তাহলে আজ পারীতে যাত্রা হোক, বলে কাজলী। নিতাই পদ্যকারের পদ্ম। 'দুগুণা সাদা'র বিঞ্জাপনের মডেল কাজলী বিরক্ত আর বিব্রত হওয়ার পর চরণামৃতের স্বাদের মতো লাগাতার ফুলের গন্ধে চাঁদ-জোছনা ভুলে বঙ্গের পশ্চিম থেকে আলু ক্ষেত আর দুপুরের রোদ দেখতে দেখতে দেখতে পদ্যকারের চোখে চোখ মেলায়। দোষের মধ্যে একখানি তুলে আনলে পদ্যকার যা আড়াল করতে চায় তা-ই চোখে পরে। আলুর দোষের প্রাবল্য মাতার এই পদ্যসন্তানকে আর সবথেকে আলাদা করে রাখে রোজরোজ।
গত হওয়া রাতে লখীন্দরের জানালার পাশে যখন আল্লাদ পরিক্রমায় মত্ত পাগলের পাচাটা চাঁদের আলো; তখন কাজলী ব্যস্ত ছিল কনডমের কনডেমে। কবি তখন সুখে লোরকা থেকে একখানা আস্ত লাইন শুনিয়ে থাকবে তাকে। কাজলীর ঘোরের চোখ তখনো জ্বালাধরা কোমরের নীচে মগ্ন। সকালের বায়ুতে জানালা ডুব দেয়ার আগ পর্যন্ত গজল শোনে আর কনডমের প্রবেশ অনু প্রবেশ নাপ্রবেশ দেখতে দেখতে বুঝতে বুঝতে দুজন কথন কাঁথার শোকগাঁথা রচনা করে ঐ বায়ুর সঙ্গে ভেসে আসা এক-দুফোঁটা জলকণাই শুধু অনুভব করে তা। দেরী করা দুপুরে জেগে উঠলে দু'জনেরই শ্রান্তিতে আবার চোখ বুজতে ইচ্ছে করে। পদ্যকার তখন ক্লান্তি মুছার পথ্য মনে করে সেই রাতে প্ল্যানচেট করবে বলে কাজলীকে বলে।
'আজরাতে প্লঁশেত করা দেখাব তোকে?'
'আহা তোমার রাহাকে দেখবে বুঝি?'
উত্তরে বলে কাজলী। পদ্যকার থতমত খাবার আগে আগে নিজেকে সামলে নেয়। ততক্ষণে তার মনে পরে অঁলিয়স ফ্রঁসেজে একদিন কাজলীকে দেখেছিল। নয় কাজলী নিয়মিত তেবেছে (টিভি ফাইভ) দেখে! তখনই তার পারীতে বেড়াতে যাবার ইচ্ছে হয়।
'কাজলী পারী যাবে? তুমি আর আমি? পারী ছাড়া বাকী সব মরুভূমি।'
'দুগুণা সাদা'র বিঞ্জাপনের মডেল পারীর কথা শুনে ঢোলের শব্দ শোনার মত নেচে উঠে।
আহা পারী
সুপার মডেলদের বাড়ি
সেই রাতেই পদ্যকার মডেলকে সঙ্গী করে পারীতে যাত্রাহেতু মেইল ট্রেনে উঠে। তাদের সঙ্গে ট্রেনের কামড়ায় দেখা হয় দয়ালের। দয়াল ছবি আঁকে এবং গান গায় এবং ফিলিম বানাবে বলে বেড়ায়। দয়াল আনন্দ পেলে 'হরিবোল' বলে। দয়ালের আঙুল নয়টা। একটা ইনভিজিবল থাকে সবসময়। দয়াল বলে- 'একটা আঙুল পোচ্ছদেশে থাকে। যেন আর কারোটা না ঢুকে।'
ভাবের বশে দয়াল ত্যুর ইফেলের গল্প বলে নিতাইকে। জল পান করতে থাকা নিতাই তুন থেকে ফরাসী তীর ছাড়ে। পারী প্রেমে মুগ্ধ তিনজন। আরো তিন বন্ধুর কথা মনে পরে তাদের। স্পেন থেকে পারীতে গিয়ে তাদের পরিচয়। লোরকা দালি আর বুনুয়েল। দয়াল তার ফিলিম বানানোর স্বপ্নগল্প বলে এবং মনে মনে আঁটা ফন্দিটা ফাঁস করে পদ্যকারের কাছে।
'কবি চল ফিলিম করি
তুমি আমি বুনুয়েল দালি'
নিতাই কি বোকা হয়?
না বোধহয়।
'হু, আন্দালুসিয়ান কুকুর বানাবে তুমি?'
দয়াল সূত্র পেয়ে নেচে উঠে। নায়াগ্রা প্রপাতের মতো তরল ভাব ঢেলে ঢেলে সামনে বসা কাজলীর দিকে টেরা চাওনি দিয়ে একের পর এক দৃশ্য বলতে থাকে। নিতাইর চোখে কাজলীর মুগ্ধ দয়ালচাহনী এড়ায়না।
ঈর্ষা হয় কি পদ্যকারের?
হয়ত হয়।
এপর্যায়ে দয়াল কথা বাড়ায় স্যুররিয়ালিজম পর্যন্ত। নিজেকে যেহেতু সে বুনুয়েল ভাবে তাই সিনেমাটিক স্যুররিয়ালিজমের জনকের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নতুন কোন্ ইজম প্রিজমে পদ্যকারকে বন্দি করা যায় তাই মাথায় খেলতে থাকে। তখন পদ্যকার নিজের মস্তিস্ক খাটানোর সূযোগ পেয়ে যায়। সূয়োগ পেয়ে নিতাই পদ্যের কথা বলে এবং পদ্ম নিয়ে ভাবে। আর ভাবতে ভাবতে ভাবে প্রবেশ করে।
ট্রেনের কামড়ার বাইরে দূপুর তখন আশ্মিনের রোদ পেতেছে শরীরে। মেইল ট্রেনের নাকের ধোয়া আস্তে পারীর বাতাসের ঠিকানার দিকে মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে দেৌড়।
ভাবসোনায় ডুবের মাঝে কবি জল দেখে রঙ দেখে।
জলের সঙ্গে জলের আস্ফালন দেখে। শুধু ফিলিমের স্বপ্নে বিভোর দয়াল বাবার কাজলী মেঘ দেখেনা। ট্রেনের শেষ হুইসল তখন বেজে উঠে। ...পারীর সাড়ে তিন হাত দূরত্বে পদ্যকার ট্রেনের লাইন দেখে।
ট্রাম আর ট্রেনের লাইন কি একরকম হয়, ভাবে পদ্যকার। তার রাসবিহারী এভিনিউর কথা মনে পরে। পদ্যগুলো তার রাসবিহারী এভিনিউ হয়ে যায়।
জীবনানন্দ হয়ে যায়
চিলের ডানায় রোদ হয়ে যায়
পদ্যরা উড়ে উড়ে শ্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে যায়। এবং মরে ঝরে পড়ে।
খবর: গতকল্য বাইশ অক্টোবর কবি জীবনানন্দ দাশ শম্ভুনাথ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করিয়াছেন... চেৌদ্দই অক্টোবর রাসবিহারী এভিনিউতে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় কবি আঘাতপ্রাপ্ত হন...
২৩ অক্টোবর ১৯৫৪
৬ কার্তিক ১৩৬১ শুক্রবার।
অর্জুন মান্না
মন্তব্য
অক্ষরবিহীন কি-বোর্ডজনিত ভুল: বিজ্ঞাপন
তারিখ ভুল: ৬ কার্তিক ১৩৬১
দু:খিত।
লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
ভুতুম, আপনাকে ধন্যবাদ ভাললাগা জানানোর জন্য
বেশ লাগলো লেখাটা ।
অন্যরকম লেখা! ভাল লাগলো ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
শেষ নাকি লেখাটা!
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
উহু!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শেষ হইয়াও হইলো না শেষ
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
হইলো বোধহয়
বেশ ভিন্নধর্মী লেখা। আরো লিখুন।
অন্যরকম
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
অতন্দ্র এবং তানবীরাকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
গল্প লেখার পরিচিত পথ এড়িয়ে, মুড়ি-চানাচুরের মুখরোচক স্বাদ কাটাবার যে দুর্বিনীত ইচ্ছা হয়েছে দোস্ত, সেটা তোরে স্বস্থিতে রাখবে না হয় তো ... পাঠক খোয়া যাবে, কিন্তু স্বপ্ন দেখাবে ঠিক ।
স্যালুট রইলো ।
ভেতরে ভেতরে যে প্রস্তুতি শুরু করেছিস, টের পাওয়া যাচ্ছে রে !
কিন্তু ২ টা কথা বলি , রাগ করিস না , তুই বলে বলতে পারছি - মজুমদার বাবু, কমল কুমার দা' কে খুব প্রিয় লেখক তোর ?
আর এতো তত্সম শব্দ গদ্যের গতি কে শ্লথ করে না একটু , মাঝে মাঝে ? তোর কি মনে হয় ?
আরো লিখ্ ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
মজুমদার খুর প্রিয় না। তবে প্রিয়। তার ছায়া কি পড়েছে?
আর তত্সম আসলেই স্লথ করে গল্পের গতি। মাঝে মাঝে।
ধরিয়ে দিয়েছিস এজন্য ধন্যবাদ তোকে।
অতি চমতকার লেখা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ আপনাকে
আম পাঠকের জন্যে লিখিত হয় নাই।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
তুই কি কাঠাল জনতা?
আছিস কেমন?
এই পাব্লিক যে গল্প লেখে,জানতাম না।এই ধরনের লেখা আমাকে খুব টানে।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
টুটুল ভাই,
ভুলে লিখে ফেলেছি ভাই। মাফ কইরা দিয়েন।
হুম।।।
একটু আলাদা, তাই না? ভাল লাগলো।
শ্রীতন্ময়
ধন্যবাদ শ্রীতন্ময়
নতুন মন্তব্য করুন