মাঘের শেষ শেষ... কুয়াশার চাদরটাকে সরায়ে আস্তে করে আলো ঢোকার বৃথা চেস্টা চলছে এখন। কিন্তু আমির হোসেন ওরফে বাগানে বুড়ার মনে এখন অনেক চিন্তা... ঘরে তার ২ টা মাইয়া। এক্টার কেবল ২০ দিনের মেয়ে হইছে, আরেক্টার আজকেই বেদনা উঠছে, জ়ামাই গুলান যে কি??? মাঝে মাঝে আপন মনেই ভাবে বুড়া। আরে সেই পচাগড়ে থাকে বইলা কি মাইয়াটারে পোয়াতি বানাইয়া সব যন্ত্রনা আমার ঘাড়েই ফেলাবে নাকি?? শুধু এই জামাই না, ৫ টা জামাই এরই এই অবস্থা,
মাইয়া পয়াতি হইলেই সব আমার ঘাড়ে... কি পাপ যে করছিলাম ৬ টা মেয়ে জন্ম দিয়ে?
তার ১০০ টা খেজুর গাছের মধ্যে এই বার কেটেছে ৫০ টা, তার রসের হাড়ি গুলা আস্তে আস্তে উঠানে আসা শুরু করসে, আগুন জেলে এখন সেগুলার থেকে গুড় তৈরী হবে, ভাবতেই মন্টা ভাল হয়ে যাই বাগানে বুড়োর, চাদরটাকে গায়ে ভাল করে জড়ায়ে নিয়ে বৈঠক খানার দিকে যাওয়ার পাইতারা করতে থাকে,
“আব্বা, রস খাবা?” পাস থেকে বলে উঠে তার ছোট ছেলে, কবির হোসেন ওরফে আঞ্জু। সদ্য ফুল প্যান্ট ধরেছে, হাতে এক্টা পেতলের গ্লাসে রস আর একটা পাটকাঠি দিয়ে সমানে সুরুত সুরুত করে গিলে চলেছে হিমধরানো রস।
“না, খাবো না, মোল্লা বুড়ারে পাঠাইলাম, ডাক্তারের কাছে, দেখত কতদুর গেল???” হঠাত করেই বাস্তবতা মাথায় চলে আসলো বুড়ার। “ওরে ও সপন, তোর বাপ কই?? রোকেয়া দাই টারে আনতে কলাম, কই গেল??”
এক হাড়ি রস কেবল চুলার কাছে রেখে দু ঢোক খেয়ে নিয়েই ছুটল সপন।
রস জাল দিচ্ছে আদুলের মা, পাশে বসে আছে এখন আঞ্জু আর মাছু, পিঠাপিঠি ভাই বোন, মারামারি সারাজীবন লেগেই আছে, তবে ৬ বোনের পর একমাত্র ভাই হওয়াতে আনজ়ুর একছত্র আধিপত্যে মাছু তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না, পড়ে পড়ে মার খায় কেবল।
“ফুলন কৈ রে, মাছু?”
“রানি রে খাওয়াচ্ছে, আর মেমীবুর পাশে আছে।”
৩ নাম্বার মেয়েটার আবার মেয়ে হয়ায় জামাই রাগ করে মুখ দেখেই আবার চলে গেসে বেনাপল। বড় শখ করে নাতনিটার নাম রাখসে বুড়া রানি। দেখতেও নাতনিটা হইছে রানির মতন ই।
“তোর মা কৈ?”
“মাও মেমীবুর কাছে?”
বিয়েতে পাওয়া বহু জির্ন ঘড়িটার দিকে তাকাই দেখে বাজে ৭ টা বেজে ৩০। দাই, ডাক্তর কারোর ই খুব একটা খবর নাই,
আস্তে আস্তে সুর্যটার জোর একটু একটু করে বাড়ছে, চাদরটাকে আলগোছে ভাল করে নিয়ে পাম শুটা পায়ে গলিয়ে আস্তে করে রওনা দেয় নিজেই। হাফ মাইল্টাক যেতেই দেখা যাই দাইটাকে নিয়ে আসছে সপন।
“রোকেয়া বিবি, একটু তাড়াতাড়ি পা চালাও।”
দেখতে দেখতে বাড়ি এসে পড়ে।
“আব্বা, তাড়াতাড়ি আস।” মাছুর কন্ঠে কিঞ্ছিত দুশ্চিন্তা।
“রোকেয়ারে ভিতরে নিয়ে যা, আর সপন তোর বাপের খোজ নে।“
“আঞ্জু”
“জী, আব্বা।“
“রাজ্জাক আর পায়রাকে খবর দেতো, তাড়াতাড়ি।”
পায়রা বুড়োর ৩ নম্বর মেয়ে, পাশেই থাকে, ১০ মিনিটের হাটা পথ। আবার বৈঠকখানার দিকে হাঠা দেয় বুড়ো। যাওয়ার পথে রাখাল উজ্জ্বলকে চোখে পড়া মাত্রই হাক ছাড়ে বুড়ো...
“ঐ উজ্জ্বল, মুয়াজ্জিন রে ডাক, মনে হোচ্ছে নাতি হবে।“
“ছেলেই হবে, মাইয়াডারে বড়ই কস্ট দিছছে।” বলে ওঠে আদুলের মা।
আস্তে আস্তে বৈঠক খানাই ভিড় করে মুয়াজ্জিন, রাজ্জাক, মোল্লা বুড়া, আঞ্জু, সপন আর রাজ্জাকের ২ বছরের ছেলে জনি। ডাক্তার পাওয়া যায় নাই, অন্য রোগী ডেক্তে এই সাতসকালেই দোড়াতে হইছে তাকে।
সুর্য বাবাজী এখন অনেকটাই যুদ্ধ জিতে ফেলসেন, চুলার ধারে মানুষজন এখন অনেকটাই কমে গেছে।
“ও নানা! রস খাবো।” ছোট্ট জনির ই এক মাত্র ধারনা নেয় সবাই এত টেনশনে আসে কেন?
হঠাত করেই আসে একটা চিতকার ভেসে আসে অন্দর থেকে, চেয়ারটার হাতলকে আরও শক্ত করে আকড়ে ধরে বাগানে বুড়ো...
“ওয়া, ওয়া, ওয়্যা............” সকল্ কে জ়ানান দিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘোটলো একটি শিশুর।
“মেমীবুর ছেলে হইছে” হাফাতে হাফাতে বলে উঠল মাছু।
মুয়াজ্জিনের দিকে তাকিয়ে হাল্কা ইশারা করল বুড়ো। রোকেয়া দাই একটা কাথায় জড়ায়ে ছেলেটাকে নিয়ে আসলো বাইরে।
ছেলেটার কানের কাছে মুয়াজ্জিন আস্তে করে শুরু করল “ আল্লাহ হু আকবার......”
“আমিও আযান দিব।” বাপের কোলে বসে আবদার করে যাচ্ছে জনি।
“নতুন কাপড় আর সোনা দিতে হবে কিন্তু” বুড়োর কোলে দিতে দিতে দাবীর কথা জানায়ে দিল রোকেয়া বিবি।
“হবে, হবে” বলতে বলতে নাতির মুখের দিকে তাকাল বুড়ো, তারপর পকেট থেকে চেইন বের করে গলায় পরায় দিল।
“বড় হও, নানা ভাই, বড় হও” বিড়বিড় করতে করতে আশীর্বাদ করল নাতিকে।
“যা, মেমীর কাছে নিয়ে যা।“ মাছুর কোলে দিতে দিতে বল্লো।
২/৩ ঘন্টার কস্ট শেষে অবসন্ন মেমীর কোলে নবজাতকটাকে দিতেই ঘর আলো করা এক হাসিতে ফুটে উঠে তার মুখ।
ভাবছে ছেলের বাবার খুব মন খারাপ হবে, তার খুব শখ ছিল একটা মেয়ের, কিন্তু মনে মনে মেমীর শখ ছিল প্রথম সন্তান
যেন ছেলে হয়। তার দস্যি ছেলে। নামও ঠিক করে রেখেছে সে। কিন্তু নাম রাখার আগে কি সে একবারও চিন্তা করেছিলযে, তার ছেলেকে এই নাম রাখলে কেউ ডাকবে, জ্যোতা, জুতা, যতি অথবা কেও আদর করে ডাকবে জ্যো?? কোনকিছু না ভেবেই সে ছেলের নাম রাখল জ্যোতি......
সকাল ৯ টা, ৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৪
মন্তব্য
কিছুটা পড়েছি। অনেকগুলো বানান ভুল আছে। ঠিক করলে জিনিসটা ভাল দেখায়।
ধন্যবাদ।
(তাহসিন গালিব)
নতুন মন্তব্য করুন