ভুতুম-মুড়িকাঁঠাল
নিশাপুরের ওমর খৈয়াম সাহেবকে নিয়ে উপরের এই বস্তাপঁচা জোকটা ক্যান করলাম, সেটা ভাই ও বোনেরা একটু পরেই বুঝবেন। আপাতত দাঁতে দাঁত চাইপ্যা আরেকটু পড়তে থাকেন।
ওমর খৈয়াম একহাতে কবিতা লিখেছেন, আরেক হাতে অঙ্ক কষেছেন, আর আরো কোথ্থেকে জানি হাত আমদানি করে জোতির্বিদ্যা গবেষণা করেছেন, মাথার ভিতর করেছেন দর্শন চিন্তা। আমরা আজকে যেই আ্যলজেব্রা করি, তার পিছনে উনার অবদান চরম। (এই জন্য অবশ্য উনার উপর আমার মেজাজটা মাঝে মাঝে চড়ে যায়, কি দুঃখে যে কেউ অঙ্ক করতে যায়!) তবে উনার খ্যাতি হল দার্শনিক আর কবি হিসেবেই, বিশেষ করে রুবাইয়্যাত সমূহ লেখার জন্য। উনার জীবনী নিয়ে আর লিখলাম না, উইকি করে নিয়েন কেউ আগ্রহী হইল।
রুবাইয়্যাত কথাটা ফার্সী, ইংরেজী পরিভাষা Quartains. সোজা কথায় চার লাইনের কবিতা। রুবাইয়্যাত ফার্সী কবিদের বেশ প্রিয় একটা ফর্ম ছিলো, হাফিজ ও লিখেছেন অনেক। তবে খৈয়ামের রচনাগুলোই অনেক বেশী পরিচিত। রুবাইয়্যাত আমার সবচেয়ে ভালো লাগা রচনাগুলোর মধ্যে একদম আগার দিকে। আর এই জন্য ক্যামনে ক্যামনে একটা ধৃষ্টতা করার সাহস করে ফেলতেছি।
কেন ধৃষ্টতা বললাম, সেটা বুঝতে নিশ্চই বাকি নাই কারো। যে কাজ হেমেন্দ্রকুমার রায়, মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখেরা করে গেছেন, সেটা যদি আমার মত গোমুর্খও করতে চায়, তাইলে আপনারা আমাকে সুদূরে গিয়ে মুড়ি খাইতে বলাটাই স্বাভাবিক; আর যারা একটু যুদ্ধ-যুদ্ধ প্রকৃতির, তারা আমার মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গতেও চাইতে পারেন। নিজ স্বপক্ষে শুধু এটাই বলতে চাই যে, আমি নেহায়েত ওমর খৈয়ামের ভক্ত বলেই উনার দুই-চারটা কথা আমি যা বুঝছি নিজের ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করতেছি।
এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলে নেয়া ভালো, আমি ফার্সী পারি না, কাজেই ইংরেজী অনুবাদ থেকেই আবার অনুবাদ করছি। তবে কোন একজন লেখকের অনুবাদ না, বরং দুই-চারটা ভিন্ন অনুবাদ পড়ে মনে মনে যা বুঝছি, সেই হিসাবে লিখছি।
ক্ষমা-ঘেন্না কইরা দিয়েন।
॥॥১॥॥
বাসনা-বিলাসে কাটে রাত্রি আমার
সুরার গেলাস আর ছোঁয়া প্রেমিকার
সকালে উঠেই ভরে অনুতাপে মন
আবার তা ভুলে যাই নামলে আঁধার।
॥॥২॥॥
মাতলামো করে নাও থাকতে সময়
প্রাণভরে নাও সব যা চায় হৃদয়
সবার শেষে গিয়ে শূণ্যই সব
যেন শূণ্য হবার আগে পূর্ণটা হয়।
॥॥৩॥॥
জীবন-কাফেলা হয়ে যায় ইতিহাস
না ভেবে এসব আমি করি বসবাস
আজকেই। আগামী কে বা চায়?
শেষে তো থাকবে শুধু কবরের ঘাস।
॥॥৪॥॥
এ রহস্য না আমি জানি, না জানো তুমি
পর্দার আড়ালে কি শুধু চিরঘুম-ই?
পর্দার এ পাশটায় থাকবে না কিছু
না আমি, না তুমি, শুধু ধূ-ধূ মরূভূমি।
আজ চারটাতেই থাক। আপনাদের খুব বেশী চিৎকার-ধিক্কার না শুনলে আবার লিখবো।
মন্তব্য
যে ফোরামে স্বপ্নদর্শীরা ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের কথা ফুরোতে না ফুরোতেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, সেখানে প্রিয় কবির কবিতা নিজের কথায় সাজানোকে ধৃষ্টতা ভাবার মতো অর্থহীন রক্ষণশীলতা কেউ দেখাবে ব'লে তো মনে হয় না। আপনার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
দু-একটা কথা বলি, আপনার অনুবাদ ভালো লেগেছে বলেই বলি, আশা করি বুঝবেন যে ভালো না হ'লে ছোটোখাটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলতাম না, পাতা উল্টে চলে যেতাম। কথাগুলো ছন্দ নিয়ে।
২নং রুবাইয়াৎ :
তৃতীয় পংক্তিতে চেষ্টা ক'রে মাত্রা মেলাতে হচ্ছে, একটা মাত্রা বাড়লে তার দরকার হতো না, যেমন "সবার শেষেতে গিয়ে শূন্যই সব"। চতুর্থ পংক্তিতে দু মাত্রা বাড়তি, "যেন"টা বাদ গেলে ছন্দ মেনে পড়তে সুবিধা হতো (অর্থ যথার্থ থাকতো না তা মানছি)। আরেকটা সোজা সমাধান হয়, যদি "যেন"টাকে ৩য় পংক্তির শেষে তুলে দেন।
শূন্যে দন্ত্য-ন হয়।
৩নং রুবাইয়াৎ :
তৃতীয় পংক্তিতে মাত্রা কম পড়েছে, ছন্দ মানতে গেলে এই ভাবে পড়তে হচ্ছে:
আ/জ/কে/ই /-/আ/গা/মী/ কে/-/বা/-/ চা/য় ?
৪নং রুবাইয়াৎ :
এ রহস্য না আমি জানি, না জানো তুমি : এক মাত্রা বাড়তি পেলাম ১৪'র থেকে। ১৪ মাত্রায় আঁটানো যায়, তবে চেষ্টা-সাপেক্ষ সেটা, পাঠকের জন্য। প্রথমে আমি এই রকম পড়েছিলাম:
এ/র/হ/স/ স/না/আ/মি/ জা/নি/না/জা/ নো/তু/মি
এই ভাবে পড়লে আঁটানো যাচ্ছে:
এ/র/হস/সো/ না/আ/মি/জা/ নি/না/জা/নো/ তু/মি
পর্দার এ পাশটায় থাকবে না কিছু : ছন্দ মেলাতে সামান্য অসুবিধা, একটা পন্থা হতে পারে
"পর্দার এই পাশে থাকবে না কিছু"।
মরূভূমি-তে র-এ হ্রস্ব উ-কার হবে।
মূলত পাঠক ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাত্রা বিষয়ক যে কথাগুলো বলেছেন, ভবিষ্যতের লেখাগুলোয় এ ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকবো। তবে একটা কথা মাথায় ছিলো আমার, যে মূল কবি এগুলোর বেশীরভাগই রচনা করেছেন মজলিশে বসে, ছন্দ তাই মিলিয়েছেন আবৃত্তির জোরে, যার কারণে অল্প-বিস্তর মাত্রা বিচ্যুতিগুলো (মূল রুবাইয়্যাত এ দু-এক জায়গায় আছে বলে জানি) টের পাওয়া যেতনা, আবৃতির সুরে ঢাকা পড়ে যেত। ৩ নং ও ৪ নং রুবাইয়্যাত এর মাত্রা বিচ্যুতি তাই নজরে পড়েছিল, কিন্তু নিজে যেহেতু আবৃত্তি করেই পড়ছিলাম, ভেবেছিলাম সবাই হয়তো আমার মতো করেই পড়বে। কিন্তু যেটা বোঝা উচিৎছিলো তা হলো আমি যেহেতু শোনাচ্ছিনা নিজে পড়ে পড়ে, অনেকের কাছেই এই মাত্রার অমিলটুকু ধরা পড়বে ও খারাপ লাগতে পারে। এরপর থেকে মাত্রা বিষয়ক স্বাধীনতা যাতে মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখবো।
২নং এ যে মাত্রা কম পড়েছে, তা সর্বৈব আমার দোষ, চোখে পড়েনি। আরো সতর্ক থাকবো। আর বানানভুলগুলো গর্হিত হয়েছে, করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী তার জন্য।
আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি একমত। এটা আবৃত্তির জন্যে, মাত্রা মেলানোর খুব দরকার নেই।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
অতি চমতকার হইছে। চালাইয়া যান প্লীজ।
ভালই লাগলো!
আমারও মনে হয়- আবৃত্তি করলেও এই ফর্ম-টা যে ধরনের, তাতে রিদম-টা হিসেব করা থাকা ভালো বৈ খারাপ তো না।
ভাব-বোধের অনুবাদে বেশ হয়েছে ভুতুম। আমিও একটু-আধটু ধাক্কা খাচ্ছিলাম ওই মাত্রা-ছন্দের শূচিবাই থেকেই বুঝি। বলবো কি বলবো না ভাবতে ভাবতেই কমেন্ট-ঘরের দিকে নামতে গিয়ে দেখি- ঐ বিষয়টার বেশ ভালোই বিশ্লেষণ হয়ে গ্যাছে ইতিমধ্যে।
তবে, উপসংহারে অবশ্যই আবার বলবো- ভুতুম, আপনার লেখা ধার, ভার আর সম্ভাবনার বিশ্বাস জাগায়। স্বীকার যেমন করি- ভালো হয়েছে, তেমন কামনাও করি- আরো ভালো লিখুন। লিখতে থাকুন।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ধন্যবাদ সবাইকে। আপনাদের এধরনের মন্তব্য অনুপ্রাণিত করে লেখার মান উন্নত করতে। আগামীতে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো মাত্রা-ছন্দ এসবে আরো মনোযোগ দিতে।
২ নম্বরটা বেশি ভালো লাগলো, ভুতুম।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন