পুরাকালের এক পাপিষ্ঠ ছিল (এই মূহুর্তে নাম মনে করতে পারছিনা) যে বর পেয়েছিল যে তার মৃত্যু হবে না কোন মানুষ অথবা পশুর হাতে, দিনে অথবা রাতে, মাটিতে অথবা শুণ্যে, (আরো অনেক কিছু )। ভগবান বিষ্ণু সেই পাপীকে মারেন মানুষ ও সিংহের মিলিত রুপে, সন্ধ্যার সময়, নিজের কোলে নিয়ে। সেটি তাঁর নৃসিংহ অবতার।
ভাইরাসের কথা মাথায় আসলে আমার বারবার পুরাণের সেই পাপীর কথা মনে হয়। ভগবান সেবার পৃথিবী বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমাদের কে বাঁচাবে! আমরা যারা অণুজীববিজ্ঞানে পড়েছি তারা ভাইরাসের কর্মকান্ড নিয়ে এই আতঙ্কে ভুগি সবসময়। ব্যাপারটি আসলে ভাইরাসের কর্মকান্ড নয়, ভাইরাসের ক্ষমতা। এতো ক্ষমতাধর প্রাণি (! - এই প্রসঙ্গে পরে আসছি) সৃষ্টিতে আর আছে কিনা সন্দেহ হয়! এ এমনকি সেই পাপিষ্ঠের চাইতেও ক্ষমতাধর! কারণ বলছি শুনুন,
প্রথমতঃ ভাইরাস প্রাণি নাকি জড়বস্তু সেটি নির্ণয় করা যায় না। তার মধ্যে আছে জীব আর জড় দুইয়েরই বৈশিষ্ঠ্যঃ
জীব কোষের বাইরে থাকলে তার মাঝে প্রাণের কোন বৈশিষ্ঠ্যই আর দেখা যায় না। তার কোন কোষ নেই, সে নিঃশ্বাস নেয় না, খায় না, বড় হয়না, বাচ্চা দেয় না, চলে-ফেরে না, পৃথিবীর যে পরিবেশেই তাকে রাখ তার কিছু যায় আসে না, এমনকি চাইলে ভাইরাসের ক্রিস্টালও বানিয়ে ফেলতে পারে কেউ।
আবার, জীবকোষের ভেতরে সে বংশবৃদ্ধি করতে পারে, তার নিউক্লিয়িক এসিড থাকে (DNA অথবা RNA), থাকে প্রোটিনও।
দ্বিতীয়তঃ তার আছে হাজার রুপ নেয়ার ক্ষমতা। আর আমরা তার এই ক্ষমতাটিকেই সবচাইতে বেশি ভয় পাই। কারণটা বুঝিয়ে বলি, ধরুন একটি ভাইরাস আছে যার তিনটি দাঁত আর সেই দাঁত দিয়ে সে কামড়ায়। এখন আপনি একটি ওষুধের হাতে হাতুড়ি দিয়ে পাঠালেন, যে দাঁত দেখলেই চিনতে পারে আর তক্ষুনি পিটিয়ে ভাইরাসের দাঁত ভেঙ্গে দেয়। তো, যেইনা আপনার ওষুধটি দু-চারটি ভাইরাসের দাঁত ভেঙ্গে দিতে শুরু করবে অমনি আপনি দেখবেন কোন ভাইরাসেরই আর দাঁত নেই। বরঞ্চ মুখের ভেতর থেকে তাদের লম্বা নখ ওয়ালা হাত গজিয়েছে যা দিয়ে ও খাঁমচি দেয়। গেল আপনার হাতুড়িওয়ালা ওষুধ ভেস্তে! এবার যদি আপনি রেগেমেগে আপনার ওষুধকে নখ কাটার জন্য স'মিল বসিয়ে দেন, দেখবেন ভাইরাসের হাতও উধাও। সেখানে গজিয়েছে তার লম্বা লম্বা পা। জিনেদিন জিদানের মতো লাথিও মারাও সে রপ্ত করেছে কোত্থেকে জানি!
তৃতীয়তঃ ভাইরাসের নিত্যনতুন ক্ষমতা অর্জনের ক্ষমতা! বুঝিয়ে বলি, ধরুন, একটি ভাইরাস ভাল উড়তে পারে। একটি ভাইরাস ভাল ফুটবল খেলে। আর একটি ভাইরাস ভাল সাঁতার কাটতে পারে। একদিন কোন একটি দ্বীপে ফুটবলার ভাইরাসটি খেলছিল, যেটি দেখতে উড়ে এল উড়ন্ত ভাইরাস আর সাঁতরে এল সাঁতারু। খেলা শেষে যেটি হবে সেটি অত্যন্ত অদ্ভুত, আপনি দেখবেন তিনটি ভাইরাস মিলে কিছু বাচ্চা দিয়েছে যারা সবাই ভাল ফুটবলার আর সাঁতারু তো বটেই এমনকি তারা উড়তেও পারে!
চতুর্থতঃ হাস্যকর ভুতের সিনেমাগুলোয় (আমার কেন জানি সব হরর সিনেমা দেখলেই হাসি পায় ) দেখে থাকবেন, যে প্রেতাত্মা এসে ভর করে নায়িকার শরীরে আর নায়ক বেচারা পড়ে বিপদে। প্রেতাত্মা ভর করায় একদিকে রক্ষনশীল নায়িকাটি হয়ে যায় নিম্ফোম্যানিয়াক, যার কেবল বাচ্চা দেয়ার শখ! আর অন্যদিকে নায়ক সব বুঝেও তার বাবার দোনলা বন্দুকটির কোন সদ্ব্যাবহার করতে পারেনা প্রেতাত্মার উপর! কারন প্রেতাত্মা মরলে তো নায়িকাও মরবে! ভাইরাস প্রাণির শরীরে ভর করে ঠিক এরকম প্রেতাত্মার মত। সে গিয়ে ঢুকে বসে থাকে একবারে কোষের ভেতর। প্রথমত, জানবে কিভাবে কোন কোষে আছে ভাইরাস! আর চিনলেও তাকে মারতে হলে মরবে সেই কোষটাও! কখনো কখনো অবস্থা প্রতিকুল দেখলে ভাইরাস তার জিন ঢুকিয়ে দেয় প্রাণিকোষের জিনের মধ্যে। তখন সেটি প্রাণি কোষের অংশ হয়েও কাজ করে ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধির জন্য! ব্যাপারটি হয়ে যায় সেই লোকের মতো যার বউ বাচ্চা দেয় তার প্রতিবেশির! তাও আবার যতদিন অবস্থা অনুকুলে না আসে ততদিন সে লক্ষ্মী বউ সেজেই থাকে মনের কথা লুকিয়ে রেখে!
পঞ্চমতঃ ভাইরাস...। ইস, অনেক বড় হয়ে গেছে লেখাটা। নির্দয় মডু বড় লেখার ওছিলায় লেখা প্রকাশে দেরি করতে পারে । তাই আজ আর না। মডু সদয় হয়ে, তাড়াতাড়ি লেখাটা পড়ে প্রথম পাতায় প্রকাশ করলে আবার শুরু করব...
[বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু ঢুকে পড়েছে। এতদিন ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এখন রীতিমত আতঙ্কে আছি। সোয়াইন ফ্লু হয় swine influenza A virus subtype H1N1 এর দ্বারা (সোয়াইন ফ্লুর জন্য আরো অনেক ভাইরাস দায়ী। যে নামটি দিয়েছি সেটি এই মূহুর্তে বিশ্বে যে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে তুলকালাম চলছে সেটির ভাইরাস)। মজার বিষয় হল, এটি এখন পর্যন্ত কোন শুকরের শরীরে পাওয়া যায়নি । এই ভাইরাসটি bird flu virus, swine flu virus এবং human influenza virus এই তিনপ্রজাতির একটি সাবটাইপ।]
অনুজীববিজ্ঞানের আরো অনেক কিছু নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে। লিখব? (আসলে আমার মহাকাব্যও লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সেই চেষ্টার পর নানা প্রতিকুল অবস্থার মুখোমুখি হয়ে বুঝেছি, সব ইচ্ছা পুরণের এমনকি চেষ্টাও করতে নেই! )
-অনার্য্য সঙ্গীত
মন্তব্য
এত ছোট লেখার জন্য ধুসর গোধুলির ভাষায় "কইষ্যা মাইনাস" দিলাম।
ইস! আগে বুঝিনাই যে, মডু ভাই নিজের আলস্য-জনিত দুর্নাম ঘুচাতে লেখাটা এতো তাড়াতাড়ি প্রকাশ করবে ! জানলে আরো মাইলখানেক লিখতাম...
ঠিকাছে, পরের পর্বে যেন বড় হয়। আর হ্যাঁ, মডু ভাইকে 'আপনি' করে বলতে হয়।
আসলেও, যখন মজাটা পাওয়া শুরু করলাম, মডু দাদার বদনাম কইরা লেখা শেষ কইরা ডিলেন, ভারী অন্যায়, আর লেখা চাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
অবশ্যই লিখবেন। লেখা ভালো লাগছে।
লেখাটা ভালো আগাচ্ছিলো, হুট করে ব্রেক কষলেন ক্যান???
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমার ভুল না হয়ে থাকলে আপনার উল্লেখিত পুরাকালের পাপিষ্ঠ হচ্ছেন দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু।
কোন এক সচলের পোস্টে কয়েকদিন আগে আপনি হুমকি দিয়েছিলেন যে মাইক্রোবায়োলজীর উপর পোস্ট দেবেন। হুমকিটি কার্যকর করায় ধন্যবাদ।
পোস্টের আকারের সাথে মনে হয়না মডারেশনের বিশেষ সম্পর্ক থাকে (আমি মডারেটর নই), বরং কনটেন্টের সাথে তার সম্পর্ক গভীর। সে'হিসেবে আপনার লেখাটা ঠিকভাবে শেষ করাই উচিত ছিল।
যাই হোক, লেখাটা কয়েক পর্বে হলেও শেষ করুন। এই বিষয়গুলো সর্বসাধারণের জানা থাকা উচিত।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লাগলো, আরো লিখুন।
এমন লেখা বড় হলেও সমস্যা নেই। এক নিমেশে পড়ে ফেলা যায়।
পরবর্তি পর্বের জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষায় আছি............
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
সবার মন্তব্যের একই জবাবঃ
লাই দিয়ে মাথায় তো তুলছেন! পরে কিন্তু আমি কিছু জানিনা
আপনার কিছু না জানলেও চলবে। আপনি খালি লিখেন আর পোস্টান। বাকি দায় এবং দায়িত্ব আমরা নিলাম
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দেখা যাবে কতটা লিখতে পারেন।
খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব না ছাড়লে অনার্য্য সঙ্গীত নামে নামে একটা সিনথেটিক ভাইরাস বাজারে ছাড়া হবে কইলাম। খুব হুঁশিয়ার।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আশ্চর্যের ব্যপার হলো, কম্পিউটার ভাইরাস আর জীবানু ভাইরাসের স্ট্রাটেজিতে আছে ভীষন রকম সাদৃশ্য।
ক্যান যে আমগো বিজ্ঞান বইয়ে ভাইরাসের জীবনচক্র এইভাবে লেখা হয় না!!!
প্রাঞ্জল ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ে এমন লেখা আসলেই প্রয়োজন। চলুক।
দুর্বৃত্ত মডারেটরগুলি আসলে কনটেন্ট পড়ে পড়ে প্রকাশ বা অপ্রকাশ করে ... তাছাড়া সবসময় সচলে থাকেও না। বিলম্ব হওয়া স্বাভাবিক। বেতনখোর মডু হলে আলস্যের অভিযোগে তাদের ফাঁসি দেয়া যেতো, কিন্তু তারা তা নয় বলে, ঐ বিলম্বটুকু সহ্য করে নেয়ার অনুরোধ জানাই। ঐটুকু ধৈর্য না থাকলে সচলায়তন আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে।
ঘটনা হইলো, আপনার লেখাটা পড়তে গিয়ে ষষ্ঠ পাণ্ডবের করা ধারণাটা আমারও হয়েছে। তবে, এইটা আসলে ঘটনা না।
আসল ঘটনা হইলো, আপনে মিয়া এতো ছোট কইরা লেখলেন ক্যান? মোটে জমতেছিলো লেখাটা। আমি ভাইরাস হালাগো লাইগা মনে মনে কয়েকটা কষা গালি রেডি করতেছিলাম। এই শালারা তো মানুষ না দেখি! পুরাই একেকটা ভাইরাস!
সোয়াইন ফ্লু (নেটিভ উচ্চারণঃ শোয়াইন গ্রিপ্পে) দেশে চলে যাওয়াতে একটু অস্বস্তি বোধ করছি। আমাদের দেশে তো প্রতিরোধের ব্যবস্থা অতো উন্নতা না। পঁচা শামুকেও যদি পা কেটে যায়, এই আশংকায় আছি!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আহা স্বয়ং ভগবান কোলে নিয়া মারলেন? আহা ভাগ্যবান! হিরণ্যকশিপু নির্ঘাত স্বর্গে গিয়া ত্রিং ত্রিং ত্রিং তৈরিং কইরা নাচতাছিল! (পুরাণে কত যে রসের কাহিনি! )
হিরণ্যকশিপুর ভাই হিরণ্যাক্ষরে ভগবান বরাহ অবতারে মারেন। সকলে কইছিল কি ভাগ্য ছেলেটার! স্বয়ং বিশ্বত্রাতা বিষ্ণু বরাহ রূপ ধইরা ঠ্যাঙের গুঁতায় মানবজন্ম হইতে মুক্ত করিলেন! শুইনা হিরণ্যকশিপু রাইগা,চইটা, ক্ষেইপা লাল!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুইতো বিশাল বুদ্ধিজীবী হয়ে গেছিস রে
লেখা ভালো হলে মহাভারত হলেও অসুবিধা নেই
আয়তন নিয়ে না
উপাদান নিয়ে ভাবিস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
চমৎকার।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মানুষ না হয়ে ভাইরাস হয়ে জন্মালেই ভালো ছিলো মনে হচ্ছে। পড়া শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল এই পর্ব।
চলছে চলুক
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন