আমীর খুসরৌ দেহেলভি একাধারে কবি,সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক।এই উপমহাদেশে আমির খাসরুর গজল নিজস্ব সাংস্কৃতিও ধারা তোইরি করেছে।উর্দু কবিতার ইতিহাসে আমীর খুসরৌ প্রথম গজল রচয়িতা। গালিব, আলতাফ হোসেন হালি, মীর তকি মীর — এঁরা সব অমর গজল-রচয়িতা। গজলের শেষে অনেক সময় কবি তাঁর নিজের নামের উল্লেখ করেন।
হজরত আমীর খসরু(১২৫৩ - ১৩২৫) রচিত অসামান্য হিন্দী একটি কাওয়ালি গেয়েছেন নুসরত ফতেহ আলি খান। রাগ খামাজ এর মুর্ছনায় লাইনগুলি মোটামুটি এইরকম,
আজ রঙ হ্যায় মা রঙ হ্যায়
মোরে মেহবুব কে ঘর রঙ হ্যায়
দেস ব দেস মে ঢুন্ড ফিরি হুঁ
পচ্চিম দিখা পুরব দিখা
তোরে জয়সা রং নাহি দিখা
মোহে আপনি হি রঙ দে রঙ খাজাজি
মোহে রঙ বাসন্তী রঙ দে খাজাজি
মোরে চুড়িয়োঁ কি লাজ খাজা রাখনা
মোরা যৌবন গিরবি রাখলে খাজাজি
নিজামুদ্দিন আউলিয়া জগ উঠিয়া
রস খুদা বরসে
লাল মহবুব বনা
সব সখীয়ন কে পাস
মোরা পিয়া কে মিলন কে জিয়ারা তরসে
রস খুদা বরসে
প্রেমের গান, অপেক্ষার গান। প্রেম ও ভক্তির এক ধরণের কাব্যিক এবং আধ্যাতিক যৌগ মিশ্রনে মানব মনকে উদ্ভাসিত করে তোলে।
কবি আমীর খসরু এবং কবি আমির হাসান এবং সুলতানি আমলের ঐতিহাসিক জিয়া আল-দিন বারানি তিনজনেই খাজা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (মৃত্যু ১৩২৫) র কাছে নিয়মিত যেতেন।
বাংলায় আসা সুফিদের সম্পর্কে কয়েকটা চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন ঐতিহাসিক রিচার্ড ইটন। তাঁর দ্য রাইজ অফ ইসলাম অ্যান্ড বেংগল ফ্রন্টিয়ার ১২০৪-১৩৭০ নামক গ্রন্থটিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ধর্মীয় ইতিহাসের মধ্যযুগ সম্পর্কে একটি আকর গ্রন্থ বলে ধরা হয়।
প্রথম তথ্যটি হল বাংলায় আসা সুফিদের সঙ্গে কামরুপের তান্ত্রিকদের যোগাযোগ। সুফিরা কামরুপ কালট সম্পর্কে এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, একটা সূত্র অনুযায়ী, বাংলায় টার্কিশ কনকোয়েস্টের প্রথম দশ বছরের মধ্যেই, সংস্কৃত থেকে 'অমৃতকুন্ড' নামক তান্ত্রিক যোগ সংক্রান্ত পুস্তকটিকে আরবি ও ফার্সী তে অনুদিত হয়। ইটন নিজে বলছেন যে এত তাড়াতাড়ি হয়তো অনুদিত হয় নি, কারণ অনুবাদকদের এরকম নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করাটা কঠিন, তবে পরবর্তী প্রায় পাঁচশো বছরে আরবি আর ফার্সি তে অমৃতকুন্ডের বহু আরবি আর ফার্সি অনুবাদ প্রচলিত ছিল। ইটন সূত্র হিসেবে পেশ করছেন তিনটি তথ্য। উত্তর ভারতের সুফি শেখ আব্দ আল কুদ্দুস গাংগোহি (মৃ ১৫৩৭) অমৃতকুন্ড অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়। সপ্তাদশ শতাব্দীর কাশমিরী গ্রন্থকার মুহসিন ফনি লিখছেন যে তিনি অমৃতকুন্ডের পার্সিয়ান অনুবাদ দেখেছেন। এবং সপ্তদশ শতাব্দীতেই আনতোলির সুফি পন্ডিত মুহম্মদ আল মিসরি (মৃ ১৬৯৪) জানাচ্ছেন যে অমৃতকুন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ এবং এও জানাচ্ছেন ভারতে যোগবিদ্যা সুফি চর্চায় কিছুটা মিশে গেছে।
দিল্লীর সুলতানী আমলের কবি আমীর খসরু তাঁর লেখা মসনবীতে তাঁর সময়ে প্রচলিত ভারতীয় ভাষাগুলির নাম উল্লেখ করেছেন৷ এগুলি হল সিন্ধী, লাহোরী, কাশ্মিরী, গুজরাটী, দেহলভী, গৌড়ী এবং বাংলা৷ সুলতানশাহীর আমলের প্রধান কবি আমীর খসরু (১২৫৩ থেকে ১৩২৫ খ্রীষ্টাব্দ) কেবল ফারসী ভাষাতেই নয় উর্দুতেও কবিতা লিখেছেন৷ এই নতুন ভাষাটিকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন 'হিন্দাবী' বলে৷"
আমীর খসরুর সময়ে জনসাধারণের দ্বারা ব্যবহৃত স্থানীয় ভাষাগুলি ছিল গাথার ভাষা ৷ এই ভাষাগুলির মধ্যে ব্রজবুলি বা 'ব্রজভাষা' গঙ্গা নদীর পশ্চিমে যমুনা উপত্যকায় ব্যবহৃত হতো ৷ এই ভাষাতেই কবীরের দোঁহা রচিত হয়৷ ভোজপুরী ভাষা গঙ্গা নদীর দক্ষিণের উপত্যকায় বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত, এবং অবধি ভাষা গঙ্গা নদীর উত্তর উপত্যকায় হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত কথিত হতো ৷
তারঁ একটি কবিতার বাংলা তরজমা এখানে দিলাম।তরজমাটি আমার করা।
তোমার চাদমুখ খানা ওই চাদেরি মত জ্বলে উঠুক
তোমার অন্তরের সুন্দর গুলো ধরা থাকুক
তোমার মোহ দিয়ে আমাকে হত্যা করেছো
কত চম্বকের মত আকর্ষন তোমার,খোদা তোমাকে অমর করুক
দোহায় লাগে লজ্জা না পেলে আমার প্রার্থনায় তুমি রুক্ষ হয়ো না;
তোমার প্রেমিক হিসাবে যেদিন বিচার করবার দিন আসবে
সেদিন আমি দুই জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হবো
তুমি যদি কিছুক্ষন সংগ দেবার জন্য আমার কাছে থাকো;
তোমার না চাওয়ার খেলাতে হয়তো কিছু ধ্বংস করে ফেলবে;
যেখানে হাজার হাজার প্রেমিক অপেক্ষা করছে,খুসরৌর মত।
মন্তব্য
পোস্টের কোথাও আপনার নামটি দেয়া উচিৎ ছিলো। অজ্ঞাত পরিচয়বাহী শুধু মাত্র অতিথি লেখকের ভীড়ে আপনার নাম বা পরিচয়টা ছেকে আনার কায়দা কি আছে ?
মীর তকী মীরের নাম যখন নিলেনই, তাহলে একটা হয়ে যাক্-
মূল:
দিলমে রাহো দিলমে,
কেহ্ মেমার এ কঁজাসে অবতক
এয়সা মতবু মকা কোই বনায়া নহ্ গয়া !
ভাষান্তর:
হৃদয়ের মধ্যে থেকো আমার হৃদয়ে,
কেননা এর চেয়ে মনোরম বাড়ি বিধাতা আজো তৈরি করেন নি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লেখাটা ভাল লাগল----
এই বিষয়ে সামনে আরো কিছু আসুক----
আর হ্যাঁ, নামটা দিলে ধন্যবাদটা একটু নির্দেশিত করে দেয়া যায়----
নতুন মন্তব্য করুন