শহুরে বালকেরা যে বয়সে সুশীল সুবোধ থাকে, সেই বয়সটা সবচেয়ে বখা ছেলেগুলোর সাথে কাটিয়েছি আমি। প্রাইমারী স্কুল বয়সে আমার ঘনিষ্ট দোসরদের অন্ততঃ তিনজন বড় হয়ে খুনের মামলার ফেরারী আসামী হয়েছিল। সেই বন্ধুগুলি আমার ক্লাসের ছিল না। প্রতিবেশী সমবয়সী হিসেবে ওদেরকে চিনতাম লাটিম-মার্বেল-ডাংগুলি-ঘুড্ডি ওড়ানোর মতো খেলা থেকে। কে কোন স্কুলে পড়ে কিংবা আদৌ পড়াশোনা করতো কিনা মনে পড়ে না আজ। ওসব নিয়ে আমার মাথাব্যাথাও ছিল না। আমার বিবেচনায় ছিল মার্বেল খেলায় আংটিসে কার আঙুলের টিপ ভালো, লেত্তি দিয়ে কে বেশী খেলাতে পারে উড়ন্ত লাটিম, ঘুড়ির সুতোয় কে ভালো মান্জা দিতে পারে ইত্যাদি।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে যতটা সম্পর্ক তারচেয়ে অনেক বেশী ঘনিষ্ট ছিলাম এলাকার ওই ক্ষুদে বখাগুলোর সাথে। শিশুরা নিষ্পাপ কথাটা আমি সবসময় মানতে পারি না। কারন ওই ক্ষুদে শয়তানগুলো সেই বয়সে যে সব জিনিস নিয়ে আলোচনা করতো শুনলে ঝানু বুড়োদেরও মাথা ঘুরে যাবে। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষনটা যে বরাবরই বেশী তা তখনই বুঝে গিয়েছিলাম। সবকিছু ঠিকভাবে চলতে থাকলে আমি হয়ে উঠতে পারতাম এলাকার একজন ট্রিগার হ্যাপী টেররিষ্ট।
কিন্তু সবকিছু ঠিকভাবে চলেনি। বারো তেরোতেই প্রেমের বাতাস হাওয়া দেয়া শুরু করেছিল আরেক ইচড়ে পাকা রোমিও বন্ধুর প্রভাবে। না, প্রেম আমাকে জড়িয়ে রাখে নি। তবে একটা একতরফা প্রেম লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে তুলেছিল। ক্লাস সেভেনে ওঠার পর বাসাটা বদলে কাছাকাছিই অন্য জায়গায় যাই। সেখানে মিজান নামের এক বন্ধু প্রথমে আমাকে শেখায় ভালো থাকতে হলে প্রেম করতে হবে। প্রেমের মতো শুদ্ধ কিছুই নাই। কলোনীতে আশেপাশের বিল্ডিং মিলিয়ে তার ৫ জনের মতো টাংকি প্রেমিকা ছিল।
একদিন সে সামনের বিল্ডিং উপরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো চল টাংকি মারি। আমি ভাবলাম ছাদের ওপর পানির টাংকির কথা বলছে। আমি তেমন উৎসাহী হলাম না। কিন্তু সে জোর করে আমাকে নিয়ে ওই বাড়ীর সামনে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। আমি বিরস মুখে হাঁটছি আর চারতলায় দাঁড়ানো কিশোরী একটা মেয়েকে দেখছি আড়চোখে। মেয়েটা হঠাৎ ভেতরে ছুট লাগালো। মিজান ক্ষেপে গিয়ে বললো, 'তুই একটা ভোদাই, দিলিতো মেয়েটাকে ভাগিয়ে। এভাবে সরাসরি কেউ টাংকি মারে?'
সেদিন আমি শিখলাম নতুন শব্দ- টাংকি। বুঝলাম টাংকি নিজস্ব হওয়া চাই। একজনের টাংকিতে আরেকজন পানি রাখতে পারে না। আমি মনে মনে বললাম, দেখিস একদিন আমিও......।
পলি নামের ফর্সা হাটু পর্যন্ত স্কার্ট পরা ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়েটার পরিবার সামনের বিল্ডিং এর চারতলায় যেদিন এসে উঠলো, সেদিন থেকে আমি আর ভোদাই রইলাম না। টাংকি তালিকায় প্রথম নাম পলি। একই মাঠে দুজনের খেলাধূলার সুযোগে হিরো হবার অবকাশ ছিল। পলি যখন দাড়িয়াবান্ধা খেলে, আমি তখন ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট হাতে, পলি যখন তিল্ল এক্সপ্রেস খেলে, আমার হাতে টেনিস বলের বোম্বাইট খেলা।
তবে দিন গড়ায় কিন্তু পলির মন গড়ায় না। পলি আমাকে প্রায় খেয়ালই করে না। তবু একদিন তিল্ল এক্সপ্রেসে খেলায় লুকানোর জন্য যখন আমাদের বারান্দাকে বেছে নেয় তখন আমার ভেতরে ঈদের খুশী বয়ে যায়। আল্লাহ আমার গত শবে বরাতের দোয়া কবুল করে দিয়েছে, পলিকে আমার দিকে মনোযোগী করে দিয়েছে। পলি নিশ্চয়ই ইচ্ছে করেই বেছে নিয়েছে আমার বারান্দাটার আড়ালটাকে। খুশীতে বাকবাকুম আমি খবরটা দিতে চলে যাই মিজানের বাসায়।
ক্ষনিকের সেই সুখটা মাঝ মাঠে মারা গেল কয়েকদিন পরেই যেদিন সিঁড়ির তলায় পলিকে ক্লাস টেনে পড়ুয়া লিটু ভাইয়ের সাথে একা একা তিল্ল এক্সপ্রেস খেলতে দেখলাম। প্রথম টাংকির সমাধি হয়েছিলো বুকে চাপ চাপ ব্যাথা নিয়ে।
মন্তব্য
হাসতে হাসতে পরে গেলাম, আহা ছোট বেলায় শবে বরাতের নামাজ পরার এতো ঝোক ছিল, যা চাব তাই পাব ভাবতাম
আপনার লেখা দারুন হয়েছে, আরো লিখেন
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
দারূন মজা পেলাম...
ইশ, যদি টাংকি মারতে পারতুম...!!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
আপনার লেখার ধরন খুবই মজার
লিখতে থাকুন মন খুলে!
আর সেই সাথে আপনার নাম আর ইমেইল এড্রেসটাও দিবেন লেখার কোনজায়গায় লটকে। ব্যাস।
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
ভালো লাগল
"দেখিস একদিন আমিও......"
মজা পেলাম। লিখতে থাকুন নাম-সহ।
নামটা দেখলাম না, আপনি যেইই হন, ফাটাফাটি লিখেছেন!
চালিয়ে যাবেন আশা করি।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
ভাই টাংকি মারতে হলে এরকম দু'একটা মারা খেতেই নাকি হয়। আমার কথা না, মনিষীরা বলে গেছেন।
আপনি আপনার নামটা জানালে খুশি হব। ধন্যবাদ।
কোন মনীষী বলেছেন, কঠিন নিন্দা করি তার।
নাম জানাতে ঈষৎ লজ্জিত বোধ করি
আপনার লেখাটা দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ
লেখা ভাল লেগেছে!
নিয়মিত লেইখেন ভাই। আর এটা যদি প্রথম লেখা হয় তাহলে কই - সচলে স্বাগতম
আপ্নেরো তাইলে বাচ্চা কালে এই অভ্যাস ছিল তা এখন এই অভ্যাস এর কি অবস্থা
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আমি বাচ্চাকালেও অনেক ভালু ছিলাম, এখনো অনেক ভালু আছি। এইসব টাংকি মারার অভ্যাস নাই। সবার মধ্যে নিজের অতীত বা বর্তমানের ছায়া খোঁজার চেষ্টা করা বৃথা হে বাবু। দোয়া করি, আমার মতো ভালু হইতে পারো যেন খুব তাড়াতাড়ি।
ভালু তো আছিই আর ভালু হইলে কি সুপারিশ করবেন জায়গামত
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
নাহ, পুরাপুরি ভালু হও নাই তুমি। এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে তোমাকে।
বাচ্চাকালে যা ছিল বুইড়া কালে কি তার কম হয়? তবে পার্থক্য হইলো বাইচাকালে পাত্তা না দেয়া মেয়েগুলো বুইড়াকালে দেখা হইলে আশপাশে ঘুরঘুর করে। অসময়ে আইসা লাভ কী?
আপনার লেখা ভাল লেগেছে তাই নামটা জানতে পারলে আর ভাল লাগত। আর তাই রেনেট ভাই কথামত উপরে নীচে কোথায় লটকে দিন নামটা, আর লিখুন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অসম্ভব সাবলীল আপনার লেখা। নিয়মিত লেখা চাই।
আমার এক বান্ধবীর নাম ইভা। ওর সাথে আমরা ইভটিজিং করতে পারতাম না, ইভাটিজিং করতে হতো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতম। তবে আপনার মতো সাবলীল হতে পারতাম যদি!
ইভাটিজিং নিয়ে কখন লিখছেন?
আপনার লেখাখান পড়ে আমার একটা পুরানা লেখার কথা মনে হইলো...
গৌতম... আমারও এক বন্ধুর নাম ইভা... আমি তারে ইভ ডাকতাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার সেই লেখাটা পড়লাম। দুর্ভাগা কপাল ........সহমর্মী হইলাম
নামটা দেবার আগে পোষ্টে ক্লিক হয়ে গিয়েছিল!! অনেকে লেখকের নাম জানতে চেয়েছেন, ধইন্যবাদ ও লইজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে- জী আকামটা আমারই, নতুন কেউ না। হতাশ হইলেন? হে হে .......
অলওয়েজ রিমেম্বার -- পরাজয়ে ডরে না বীর।
টাংকি হয় ছাদে আর নীচের গুলা ফিল্ডিং, দৃষ্টি আকর্ষন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
বাহ্ এটা তো দারুন সংজ্ঞা হলো!! এজন্যই বলে শেখার কোন শেষ নেই। এত বছর ধরে টাংকি ফিল্ডিং খেলেও পার্থক্যটা খেয়াল করিনি
লেখাটি ভালো লাগলো।...
দৃষ্টি আকর্ষন: হের অতিথি, আপনার নামটি কিন্তু জানা হলো না!!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন