শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে প্রযুক্তির উন্মেষ আর নিরন্তর বিকাশ ঘটেছে গত তিন শতকে। বাষ্প-শকটের আবিষ্কার, অর্থনীতিতে বিদ্যুতের আত্মিকরণ, আর হালের তথ্য-বিপ্লব- এর প্রতিটি প্রাযুক্তিক সংঘটনকে সুম্পেটারের দীর্ঘমেয়াদী প্রযুক্তি-তরঙ্গ (Schumpeterian Kondratieff or Long Wave) বলে চিন্হিত করা যায়। সুম্পেটারের এ প্রযুক্তি-তরঙ্গ শুরুতে একটি অর্থনীতির বাজার ব্যবস্থাকে নাড়া দেয়। নূতন উদ্যোগী শ্রেণীর জাগরণ বদলে দেয় প্রথাগত উদ্যোক্তাদের বাজার স্বাচ্ছন্দ্য। তৈরী হয় নূতন সম্পদ; বিলীন হতে শুরু করে প্রথাগতরা। তবুও, শেষ অঙ্কে প্রাপ্তির ভাগটাই বেশী হয়ে দেখা দেয়। আজকের বিজ্ঞান গবেষণায় ন্যানো-প্রযুক্তির (nanotechnology) আবির্ভাব সামাজিক শারীরতত্বে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ উপ-সম্পাদকীয়ের মাঝ দিয়ে এ শতাব্দীর নব্য প্রযুক্তি-তরঙ্গ (neo-Kondratieff), ন্যানো-প্রযুক্তিকে, পরিচিতি দেবার প্রয়াস থাকছে।
রূপান্তর-জীববিদ্যায় (evolutionary biology) সময়মাত্রাকে কেন্দ্রীয় বলে ধরা হয়; তেমনি ন্যানো-প্রযুক্তিকে বোঝবার মূলে আছে দৈর্ঘ্যমাত্রা (length dimension)। কোন পদার্থের একটি মাত্রা যদি ১ মিটারের ১ বিলিয়ন ভাগ হয় তবে তাকে ন্যানো-পদার্থ বলে নির্ধারণ করা চলে। সহজ উপমায়, পৃথিবীর সাথে একটি সকার (soccer) বলের ব্যাসের আনুপাতিক যে মাত্রা, সকার বলটির সাথে একটি ন্যানো-পদার্থের আনুপাতিক মাত্রা তার তুলনীয়। বিজ্ঞানে ন্যানো-প্রযুক্তির চর্চা পাঁচ দশকের চেয়েও পুরনো। Richard Feynman তাঁর এক বক্তব্যে এর শাব্দিক অবয়ব দেন ১৯৫৯-এ। সূক্ষ্ম পদার্থ নিয়ে আণবিক আর পারমাণবিক স্তরে গবেষণা (molecular and atomic manipulation) যেন প্রেষণা পায় সে থেকেই। নব উদ্যমে রাসায়নিক মৌলগুলোকে নিয়ে শুরু হয় নিবিড় চর্চা আর গবেষণা। গত পাঁচ দশককে ব্যবহার করা হয়েছে পদার্থ আর রসায়নের মিথষ্ক্রিয়ায় ন্যানো-প্রযুক্তিকে প্রায়োগিক করে তোলায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ন্যানো-প্রযুক্তি তার বাণিজ্যিক পরিধি বিস্তার করতে শুরু করেছে। ন্যানোর প্রায়োগিকতা স্থান করে নিয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে বাণিজ্যিক পণ্যে, ইলেকট্রনিক্স থেকে আধুনিক নির্মাণ উপকরণে। এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, আর কোরিয়া প্রাণপনে লড়ছে এ নব্য প্রযুক্তি-তরঙ্গকে মন্থন করতে। চীন চাইছে নিজেদের শিল্প অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে ন্যানো-পদার্থ প্রস্তুতকারক হিসেবে নেতৃত্ব দিতে। একই সময়ে কোরিয়া চাইছে ন্যানো-পদার্থকে ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক্স বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। এ প্রাযুক্তিক অনুপপত্তিতে আমাদের উল্লম্ফনের সুযোগ এখনি।
গত ত্রিশ বছরের ইতিহাসে আমরা একটি বৃহৎ প্রযুক্তি-তরঙ্গকে বিনির্মাণ এবং একইসাথে তাকে বিলীন হতে দেখেছি। ‘বাঙলা যা আজ ভাবে, ভারতবর্ষ তা বিবেচনায় আনে দিনান্তে’-সেই বাঙলার আমরা তথ্য-প্রযুক্তির উত্থানকে উপলব্ধি করলাম একজন ভোক্তা হিসেবে। আজও মোবাইল সংস্কৃতির এ আমাদের শ্লোগান, তথ্য-প্রযুক্তিকে সাধারণের দ্বারে পৌঁছে দেয়া; কিন্তু ভোক্তা হিসেবে- এটুকু বোঝবার অবসর কোথায়! আমাদের নূতন উদ্যোক্তা শ্রেণী এখনও গার্মেন্টস শিল্পকে প্রধানতম নিয়োগ ক্ষেত্র বলে মানেন। শিল্পের সম্মুখ অথবা পশ্চাত সংযোগ আর প্রযুক্তির ভোক্তা হয়ে রইবার এ অনন্ত সাধ আমাদের নিমগ্ন করে রাখবে আরও একটি দশক। এর ভেতরেই ন্যানোর নব্য-প্রযুক্তির রথ ছাঁড়িয়ে যাবে আমাদের স্লথ বাহনটিকে। আমাদের উচ্ছ্বাস হয়ত আছড়ে পড়বে ন্যানোর কোন বাণিজ্যিক পণ্য আবিষ্কারে- আবারো হয়ত ভোক্তা হিসেবেই। এ পরিণতি ন্যানো প্রযুক্তির বিজ্ঞানীদের জন্যে হবে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পরাজয়। ন্যানো-প্রযুক্তির অমিত সম্ভাবনার তরঙ্গটিকে সময়মত মন্থন করতে পারলে আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল দেশ প্রাযুক্তিক-অর্থনীতির (techno-economy) নবযুগে প্রবেশ করবে। নব্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তাই সময়ের দাবী- এ প্রযুক্তি-তরঙ্গটি আমাদের পাশ কাটিয়ে যাবার আগেই একে অধিগ্রহণ করুন; অন্তত একে একটি সুযোগ দিন।
লেখকঃ
নাভিদ সালেহ্, পি,এইচ,ডি
সহকারী অধ্যাপক,
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনা,
সাউথ ক্যারোলাইনা, যুক্তরাষ্ট্র
[লেখাটি জুন ২৪, ২০০৯-এ ঈষৎ সংক্ষেপিত অবস্থায় দৈনিক প্রথম আলো'তে প্রকাশিত]
মন্তব্য
বাংলা একটা dynamic ভাষা... এই ভাষায় খুব ই সহজ করে লেখা যায়, কিন্তু এই লেখক সবকিছুর বাংলা করতে গিয়ে পুরো লেখা টায় এমন ভজ়ঘট করে ফেলেছে যে আমার মত বাঙ্গাল এরও ভাষার সাথে তাল রাখতে গিয়ে মূল বিষয় বস্তু তালগোল পাকিয়ে গেছে... আমি নিজেও কিছুদিন nano-technology নিয়ে গবেষণা করেছি বলে লেখাটা পড়লাম... লেখাটা সাবলীল করে লিখলে হয়ত সাধারন পাঠকের কাছে আরো অর্থবহ হত...
লেখক বাংলা ব্যবহার করেছেন বেশ ভালো ভাবেই এবং ব্রাকেটে ইংরেজী টার্ম ও দিয়ে দিয়েছেন। হয়তো প্রচলিত ভাবে আমরা এতোটা বাংলা ব্যবহার করিনা। তারপরও লেখকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। আসলে আমরাই আজকাল বাংলা চর্চা না করতে- না করতে এর অনেক সুন্দর শব্দ/উপমা কেই আর সহজ ভাবে নিতে পারিনা।
আসেন আমরা বাংলা চর্চা করি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি ইংরেজিতে যাচ্ছেতাই রকম কাঁচা। তারপরও নবম-দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোর বৈজ্ঞানিক শব্দের বাংলা পরিভাষা পড়ে মনের ভেতর কোন ছবি দাঁড়া করাতে পারতাম না। ইংরেজির আশ্রয় নিতে হত।
এখানে ভাষার দোষ নেই। দোষটা মনে হয় বই যারা লেখেন তাঁদের ঘাড়েই বর্তায়।
হুম, ব্যাপারটা কিন্তু আবার 'অনেকটা কোনটা আগে শিখলাম' তার উপর নির্ভর করে।
ধরেন, বিন্যাস/ সমাবেশ এগুলো কিন্তু বুঝতে আমাদের এখন আর কোনো সমস্যা হয়না। আবার আপনি পার্টীকেল ফিজিক্স এ 'আপ কোয়ার্ক', 'ডাউন কোয়ার্ক' 'ফ্লেভার' 'চার্ম' এসব নাম জানলেও শেষমেষ এদের বর্ণনা থেকেই বিবরণটা জেনে নিতে হবে। শব্দগুলো শুধুই চিহ্ন মাত্র।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
লেখার ভাষাটা অতিরিক্ত অলংকারময় হয়ে গিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মতামতে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ভাষা যতোটা প্রাঞ্জল এবং সহজবোধ্য হয়, ততোই আরামদায়ক হয়। তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশলের ছাত্র হওয়া সত্বেও আমি ভাষার গুরুভারের কারণে পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারলাম না।
আশা করি, আপনি প্রযুক্তির উপর আরো লিখবেন, বিশদ ভাবে। আরো লেখা পড়ার প্রত্যাশায় থাকলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নাভিদ ভাই, সচলায়তনে স্বাগতম। ইশতির ফেসবুকের কল্যাণে আপনাকে চিনেছি।
আমরা উদ্যোক্তা নই, বরাবরের মতো ভোক্তাই থেকে যাবো। তাও 'তথ্য চুরি হয়ে যাবে' জাতীয় জুজুর ভয়ে সবার পরে ভোক্তার খাতায় নাম লেখাবো।
সাধারণ প্রযুক্তিতেই আমাদের এখনো অভ্যস্ততা আসেনি। ন্যানো প্রযুক্তি আমাদের কাছে এখনো আজিমভের ফাউন্ডেশনের পাতায় লেখা গল্প স্বরূপ।
আমিও বিস্তারিত লেখার অপেক্ষায় রইলাম। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটু কম বিস্তারিত লেখাই প্রয়োজন। ন্যানো-র নাম শুনলেই মনে হয় যেন কোনো সাই-ফাই গল্প পড়ছি। আমরা ধরেই নেই যে পশ্চিমা মহাশক্তির বাইরে কেউ এ-নিয়ে কিছু করতে পারবে না, কিংবা এই প্রযুক্তি নিয়ে কিছু করতে গেলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাগবে।
সেই আলোকে দেখলে আমাদের সমতুল দেশগুলোও ন্যানো-প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ করার তথ্যটি কৌতূহল এবং আশাবাদ জাগানোর মতই। এ-ধরনের লেখাগুলো দিয়ে প্রাথমিক সংকোচ আর ভয়টুকু কেটে যাবে। এরপর একটু একটু করে কারিগরী দিকগুলো আসবে।
আমি সবকিছুর যথাসম্ভব বাংলা পরিভাষা করার পক্ষপাতী হওয়ায় ভাষার প্রসঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষন করছি। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন প্রযুক্তি। এ-কারণেই এই প্রসঙ্গের শব্দগুলো নতুন হবে, নতুন পরিভাষা প্রয়োজন পড়বে, পুরনো পরিভাষাকে অভ্যস্ত গণ্ডির বাইরে ব্যবহার করতে হবে।
বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বলেই কি তাকে অলংকারশূন্য হতে হবে? এই লেখাটি কিন্তু স্কুলের শিশুদের জন্য লেখা নয়। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা, যাতে তাঁরা এর সাথে পরিচিত হতে পারেন। অন দ্য ফ্লাই জাতীয় লেখা না এটা। আমার মত জানালাম। লেখকের জন্য বাকিদের মতামত তো রইলোই।
ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, এমনকী ভুটানও চাইলে কিছু করতে পারে কিন্তু আমরা পারবো না।
লাগবা বাজী? ৩১ বছর ধরে দেখছি। আর দেখা লাগবে না।
এ জন্যই অলংকারময় ভাষায় ঠিক স্বস্তি পাই না আমি। ন্যানো টেকনোলজি বেশ জটিল জিনিসগুলির মধ্যে একটি। বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে তেমন কিছু পড়ানো হয় না। স্কুলের ছাত্রদের কথা বাদই দিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছেও যে এ জিনিস খুব সহজবোধ্য হবে, তাও না। এ কারণেই অপেক্ষাকৃত প্রাঞ্জল ভাষার পক্ষপাতী আমি। পরিভাষায় আমার পূর্ণ সহমত আছে ( বিশেষত যখন পাশে ইংরেজী প্রতিশব্দটিও দেওয়া থাকে), শুধু মাত্র ভাষার কাঠিণ্যে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করেছি। যাই হোক, এ মন্তব্যও আমার ব্যক্তিগত, এবং সবাই যে এমন বোধ করবেন তাও নিশ্চয় নয়।
আমি সামনের পর্বগুলোর অপেক্ষায় আছি যেখানে টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্টগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বাহ! পড়ে তো আমার ভালই লাগলো।
কিন্তু আমার জিনিসটাকে একটু বেশি অপটিমিস্টিক মনে হয়েছে। যে দেশে ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের হার এখনো ১% ছাড়ায় নেই সেই দেশে... তবুও, আশা করতে দোষ কি।
হয়তো নাভিদ ভাইরা সরাসরি কিছু করলে কাজ হবে!
ন্যানোটেকনোলজী ন্যানো স্কেলের ব্যাপার হলেও এর ফেব্রিকেশন প্লান্টগুলো বিশাল হয় বলেই জানি! (আমার জানার ভুলও হতে পারে)। বাংলাদেশে এটার চর্চার জন্য কী ধরণের অবকাঠামো দরকার, এবং ব্যাবহারিক চ্যালেঞ্জসমূহ - নিয়ে আলোচনার জন্য লেখককে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ন্যানো বিষয়ে কিছু বলতে গেলে হার্ডকোর কারিগরী দিকটি আরও দুটি ব্যাপার খুব প্রসঙ্গতই এসে যায় - দৈনন্দিন জীবনের এপ্লিকেশনে এর প্রসপেক্ট কেমন এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সম্ভাবনাই বা কী। লেখকের আলোচনায় প্রথম বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে, গবেষণাগার থেকে ভোগ্যপণ্য - সবক্ষেত্রেই ন্যানোম্যাটেরিয়ালস, ন্যানোইলেক্ট্রনিক্স, ন্যানোমেডিসিন এর ক্রমাগত উত্থান ও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এখন দিবালোকের মতই স্পষ্ট। লেখায় চীন, কোরিয়া বা থাইল্যান্ডের উদাহরণে ন্যানোর অপার বাণিজ্যিক সম্ভাবনাই ফুটে উঠে। এখন প্রশ্ন হল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে লেখক যেভাবে আশার বাণী ব্যক্ত করলেন এবং ন্যানোকে শীঘ্র গ্রহণ করার যেই প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠলো লেখায়, তা কতটা যুক্তিযুক্ত। আমার মনে হয় স্বল্প পরিসরে পুরো ব্যাপারটি লেখায় উঠে আসার সুযোগ পায়নি; আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটার উপর খানিকটা আলোকপাত করছি, আশা রাখছি লেখক বিস্তারিত বলবেন।
খুব প্রথমেই যে ব্যাপারটি মাথায় খেলা করে তা হল দেশের প্রেক্ষাপটে ন্যানো একটি উচ্চাভিলাষী কনসেপ্ট (যা এর আগের কমেন্টগুলোতে এসেছে)। কারণ? - আমরা এখনও এত পিছিয়ে আছি টেকনিকাল দিকগুলোতে যে ন্যানোকে জায়গা করে দেয়ার মত স্ট্রাকচারে পৌঁছুতে অনেক অনেক সময় এবং অর্থ প্রয়োজন। খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে একটি নতুন প্রযুক্তিকে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে তা হল এর ব্যবসায়িক উপযোগিতা। ন্যানোটেকনলজির ভিন্ন ভিন্ন কিছু সেকটরের উপরে তাকিয়ে দেখি দেশের কনটেক্সটে এর ব্যবসায়িক উপযোগ কেমন হতে পারে -
১) ন্যানোইলেকট্রনিক্স, ন্যানোম্যাটেরিয়ালস
এই ফিল্ডের এপ্লিকেশন এখনও অনেকটাই গবেষণাগারে বন্দী। স্পিনট্রনিক্স থেকে মেম্রিস্টর, কার্বন ন্যানোটিউব থেকে গ্রাফিন - এদের সিংহভাগ অস্তিত্ব এখনও পিএইচডি থিসিসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্যাব্রিকেশন ফ্যাসিলিটিই নেই, সেখানে এসব নভেল ইলেক্ট্রনিক্সের উপর গবেষণা করা হয়তো একটু বেশী দুরাশা হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশেষ কোন সুবিধা আপাতত দেশীয় উদ্যোক্তারা পাবেন না।
২) ন্যানোমেডিসিন
দেশে ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই, কিন্তু প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের জন্য পরমুখাপেক্ষিতার দিন শেষ করতে ন্যানোমেডিসিন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মূল কারণ কঠিন রোগের প্রতিষেধক নয় (সেসব আবিষ্কারের দায়িত্ব উন্নত বিশ্বের উপর ছেড়ে দেয়া যায়), বরং প্রচলিত প্রতিষেধকের স্বল্পমূল্যের বিকল্প উদ্ভাবন। প্রাথমিক অবস্থায় প্রচুর পরিমাণের বিনিয়োগ দরকার, সত্য। কিন্তু ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে, লেখকের ভাষায় বললে "শেষ অঙ্কে প্রাপ্তির ভাগটাই বেশী" হয়ে দেখা দিবে।
৩) বিকল্প এনার্জি
লোডশেডিং-এ জর্জরিত বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রাখে ন্যানোর এই ফিল্ডটি। উদাহরণ হিসেবে লাইটের কথাই বলা যায়। গৃহীত তড়িৎশক্তির কেবল ক্ষুদ্র একটি অংশকেই কনভেনশনাল লাইট আলোকশক্তিতে রূপান্তর করতে পারে। অথচ ন্যানোটেকনলজির বদৌলতে প্রাপ্ত কোয়ান্টাম কেজ্ড এটম লাইট দিতে পারে তড়িৎশক্তির বিপুল সাশ্রয়। সৌরকোষের কথাও না বললে নয়; বড় মাত্রায় ন্যানো-সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে একই সাথে বিপুল পরিমাণের সূর্যশক্তিকে কাজেও লাগানো গেল, আবার প্রচলিত সৌরকোষের থেকেও তা হবে অনেক বেশি এফিশিয়েন্ট (যা কেবলমাত্র ৩০ ভাগ সৌরশক্তিকে তড়িতে রূপান্তরে সক্ষম)। এই খাতটি সম্ভবত সবথেকে বেশি সম্ভাবনা রাখে ব্যবসায়িকভাবে। ভেবে দেখুন ন্যানোসৌরশক্তিকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগের ফলাফল হল বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ, একই সাথে নতুন গ্রাহক সৃষ্টি।
সুতরাং উদ্যোক্তার চোখে দেখলে ন্যানো মোটেও অলাভজনক কোন খাত নয়; যদি সঠিক খাতে বিনিয়োগ করা যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া যায় (স্বভাবতই লাভের ব্যাপারটি বেশ সময়সাপেক্ষ)। লেখকের আশাবাদকে সাধুবাদ জানাই; বিশেষ করে তাঁর 'সরকার' নয়, বরং 'নতুন উদ্যোক্তা' দের উদ্দেশে আহ্বান জানানোকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কারণ ব্যাপারটিকে শুধু 'মানবকল্যান' নয়, 'ব্যবসায়িক' দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা প্রয়োজন। অবশ্যই সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করার কর্তৃত্ব শুধুই সরকারের হাতে। লেখকের সাথে আমিও আশাবাদী নতুন উদ্যোক্তাদের ন্যানো-খাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা সরকার খুব শীঘ্রই অনুভব করবেন।
[দুঃখিত এত বড় মন্তব্যের জন্য; ইংরেজির অতি মাত্রার ব্যবহার হয়ে থাকলেও]
এই মন্তব্যটা একটু সম্পাদনা করে আলাদা পোস্ট হিসেবে দেয়া উচিত ছিল। মূল পোস্টের চেয়ে এটিকে বেশী প্রাঞ্জল বলে মনে হয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাল লিখচ্ছেন। বিকল্প শক্তি খাতে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে লেখা খুঁজছি অনেকদিন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সেই বিতর্কের সময়ের মত-ই আপনার লেখাটা- মাথার উপ্রে দিয়ে গ্যালো
আরো লেখা আসুক, প্রত্যাশা রইলো।
স্যার,
আগে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ডাল ভাতের ব্যবস্থা করেন। তারপর আমরা নিয়ম মেনে রাশভারি নামের চারপাঁচ রকমের খাবার খেয়ে সভ্যতার পরিচয় দিতে পারব।
মানে, আমাদের দেশের কোন ভার্সিটিতেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ন বায়োলজি ল্যাব নেই। আমরা কিন্তু মাইক্রো পর্যন্ত গিয়েই সন্তষ্ট থাকি, ন্যানোতে যেতে চাইনা। যেখানে আমরা গত একশ বছরে মাইক্রো পর্যন্তও সাবলিল ভাবে পৌঁছাতে পারলাম না, সেখানে ন্যানোর স্বপ্ন দেখাটা নিতান্তই অবাস্তব মনে হচ্ছে।
_______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
এধরনের একটি লেখা আসলেই কঠিন একটি কাজ। সেই কাজে হাত দেয়ায় আপনাকে অভিনন্দন।
বাংলাদেশে ন্যানোপ্রযুক্তির বিকাশ বেশ সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। মূলত দক্ষ জনবলের অভাব, ফান্ডিংয়ের অপ্রতুলতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার পরিবেশ না থাকা, ইত্যাদি কারণে আমরা সবকিছুতেই পিছিয়ে আছি এবং পিছিয়ে পড়ি। পোষ্ট থেকে যে ধারণা পেলাম, লেখক যদি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন, তাহলে ভবিষ্যতে কিছু দিগনির্দেশনা দেবেন আশা করি, কীভাবে দেশে ন্যানোপ্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়া যায়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা আমরা উপলব্ধি করি না। এর সাথে ন্যানোকে যোগ করতে পারলে আমরা অগ্রগতির দিকেই যাবো বলে আমার বিশ্বাস।
বিষযটার সাথে পরিচিত বলেই কি না জানি না, লেখার ভাষায় কোনও সমস্যা হয় নাই। বাংলার ব্যবহারও অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার!
... ... তবে
আমি নিজেও ন্যানোর ঘোড়ে দীর্ঘদিন কাটানোর পরে অবশেষে সেটা থেকে বেড়িয়েও এসেছি। আপাততঃ ন্যানোমুখো আর হবার ইচ্ছে নাই। ন্যানো সংক্রান্ত কিছু ক্রেইজ মাত্র বছর তিনেক আগেও জ্বরের মতোন কাঁপাচ্ছিলো গোটা ইউরোপকে। এখন সেই বিষয়ে ফান্ডিং এর অবস্থা খুব ভালো না। মূল কারণ ঐটাই, বিষয়টা কোম্পানীগুলোকে অতোটা আর আলোড়িত করতে পারছে না।
মাস্টার্স-এ জার্মানীর বিখ্যাত বাতি নির্মাতা, OSRAM কোম্পানীর জন্য একটা ভালো গবেষণা করেছিলাম - ন্যানো ফসফর নিয়ে। পেপারও হলো। কিন্তু সেটা পরবর্তিতে আর কাজে লাগাতে দেখি না ওদেরকেও। কিছু গাড়ির হেডলাইটে হয়তো ব্যবহৃত হচ্ছে টুকটাক।
পি.এইচ. ডি. তে ন্যানোর নারাচাড়ার সুযোগ ছিলো, আমি ইচ্ছে করেই ধরি নাই এমনি্তেই চাকরী পাচ্ছি না!!
অনেক আজেবাজে কথা লিখে ফেললাম। মেজাজটা ভালো নাই ভাই। আপনার লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সচলে স্বাগতম!
এই পোস্টটা পড়ে দেখবেন সময় পেলে।
নতুন মন্তব্য করুন