে জয় করে সেই নিনাদ পদ্যকারের কাছে পৌছায়না। শুধু টের পায় যুদ্ধ এবার তার সঙ্গে। আর দীর্ঘ দিন পর পদ্যকার বুঝে এবার যুদ্ধ নিজেকেই জয় করতে হবে। বুঝে আর আশা নিয়ে জেগে থাকে। জেগে থাকে আর প্রার্থনা করে।

- অর্জুন মান্না


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পলাশ দত্ত এর ছবি

আচ্ছা, কংনা নদীটা কোথায় হে?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

মাথার ভেতরে পলাশ
তুমি কোন মুলুকে আছো হে?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অর্জুন মান্নার অনুরোধে বডি টেকস্ট বদলে দেয়া হল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মাহবুব মুর্শেদ

সুমন সুপান্থ এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম হে ! দেবদারু তোরণ দিলাম । সন্ধ্যেবেলার মঙ্গলঘট...রাজাধিরাজ আপনার এই আগমনে !

গল্প না কি ইহা ! কি জানি বাপু ! লেকিন যে ভাষা আর ভঙ্গি অর্জিত হইয়াছে বলে প্রতিয়মান হইতেছে, তাহাতে ঈর্ষায়িত হইয়াছি কিঞ্চিত ...

সুড়িখানার জানালা গলে সূর্য ঢুকে গেলে দেখি পিঞ্জরে বসিয়া যেন আরেক গোলপ সুন্দরী !

এই পাখা হাওয়া পাক , পাক পারাপারের বিস্তার !

পঞ্চ তারা !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

অতিথি লেখক এর ছবি

সুপান্থ,
কতবার তোরণেরে করেছি অবঞ্জা
কতবার প্রাসাদ প্রাচীরের শালিক দেখেছি
কতবার বারের পর আরো কতবার শুধুই বসে থেকেছি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'হাসান' নামের খ্রাপ লোকে দুনিয়া ভরে যাচ্ছে দেঁতো হাসি
লেখা ভালো লাগলো

সচলায়তনে স্বাগতম ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় হাসান মোরশেদ,
কামনার ঘরে আরেকটা যোগ হলে খুশি হব
তুমি আমি সকলেই

নজমুল আলবাব এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

নজমুল আলবাব,
শুনলাম শাহ আলমকে চারু বাউল বলে ডাকা হবে
তুমি মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৫ তারা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল

স্পর্শ এর ছবি

৫ তারা।
আরো লেখা চাই।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

স্পর্শ,
অনেক ধন্যবাদ।
লেখা আসবে।
ইচ্ছায় জ্বলেন না অনিচ্ছায়?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সচলে স্বাগতম ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হে স্যার, ধন্যবাদ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো গল্পখানা।
সচলে স্বাগতম।

অতিথি লেখক এর ছবি

পন্থ রহমান রেজা, ধন্যবাদ।

তারেক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটা। ঈর্ষা করবো সে সাহসও পাই না।
স্বাগতম সচলায়তনে। আরও লেখা চাই আপনার কাছ থেকে। নিয়মিত।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।