আমার ভাঙ্গা বানানের ডালি নিয়ে আবার হাজির হবার চেষ্টা করছি কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা। এবার মনে হয় না ঠেঙ্গানীর হাত থেকে নিস্তার পাবো। আগের বারের মত মনে হয় না এবারো মাফ পাবো বা ভুল বানান আর বস্তাপচা লেখা দিয়ে ছাড় পাবো। দেখা যাক কপালে কি আছে। আপনারা যারা ভাবছেন এই ছাগল এত বকবক করছে কেন তাদের সুবিধার্থে আমার আগের লেখার লিঙ্কটি এখানে দিলাম। আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগের বারের সহস্র বানান ভুল এবং ৩ টি প্যারা ২ বার পোস্ট করার জন্য। এবার আশাকরি একই ভুল আবার হবে না।
আগের লেখায় আমি অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নাটকীয় ধরনের প্রতিরক্ষার কথা বলেছিলাম, এখন বাকি আছে পরবর্তী ২টি ধরনঃ প্রাপ্তবয়স্ক এবং দুশ্চিন্তামূলক প্রতিরক্ষার কথা। নাম দেখে বুঝতে পারছেন, নানা রকম দুশ্চিন্তামূলক চিন্তার উৎপত্তির সাথেই এই ধরনের প্রতিরক্ষার আবির্ভাব হয়। দেখি কতটুকু খোলাসা করে বলতে পারি।
৩. Anxiety Defense (দুশ্চিন্তামূলক ধরনের প্রতিরক্ষা)
ক) Displacement – এটা খুব সম্ভবত আমরা সবচেয়ে বেশী দেখি। একজনের প্রতি আপনার যা অনুভুতি, যেটা আপনি প্রকাশ করতে অক্ষম, তা প্রকাশ করতে না পারায় অন্য এমন একজনের উপর জাহির করা যেখানে আপনি পার পেয়ে যাবেন। অনুভুতির প্রকাশভঙ্গীতে পরিবর্তনও হতে পারে ।আমি কি পেঁচিয়ে ফেলছি? সহজ বাংলায় একজনের ঝাল অন্যের উপর ঝাড়া। যেমন??? অফিসে বসের কাছে ঝাড়ি খাওয়া, কিন্তু তাকে কিছু বলতে না পারায় মেজাজ খাপ্পা হয়ে বাসায় আসা এবং বিনা কারনে অথবা তুচ্ছ কারনে স্ত্রীকে বকাবকি করা, স্ত্রী বকা খেয়ে বড় ছেলে বা মেয়েকে বকবে, তারপর সে গিয়ে তার ছোট ভাই বা বোনকে বকবে, সর্বশেষজন আর কাউকে না পেয়ে পোষা জন্তুকে মারবে, অথবা বাগান নষ্ট করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। লক্ষ করেছেন নিশ্চয়ই, এখানে কিন্তু অনুভুতির পরিবর্তন হ্য়নি। আবার অনুভুতির পরিবর্তন হচ্ছে এমন উদাহরণ হলো,ধরুন একজন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একজন সুন্দরীকে দেখে কামাবিষ্ট হলেন,এবং বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সাথে ভালোবাসা করলেন।অবশ্য এর মানে কিন্তু এই না যে, আমি বলতে চাচ্ছি সবাই অন্য কাউকে দেখে উত্তেজিত হয়ে (আহেম--)
খ) Repression – কিছুটা blocking এর সাথে মিল আছে, কিন্তু এখানে পূর্বে ঘটা কোন অতীতের কিছুই মনে থাকবে না। যেমন, কোন বাচ্চা যদি পরিবারে অবহেলিত বা নির্যাতিত হয়ে থাকে এবং সেজন্য যদি তার চিকিৎসারও দরকার পড়ে থাকে,তাহলে দেখা যাবে সে ওই ঘটনা মনে করতে পারবে না। তাকে প্রশ্ন করলে সে বরং জোর গলায় বলবে, “না তো, আমার শৈশবে তো এমন কিছু ঘটেনি”! ঐ মর্মান্তিক অতীতের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য মন নিজে থেকেই মুছে ফেলবে সেই ঘটনা। অথবা একজন সৈনিক যিনি যুদ্ধবন্দী ছিলেন ৬ মাস,দেখা গেল তিনি বন্দীজীবনের কোন ঘটনা মনে করতে পারছেন না। বোঝা যাচ্ছে এই ‘ঘটনা ভুলে যাওয়া’ উনাকে দ্বন্দের হাত থেকে রক্ষা করছে।
গ) Isolation of affect – পুরা অভিজ্ঞতাটাই মনে থাকবে অত্যাচারীতের, কিন্ত ওই ঘটনা বর্ণনা করার সময় উনি কোন অনুভূতির প্রকাশ করতে করতে পারবেন না। উদাহরণ?? একজন শ্রমিক কোন দুর্ঘটনায় একটি আঙ্গুল বা অঙ্গ হারানোর পর এমনভাবে পুরা ঘটনা বর্ননা করবেন যেন, উনি পুরো ঘটনার একজন দর্শকমাত্র, কোন অনুভুতির প্রকাশ থাকবেনা পুরা ব্যাপারটায়।
ঘ)Intellectualization – সাধারন অনুভুতি পরিবর্তিত হয়ে যাবে নব অর্জিত জ্ঞান প্রকাশের মাধ্যমে। ধরুন আপনার এমন একটা রোগ ধরা পড়ল, যার চিকিৎসা নেই, কিন্তু আপনি দমার লোক নন, বিভিন্ন মাধ্যম হতে আপনি জ্ঞান আহরন করবেন, তারপর ডাক্তার এসেছে আপনাকে সহানুভূতি জানাতে কিন্তু তাঁকে আপনি কথাই বলতে দিবেন না, উনাকে আপনার নতুন জানা সব কিছু বলবেন এবং এমন ভাব নিবেন যেন, আপনি জানেন আপনার দুরারোগ্য কোন ব্যাধি আছে।
ঙ) Acting Out – প্রক্ষোভ বা প্রবল অনুভুতির বা ব্যবহারের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে কোন তুচ্ছ অনুভুতিকে লুকিয়ে রাখার জন্য অথবা উদ্ধত ব্যবহারের মাধ্যমে অগ্রহণীয় ব্যবহার গ্রহনযোগ্য করানোর অপচেষ্টা চালানো হবে। অন্ধকারে শিস্ বাজানোর মাধ্যমে নিজের ভয় দূর করার চেষ্টা এই ধরনের মানসিক প্রতিরক্ষার মধ্যে পড়ে। আবার একটি বাচ্চা কোন দুষ্টুমি করছে, তাকে বাধা দেয়া হলে বা খেলনা কেড়ে নেয়া হলে তারা কান্নাকাটি করে তাদের হতাশা প্রকাশের অপচেষ্টা।
চ)Rationalization – সহজভাবে বললে অগ্রহনযোগ্য অবস্থা গুলোকে গ্রহনযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় নানা রকম ব্যাখ্যা দাঁড়া করিয়ে নিজের মনকে প্রবোধ দেবার চেষ্টাকে এধরনের প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। যেমন পরীক্ষায় ফেল করার পর মনে করা, এবছর পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হয়নি বা প্রশ্নপত্র অত্যধিক কঠিন হয়েছে।
ছ) Reaction formation –অগ্রহনযোগ্য ব্যবহারকে ঠিক তার উল্টা ভাবে প্রকাশ করা, অর্থাৎ মনে মনে চাইবে একটা, কিন্তু মুখে বলবে তার একদম উল্টাটা। “love-hate” এই প্রতিরক্ষার একটা খুব ভালো উদাহরণ। অথবা, ধরুন আপনে বুয়েট বা ঢাকা মেডিকেলে প্রবেশ পরীক্ষা দিয়েছেন কিন্তু চান্স পাননি, তখন বলছেন, ভাগ্য ভালো, চান্স পাইনি, পেলে পড়তে হত--- কিন্তু কে পড়ে ওই ‘মুখপোড়া জায়গায়’
জ) Undoing – এটা আগেরটার মতই কিন্তু এখানে আপনি যেটা চান, তার উল্ট বলবেন যেন আপনার অনাকাংক্ষিত কোন ঘটনা না ঘটে। যেমন, আমরা কথায় কথায় বলি, “খোদা না করুক” অথবা “god forbid”।বাচ্চাদের মাথায় কাজল দিয়ে টিপ দেয়াটাও এই কারনেই হয়ে থাকে, টিপ দিচ্ছে মা যেন কারো নজর যাতে না লেগে যায়।
ঝ)Passive aggressive – আপনি একটি কাজ করবেন বলে কথা দিচ্ছেন কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করছেন না অথবা ভুলে যাচ্ছেন, কারন কাজটি আপনি আসলে করতেই চান না। আসলে আমি ঠিক ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছি না, অথচ বুঝাব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, এটাই passive aggressive এর একটি উদাহরণ। এর মাধ্যমে আপনার প্রতি কর্তার বিরোধাভাস প্রকাশ পায় কিন্তু তা সম্পুর্নই অনিচ্ছাকৃত এবং অপ্রতক্ষ, সোজা সাপটা বলতে পারছেন না বলে এরকম করছেন। আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক, যে ডাক্তার তার রোগীর প্রতি বিরক্ত, তার প্রশ্ন শুনে না শুনার ভাব করবেন এবং কথা চালিয়ে যাবেন।
লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে, বাকিটা পরে দেই, কি বলেন?
সাইফ
মন্তব্য
চমৎকার।
প্রথম প্যারাটি কি Anxiety Defense এর একটি উদাহরণ ?
বস, আমার লেখা সার্থক হইসে তাহলে, খুবই প্রীত হলাম দেখে যে কেউ আমার দৃষ্টিতে ব্যাপার গুলো দেখছে। ধন্যবাদ।
চমৎকার হচ্ছে বস।
খুবই ইন্টারেস্টিং!
পরের পর্বটা একটু জলদি দিও---এই পর্বের স্মৃতিটা তাজা থাকতে থাকতেই---
হা হা হা, আপনার জন্যই না এতদুর গড়াইসে ঘটনা। ধন্যবাদ বস।
লেখা খুবই দুর্দান্ত হয়েছে কিন্তু উদাহরনগুলা জুতের হয় নাই। ডিপ্লেসমেন্টের আরো রগরগে বর্ণনা দেয়া যাইত। লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আরে বস দেখি, আপনার ভালো লাগলো জেনে খুশি লাগতেসে, রগরগে বর্ননা দিলে তা আবার ভালগার হয়ে যাবে, তখন বিধিবাম হবে। আপনাকে প্রাইভেট সেশন দিবো নে বস ;)।
ঐটা ফাইজলামি করে বলছি, লেখাটা আসলেই খুব ভালো হয়েছে। প্লীজ ক্যারি অন, ফুল স্পীডে চলুক।
দুটো পর্বই পড়লাম একসাথে।
দারুণ লাগছে। অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ শিমুলাপু, তাড়াতাড়ি নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।
নতুন মন্তব্য করুন