ঘরের বাইরে বসে আছে আব্দুল কাদের। তার পাশেই তার বড় ছেলেটা বসা। অনেকক্ষণ ধরে পাশাপাশি বসে আছে দুজন তবু কারো মুখে কোন কথা নেই। মনে হচ্ছে যেন কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন তারা। আকাশে মেঘ ভীড় করছে, বাতাসের বেগ বেড়ে গেল হঠাৎ করেই।
লাফিয়ে উঠল আব্দুল কাদের- “বৃষ্টি আসবে রে?”
ছেলের ধ্যান ভেঙ্গে গেল- “কেন বাবা?”
- “ঐ দেখ কুচকুচে কালো মেঘ, এদিকেই আসছে।“
খুব দ্রুতই ঘনিয়ে আসছে মেঘ।
ছেলেটা বলে উঠল- “এখন কি হবে?”
কাদেরও ভাবছে এখন কি হবে। মাঠের ধানগুলো সবে মাত্র শীষ মেলেছে। কিছুদিন পর পরিপক্ক হবে। এই মুহূর্তে যদি বৃষ্টি আসে তবে ধানগুলো থেকে আর চাল পাওয়া যাবে না। ধান নষ্ট হয়ে থেকে যাবে চিটা। এবার যদি ধান না উঠাতে পারে তাহলে মেম্বারের ঋণটা সে এবারও শোধ করতে পারবে না। গত দুই বছর ধরে মেম্বারের এই টাকা সে দিবে দিবে করছে কিন্তু দিতে পারছে না। এবার না দিতে পারলে আগামীবার চাষ করার জন্য বর্গা জমিটাও হয়ত হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর সাথে যাবে একমাত্র সম্বল হালের গরুটা।
কাদেরের মাথায় চিন্তা ঘনীভূত হয় তার চেয়ে অধিক গতিতে ঘনিয়ে আসে মেঘ, ঘন কালো মেঘ। নিকটবর্তী হতে হতে আকাশ এতটাই নিচে নেমে আসে যে মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে আকাশ আর মেঘের দলকে। মেঘ এগিয়ে চলে সাথে চলে ঝড়ো বাতাস। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে কাদেরের ভাঙ্গা ঘরটার ভেতরে। কাদের আর তার ছেলে ঘরে ঢুকতে পারে না। তাদের একটি মাত্র ঘরে এখন কাদেরের স্ত্রী সন্তান প্রসবের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, সেখানে পুরুষ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটি হবে কাদেরের চতুর্থ সন্তান। ঝড়ো বাতাসের আলামত পেয়ে ঘরে ঢুকতে যেয়েও দরজা থেকে খোলা উঠানেই ফিরে আসে কাদের ও তার ছেলে।
বাতাসের বেগ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, রাক্ষসের মত প্রবল বেগে মটকে দিয়ে যাচ্ছে গাছের নরম ডালগুলোকে। ঝড়ো বাতাসের সাথে একসময় বৃষ্টিকণা ঝরে পড়তে শুরু করে। প্রথমে হাল্কা থেকে শুরু হলেও ক্রমশ বাড়তে থাকে বৃষ্টিকণার পরিমাণ। বৃষ্টিকণার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে কাদেরের দুশ্চিন্তা। এবারও তাহলে ধান উঠাতে পারবে না সে? বাতাসের বেগের সাথে ঘরের ভাঙ্গা বেড়ার মটমট শব্দ তার সে দুশ্চিন্তায় ছেদ কাটে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙ্গে পড়ল ঘরটি। অসহায় কাদের উঠানে দাঁড়িয়ে নিরূপায় দেখে ঝড়ের অনমনীয় রূপ।
বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তার পোষাক ভিজে লেপ্টে যায় গায়ের সাথে। মাথার চুল বেয়ে ঝরে পড়ছে গরম পানি। কোনদিকে যেন ভ্রুক্ষেপ নেই তার। প্রচণ্ড বৃষ্টির ছমছম শব্দ ভেদ করে ঘর থেকে নতুন অতিথির আগমনের সুর ভেসে আসে।
সালাহউদদীন তপু
মন্তব্য
- হুমম, ভালো
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ অনুপ্রাণিত করার জন্য।
তপু ভাই লিখতে থাকুন আমরা আছি পড়ার জন্য।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ,
আপনারা আছেন বলেই লেখার সাহস করতে পেরেছি।
সালাহউদদীন তপু
চমৎকার গল্প।
একটু ভেবেচিন্তে গল্পের নাম দিয়ে দিয়েন। নইলে পরের অণুগল্পের, বা তার পরের, বা তার পরেরটার শিরোনাম কী দিবেন?
ধন্যবাদ, নামের ব্যাপারে সতর্ক করে দেবার জন্য।
এই গল্পের নাম নাই দিলাম, আশা করছি আগামী গল্প লিখলে সেখানে একটা নাম জুড়ে দেব যেমন করেই হোক।
পড়লাম আপনার গল্প, ভয়ে ভয়ে ছিলাম কোনও ধাক্কা দিবেন কি না শেষে দিয়ে! তেমন ধাক্কা দেন নাই। কিন্তু লেখনী দিয়ে একটা ধাক্কা কিন্তু দিয়ে দিলেন। ভালো লিখেন এটা তো বুঝলাম, এবারে কতো লিখবেন সেটাও বুঝান
আপনি যেহেতু ধাক্কা খাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত আছেন আশা করছি আগামী লেখায় একটা বড়সড় ধাক্কাই দেব।
আর যদি আমি ভাল লিখে থাকি বলে আপনার মনে হয়, তবে ততদিন লিখব যতদিন আপনাদের এই ভাল লাগা থাকবে।
ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য।
কিছু মনে করবেন না। কেন জানিনে গল্পটাতে তেমন আকর্ষণীয় কিছু পাইনি। মনে হোল যে এটি একটি গল্পের সূচনা। ঝড় উঠলো, বৃষ্টি এলো। আতুর ঘরে বৌটি, এবং তার বাচ্চা হোল। আমি ঠিক এর মধ্যে গল্পটিকে খুঁজে পাইনি।
ঘরে পরে তফাত আমার কখন গেছে ঘুচে, তবু লোকে সকাল বিকাল ঘরের খবর খুজে। বিষন্ন এটা হলো "এইসব দিন রাত্রি গল্প" ।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ধন্যবাদ তানবীরা আপা, গল্পটার মানানসই একটা নাম দেয়ার জন্য। কিন্তু আমি লেখাটির সম্পাদনা করার অপশন খুঁজে পাচ্ছি না, হয়ত অতিথি লেখক বলে। তাই নামটি যোগ করে দিতে পারছি না।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
খারাপ লাগেনি, বরং গল্পের মধ্যে ছোট্ট একটা মুহূর্ত সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। গল্পের চেয়ে প্রকৃতির বর্ণনাটাই বেশী মনে ধরল।
গল্প কিংবা প্রকৃতির বর্ণনা যেটাকেই বেশি মনে ধরুক সেটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার লেখার কোন একটা জিনিষ আপনার মনে ধরেছে। এটাই আমার যথেষ্ট পাওয়া।
ধন্যবাদ এমন ঝরঝরে অথচ পরম উৎসাহদায়ক মন্তব্য প্রদানের জন্য।
সালাহউদদীন তপু
আরে নাম নিয়ে এতো ভাববেন না, শেক্ষপীয়রবাবু কি যেন একটা বলে গেছেন না? তাছাড়া সত্যজিত রায়ের গল্পসংকলমের নামগুলোর কথা ধরলে আপনার এই স্টাইলে আরো কিছুদিন চলবে। তবে প্রহরী যে অত্যন্ত দুষ্ট বালক তাতে সন্দেহ নাই।
যাক আপনার কথায় ভরসা পেলাম। গল্পের মান দিয়ে সত্যজিৎ রায়ের কাছাকাছি যাবার দুঃসাহস করতে না পারলেও নাম দিয়ে অন্তত ছোঁয়ার প্রচেষ্টা করতে পারি তাহলে। আর তাতে যদি শেক্সপীয়ারের কথা পালন হয় তবে তো এক ঢিলে দুই পাখি (মারতে না পারি অন্তত উড়ে তো যাবে)।
ধন্যবাদ আপনাকে
সালাহউদদীন তপু
আমার মন্তব্যে নেই। তবে আপনার দুটি লেখা পড়লাম । খারাপ লাগেনি।
শেষ দিকে এসে ট্যুইস্ট আশা করেছিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন