আমার জানালাটা পূর্বদিকে। সকালে সূর্য উঠেই জানালা দিয়ে উঁকি মারে আমার বিছানায়। সেদিকে তাকালেই মেহগনি গাছটা চোখে পড়ে। তার ফাঁকে ফাঁকে সূর্য এসে হামাগুড়ি দেয় আমার ঘরে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালে চোখে পড়ে মেহগনির ডালে কাকের অগোছালো বিশাল বাসাটা। আজও ঘুম ভাঙতেই চোখে পড়ল বাসাটা। তার মাঝে খুব বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছে বাসার মালিক কাকটা। আমি আচমকা একবার দেখি কিন্তু লক্ষ্য করার সময় পাই না। আমাকে যেতে হবে, আজ আমার অনেক কাজ। যাত্রা প্রস্তুতির ফাঁকে আরও একবার চোখ পড়ল বাসাটার ওপর, কাকটা তখনও স্থির আপন অবস্থানে নত মস্তকে। আমি ঘর ছেড়ে নেমে আসি রাস্তায়। জনাকীর্ণ পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম দেরী হয়ে যাচ্ছে। তাই রাস্তা ছেড়ে ঢুকে পড়ি বস্তিতে পথটাকে সংক্ষিপ্ত করতে। সহসা মানুষের জটলার দিকে নজর পড়ে। আমার কৌতুহলের আধিক্যে আমি গতিপথ বদলে যোগ দেই জটলার রহস্য উদঘাটনে। মানুষের ভীড় ঠেলে জটলার মধ্যস্থিত দৃশ্য উদ্ধার করে আমি ব্যথিত হই । একখানা সাত আট বছরের শিশু পড়ে আছে লাশ হয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায়, দুঃখে বিহ্বল শিশুটির মা নির্বাক, স্থির চোখে চেয়ে আছে তার সন্তানের মুখপানে। তার সে চোখ স্থির কিন্তু তবু যেন অসংখ্য অব্যক্ত কথার ছাপ পরিস্ফূট ঐ দুটি চোখের চাহনিতে। আমি দাঁড়াতে পারি না। আমার তাড়া আছে, দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে আসি। কিন্তু মায়ের বিষন্ন মুখখানা, বিপর্যস্ত চাহনি আমার মন হতে, চোখ হতে সরে না। তবু আমি হেঁটে চলি, আমাকে যেতে হবে।
সারাদিনের কর্ম শেষে আমি ঘরে ফিরি গোধূলী লগ্নে প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে। বিছানায় শুয়ে এলিয়ে দিতে চাই দেহ। সহসাই চোখ পড়ে সেই মেহগনি গাছটার দিকে। সেই কাকের বাসা, সেই কাকটার দিকে। এখনও সেই কাক দাঁড়িয়ে আছে অনড়। আমার মনে হঠাৎ করেই ভেসে উঠে সেই মায়ের মুখখানা, যিনি সন্তান হারিয়ে বসে ছিলেন স্থির হয়ে এমনি এক উদাস দৃষ্টিতে। আমার ক্লান্তি মিলিয়ে যায়, আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় কাকটার দিকে আর ভাবনা ছুটে বেড়ায় পৃথিবীময়। হঠাৎ আমার ধ্যান ভেঙ্গে নড়ে উঠে কাকটি। প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় নেমে আসে নিচে এক অদ্ভূত আর্তচিৎকারে। আমি মাথাটা এগিয়ে দিই জানালার কাছে, উকি মেরে চেয়ে দেখি কাকের বাচ্চাটা পড়ে আছে গাছের নিচে, মৃত। আর শিকারী বেড়ালটা দৌড়ে পালাচ্ছে কাকের রুদ্র মূর্তি দেখে।
সালাহউদদীন krতপু
মন্তব্য
চমৎকার লিখেছেন তপু। কে বলেছে আপনি লিখতে জানেন না? আমাক কাছে খুব ভালো লেগেছে এবার আলসেমী বাদ দিয়ে ছোট গল্প, বড় গল্প, উপন্যাস সব লিখে ফেলেন!
ধন্যবাদ মামুন ভাই। আপনাদের আশীর্বাদ থাকলে একদিন সবকিছু না হোক অন্তত আরো কিছু লিখব এই প্রত্যাশা করছি। প্রথম মন্তব্যটা আপনার হওয়ায় আমার মনটা অধিক সাহসী হলো।
লেখা ভালো লাগলো। অনুগল্পের কোন নাম নেই?
প্যারা করে দিলে বোধ হয় পড়তে একটু আরাম হয়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
গল্পের নামকরণ আমার কাছে গল্প লেখার চেয়ে অধিক কঠিন মনে হয়, তাই আমি বরাবর চেষ্টা করি এই অধ্যায়টি এড়িয়ে যাবার যেন দূর্বলতাটুকু ধরা না পড়ে। নামকরণে আপনাদের সহায়তা কামনা করছি। যেমন এই গল্পটির নাম কি হবে সে ব্যাপারে যদি আপনি পরামর্শ দেন তাহলে উপকৃত হব।
আর প্যারার ব্যাপারে পরবর্তী সময় হতে সচেতন থাকার চেষ্টা করব।
আপনার গঠনমূলক পরামর্শের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
- হুমম
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি বলেছে-
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদীপম বসু বলেছেন-
অতন্দ্র প্রহরী বলেছেন-
পাঁচতারা দিলাম। হাসান মোর্শেদ ভাইয়ের কথাটা মনে রাখবেন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আমার লেখায় পাঁচতারা দিয়েছেন। এ আমার সৌভাগ্য। এই মূল্যায়ন আমার লেখালেখির সাহসকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে খেয়াল রাখবেন আমার এই সাহস যেন ধৃষ্টতায় গিয়ে না পৌঁছায়; সে দিকটা দেখভালের দায়িত্বও কিন্তু আপনাদের।
হাসান মোর্শেদ ভাইয়ের কথাগুলো মান্য করার চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ আপনাকে সু-পরামর্শের জন্য।
সুন্দর হয়েছে তো। আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো, তাই চার তারা দিলাম। আচ্ছা একটা নাম দিয়ে দেই-- "চক্র"। নামটা কেমন হলো জানাবেন।
প্রথমেই ধন্যবাদ আমার লেখাকে চার তারা দেয়ার জন্য। আর দ্বিতীয় ধন্যবাদটি গল্পের নামকরণের জন্য। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তো রইলই।
নামটি আমার ভাল লেগেছে। কিন্তু আমি এটির সম্পাদনা করতে পারছি না বলে নামটি যোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আপনাদের ভাল লাগাই আমার লেখার প্রেরণা।
সালাহউদদীন তপু
গল্পটি সংক্ষিপ্ত কিন্ত অর্ন্তনিহিত অর্থের ব্যপকতা অনেক গভীর ও ব্যাপক। প্রতিদিন এমন কত শত ঘটনা আমাদের চোখেও তো পড়ে কিন্ত কই এমন করে তো আমাকে ভাবায় নি। আপনাকে যেহেতু এ ঘটনাটি ভাবাতে বাধ্য করিয়েছে এবং শুধু ভাবিয়ে থেমে যায়নি বরং আপনার হাতে কলম তুলে বাধ্য করেছে লিখতে- এটা আপনাকে একশত ধাপ এগিয়ে রাখবে বলে আমি মনে করি। আগামীতে আমরা আপনার কাছ থেকে আরো অনেক লেখা আশা করি। আপনার লেখার হাত ভাল । লেখা থামাবেন না।
শাহেনশাহ সিমন বলেছেন -
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন