পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সুন্দর কি, সেটা নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকলেও আসমানের সবচেয়ে সুন্দর যে অরোরা (মেরুপ্রভা) - সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ রাইখেন না। উইন্ডোজ ভিস্তার ডিফল্ট ওয়ালপেপারের কল্যানে অরোরা কারো আর অদেখা থাকার কথা না। আকাশের গায়ে নানা রঙ্গের আলো মিলে তৈরি হয় এই অরোরা - আর ভালো দেখতে পাবেন মেরু অঞ্চল বা তার আশপাশ থেকে।
অরোরা দুইরকমের - একটা উত্তর গোলার্ধ থেকে দেখবেন, অরোরা বোরিয়ালিস, আরেকটা দক্ষিণ থেকে, অরোরা অস্ট্রালিস। অভিধান খুঁজে এদের বাংলা নাম পেলাম - উদীচী ঊষা, আর অবাচী ঊষা। এত সুন্দর নামগুলো কে যে দিয়েছেন...... অরোরা মাঝে মাঝে দেখা দেয় দিগন্তে একটা আভার মত হয়ে। কখনো আবার পরপর পড়ে থাকা কিছু পর্দার মত দেখতে মনে হয় - এক একটি পর্দা এক এক রঙ্গের। মাঝে মাঝে অবশ্য আর্ক এর আকার ধারণ করে, আবার মাঝে মাঝে ক্ষণেক্ষণে পাল্টাতে থাকে আকৃতি।
এই প্রভার সৃষ্টি-ইতিহাস বেশ মোহনীয়। খোসাবন্দী করে বলতে গেলে - মাঝে মাঝে এমন হয় যখন পৃথিবীর চারপাশের চৌম্বকমণ্ডলের মধ্যের পার্টিকেলগুলো সৌরবায়ুর সাথে ধাক্কা খায়, আর ধাক্কা খেয়ে কিছু ইলেকট্রন চেতে গিয়ে দেয় কোয়ান্টাম লম্ফ, আর সৃষ্টি করে মেরুপ্রভা। এবার একটু খোলাসা করে বলি - পৃথিবীটা একটা চৌম্বকমণ্ডল দ্বারা পরিবেষ্টিত। সৌরবায়ু হলো সূর্যের উপরিমণ্ডল থেকে নির্গত আয়োনিত পার্টিকেলের ধারা। মাঝে মাঝে হয়তে চৌম্বক ঝড়ের কথা শুনে থাকবেন, তার জন্য কিন্তু এই সৌরবায়ুই দায়ী। সে যাই হোক, এই সৌরবায়ু যখন আসে পৃথিবীর কাছাকাছি, তখন ধাক্কা খায় ঐ চৌম্বকমণ্ডলের সাথে। কখনো কখনো এই ধাক্কা যদি পর্যাপ্ত শক্তিশালী হয় - তখন কিছু ইলেকট্রন দেয় কোয়ান্টাম লাফ।এবার প্রশ্ন করতে পারতেন - কোয়ান্টাম লাফ কি? সাদা কথায় উত্তর - জানি না পুরাপুরি। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে কোয়ান্টাম লাফ দিলে ইলেকট্রন এর গতিশক্তি রূপান্তরিত হয় দৃশ্যমান আলোতে। আলোর রং কি হবে তা নির্ভর করে অক্সিজেন আর নাইট্রোজেন - মূলত এই দুইটা গ্যাসের উপর। অক্সিজেন নির্গত করে লাল আর সবুজ, নাইট্রোজেন করে গোলাপি, বেগুনী আর নীল। এই আলোর সম্মিলনের নামই অরোরা - মেরুপ্রভা!
তবে এই সৃষ্টি-ইতিহাস অনেকটাই খটোমটো - এরচেয়ে অনেক ভালো বিবরণ পাওয়া যায় নর্স মিথোলজিতে। নর্সমতে, এই মেরুপ্রভা হলো ভ্যালকাইরিদের বর্ম থেকে ঠিকরে পড়া আলো। স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা অবশ্য ভ্যালকাইরি নয়, বলে এ হলো হেরিং এর ডানায় আলোর ছটা। অনেকগুলো ফোকলোর এ আবার মেরুপ্রভাকে মনে করা হত আসমানী আগুন।
কথা আবারও বেশী বলে ফেলতেছি, এর চেয়ে সুস্বাদু ছবি দেখেন।
|
|
|
মন্তব্য
কি সুন্দর, কি সুন্দর, কবে যে যাবো
...........................
Every Picture Tells a Story
অসাধারণ ! অসাধারণ !
অরোরা সম্পর্কে আগেই জানা ছিল। ছবিও দেখেছি আগে। তবে এত সুন্দর ছবি আগে দেখিনি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ।
এই ছবিগুলোর জন্য মনে হচ্ছে ভিস্তা ইন্সটল করা লাগবে। জিনিসটা আমার পছন্দ না এমনিতে...
এই পেজের অরোরা ইফেক্ট তো এখনও গেলো না!
আমিও বুঝতেছি না কি হইল। দুপুরে তো ঠিকই আসতেছিল।
কোন সহৃদয় মডারেটর যদি এই পোস্ট দেখে থাকেন তাহলে একটু দেখেন না ক্যামনে কি করন যায়। পুরা লেআউটই ভচকায়া আছে।
আপনার পোস্টে লেআউট ভেঙে যাচ্ছে।
ছবিগুলা সুন্দর। নিচের ক্লাশে অরোরার বাংলা পড়েছিলাম মেরুজ্যোতি। তবে আপনার মেরুপ্রভাও সুন্দর।
মেরুজ্যোতি - ঠিকই বলেছেন! আমার কিছুতেই মনে পড়ছিল না, তাই নিজেই একটা বানিয়ে নিলাম আর কি।
ধন্যবাদ।
মেরুপ্রভা'র কথা আগেই শুনেছি। এখন বিস্তারিত জানলাম। ভালো লাগলো। ছবি দেখে মুগ্ধ।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
পুরাই কাহিল অবস্থা...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছবিগুলো দারুণ সুন্দর !
তয় পোস্টটা কেন যে নিজেকে সহজে উন্মুক্ত করতে চাচ্ছে না, বুঝতে পারছি না !
মন্তব্যটাই আদৌ হবে কিনা জানিনা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
মন্তব্য এসেছে এবং তার জন্য ধন্যবাদ।
এর আগে একটা মন্তব্য দিলাম। নিলো না কেন যেন।
যাই হোক, বিষয়টা আগের জানা। তবুও ভালো লাগল অনেক। ছবিগুলো দুর্দান্ত। লিখুন আরো।
আমাজনের পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ। আর আমাজন আসিতেছে অতি শীঘ্রি নিকটস্থ মনিটরে!
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হা: হা:, অরোরা নিয়া পোস্ট দেখা যায় একেবারে আক্ষরিক অর্থেই ব্যাপক লম্ফ-ঝম্প কইরা মানুষরে সেরকম গতি দিল।
তোমার তো ন্যাচার রাইটার হিসেবে ট্যালেন্ট আছে দেখা যায়! ন্যাট জিওরে একটা রেজিউমে আর এইসব লেখার পিডিএফ পাঠায় দিয়া দেখই না কি হয়।
হালার স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা, গল্প বানাইতে ওস্তাদ। কি যে অসাধারন চাপাবাজি এই নর্স মিথোলোজি! আর ভিস্তার ডিফল্ট ওয়ালপেপার যে অরোরার জানতাম না তো, বাহ!
গতি তো দেয়ই নাই, উল্টা বেগতিকে ফালাইছে।
ন্যাট জিও বাঙ্গালা লেখনী দেখে কতটা ইমপ্রেসড হবে বলা কঠিন। তবে আপনেরা খুশী হইলেই আপাতত চলে যাবে।
নতুন মন্তব্য করুন