রূপকল্পদ্রুম পিলখানাঃ ঠাকু'মার ঝুলিটি বন্ধ হবে কি?

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি
লিখেছেন রিয়াজ উদ্দীন (তারিখ: রবি, ১২/০৪/২০০৯ - ৬:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাতি হিসাবে আমাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নানা রকমের বিদ্রুপ হরহামেশাই শোনা যায়। কেবল অন্যেরা আমাদের গালাগাল দিচ্ছে তা নয় আমরা নিজেরাও কম যাই না। তবে দোষারোপের এই প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো আমরা ভুলে যাই। মানুষ হিসাবে আমরা কি এতটাই খারাপ? সব ক্ষেত্রে অনেক বেশি কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের । একটা ছোট দেশে অনেক লোক গাদাগাদি করে থাকি। কাজেই একসাথে থাকা বলতে কি বোঝায় আর সেটা কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে করা সম্ভব তা বোঝার জন্য আমাদের সচেতন ভাবে চেষ্টা করতে হবে। এই বাস্তবতাটি আমাদের চেয়ে বেশি আর কোন জাতির জন্য বোধহয় এতটা প্রযোজ্য নয়। এখানে সম্পদ কম, অভাব বেশি, চলাফেরা বা ভাবনা সবক্ষেত্রেই পরিসরের ভিষন কমতি। যাই হোক এই একসাথে থাকার কাজে সচেতনতার কথা এই জন্য আসছে যে, কারও বিশ্বাস বা মতের সাথে দ্বিমত পোষন করার নামে ঘৃণার বাষ্প ছড়ানটা আমাদের একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। আর অভ্যাস ব্যপারটা এমন যে তা পালটানোর জন্য সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই। যাদের মত আর পথ ভিন্ন তারাই সব নষ্টের মূল এমনটা আমরা নির্দ্বিধায় ধরে নেই। ভিন্ন মত আর পথের লোকেরা দেশ আর জতিকে শেষ করার জন্য কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ফলে পিলখানায় আমাদের জাতির ইতিহাসে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল আর আমরা তার পেছনে ষড়যন্ত্রের সাম্ভাব্য ধরন নিয়ে শতাধিক মতবাদের জন্ম দিয়েছি। দল আর মতের যত শাখা, ষড়যন্ত্র বিশ্লেষি কল্পনা প্রসুত মতবাদের সংখ্যা তার চেয়ে কম নয়। হয়ত এর থেকে জাতি হিসাবে আমাদের কল্পনাশক্তি নিয়ে গালভরা সব বিশেষন ভেবে নেয়া যাবে কিন্তু এই কল্পনা চর্চার আড়ালে আমরা আমাদের ভুল থেকে ভালমন্দ কিছু শিখে নেয়ার কথা ভুলে যাই। অবশ্য মন্দ কিছু শিখছিনা তা আর বলতে পাড়ছি কই। একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষারোপ করছি, ঘৃনা করছি আর একপর্যায়ে অতি উৎসাহের বশে অন্য পক্ষকে পরপারে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আবার ষড়যন্ত্রবাদিতার আলোচনায় ফিরে আসি। পিলখানার গনহত্যাকে ঘিরে যত তত্ত্বের তৈরি হয়েছে তাতে কল্পনাশক্তির পরম উৎকর্ষ দেখেছি কিন্তু মানবিকতা আর বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠিতে একেবারেই তলায় পড়ে গেছি। এতসব তত্ত্বের আড়ালে সাদাচোখে যা দেখা যায় তা ভিড়ের চাপে প্রায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সহজ কিছু প্রশ্ন রাখছি। এই দুর্ঘটনাটি ঘটার জন্য ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব কি অতি আবশ্যক ছিল? ষড়যন্ত্র ছাড়াকি এই দুর্ঘটনা ঘটা একান্তই অসম্ভব ছিল? অথবা কেবলমাত্র একটি গভীর ষড়যন্ত্রই কি এমন একটি ঘটনার জন্য যথেষ্ট? ভাইয়ে ভাইয়ে আস্থা যদি গভির হয় তবে ষড়যন্ত্র যেমন এটে উঠতে পারেনা তেমনি ভাইয়ে-ভাইয়ে যদি গভির অনাস্থা থাকে তবে কোন ষড়যন্ত্র ছাড়াই খুনোখুনি হতে পারে এবং হামেশা হয়েও থাকে। কিন্তু গোলমালটা এইখানে যে আমরা ঠিক মেনে নিতে পারছিনা যে ভাই ভাই কে খুন করতে পারে। সেখান থেকেই হয়ত এই ষড়যন্ত্রবাদিতার বিস্তার। আমি এখানে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না, তবে পিলখানার এই দর্ঘটনার পুর্বাপর বিশ্লেষন খেকে বলব ষড়যন্ত্র এখানে নেসেসারি কন্ডিশন বা সাফিসিয়েন্ট কন্ডিশন কোনটাই ছিল না। কোনপ্রকার ষড়যন্ত্র ছাড়াই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া কেবল ষড়যন্ত্র এই ঘটনা ঘটার জন্য যথেষ্ট শর্ত নয়। বরং সেনাবাহিনির প্রতি দির্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ যদি বিদ্রোহি বিডিয়ার সদস্যদের না থাকত এমনটা কিছুতেই ঘটতে পারত না। আর ক্ষোভ যে ছিল তাতে নিশ্চই সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তা না হলে এক অংশ বিদ্রোহ করতে চাইলে অন্যপক্ষের বাঁধার মুখে তা সম্ভব হত না। বিদ্রোহের সময়ে বিডিআর সদস্যদের পারস্পরিক সংহতি এবং পিলখানার বাইরের বিডিআর সদস্যদেরও এই বিদ্রোহের পেছনে নৈতিক সমর্থন এই ধারনাকেই জোরদার করে। অবশ্য বিদ্রোহের পরে এই বিষয়ে আটক বিডিআর সদস্যদের বক্তব্যের সাথে এই ধারনার মিল থাকার কথা নয়, কেননা এখানে আইনের হাত থেকে নিজেদের প্রাণ বাচানোর তাগিদটাই মুখ্য হয়ে ঊঠছে। আর সেই দিক থেকে দেখলে চলমান তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির কাংখিত সমাধান, বিডিআর সদস্যদের নিজেদের প্রাণ বাঁচনোর তাগিদ, আর সহজলভ্য ষড়যন্ত্রবাদি তত্ত্বের ভীড়ে সহজ সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে। এটাই এখন ভাবনার বিষয়।

যতটুকু বুঝেছি, বাংলাদেশ রাইফেলস সেনাসদস্যদের নেতৃত্বে আর কর্তৃত্বে পরিচালিত। এখানে একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা কাঠামো বিদ্যমান। ক্ষমতা আর সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি এখানে অনেক ক্ষেত্রেই অসমতা রয়েছে। এই অসম সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক মতের আদান প্রদানের ধরন কেমন তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রভু-ভৃত্য, নেতা-কর্মি, কর্মকর্তা-কর্মচারি এমন অনেক অসম সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আমরা সমাজে বাস করে থাকি। লক্ষ্যনীয় যে, বিডিআর আর সেনাসদস্যদের মধ্য সম্পর্কের ধরন সম্পর্কে আমার মত আম জনতার তেমন কিছু জানা নেই। বলা বাহুল্য সমাজ আর সমাজের বিভিন্ন গ্রুপকে একজন কিভাবে দেখবে তা বহুলাংশেই নির্ভর করে সমাজে বিদ্যমান এই সব ক্ষমতা কাঠামোতে কে কোথায় আছে তার ওপার। তাই প্রশ্ন বিডিআর আর সেনাসদস্যদের মধ্য সম্পর্কের ভেতরে কোন অসঙ্গতি থেকে কি আমরা পিলখানার বিদ্রোহকে বোঝার চেষ্টা করতে পারিনা। এই প্রসংগে এডওয়ার্ড সাইদের একটি লেকচারের কথা খুব মনে পড়ছে। তার বহুল আলোচিত, সমালোচিত আর অনেক ক্ষেত্রে সমাদৃত 'ওরিএন্টালিসম' গ্রন্থে তিনি প্রাচ্য সম্পর্কে পশ্চাত্যের চিন্তার ক্ষেত্রে স্টেরিওটাইপিং-এর বিশাল আস্তর খুলে দেখিয়েছেন এর মাধ্যমে তারা প্রাচ্যকে এমন আকটি চরিত্র দিয়েছেন যাতে প্রাচ্য হচ্ছে বর্বরতা, সন্ত্রাস আর অন্ধকারের আরেকটি নাম। এই স্টেরিওটাইপিং যেকোন শোষন মূলক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সাধারন হতিয়ার হিসাবে কাজে লেগেছে। হিটলার ইহুদিদের উপর, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের উপর, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের উপর এই অস্ত্র প্রয়োগ করেছে/করছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই রকম উদাহরনের অভাব হবে না। প্রাচ্য আর পশ্চাত্যের সম্পর্কের কথাই ধরা যাক। প্রাচ্য বা প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বা সমাজ সম্পর্কে যা জানা যায় তা পশ্চাত্যের হাতেই লেখা হয়েছে। কিন্তু পশ্চাত্য সম্পর্কে প্রাচ্যের একই রকমের লেখা পাওয়া যাবেনা। বিডিআর-সেনাসদস্যদের সম্পর্কে ফিরে আসি। ইন্টারনেটের কল্যনে বিডিআর-চরিতের সেনাবাহিনি ভার্সন জানার সুযোগ হয়েছে যার কিছু নমুনা নিচে দেয়া হলঃ

ক) একজন আর্মি অফিসারের ভাস্যমতে - বিডিআর বিদ্রোহের মূল কারন এই যে সেনাবাহিনির নজরদারির দরুন তারা সীমান্তে অবৈধ চোরাচালানের ভেতর দিয়ে লাভবান হতে পারছিল না তাই তাদের ক্ষোভ।
খ) আরেকজন অফিসারের মত - বিডিয়ার সদস্যদেরকে দেশের লোকেরা সাধারন ভাবলেও এরা কোন ভাবেই সাধারান নয় আর এরা সরল সাধারন জীবন-যাপান করে এই ধারনা ভুল; আর দুর্নীতির মাধ্যমে এরা প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়। এরা পুরোদস্তুর ধুর্ত, চতুর আর শতভাগ মিথ্যাবাদি।
গ) বিডিআরের নবনিযুক্ত প্রধান সৎ কর্মীদের নিয়ে নতুন বাহিনী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ব্যপারটি এমন যে বিদ্যমান বাহিনি অসৎ সদস্যের দ্বারা গঠিত।
ঘ) প্রধান মন্ত্রীর সাথে সেনাসদস্যদের আলাপচারিতা কোনভাবে সাধারনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটের মধ্যমে। সেখানে একজন সদস্য মন্তব্য করছিলেন - এমন অপারেশন (অপারেশন রেবেল হারট) করতে চাই যাতে দেশের ইতিহাসে ভবিষ্যতে কেউ কোনদিন সাহস না করে যে আমরা বিদ্রোহ ঘোষনা করব।

এগুলো কিছু খন্ড চিত্র যেখান থেকে আমরা স্টেরিওটাইপিং-এর নমুনা দেখতে পাই। এধরনের মন্তব্য বা ধারনা আমাদের মধ্যে কম নেই। এসব উদাহরনের মধ্য দিয়ে সেনাসদস্যদের পূর্ণ পরিচয় পাবার চেষ্টা
করলেও একই রকমের স্টেরিওটাইপিং-এর ফাঁদে পড়তে হবে। কারন বিডিয়ার সদস্যদের প্রতি সহানুভুতি আছে এমন অনেক সেনাসদস্য অবশ্যই রয়েছেন। যাই হোক সধারন ভাবে বিডিয়ার সদস্যরা সমাজিক অবস্থান, শিক্ষা আর ক্ষমাতার বিচারে পিছিয়ে। এরা যেমন মিডিয়ার মনযোগ পায়নি তেমন দেশের বাকি লোকেদের কাছে তারা তাদের জীবনে গল্প কি পৌছে দিতে কি পেরেছে? সেনা সদস্যদের লেখা পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে, তাদের বক্তব্য টেলিভিশনের পর্দায় শোনা গেছে, আর ইন্টার নেটের কল্যানে তাদের লেখাও পড়ার সুযোগ হয়েছে অনেকের। কিন্তু বিডিয়ার সদস্যদের দুঃখের কথা শোনার আগ্রহ আমরা কেন যেন হরিয়ে ফেলেছি। এখন এই নির্মমতার বিচার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিডিয়ার সদস্যদের একটি ভয়ংকর দৈত্যের মুর্তি দেয়ার কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন তদন্তের নামে বিডিয়ার সদস্যের হত্যা করা হলেও তেমন উচ্চবাচ্য হয় না। এ যেন রূপকথার গল্পের রাক্ষস বধের মত। এই নাটকে সেনাবাহিনি আজ রাজকুমার আর তদন্ত প্রক্রিয়া হচ্ছে আশির্বাদের সোনার তরবারি। কিন্তু এই গল্পের পুরোটি কি আমাদের জানা। দেশের আর দশজন সাধারন মানুষের কাতারে থেকে হঠাৎ করে দৈত্য হয়ে ওঠা এই বিডিয়ার কর্মীদের গল্প শোনার আর কোন ইচ্ছা নেই কারো। একবারটিকি আমরা ভেবে দেখার চেষ্টা করতে চাইনা বীরসন্তান থেকে দৈত্যে রূপান্তরিত এই প্রাক্তন মনুষদের নিরপরাধ সন্তানেরা এই রাষ্ট্র আর সমাজব্যবস্থাকে কি চোখে দেখবে? বলা তো যায় না অন্য কোন গল্পে/পর্বে এই পাত্র পাত্রিরা হয়ত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। হতভাগা বিডিয়ার সদস্যদের অসহায় এইসব শত-শত সন্তানেরা হয়ত রাজপুত্র হয়ে রাষ্ট্র আর সমাজ নামের দৈত্যকে বধ করতে জেগে উঠবে একদিন - বাংলা ভাই, কালা জাহাংগীর বা ইসলামী জংগী হয়ে। কথায় বলে "যদি হয় সুজন তেতুল পাতায় ন'জন" কিন্তু আমাদের এইসব গল্পে সবাই সুজন থাকছে না। একটি গল্পের নায়ক আরেকটি গল্পের খলনায়ক, এক পর্বে যে রাজপুত্র আরেক পর্বে সে দৈত্য। হিটলারের কল্পনার দেশটি কেমন ছিল? সেটা এমন একটি দেশ যেখানে "If you win you need not to explain....But if you lose you should not be there to explain." হিটলার সাহেব তখন আমদের মত রূপকল্পপ্রেমী জাতি খেয়ালের বশে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাবে।

আবার আবার গোড়ার কথায় আসি। জাতি হিসাবে আমাদের দুর্বলতা আসলে কোথায়? আমরা আমাদের ঠাকুমার ঝুলিটি বরাবরের জন্যই খুলে রেখে দিয়েছি। সামাজিক পরিবর্তনের ধারায় এখনো আমরা আমাদের শৈশব পেরোতে পারিনি। কিন্তু এতবড় মূল্য দেবার পরও কি আমরা থামতে পারিনা? ঠাকু'মার রূপকথার ঝুলিটি বন্ধ করে কি আমরা বাস্তব জগতে প্রবেশ করতে পারিনা? যেখানে রক্তমাংষের মানূষ হঠাৎ দৈত্য হয়ে না উঠে।

নামঃ রিয়াজ উদ্দীন
email:


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

অভিনন্দন। এর আগে আপনার দুর্দান্ত কমেন্ট পড়েছি। এবার লেখার সঙ্গে পরিচিত হলাম।

দুটো পয়েন্ট জেগেছে মনে আপাতত:
১. কোন্দল-প্রবণতার মধ্যে জাতীয় বৈশিষ্ঠ্য খুঁজে পাওয়াও কিন্তু একধরনের প্রাচ্যবাদী ঝোঁক।

২. সব ষড়যন্ত্র বলা এবং কোনো ষড়যন্ত্র নাই বরং ষড়যন্ত্র করে বিশুদ্ধ বিদ্রোহের ঘটনা ঢাকা হচ্ছে বলাটা কিন্তু আসলে একইধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হয়ে যায়। কেবল পাত্র-পাত্রীর বদল হয়।

তারবদলে দৃশ্যমান ও আপাত অদৃশ্য কার্য-কারণ-সম্পর্ক ও মোটিফ ধরে ধরে বিশ্লেষণ করাই ভাল। এবং বলাবাহুল্য কাজটা শার্লক হোমসের নয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকের। তাই কে করেছে যেমন জানা জরুরি, তেমনি 'কী হলো এবং কী এর অভিঘাত' তা সনাক্ত করা আরো জরুরি নয় কি?

আবারো সুলিখিত রচনাটির জন্য ধন্যবাদ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোন্দল-প্রবণতার মধ্যে জাতীয় বৈশিষ্ঠ্য খুঁজে পাওয়াও কিন্তু একধরনের প্রাচ্যবাদী ঝোঁক

Orientalism -এর এমন খাসা বাংলা অনুবাদ হতে পারে মনে আসে নি। বাংলা ব্লগে লেখার সুফল ফলতে শুরু করেছে মনে হচ্ছে। এখানে কোন্দল-প্রবণতার বিষয়টি আত্মসমালোচনার উদ্দশ্যে উল্লখ করা হয়েছে। তারপরও আপনার এই মন্তব্যের সাথে আমি একমত।

সব ষড়যন্ত্র বলা এবং কোনো ষড়যন্ত্র নাই বরং ষড়যন্ত্র করে বিশুদ্ধ বিদ্রোহের ঘটনা ঢাকা হচ্ছে বলাটা কিন্তু আসলে একইধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হয়ে যায়। কেবল পাত্র-পাত্রীর বদল হয়।

এটিও চমৎকার মন্তব্য। তবে আমার মনে হয়েছে এখানে ষড়যন্ত্রতত্ত্বগুলো অনেকটা খেয়ালের বশে বা বিপক্ষ সম্পর্কে আগে থেকে লালিত ধারনার আলোকে প্রবর্তিত। কাজেই ষড়যন্ত্রতত্ত্বের প্রস্তাবনাকে আমার ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়নি। এই বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তাদের বেশিরভাগই আন্তরিকভাবে এই দুর্ঘটনায় মর্মাহত আর তত্ত্বগুলোর প্রস্তাবনা এই বিষয়ের সত্য উদ্ঘাটনের উদ্দশ্যেই করা হয়েছে। এমনিতে এতে আমার তেমন আপত্তি থাকত না যদি না বিদ্রোহের নেসেসারি কন্ডিশন হিসাবে ক্ষোভের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হত। বলতে বাঁধা নেই এই বিষয়টি আলোচনা সুচী থেকে যেন একেবারে খসে গেল।

আর দেখুন তদন্তের কোন সমাধান ছাড়াই বিডিয়ার সদস্যরা যে এমন নিষ্ঠুর মৃত্যর শিকার হচ্ছে রাষ্ট্রের হেফাযতে একে Legitimized Retaliation ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিনা। এরকম একজন সদস্যের সন্তানের চোখ দিয়ে আমাদের দেশ আর সমাজটাকে কল্পনা করতে গেলে গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। কোথায় কার কাছে নালিশ করব এই অনাচারের বিরুদ্ধে। তাই শেষমেশ ব্লগিং - এর জগতে প্রবেশ। এখানে আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল লাগল।

ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার এই স্পিরিটটিই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এখানে কমেন্টানোর জন্য।

আমাদের এইসব নিরীহ (?) আলোচনাও নজরদারির অধীন, তাদেরও বলি, এ পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা কঠিন। আমরা কত বড় অভিজ্ঞতা নিয়ে বসে আছি, তা অনেক সময় টের পাই না। বারে বারে যে একাত্তরের কাছে যাওয়া যায় শিখবার জন্য, সেটা খুবই অমূল্য এক রিসোর্স। একাত্তর বিদ্রোহ নয় প্রায় বিপ্লব, তা জেনেও বলছি, সেসময় খোন্দকার মোশতাক গং যেভাবে গোপনে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল সেটা ছিল ষড়যন্ত্র_ যেহেতু তারা সফল হয় নাই। কিন্তু সফল হলে কি আর ষড়যন্ত্র বলা যেত? তখন বলা হত দ্বিধাবিভক্তি। আর সেই বিভক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ না বলে অন্য কিছু বলতে হতো।

বিডিআরের বেলায় প্রথমত বিদ্রোহই ঘটেছে, এবং বলা দরকার বিদ্রোহ ও ডাকাতি এক নয়। বিদ্রোহী তার উদ্দেশ্যের ন্যায্যতা, ফরিয়াদের নৈতিকতা রক্ষা করেই কর্তৃত্ব ভাঙ্গে। এখানে সেটা হয়েছে, তাই এটা বিদ্রোহ। কিন্তু যেভাবে ও যে পদ্ধতিতে প্রাণহানি হয়েছে তা বিদ্রোহী আচরণ নয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রাতিষ্ঠানিক মাজা ভেঙ্গে দেওয়া, বাহিনীর মোড়্যাল গুঁড়িয়ে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। এর বেশি অগ্রসর হতে হলে সাক্ষ্যসাবুদ নিয়ে বসতে হবে। সেটা এখানে সম্ভব নয়।আপাতত আলোচনার খাতিরে এটুকু বলা যায়, জগতে কোনো ঘটনাই বিশুদ্ধ একমাত্রিক নয়।

এখন এই বিদ্রোহকে যদি ঢেকে দেওয়া সম্ববও হয়, বা সেই মোটিফ আগে থেকেই থেকে থাকে, তাহলে বলতে হবে যে এখানে অন্য হাত ঢুকেছে। ধরে নেয়া যাক, তাজউদ্দীনের হাতের ওপর মোশতাকের হাত।এ দুইয়ের মোটিফ, আচরণ এবং উৎস এক হতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, সমাজে যখন গভীর বিভক্তি থাকে, রাষ্ট্র'র কথা ভুলে যদি দল, সরকার, আর্মি, বিডিআর ইত্যাদিতে সবাই অবস্থান করি, তখন স্বার্থের দ্বন্দ্ব ব্যাখ্যারও দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। অর্থাৎ কার্য এখানে ফলকে নির্ধারণ (কনডিশনড/ডিটারমাইনড) করবে। সেদিক থেকেও বিদ্রোহের এজেন্সি আর বিদ্রোহের আওতার বাইরের এজেন্সি আলাদা হয়ে যায়।

আমরা রাষ্ট্রহারা বলেই, পুরো ঘটনায় রাষ্ট্রের ভূমিকা চোখে পড়ে না।তা যদি হতো, সেই রাষ্ট্র নিজ স্বার্থেই তার বাহিনীর প্রাণ যে সিপাইরা, তাদের হোস্টাইল করে তুলতো না কিংবা তাদের প্রতিপক্ষে দাঁড় করাতো না। প্রতিহিংসার প্রশ্নই এখানে আসতো না। আসতো বিচার-তদন্ত-শাস্তি ও সমঝোতার আলোচনা। এই জায়গা থেকৈই আমি আগে বলেছিলাম, কোনো কান্না নোনা আর কোনো কান্না মিষ্টি তা তো না!

আবার এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে যে উচ্চবর্গীয় ব্যাখ্যা তেজষ্ক্রিয়া ও সহানুভূতির খাত তৈরি হয়েছে ম্যাস মিডিয়া ও মধ্যবিত্ত পরিমণ্ডলে, সেটাও নিম্নশ্রেণীর প্রতি উচ্চশ্রেণীর শ্রেণীগত সহিংসতাকেই প্রমাণ করে। সেজন্য নিহত, নিখোঁজ, নির্যাতিত বিডিআরের খোঁজ কেউ করে না। অফিসারদের অসহনীয় মৃত্যু আমাদের স্নায়ুর ওপর চাপ তৈরি করে আমাদের ধসিয়ে দিয়েছিল; বিডিআরের ততোধিক করুণ পরিণতিতে কি তাহলে এই উচ্চমহল সুস্থ হলো? প্রতিহিংসার নিবৃত্তি না হওয়া অবদমন মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। সেটা চরিতার্থতা যাদের সুস্থ করে, সেই সমাজের-গোষ্ঠীর মানসিক সুস্থতা আছে বটে, যেটা থাকে ফ্যাসিস্টদের।

হিটলারি গণহত্যার সময়ও মায়েরা তাদের শিশুদের পিয়ানো বাজানো শেখাতে নিয়ে যেত, আমরাও সেরকমই মেতে আছি দৈনিন্দিনতার মিহি-আনন্দের আসক্তিতে। সেই আনন্দও যখন কোনোভাবে নিখোঁজদের কথা ভুলতে দেয় না, তখন আরেক অসুস্থতা শুরু হয়। আমি সেই অর্থে অসুস্থ।

যাহোক, কী বলতে কোথায় চলে এসেছি।
আমার কাছে ষড়যন্ত্র বাস্তব, কারণ তা আদতে ষড়যন্ত্রই নয়। তা আমাদের সামনে উন্মোচিত না হওয়া ঘটনার গভীর গ্রন্থি। দড়ি ধরে ধরে সেখানে পৌঁছলে, বোঝা যায় কীভাবে শাপলা যেখানে ফুটে থাকে তার শেকড় সবসময় সেখানে নাও থাকতে পারে।বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দেখে দেখে এসব এখন বুঝতে পারে, সেজন্য এখনো এদেশ ভেসে যায় নাই। এই দুষ্কালে সেটাই যা ভরসা।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সুচারু মন্তব্য আর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভরপূর এই মন্তব্য আমার পোস্টটিকে সম্মনিত করেছে। আপনার বিশ্লেষনের বহূমাত্রিকাতা দেখেও বেশ ভাল লাগছে।

আমরা কত বড় অভিজ্ঞতা নিয়ে বসে আছি, তা অনেক সময় টের পাই না।

এই অভিজ্ঞতার তাৎপর্যবোধের প্রতিফলন যদি আমাদের রাষ্ট্র বা সমাজের এজেন্ডায় উপযূক্ত যায়গা করে নিতে পারত তবে এই লেখাটি লেখার প্রয়োজনই পড়ত না হয়ত। এখন ভয় এই তাৎপর্যকে উপলব্ধি করতে আমরা কি এরকম আরো অঘটনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকব?

বিডিআরের বেলায় প্রথমত বিদ্রোহই ঘটেছে, এবং বলা দরকার বিদ্রোহ ও ডাকাতি এক নয়।

কিন্তু ডাকাতির ঘটনা ঘটে গেল বলে বিদ্রোহের তাৎপর্য এইভাবে মুছে যাবে? এই ঘটনাটি এখন একটি নিছক হত্যা বা ডাকাতি সেই অর্থে ষড়যন্ত্র হিসাবেই বেশি মনযোগ পাচ্ছে। আর আমার আপত্তি ঠিক সেখানেই। যেই সংবেদনশিলতার অভাবে বিদ্রোহ গনহত্যায় পর্যবসিত সেই একই বস্তুর অভাবে আজ বিদ্রোহের নায়কেরা দৈত্যে পরিনত।

জগতে কোনো ঘটনাই বিশুদ্ধ একমাত্রিক নয়

আপনার সাথে একমত।

সমাজে যখন গভীর বিভক্তি থাকে, রাষ্ট্র'র কথা ভুলে যদি দল, সরকার, আর্মি, বিডিআর ইত্যাদিতে সবাই অবস্থান করি, তখন স্বার্থের দ্বন্দ্ব ব্যাখ্যারও দ্বন্দ্ব তৈরি করবে।

আর এই বিভক্তির জের ধরে রাষ্ট্রকে খুইয়ে, মানবিয় সংবেদনশিলতাকে হারিয়ে নিজেদের গোষ্ঠিগত পরিচয়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি।

সেটাও নিম্নশ্রেণীর প্রতি উচ্চশ্রেণীর শ্রেণীগত সহিংসতাকেই প্রমাণ করে

উচ্চবর্গ আর নিম্নবর্গের ডাইকটমির মাঝখানে.আমাদের মানুষ পরিচয়টিকে যদি হারিয়ে না বসতাম তাহলে এই পরিনামটি যেমন ঘটতনা তেমনি দফায় দফায় আজ এই গ্রুপকে কাল আরেক গ্রুপকে ডেমনাইয করার আত্মবিধংসি খেলায় মেতে থাকতে হতনা।

আবারো আপনার সুচারু মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

জগতে কোনো ঘটনাই বিশুদ্ধ একমাত্রিক নয়। (ফারুক ওয়াসিফ )

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

বিপ্লবী এর ছবি

হা হা হা... বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক হাততালি

!!বিপ্লবী!!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ছদ্মবেশী আর ক্লাউন একই পদের।

আজকাল দেখি চিংড়িও এই আঘাটায় বসে ন্যাজ নাচাতে আসে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

@বিপ্লবিঃআপনার ভাষায় বিপ্লবের মানে কি তা পরিষ্কার করেননি যদিও, তারপরও বলব যদি আপনার বিপ্লবের মানে এই হয় যে গল্পের এক পর্বে রাজপুত্র হয়ে রাক্ষসবধ আরেক পর্বে রাক্ষস হয়ে করুন মৃত্যু বরন তবে আমি আপনার সাথে একমত নই। তবে এই পালা থেকে বের হয়ে মানুষ হয়ে একত্রে বাঁচার শপথ যদি আপনার বিপ্লবের অর্থ হয়ে থাকে তাহলে আপনার সাথে একমত।

রিয়াজ উদ্দীন

তানভীর এর ছবি

রিয়াজ, চমৎকার! সচলায়তনে স্বাগতম। লেখালেখি যখন শুরু হল,তখন আরো লেখা আসতে থাকুক।

বিডিআর নিজেই কি তার করুণ পরিসমাপ্তির জন্য দায়ী নয়? যে যৌক্তিক দাবী নিয়ে তারা বিদ্রোহ শুরু করেছিল, নির্বিচারে হত্যাকান্ড না ঘটালে আজ জনগণ তো তাদের পক্ষেই থাকত, নয় কি?

আশা করছি, এরপর নগর পরিকল্পনা বিষয়ক লেখাও দেখতে পাব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ তানভীর ভাই। যাক সচলায়তনেও আপনার সাথে দেখা হল। লেখার ইচ্ছা আছে তবে তার ফ্রিকোয়েন্সি কেমন হবে তা এখনো বুঝতে পারছি না।

বিডিআর নিজেই কি তার করুণ পরিসমাপ্তির জন্য দায়ী নয়?

ওপরের মন্তব্যে ফারুক ওয়াসিফ যেমন বলেছেন, বিদ্রোহ আর ডাকাতিকে আমরা আলাদা করতে পারছিনা। দুর্যোগের মুহুর্তে একপক্ষ থাকে আক্রান্ত আর একপক্ষ ব্যস্ত হয় আক্রান্তের সেবায় আর একপক্ষ লুটপাটে মেতে থাকে। কজেই দুর্যোগের মুখে এই তিন ধরনের কার্জক্রমে ব্যস্ত সবাইকে আমরা কি চোর-ডাকাত ভাবি? বিডিয়ারের ঘটনাটিকেও আমি অনেকটা সেই দৃষ্টিতেই দেখছি।

আবার কথা হবে ভাইয়া।

রিয়াজ উদ্দিন

পুতুল এর ছবি

সেনা সদস্যদের লেখা পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে, তাদের বক্তব্য টেলিভিশনের পর্দায় শোনা গেছে, আর ইন্টার নেটের কল্যানে তাদের লেখাও পড়ার সুযোগ হয়েছে অনেকের। কিন্তু বিডিয়ার সদস্যদের দুঃখের কথা শোনার আগ্রহ আমরা কেন যেন হরিয়ে ফেলেছি। এখন এই নির্মমতার বিচার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিডিয়ার সদস্যদের একটি ভয়ংকর দৈত্যের মুর্তি দেয়ার কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন তদন্তের নামে বিডিয়ার সদস্যের হত্যা করা হলেও তেমন উচ্চবাচ্য হয় না। এ যেন রূপকথার গল্পের রাক্ষস বধের মত। এই নাটকে সেনাবাহিনি আজ রাজকুমার আর তদন্ত প্রক্রিয়া হচ্ছে আশির্বাদের সোনার তরবারি। কিন্তু এই গল্পের পুরোটি কি আমাদের জানা। দেশের আর দশজন সাধারন মানুষের কাতারে থেকে হঠাৎ করে দৈত্য হয়ে ওঠা এই বিডিয়ার কর্মীদের গল্প শোনার আর কোন ইচ্ছা নেই কারো। একবারটিকি আমরা ভেবে দেখার চেষ্টা করতে চাইনা বীরসন্তান থেকে দৈত্যে রূপান্তরিত এই প্রাক্তন মনুষদের নিরপরাধ সন্তানেরা এই রাষ্ট্র আর সমাজব্যবস্থাকে কি চোখে দেখবে? বলা তো যায় না অন্য কোন গল্পে/পর্বে এই পাত্র পাত্রিরা হয়ত ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। হতভাগা বিডিয়ার সদস্যদের অসহায় এইসব শত-শত সন্তানেরা হয়ত রাজপুত্র হয়ে রাষ্ট্র আর সমাজ নামের দৈত্যকে বধ করতে জেগে উঠবে একদিন - বাংলা ভাই, কালা জাহাংগীর বা ইসলামী জংগী হয়ে। কথায় বলে "যদি হয় সুজন তেতুল পাতায় ন'জন" কিন্তু আমাদের এইসব গল্পে সবাই সুজন থাকছে না। একটি গল্পের নায়ক আরেকটি গল্পের খলনায়ক, এক পর্বে যে রাজপুত্র আরেক পর্বে সে দৈত্য। হিটলারের কল্পনার দেশটি কেমন ছিল? সেটা এমন একটি দেশ যেখানে "If you win you need not to explain....But if you lose you should not be there to explain." হিটলার সাহেব তখন আমদের মত রূপকল্পপ্রেমী জাতি খেয়ালের বশে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাবে।

চমৎকার বলেছেন।
সচলায়তনে স্বগতম।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই পুতুল আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আশা করছি এই সচলায়তনে আবার দেখা হবে।
রিয়াজ

স্নিগ্ধা এর ছবি

পরে বড় করে মন্তব্য করবো, এই মুহূর্তে মোটামুটি আক্ষরিক ভাবেই 'মরারও সময় নেই' তাই শুধু এটুকু বলতে লগ ইন করলাম - সচলায়তনে স্বাগতম!

তানভীরের মন্তব্য থেকে মনে হলো আপনি আরবান প্ল্যানিং বিষয়ে কাজ/গবেষণা করেন, তাই কী?

[অন্য প্রসঙ্গঃ আমার পোস্টে করা আপনার মন্তব্যের উত্তর দেবো, কয়েকদিনের মধ্যেই।]

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যস্ততার মাঝেও লিখেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ।

তানভীরের মন্তব্য থেকে মনে হলো আপনি আরবান প্ল্যানিং বিষয়ে কাজ/গবেষণা করেন, তাই কী?

আপনার ধারনা ঠিক।

আমার পোস্টে করা আপনার মন্তব্যের উত্তর দেবো, কয়েকদিনের মধ্যেই

আমি লক্ষ্য রাখব। আপনার সেই পোস্টে গুরুত্বপুর্ন কিছু প্রশ্ন বেরিয়ে এসেছে। সেগুলো নিয়ে লেখা/আলোচনা হওয়া জরুরী।
আবারো ধন্যবাদ।

রিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্দান্ত লিখেছেন। কঠিন...

তাহসিন গালিব

Tusar এর ছবি

লেখাটা চমৎকার হয়েছে।

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

লেখা ও মন্তব্য উভয় মিলে দুর্দান্ত পোষ্ট!! পিলখানা ঘটনা নিয়ে পঠিত হাজারো বিশ্লেষনের মধ্যে এই লেখাটা অন্যতম।

১. আমরা ষড়যন্ত্রতত্ত্বপছন্দ জাতি। যে কোন বড় দুর্ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়ায় আমরা সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র/ স্যাবোটাজের একটা তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টায় থাকি। পিলখানা ঘটনায়ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সেভাবে এসেছে।

২. পুরোপুরি অনুমান যদিও, আমিও বিশ্বাস করতে চাই একটা ষড়যন্ত্র নিশ্চয়ই ছিল। তবে পুরোটাই ষড়যন্ত্র এটা বলবো না। ষড়যন্ত্র এই ঘটনার একটা ভাইটাল অংশমাত্র। ফলে এটি ১০০% বিদ্রোহও নয়। বিদ্রোহের আড়ালে একটা পরিকল্পানা কাজ করেছে। সেটাই ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়।

৩. বিদ্রোহের উত্তাপটা সারা দেশব্যাপী ছিল। এই বিদ্রোহ বছরের পর জমে থাকা সঞ্চিত বিদ্রোহের সাধারন বিষ্ফোরন। সারাদেশের বিডিআর বিক্ষোভ আমরা দেখেছি। কিন্তু হত্যাকান্ডটা বিদ্রোহীরা ঘটায়নি।

৪. পিলখানার হত্যাকান্ডে মনে হয়েছে বিদ্রোহের উত্তাপে উত্তপ্ত গরম কড়াইতে অন্য কোন একটা অদৃশ্য পক্ষ মাছ ভেজে ফেলেছে। সেই পক্ষটা হয়তো চিরকাল ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। কারন নিশ্চয়ই তাঁরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় নীড় সন্ধানী
লেখাটিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

একটা ষড়যন্ত্র নিশ্চয়ই ছিল

অসম্ভব নয়।

সারাদেশের বিডিআর বিক্ষোভ আমরা দেখেছি। কিন্তু হত্যাকান্ডটা বিদ্রোহীরা ঘটায়নি।

হত্যাকান্ড কারা ঘটিয়েছে তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে আপনার এই মন্তব্যটি তাৎপর্যবহ। কারন পিলখানার বাইরে বিদ্রোহিরা হত্যাকান্ড ঘটায়নি। হত্যাকান্ড ব্যপারটি কেবল পিলখানাতেই ঘটে।

পিলখানার হত্যাকান্ডে মনে হয়েছে বিদ্রোহের উত্তাপে উত্তপ্ত গরম কড়াইতে অন্য কোন একটা অদৃশ্য পক্ষ মাছ ভেজে ফেলেছে

চমৎকার বলেছেন।

ছদ্মনামটি খাসা হয়েছে। আপনার মন্তব্যের জন্য আবার ধন্যবাদ।

রিয়াজ উদ্দীন

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় তাহসিন এবং তুষার,
আপনাদের লেখাটি ভাল লেগেছে দেখে আমি খুব আনন্দিত উপরের লেখার ভাবনাগুলো আমাকে বেশ তাড়া দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সবাইকে ডেকে বলি। বন্ধুদেরকে জোর করে ডেকে শুনাচ্ছিলাম, ইমেইল করে বিরক্ত করছিলাম। আশানুরুপ সাড়া না পেয়ে কিছুটা হতাশও হচ্ছিলাম। এখন আপনারা লেখাটি পড়লেন। আমার সত্যিই ভাল লাগছে।
সচলায়তনকেও ধন্যবাদ।
রিয়াজ

উল্লাস [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ রিয়াজ
একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বি.ডি.আর এর ঘটনাকে বিশ্লেষন করার জন্য। আপনার লেখনি খুবই সাবলীল এবং চমৎকার হয়েছে। মনে হয়েছে আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা বলতে পেরেছেন।

আপনি বলেছেন,

আমি এখানে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না, তবে পিলখানার এই দর্ঘটনার পুর্বাপর বিশ্লেষন খেকে বলব ষড়যন্ত্র এখানে নেসেসারি কন্ডিশন বা সাফিসিয়েন্ট কন্ডিশন কোনটাই ছিল না।

আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে,
১. সফল বিদ্রোহ কে কখনো ষড়যন্ত্র বলা হয় না ............... অনেক ক্ষেত্রেই একে "ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন" বলা হয়।
২. আমার মতে এটা অনেকটা ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন ই ছিলো (কয়েকটি দাবী ছাড়া), কিন্তু কিছু সংখক বি.ডি.আর জওয়ান, অফিসারদের বেপরোয়া ভাবে হত্যা করে এই আন্দোলনকে এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য-কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের দাবী আদায়ের জন্য এই ভাবে হত্যাকান্ড চালানোটা নেসেসারি কন্ডিশন বা সাফিসিয়েন্ট কন্ডিশন কোনটাই ছিল না।সেনা অফিসারদের জিম্মি করে দাবী আদায়ের চেষ্টা - বরং যুক্তিযুক্ত ছিলো।
৩. এ কারনেই ষড়যন্ত্রের প্রশ্নটা উঠে এসেছে এবং আমি বিশ্বাস করি একটা দল এই আন্দোলনেরসুযোগে তাদের নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধী করে ফেলেছে।
৪. আন্দোলনের প্রথম দিন মিডিয়া এবং সাধারন নাগরিকের মনে তাদের এই আন্দোলন যেভাবে সমর্থন আদায় করেছিলো ......... গণ হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তা নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। এবং যেহেতু এই আন্দোলন সফল হয়নি তাই এই স্টেরিওটাইপিং এর ব্যাপার গুলা ঘটছে।

সরকারের উচিত হবে এই হত্যাকান্ডের তদন্তের পাশাপাশি বি.ডি.আর জওয়ানদের ন্যায়সঙ্গত দাবীগুলার সমাধান করা।

ধন্যবাদ
মোহাম্মদ নুরুল হাসান (উল্লাস)

অতিথি লেখক এর ছবি

বন্ধু উল্লাস
যতদূর বুঝেছি সচলায়তনে আপনি আজ্ঞে ছাড়াও লেখা/মন্তব্য পোস্ট হয়। যাই হোক এখানে রজনৈতিক অঙ্গনের সরাসরি আভিজ্ঞতা সম্পন্ন আরেকজনের মন্তব্য পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আর উপরের মন্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমিও তুই-তোকারি থেকে বিরত থাকছি।

আমি এখানে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না

সত্যি বলতে গেলে আমি মোটামূটি কনভিন্সড যে এক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র ছিল। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে তো সবাই বলছিল, তাই যে কথা এইসব তত্ত্বের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে সেটাকে একটু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আমার এই লেখার আলোকেই বলি জরুরী অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনীতো হঠাত রাজপুত্র হয়ে উঠল আর রজনৈতিক নেতাদের অনেকে হয়ে উঠল দানব। তখন মনে হচ্ছিল এতসব প্রভাবশালি নেতারা যদি কখনো এই অবস্থা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে তবে গল্পের পাত্রপাত্রিরা দিক পক্ষ বদল করে ফেলবে নাতো। কোন সিন্ধান্ত দিতে চাই না তবে এই ভাবনাটাকে সম্প্রতি তাড়াতে পারছিনা।

সরকারের উচিত হবে এই হত্যাকান্ডের তদন্তের পাশাপাশি বি.ডি.আর জওয়ানদের ন্যায়সঙ্গত দাবীগুলার সমাধান করা

সরকার ছাড়াও আমাদের সমষ্টিগত ভাবে অসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য নর্মগুলো সেট করতে হবে আরো সংবেদনশীলতার সাথে - মানবীয় সংবেদনশীলতা। নায়ক-খলনায়কে ডাইকটমিতে কি হচ্ছে তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
বাস্তবধর্মি মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

রিয়াজ

পুতুল এর ছবি

সরকার ছাড়াও আমাদের সমষ্টিগত ভাবে অসম সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য নর্মগুলো সেট করতে হবে আরো সংবেদনশীলতার সাথে - মানবীয় সংবেদনশীলতা।

মানব সভ্যতায় শেষ বলে কোন কথা নেই। কিন্তু আপনার উপরের কথাটা এই মূহুর্তের জন্য সবচেয়ে জরুরী মনে হচ্ছে!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মোহাম্মদ নুরুল হাসান (ঊল্লাস) এর ছবি

আপনি বলেছেন,

জরুরী অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনীতো হঠাত রাজপুত্র হয়ে উঠল আর রজনৈতিক নেতাদের অনেকে হয়ে উঠল দানব। তখন মনে হচ্ছিল এতসব প্রভাবশালি নেতারা যদি কখনো এই অবস্থা কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে তবে গল্পের পাত্রপাত্রিরা দিক পক্ষ বদল করে ফেলবে নাতো। কোন সিন্ধান্ত দিতে চাই না তবে এই ভাবনাটাকে সম্প্রতি তাড়াতে পারছিনা।

আপনার সাথে সহমত।
আমিও সিদ্ধান্ত দিতে চাই না ............ তবে পরিস্থিতি মনে হয় সেদিকেই যাচ্ছিলো ............ বি.ডি.আর জওয়ানদের সেনা অফিসারদের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা এর প্রথম পদক্ষেপ মনে হয়েছে ............... কিন্তু এর (আন্দোলন) করুন পরিনতি এই বিষয়টিকে আড়াল করে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতা বলে, সেনা অফিসারদের দুর্নীতির বিচার শুরু করাও সিভিল / রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেও, সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে বি.ডি.আর জওয়ানদের তোলা অভিযোগ গুলো হালে পানি পাবে বলে মনে হয় না।

তবুও আমি বলে যাব, "সরকারের উচিত হবে এই হত্যাকান্ডের তদন্তের পাশাপাশি বি.ডি.আর জওয়ানদের ন্যায়সঙ্গত দাবীগুলার সমাধান করা।"

আপনার কাছ থেকে আরো লেখা আশা করছি। ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ নুরুল হাসান (উল্লাস)

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকারের উচিত হবে এই হত্যাকান্ডের তদন্তের পাশাপাশি বি.ডি.আর জওয়ানদের ন্যায়সঙ্গত দাবীগুলার সমাধান করা

এখন বিডিয়ার যেমন মানবিক বিপর্যয়ের শিকার তাতে এইসব দাবির আগে হয়ত এর চেয়েও মৌলিক প্রাপ্য পুরণ হওয়া দরকার। আজকের পত্রিকাতেই আর একজনের মৃত্যুর খবর পড়লাম। কোথায় যচ্ছি আমরা?
রিয়াজ

মেহেদী [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেখা রিয়াজ ভাই। াত মানসম্পন্ন লেখায় উপযুক্ত মন্তব্য করা আমার সাধ্যের বাইরে। তাই আপাতত বাহবা দিয়েই বিদায় নিচ্ছি :)। Please keep on writing.

রিয়াজ এর ছবি

মেহেদি
তোমার বলাতেই আমার ব্লগের জগতে প্রবেশ। এই জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। এইখানে সহজে মন খুলে কথা বলা যাচ্ছে; এটা সুস্থতার জন্য খুব জরুরি। আমার মনে হয় তোমারও উচিৎ হবে নিজের বিশ্লেষনি ক্ষমতাকে ভালভাবে কাজে লাগান। বাংলা টাইপিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে কিছুটা চর্চার প্রয়োজন আছে বুঝতে পারছি। এছাড়া, বানানও একটা চিন্তার বিষয়।
যা হোক তোমার মন্তব্য পড়েও ভাল লাগল।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

প্রথম আলো ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ এর এই মন্তব্য প্রতিবেদনটি এই লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক মনে করে জমা করে রাখছি।


"পোশাক বদলেছে আসল সমস্যা রয়ে গেছে"

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান | তারিখ: ২৫-০২-২০১০ (সাবেক সেনা প্রধান ও বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক )

উদ্ধৃতিঃ

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা বছর গড়াল। এখন বলা হচ্ছে, ডাল-ভাতের জন্য এত বড় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। হয়তো তদন্তে এটাই পাওয়া গেছে। কিন্তু বিশ্বাস করা কষ্টকর যে শুধু ডাল-ভাতের জন্য এতগুলো লোক মারা যাবেন।
[ভাল পর্যবেক্ষন]


সেনাবাহিনীতে বা সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি করে সরাসরি কিছু বলা যায় না। কিন্তু মনে মনে ক্ষোভ থেকে যায়। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কোন দিক দিয়ে হয়, তার ঠিক নেই। কাজেই ওই ক্ষোভটাকে যত দূরীভূত করা যায়, ততই ভালো। যত তাড়াতাড়ি করা যায়, তত ভালো। আর এ জন্য যত তাড়াতাড়ি বিচার করা যায়, তত ভালো হবে।
[ক্ষোভ সম্পর্কে মতামত ঠিক আছে, কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে ক্ষোভের ব্যপারটাকে কিভাবে বিবেচনায় আনা যাবে তা ভাবা দরকার]

বিডিআরের নাম আগেও অনেকবার বদল হয়েছে। পোশাকও বদল হয়েছে, তাদের ভূমিকাও বদল হয়েছে কিছু কিছু। কাজেই নতুন যে বদল হয়েছে, এর মধ্যে আহামরি কিছু করা হয়নি। তবে বদল করার হয়তো যুক্তি আছে। কারণ, গ্রামগঞ্জের অনেকে হয়তো বিডিআরের এই পোশাক পছন্দ করবে না। লোকজন বলবে যে এই বিডিআর লোক মেরেছে। আর এখন তো মানুষ সব ভুলে যাচ্ছে, কাজেই পোশাক বদল না করলেও চলত। নাম বদল না করলেও চলত। তবে বদলে খারাপ কিছু নাই। আর পুনর্গঠনে কিছুটা মাথা ভারী হয়ে গেছে। কিন্তু আসল যে দাবি, সেটাই তো করা হয়নি। বিডিআরের সদস্যরা চেয়েছিলেন, তাঁরা একদিন কর্মকর্তা হবেন। সেটা তো করা হলো না। ফলে ১৫-২০ বছর পর আবার কোনো ঘটনার শঙ্কা থেকেই গেল।

[পোষার বদলের একটা যৌক্তিকতা পাওয়া গেল! তবে বিডিয়ার সদস্যদের চাওয়া হয়ত কেবল কর্মকর্তা হবার ইচচছার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিডিয়ার জওয়ানদের প্রতি সেনাসদস্যদের আচরন নিয়ে কিছু অভিযোগ শোনা গিয়েছিল সেক্ষেত্রে কোন ভাবনার উদ্রেক হয়েছে কিনা নীতিনির্ধারকদের মনে সেটা জানা গেলে ভাল হত।]

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।