শ্রীশ্রীভূষণ্ডি কাগায় নমঃ
শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচে
৪১ নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটি
আমরা হিসাবী ও বেহিসাবী খুচরা ও পাইকারী সকল প্রকার গণনার কার্য্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করিয়া থাকি । মূল্য এক ইঞ্চি ১|/০ । Children Half price, অর্থাৎ শিশুদের অর্দ্ধমূল্য । আপনার জুতার মাপ, গায়ের রং, কান কট্কট্ করে কিনা, জীবিত কি মৃত, ইত্যাদি আবশ্যকীয় বিবরণ পাঠাইলেই ফেরত ডাকে ক্যাটালগ পাঠাইয়া থাকি ।
সাবধান ! সাবধান !! সাবধান !!!
আমরা সনাতন বায়স বংশীয় দাঁড়ি কুলীন, অর্থাৎ দাঁড়কাক । আজকাল নানাশ্রেনীর পাতি কাক, হেড়ে কাক, রাম কাক প্রভৃতি নীচশ্রেণীর কাকেরাও অর্থলোভে নানারূপ ব্যবসা চালাইতেছে । সাবধান ! তাহাদের বিজ্ঞাপনের চটক দেখিয়া প্রতারিত হইবেন না ।
----------------------------------------------------------------------------
ভুলেও কেউ ভাববেন না এটাকে আমার উপরেরটুকুকে নিজের লেখা বলে চালাতে চাচ্ছি। উপরেরটুকু সুকুমার রায় এর, হ য ব র ল থেকে নেয়া, আপনারা জানেন নিশ্চয়ই।
তা বিজ্ঞাপনের চটক দেখে আজকাল কে যে দাঁড়ি কুলীন, আর কে যে পাতি কাক - সেটা বোঝা কারো কম্মো নয়। ইংরেজ বিশেষজ্ঞ, জার্মান মেশিন আর কম্পিউটরাইজড পদ্ধতিতেই এদেশে সব কিছু হয়; আমরাও সহজ-সরল জাতি, দুটো ইংরেজী কথা শুনলেই বিগলিত হাসি দিয়ে ঐদিকেই ছুট মারি। আর পণ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকলে হতো, এই কাকস্য পরিবেদনা নাই কোন জায়গাটাতে? ভিনদেশী হাজাম এ দেশে এসে হয়ে যান হেয়ার স্পেশালিস্ট, আর আমার দেশের নর-নারী নির্বিশেষে ছুটে যান কেশ বিন্যাস করাতে। ঈদ-পূজা পালন করার বেলাতেও কাপড়টা বিদেশী না হলে চলছে কই? তা এসব কথা জুড়ে দিলে সবাই সেটা পছন্দ করবেন না জানি, বলবেন, আমাদের আর অত ভালো কি-ই বা আছে যে দেশীটা কিনে ধন্য হব? কথাটা বেদনাদায়ক হলেও কিছুটা হলেও সত্য। আমাদের জীবনযাত্রার এই বিশ্বায়িত রূপটাতে বাঙ্গালী পণ্য বাঙ্গালী সংষ্কার বলে হাহুতাশ করার সুযোগ নেই অতটা। কিন্তু যতটুকু আছে সেটাই বা পালন করা হচ্ছে কই? বাইরের দেশের যা কিছু ভালো তা গ্রহণ করে এগিয়ে যাওটাই বুদ্ধিমানের কাজ, একথা যেমন পণ্যের বেলায় প্রযোজ্য, তেমনি সাহিত্য-সংষ্কৃতির বেলায়ও। কিন্তু আমাদের মন-মানসিকতার মধ্যেই এমন একটা ব্যাপার চলে এসেছে যে বাইরের যে কোন পণ্য মানেই উত্তম। আজ যদি কেউ আমেরিকা-ইউরোপ থেকে পান্তা ভাত বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করেন, আমার তো মনে হয় দেশশুদ্ধ মানুষ ছুটবে সেটাই খেতে। অথচ দেশীয় এমন অনেক জিনিষই আছে আমাদের যা ব্যবহার করাটা অসুবিধা বা দোষের নয়। আবার এমন অনেক বিদেশী আচরণও আছে যা এড়িয়ে চললে খুব বেশী খ্যাত্/অশিক্ষিত্ এর পর্যায়ে পড়তে হবে না, বরং দেশীয় অভ্যস-মূল্যবোধগুলো টিকে থাকবে। কোনগুলো এমন পণ্য আর কোনগুলো এমন চলাফেরা - সেই ব্যাখ্যায় যাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না; যে যার বুদ্ধি-বিচার দিয়েই সেটা বুঝে নেবার ক্ষমতা রাখেন।
ফার্সী একটা দোহা পড়েছিলাম, সম্ভবত মুজতবা আলীর লেখাতে -
হর চেব কুনী বা খুদ কুনী
খা খুব কুনী, খা বদ কুনী।
যা করবে নিজেই করবে,
তা ভালো হোক, কি মন্দ।
এই কথাটা একটু ভাব-সম্প্রসারন করলে বলা যায় যে যা ব্যবহার করবে নিজেরটাই করো, ভালো হোক, কি মন্দ। ( বেরসিক কোন পাঠক যদি বলে বসেন যে, "বাছা, দেশী দেশী করে গলা ফাটিয়ে উদাহরণ দেয়ার বেলায় ফার্সী টেনে বসলে যে বড়?" - সেই চিন্তায় সাফাইটাও দিয়ে রাখি, ঐ যে উপরে বলেছি, বাইরের ভালোটা গ্রহণ করবো না কেন? আমার এই পুরো লেখাটার উদ্দেশ্য এই যে, ভূষণ্ডির মাঠে বৈদেশী বায়স পক্ষী চরে খেলে ক্ষতি নাই, কিন্তু দেশী ঘুঘুরাও হালকাপাতলা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেঁচে-বর্তে থাকতে পারে, ওদের দিকেও নজর দিই চলেন সবাই একটু-আধটু করে।)
ভালো-মন্দ মিলিয়ে যেমনই হোক, আমারই তো দেশ। রাজাকার বিরোধী কথাবার্তাই আজকাল দেশচিন্তার একমাত্র নিশানী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ওটাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে চলনে-বলনেও আরেকটু দেশী হওয়ার সুযোগ আর সাহস সবারই যাতে হয়।
---------------------------------------------------- ভুতুম
মন্তব্য
মাঝে মাঝে ভাবি আমরা কেন অন্যদের মত হতে চেষ্টা করি, যখন নিজেরই আছে অনুকরণীয় ঐতিহ্য। আপনি আঁ আঁ আঁ বিষয়ক পোস্টখানি পড়েছেন কি?
এইমাত্র দেখলাম। হাসব, না কান্না করব, বুঝে আসলো না।
লাস্ট প্যারাটা সেরকম খাসা হইছে রে! তয় মিয়া এত ঘুরায় কথা কও ক্যান? আরেকটু সোজা কইরা কও। আর আবার ফারসি ব্যবহার কর!!
ঘুরায়া কথা বলাটাও বাঙ্গালীয়ানার লক্ষণ।
কান্ত কবি (সজনি কান্ত সেন) না রাম প্রসাদের গান স্বদেশী আন্দোলনের সময় গাওয়া হ'ত:
মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই,
দীন দুখীনী মা যে তোদের এর বেশী আর সাধ্য নাই।
গানটার আবেদন এই মন্দার সময় বেশি বেশি প্রযুজ্য।
সময়োপযোগী পোষ্টের জন্য অতিথীকে ধন্যবাদ।
এক্কের একখান সত্যি কথা
আলু খাও আলু খাও বলে কর্মসূচিকে দিয়েও বাঙালিরা বাঙালিকে আলু খাওয়াতে পারলো না
কিন্তু খালি নাম বদলে ফেলার কারণে আলুভর্তা (আলুচপ) আর আলুভাজি (ফ্রাই) এখন বাঙালিরা দশ ভারোগুণ দামে কিনে খায়
খেয়ে আরমাও পায়
আবার সেটা বলেও বেড়ায়
আলুভর্তা=ম্যাসড পটেটো
আলুভাজি=ফ্রেঞ্চ ফ্রাই
হা হা হা!
বুদ্ধুভুতম... লেখা অতি চমৎকার হয়েছে। আপনার এই নীতিতে আমিও বিশ্বাসী।
আমি আগে বিদেশি বডি স্প্রে ইউজ করতাম। এখন ইউজ করি স্কয়ার ফার্মার একটা। নিজেরে খুবই আনন্দিত আর ফ্রেশ লাগে।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
সবাইকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আর মৃদুল ভাইয়ের বডি স্প্রেটা আমিও এরপর ট্রাই মেরে দেখবো, আশা করি আনন্দিত আর তাজা হতে পারবো।
ভালো বিষয়, ভালো লেখা। মানে, দৃষ্টিভঙ্গির মিল পেলাম ( আর সেজন্যই তো ভালো বলছি )।
চালিয়ে যান।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
থেন্কু থেন্কু!
নতুন মন্তব্য করুন