পরাবাস্তবতা (ভার্চুআল রিয়েলিটি) কথাটার সাথে এই শতাব্দীর বেশীরভাগ শিক্ষিত মানুষই বোধহয় কম-বেশী পরিচিত। তবু কারো কারো কাছে যদি ধোঁয়া-ধোঁয়া থাকে, এই ভেবে শুরুতে একটু পরিচয় দিয়ে নি - পরাবাস্তবতা হলো বাস্তবতার একটা ডিজিটাল প্রতিরূপ, যেখানে একটা সিমুলেটেড (ঠিক ভেবে পাচ্ছি না বাংলা পরিভাষাটা কি হবে) পরিবেশে ব্যবহারকারীরা নিজেদের ইন্দ্রীয়-অনুভবগুলো টের পাবেন বা ব্যভার করতে পারবেন ঠিক সত্যিকারের মতই। একটা সহজ উদাহরণ দিই - এনএফএস কখনো খেলেননি এমন মানুষ মনে হয় কমই আছে; ধরে নিন আপনি হাত ঘোরাচ্ছেন আর গাড়ী ঘুরছে ডানে-বামে। এবার আরেকটু ভাবুন যে আপনি কিছুই ধরে নেই, তবু হাতে একটা স্টিয়ারিং হুইল এর অনুভব পাচ্ছেন। এবার আরো ভাবুন, আপনার চোখে কোনো কম্পিউটর পর্দা নয়, বরং দেখছেন চালকের আসনে বসে সামনের রাস্তা, কানে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছেন ভেঁপু পিছনের গাড়ীটার, নাকে ভেসে আসছে রাবার পোড়া গন্ধ। অথচ সত্যিকারের জীবনে আপনি বসে আছেন আপনার চিরচেনা ভাঙ্গা রিভলভিং চেয়ারটাতেই। আশা করি বোঝাতে পেরেছি কিছুটা।
এখনো পরাবাস্তবতার সম্পূর্ণ দৌড়টা কল্পবিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ। আন্তোন অরত্যু প্রথম কথাটা ব্যবহার করেছিলেন থিয়েটারের দৌড় বোঝাতে, যদিও ষাটের দশকের শুরুতে সেনসোরামা নামে কতগুলো ক্ষুদে-চলচিত্র বের করে পরাবাস্তবতার প্রথম প্রয়াস চালান মর্টন সাহেব (পুরো নাম ভুলে গেছি, তাই সাহেব বানিয়ে দিলাম)। এগুলো এমন চলচিত্র ছিল যাতে দেখা আর শোনা তো বটেই, ছোঁয়া আর শোঁকাও যেত। এরপর পরাবাস্তবতা অনেকদূর এসেছে, কিন্ত সেই ইতিহাস লেখার জন্য কী-বোর্ড ধরিনি।
মূলত যে চিন্তা থেকে লেখাটা শুরু করা তা হলো আমাদের এসকেপিস্ট (পলায়নপর) মনোভাব। সমস্যা যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়, আমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতেই দিনে দিনে আরো বেশী অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। কিন্ত একদিন আসবে যখন যেদিকেই মুখ ফেরাবো সেদিক থেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়ব, তখন?
এই তখন এর জবাব হয়ে মনে হয় আসবে পরাবাস্তবতা। দিনে দিনে প্রযুক্তি যেভাবে দৌড়োচ্ছে, তাতে মানুষের সম্পুর্ণ সামাজিকতার ব্যাপারটাকে ভার্চুয়াল করে ফেলাটা খুব বেশী দেরী নয়। আগে পালা-পার্বন-জন্মদিনে গা বয়ে শুভেচ্ছা দিতাম, এরপর মুঠোফোন এ আলাপ বা বার্তা, আর এখন ফেসবুক এ একটা পোস্ট। পরাবাস্তবতা সুবিশাল একটা কমিউনিটি সাইট হয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে, আমরা আবার শুরু করবো গা বয়ে আড্ডা দিতে, হোক না তা পরাবাস্তব জগতে। রোজকার কামাই-রোজগার সেরে ঘরে এসে ঢুকে যাব এই জগতে। বা একসময় হয়ত মানুষ জৈবিক প্রয়োজনগুলোও এই পরাবাস্তবতাতেই সেরে নিতে পারবে, হাজার হোক, পরাবাস্তবতার বৈশিষ্টই যে এতে ইন্দ্রীয়ানুভূতীগুলো পাওয়া যাবে।
কিন্ত এই ভবিষ্যতেরও খুব একটা আশা আছে বলে মনে হয় না। আপনারা কেউ ভ্যানিলা স্কাই ছবিটা দেখেছেন ?(টম ক্রজ এর, না দেখে থাকলে অবশ্যই দেখবেন) এখানে ক্রুজ জীবন-যাপনে ক্লান্ত হয়ে বেছে নেয় একটা সুদীর্ঘ ঘুমকে, আর গোটা ঘুম জুড়ে থাকবে এক ততোধীক দীর্ঘ আর লুসিড ( আবারও পরিভাষা খুঁজে পাচ্ছি না) স্বপ্ন। এই স্বপ্নে সে এক পর্যায়ে গিয়ে সুযোগ পায় নিজের প্রেমিকার সাথে বাকী জীবন (বা স্বপ্ন) কাটানোর, বা একটা অনিশ্চিত জীবনে জেগে ওঠার। কোনটা বেছে নিয়েছিল বলতে হবে না নিশ্চয়ই।
বোধ করি আমরাও যতোই মুখ ফিরিয়ে থাকার চেষ্টা করি, জেগে ওঠার সিদ্ধান্ত একসময় নিতেই হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় -----------
ভুতুম
মন্তব্য
ভালো লেখা, আরো বিশদে হলে আনন্দটা আরেকটু বেশি হতো। আরো লিখুন।
বিশদে লেখার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু একটু ভয় পেয়েছিলাম খুব বেশী লিখলে কেউ ধৈর্য নিয়ে পড়বে কিনা। ভবিষ্যতে চেষ্টা থাকবে যাতে পুরো ভাবটুকুই উঠে আসে লেখায়।
উৎসাহের জন্য কৃতজ্ঞ ।
সেরকম সন্দেহ অমূলক নয় হয়তো, সেক্ষেত্রে পর্ব ভাগ ক'রে লিখুন না, যেমন তুলিরেখার লেখাটার মতো।
আপনার লেখার বিষয়টা খুব আগ্রহজনক, আরো জানতে চাই। লেখার মাঝে লিঙ্ক দেওয়া থাকলে সেই ব্যাপারে সুবিধা হয় আগ্রহী পাঠকের।
ভালো থাকুন।
দারুন লেখা ! নিদারুণ বিষয় ! আরো লিখুন , দুধটা জমে ক্ষীর হতে হতে যেন লোডশেডিং হয়ে গেল । এই লেখাটার আরো বিস্তারিত দেখতে চাই । অপেক্ষায় থাকলাম কিন্ত ।
ভাল লিখেছেন ....!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
মূলত পাঠক ভাইকে ধন্যবাদ পরামর্শ আর আগ্রহের জন্য। এ বিষয়ে আরো লেখার ইচ্ছা ছিল, আপনার উৎসাহ পেয়ে আরো বাড়ল।
আর শাহীন হাসান ভাইকেও ধন্যবাদ।
বেশ ভাল লাগলো, আরেকটু আলোচনা করলেও পারতা যদিও। একটা ফলো-আপ লিখে ফেল!
ধন্যবাদ সিরাত ভাই। ঐ যে বললাম, একটু ভয়েভয়েই কম লিখে ছেড়ে দিছি। ফলো আপ করার ইচ্ছা আছে।
নতুন মন্তব্য করুন