একটা সাধারণ স্মৃতি

বইখাতা এর ছবি
লিখেছেন বইখাতা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০৭/২০০৯ - ১০:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি জানিনা আর কারো এমনটা হয় কিনা, হয়েছে কিনা ! মাঝে মাঝেই কয়েক বছর আগের একটা সন্ধ্যার স্মৃতি - একটা ছোট ঘটনা - একটা দৃশ্য, আমি চাই বা না চাই, আমার মনের পর্দায় হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে। যেন আবার নতুন করে দৃশ্যটা অভিনীত হয়ে যায় আমার চোখের সামনে। আর প্রতিবারই আমি নতুন করে দুঃখবোধে আক্রান্ত হই, একটা আফসোস জাগে মনে। অথচ এটা খুব ছোট, সাধারণ, বলার-মত-কিছু-না ধরণের একটা ঘটনা। এর চেয়ে কত দুঃখজনক ঘটনা আমি দেখেছি, শুনেছি ! কিন্তু আর কোন ঘটনা, দৃশ্য এমনভাবে আমার কাছে ফিরে ফিরে আসে না ! আমার মন কেন যে আমাকে ওই সামান্য ঘটনাটাই ভুলতে দেয় না আমি জানিনা ।

৪ বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধু এম. বি. এ. এর ভর্তি পরীক্ষা দেবে। ভাল কথা। দিক। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে, ওর ইচ্ছা আমিও ওর সাথে পরীক্ষা দেব। আমার তখন খুব খারাপ অবস্থা। অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট হয়েছে, এর সাথেসাথেই একটা চাকরিতে ঢুকেছি। নতুন বলে আমার ওপর দিয়ে অনেক চাপ যাচ্ছে। মোটামুাট স্থির করেছি যে, নিজের বিষয়েই মাষ্টার্স করবো। সেইমত ভর্তিও হয়েছি। ক্লাসও শুরু করেছি। সারাদিন, এমনকি রাতেও রীতিমত দৌড়ের উপর থাকি। এই অবস্থায় আবার এম. বি. এ. ! অসম্ভব ! কিন্তু বন্ধু প্রতিদিন আমার কানের কাছে এম. বি. এ.- র সুফল বয়ানে ব্যস্ত। আমার এসব শুনতে মোটেও ভাল লাগছে না। তখন আমি ক্লাসে, পরীক্ষায় ঠিকমত হাজিরা দিতে গিয়ে অফিসে বসের ঝাড়ি খাচ্ছি, আবার অফিসের কাজ ঠিকমত করতে গিয়ে ক্লাসে হাজিরা দিতে দেরি হওয়ায় স্যারের ঝাড়ি খাচ্ছি। এই দুইয়ের চাপে একদম জেরবার অবস্থা। বন্ধুর কথা এককান দিয়ে শুনে বিন্দুমাত্র দেরি না করে আরেক কান দিয়ে বের করে দিই।

তারপরও বন্ধুর জোরাজুরিতে ভর্তি-ফরম কিনলাম। পরীক্ষা দিই আর না দিই প্রিয় বন্ধুটাকে তো শান্ত করা যাবে ! যথাসময়ে আসন-বিন্যাসও টানিয়ে দেয়া হলো। গিয়ে দেখে আসতে হবে। বন্ধু তখন কী একটা কাজে ব্যস্ত। তার সময় নাই। তাই আমাকেই যেতে হবে পরীক্ষার আসনবিন্যাস দেখতে। আমারতো এমনিতেই পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছা নাই, তেমন সময়ও পাই না সারাদিন। তাই যাবো-যাচ্ছি করে আর যাওয়া হয় না। শেষে গেলাম একসময়। সমস্যাটা হলো, কলাভবন আর কমার্স ফ্যাকাল্টির ঐ দিকটায় আমার তেমন যাওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আমি ছিলাম খুবই অলস ধরণের মানুষ। এমনিতেই কলাস-ট্লাস শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত। ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে দেখতাম সূর্য ততক্ষণে তার বাড়ির দিকে হাঁটা ধরেছে। আকাশ লাল। ক্লাস শেষ করে বা ক্লাসের ফাঁকে বা কলাস না হলে সেই অবসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে টো টো করে না ঘুরে ডিপার্টমেন্টের সামনে বা কাছে কোথাও থেবড়ে বসে আড্ডা দিতেই বেশি ভালো লাগতো। তাই কার্জন হল আর দোয়েল চত্বর সংলগ্ন অতি নিকটবর্তী কিছু এলাকা আর বড়জোর টি.এস.সি পর্যন্তই ছিল আমার দৌড়। তখন পর্যন্ত আই. বি. এ. তে গেছি মাত্র দুইবার। তো এইরকম যখন আমার অবস্থা তখন কেউ যদি আমাকে কলা অনুষদ বা কমার্স ফ্যাকাল্টির কোন নির্দিষ্ট জায়গায়, কোন নির্দিষ্ট রুমের সামনে যেতে বলে, তাহলে আমি ”ব্যাপার না ” বলে সাথে সাথে গিয়ে হাজির হব, এটা সম্ভব ছিলো না। আমাকে যেতে হবে খুঁজে খুঁজে, কখনো কখনো একে ওকে জিজ্ঞেস করে। (ব্যাপারটা লজ্জার, আমি মানি)। আমার নিজের কাছেও এটা ভালো লাগতো না। তারপরও বাধ্য হয়ে রওনা হলাম একদিন। একসময় পৌঁছেও গেলাম আসনবিন্যাসের সামনে।

মাসটা ছিল খুব সম্ভবত ডিসেম্বর। শীত পড়েছে। আমি যখন গেছি তখন বিকাল শেষপ্রায়। আমার আর বন্ধুর আসন কোথায় পড়েছে দেখে নিলাম। আরও ৫/৬ জন মানুষ ছিল ওইখানেই, আসনবিন্যাস দেখতে এসেছিল ওরাও। আমার দেখা শেষ। চলে যেতেই পারি। কিন্তু ওই যে ৫/৬ জন ছিল, ওদের কথা-বার্তা শুনতে ভালই লাগছিল। আন্দাজ করতে চেষ্টা করছিলাম কে কী করে। তাই চোখ টানানো তালিকার দিকে রেখে, আসনবিস্যাস নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন এইরকম একটা ভাব নিয়ে সবার কথা শুনছিলাম। একসময় মনে হলো, ফেরা দরকার। কারণ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।

আমার মনে হয়, সন্ধ্যা আর রাতের মধ্যবর্তী একটা সময় আছে। সন্ধ্যায়ও একটা চাপা আলো থাকে চারদিকে। কিন্তু একটা সময়ে একেবারে হুট করেই রাত নেমে আসে। আকাশ হয়ে যায় ঘন কালো। মনে হয় যেন এক মূহুর্তের মধ্যে কেউ রাবার দিয়ে চাপা আলোটা মুছে নিল। তখন ওই সময়টা আসি আসি করছে। বাতাস বইছিল হালকা। ঠান্ডা বাতাস। আমি রাস্তায় হাঁটছি। ফিরে আসছি। রাস্তায় আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না তখন। আমার সাথে যে ৫/৬ জন আসনবিন্যাস দেখছির, তারা হয়তো বের হয়েছিল আরো পরে অথবা অন্য কোনো পথ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আমি জানিনা। আমি কিছুটা হেঁটেছি। ওইসময তাকে দেখলাম।
এক বৃদ্ধা মহিলা। বৃদ্ধা ভিখারিণী বলা ভালো। অথবা সে হয়তো ভিখারিণী না। শুধু ওই দিনই নেমেছিল রাস্তায়। আমি জানিনা। বৃদ্ধা একদম ছোটোখাটো। ময়লা শাড়ি। খালি পা। মুখের চামড়ায় কুঞ্চন - যেমনটা হয় বৃদ্ধ হলে। কাঁধ পর্যন্ত জড়ানো-পাকানো ময়লাটে সাদা চুল। আমি কিন্তু তাকে সময় নিয়ে খুঁটিয়ে দেখিনি। পুরো ব্যাপারটা ছিল কয়েক সেকেন্ডের। কিন্তু এর পরে আরো অনেকবার দৃশ্যটা আমাকে দেখতে হয়েছে, মনে মনে। তখন হয়তো কিছু জিনিস আমি নিজেই আরোপ করে নিয়েছি।
তার চাওয়ার ভঙ্গিঁ ছিল একটু অন্যরকম। আমি এইভাবে কোন ভিখারীকে কখনো চাইতে দেখিনি। রাস্তার পাশে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে শাড়ির আাঁচল ধরে, আঁচলসহ হাত দুইটা সামনে মেলে ধরে কেমন একটা হাহাকার করার মত সুরে সে ডাকছিল, ”কিছু দিয়া যা বাবা। ও বাবা, কিছু দিয়া যা।” সে কী ”বাবা” বলেই ডেকেছিল নাকি অন্য কিছু বলেছিল সেটাও পরিষ্কার মনে নেই। কিন্তু ঘটনাটা মনে পড়লে আমার এই ডাকটাই মনে পড়ে। কিছুটা যেন দুলছিলও সে। এমন ভাবে ডাকছিল যেন বড় ধরণের দুর্ভাগ্যজনক কিছু একটা হয়েছে। খুব আকুতি ছিল তার গলায়। দেখে এবং শুনে খুব মায়া লাগলো আমার। ভাবলাম কিছু টাকা দিয়ে যাই। আমার গায়ে ছিল ওই শীতেই কেনা একটা শাল। ভাবলাম, বেচারী এই শীতের রাতে, ঠান্ডা বাতাসের সাথে শুধু একটা পাতলা শাড়ি গায়ে কী ভাবে যুদ্ধ করবে ! আমার তো আরো শীতের কাপড় আছে। এটা দিয়ে দিই। আসলে আমি কিন্তু এইরকম ভালো না। কিন্তু, ওই পরিবেশ, নির্জনসন্ধ্যা, বৃদ্ধার আর্ত সুর সবকিছু মিলে রাস্তায় একা আমার মনে এইরকম একটা ভাবনা নিয়ে এসেছিল। আমি এগিয়ে যাবো বৃদ্ধার দিকে, ঠিক ওইসময় দেখলাম, কেউ একজন আসছে এদিকেই, রাস্তার উল্টাদিক থেকে। সাথে সাথে আমি জানিনা কেন একরাশ সংকোচ আমার পা আটকে ধরলো, এগিয়ে আসা ছেলেটার সামনে নিজের গায়ের শাল খুলে বৃদ্ধ ভিখারিণীকে দেব, এটা কেন জানি ভাবতে পারলাম না ! কী খারাপ আমি। আমি অপেক্ষা করতে পারতাম ছেলেটা আমাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য, অথবা কিছু টাকা দিয়ে যেতে পারতাম। কিছুই না করে, বৃদ্ধার আকুতিকে অবহেলা করে চলে এলাম ওই জায়গা ছেড়ে।

এরপর ১ দিন গেল। কিছুই হলো না। এটা নিয়ে বন্ধুকে বা অন্য কাউকে কিছু বলিনি। ডায়েরীতেও কিছু লিখে রাখিনি। বোধহয় আমার মন বিষয়টা এড়াতে চাইছিলো। তার পরদিন, কী করছিলাম ঠিক মনে নেই, হঠাৎ করে আমার ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। যেন পুরো দৃশ্যটা আমি আমার চোখের সামনে অভিনীত হয়ে যেতে দেখলাম। আর আমার বুকের ভেতরে যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। আহারে, বৃদ্ধাকে কী কেউ সাহায্য করেছিল ! কেউ কী একটা টাকাও দিয়েছিল ! বৃদ্ধা কী রাতে খাবার কিনতে পেরেছিল ! বৃদ্ধার কী ছেলে-মেয়ে নাই ! ওরা কী তাকে খেতে দেয় না ! বৃদ্ধার কী থাকার/ঘুমানোর জায়গা আছে ! শীতের রাতে ওই পাতলা শাড়িতে, হয়তো না খেতে পেয়ে না জানি কত কষ্ট পেয়েছে বৃদ্ধ মানুষটা ! আমি কেন তাকে কিছু দিলাম না ! খুব আফসোস, অনুশোচনা হতে লাগলো। মনে হচ্ছিল তখুনি ছুটে যাই, গিয়ে খুঁজি, পেলে কিছু দিয়ে আসবো। তবে এসব কিছুই আমি করলাম না। ডুবে গেলাম নিজের দৈনন্দিন ব্যস্তাতায়।

এরপর আরও গিয়েছি ওইদিকে। কিন্তু ওই বৃদ্ধাকে আর দেখিনি। না দেখলেও স্মৃতিটা আমার পিছু ছাড়েনি। যখন তখন, অল্প সময় পর বা অনেক দিন পর পর, খাওযা, কাজ, আড্ডা, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করার সময় বা যেকোনো সময় হঠাৎ করে ঘটনাটা আমার মনে পড়ে যায়। এর কী কোন ব্যাখ্যা আছে ? আমি জানিনা। নিজেকে অনেকবার বুঝিয়েছি আমি, অনেকভাবে বুঝিয়েছি। কিন্তু স্মৃতিটা বারবার ফিরে ফিরে আসে আমার জন্য আফসোস আর দুঃখবোধ নিয়ে। পুরো দৃশ্যটা আমি আবার দেখি।
শীতের সন্ধ্যা। রাস্তা নির্জন। বৃদ্ধা দুইহাত বাড়িয়ে শাড়ির আঁচল পেতে ধরে আকুল সুরে চেয়ে যাচ্ছে, আর আমি নিষ্ঠুর, হৃদয়হীনের মত তার ডাকে পাত্তা না দিয়ে চলে যাচ্ছি, বৃদ্ধাকে একাকী তার দুর্দশার মধ্যে ফেলে রেখে। কিছুক্ষণের জন্য আমি যেন বর্তমান সময় থেকে বিযুক্ত হয়ে যাই, কষ্ট পাই, অনুশোচনা হয়, আনমনা হয়ে যাই, তারপর আবার ফিরে আসি বর্তমানে।
আমার অবাক লাগে যে, এত এত ব্যক্তিগত দুঃখ আর ভুলের ঘটনা ফেলে কেন এই ঘটনাটাই, কয়েক সেকেন্ডের দৃশ্যটাই আমি ভুলতে পারি না ! বার বার দেখি ! বার বার দেখবোও ! তবে এপর থেকে আর কখনও কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রাস্তায় আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি উপেক্ষা করতে পারিনি।

আজকে কিছু জরুরী কাজ থাকা সত্বেও সেগুলির একটাও করতে ইচ্ছা করছে না বিধায় য়খন বিভিন্ন সাইটে ঘোরাঘুরি করে, একসময় সচলায়তন খুলে কোনটা পড়ি ভাবছিলাম, তখন হঠাৎ করেই দৃশ্যটা আমি আবার দেখলাম। ভালো লাগছিল না। ঠিকমত কিছু ভাবার আগেই, লিখবো কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবার আগেই ঘটনাটা লিখে ফেললাম। খুব সাধারণ ঘটনা, বলার মত, লেখার মত না, তবুও লিখে ফেললাম। এই লেখাটা যদি কেউ পড়েন, নিশ্চয়ই আমাকে মনে মনে বকাবকি করবেন। এটা একধরণের প্রায়শ্চিত্ত ভেবেই হয়তো আমি লিখে ফেলেছি। আমি নিজেও ঠিক জানিনা। হয়তো একটু পরেই ভাববো কেন লিখলাম ! ঠিক করিনি কাজটা !
লিখতে গিয়ে অনেক অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, এলোমেলো কথা লিখে ফেলেছি। হয়তো লেখাতেও আমি সেই ঘটনার মুখোমুখি হতে চাইছিলাম না বলেই এমনটা হয়েছে। নিজের মনের খবর নিজেই কী সবসময় ভালো করে জানি !

পৃথিবীর সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সুস্থ থাকুন, শান্তিতে থাকুন, ভালো থাকুন - এই প্রার্থনা আমার।

বইখাতা
০৯/০৭/০৯


মন্তব্য

সাদা-মডু এর ছবি

অতিথিদের কোনো লেখা প্রথমে মডারেশন কিউতে জমা হয়, সাথে সাথে প্রকাশিত হয় না। তাই দয়া করে ধৈর্য ধরুন, এক লেখা পর পর দুইবার পোস্ট করবেন না। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

দূঃখিত।
তবে আমি কিন্তুু অধৈর্য হয়ে দুইবার পোস্ট করিনি। প্রথমবার ”সংরক্ষণ করুন" এ ক্লিক করার সাথে সাথেই আমি সংযোগবিহীন হয়ে গিয়েছিলাম নেট থেকে। তাই লেখাটি যায়নি ভেবে, সংযোগ আসার পর ১/২ লাইন যোগ করে আবার ক্লিক করেছি।
যাইহোক, আমি আবারও দুঃখিত আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য।

বইখাতা

প্রজাপতি [অতিথি] এর ছবি

আপনি অনেক মায়া নিয়ে লেখাটা লিখেছেন , পড়ে কিছু সময়ের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কী বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা। শুধু বলি, ভালো থাকুন। আপনার ভেতরে যে অসাধারণ মানবতাবোধ আছে তা এক সময় নিশ্চয়ই মানুষের জন্য অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারবে। এই দিনের স্মৃতি হয়তো মুছে যাবে না, তবে মনে করার মত আনন্দের অনেক স্মৃতিও তখন থাকবে।

পোস্টে পাঁচ তারা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নিবিড় এর ছবি

আমি ঠিক নিশ্চিত নই তবে এখনও একজন বৃদ্ধা কলা ভবন আর আইবিএর কোণায় মাঝে মাঝে দেখা যায় সন্ধ্যার সময়। সম্ভবত শেষ দেখেছি চার বা পাচঁ মাস আগে।

আপনার লেখার হাত ভাল। তাই লিখে যান আমার মত পাঠকদের জন্য চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রিয় বইখাতা,

আপনার অনুভূতিটুকু ছুঁয়ে গেল। শুধু জানবেন এরকম অপরাধবোধ আপনার মতো অনেকেরই হয়। তবুও সামনে এগিয়ে এসে যারা এসব মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তারা অবশ্যই মহানুভব।

আপনার লেখা খুবই সুন্দর, গোছানো। এক কথায় চমৎকার। আশা করি সচলায়তনে নিয়মিত লিখে আমাদের আনন্দ দান করবেন। আবারো ধন্যবাদ দেই সুন্দর একটা লেখার জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে আমার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

একদিন কলেজে যাওয়ার জন্য বাইরে বেরিয় রিকশা নিলাম।কিনতু কিছুটা পথ যাওয়ার পর দেখি রিকশাওয়ালার এক পা নেই।কলেজে গিয়ে রিকশা থেকে নেমে ওনাকে আমার ভাংতি নেই এটা বলে মাত্র ৫টা টাকা বেশি দিয়েছি।আমার খুব ইচ্ছে করছিল আরো কিছু টাকা বেশি দিতে কিনতু উনি আবার কি মনে করেন তাই ভেবে দিতে পারিনি।পরে ভাবলাম দিয়ে দেখলেই বা কি হত যদি উনি নিতেন।

আপনার ঘটনাটা থেকে আমারটা যদিও অন্যরকম তবুও আমার কষ্ট হয়।

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

হুম, মাঝেমাঝেই কিছু কিছু অপরাধবোধ কষ্ট দেয়।
ধন্যবাদ লেখাটা পাঠ করার জন্য।

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার এই সামান্য অনুভুতি নিয়ে লেখাটি পাঠ করার জন্য এবং মূল্যবান মন্তব্য রাখার জন্য। কেন জানিনা এখন লজ্জা লাগছে !

প্রজাপতি - অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব - অনেক ধন্যবাদ। জানিনা কতটুকু মানবতাবোধ আছে আমার। কতকিছুই তো করতে পারিনা উদ্যোগের অভাবে, ব্যস্ততায়, অলসতায়, ভীরুতায় অথবা সাধ্য নাই বলে।

নিবিড় - অনেক ধন্যবাদ। তাই নাকি ! বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই না বহুদিন। যেতে হবে। আর লজ্জা দেবেন না, আপনি তো অনেক ভাল লেখেন।

নজরুল ইসলাম - অনেক ধন্যবাদ

প্রকৃতিপ্রেমিক - অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মুশকিল। ভীষণ মুশকিল।
আপনার মতো বয়সে মাঝে মাঝেই আমি রাতেরবেলা চুপচাপ কেঁদে বালিশ ভেজাতাম নানা মানুষের কষ্টের কথা ভেবে। টিউশনির টাকা, পেপারে লিখে আয় করতাম কিছু, অনায়াসে দিয়ে দিতাম কতকিছু মানুষকে।
এই বিবেকবোধটা মরে গেছে। আমিই মেরেছি। অথবা ঢেকে রেখেছি। এই বালকসত্তা কাউকে দেখাতে চাই না। কেন চাই না, এই উত্তর পেয়ে যাবেন আপনিও, বছর পাঁচ-দশের মধ্যেই।
রিকশাঅলাদের এখনো বাড়িয়ে টাকা দেই। বেশ ভালো পরিমাণে দেই। গোঁয়ার, অভদ্র, ফক্কড় সে যাই হোক না কেন। লোকটা গায়ে খেটে রোজগার করছে। ভিক্ষার ধান্দাবাজি করছে না। সে অভদ্র, কারণ ভদ্র হওয়ার শিক্ষা সে কখনো পায় নি।
দিনশেষে সে বাড়ি ফিরে যাবে। একটা শিশু দৌড়ে এসে তার কোলে উঠবে। বস্তির সবচে ঝগড়াটে মেয়ে তার বৌটা একটু হলেও মায়াবি চোখ মেলে তাকাবে। ঐ মানুষটাকেই আমি টাকা দেই। আমার মতোই মানুষ। আমার একটু বেশি আছে, ওর কম।
থাক এসব কথা। ভালো থাকুন।
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

জানি, বাস্তব বড় কঠিন। জানিনা আর ৫/১০ বছর পর আমার ভাবনা-চিন্তাগুলি কেমন হবে ! একটু একটু ভয় করে।
রিকশাওয়ালাদের বেশি ভাড়া দেয়ার ব্যাপারটা আমার মধ্যেও আছে। মাঝে মাঝে অবশ্য খুব মেজাজ খারাপ হয় বিভিন্ন কারণে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়াই লাগে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কী পরিশ্রমটাই না ওরা করে সারাদিন !

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

রিকশাঅলাদের মতো জাত আর সারা দুনিয়ায় কোথাও পাবেন না। কী সীমাহীন শারীরিক পরিশ্রমের কী অকল্পনীয় স্বল্পমূল্য!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার অনুভূতি নাড়া দিয়ে গেলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। হঠাৎ করেই লিখে ফেলেছিলাম অনেকদিন আগের এই ঘটনাটা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আবার বলি, আপনার লেখার হাত চমৎকার!
নিয়মিত লিখুন...
____________
অল্পকথা গল্পকথা

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
সত্যি বলতে কী, আমি আশাই করিনি আমার লেখা কেউ ভালো বলবে। কারণ আমার নিজের লেখা (যদিও মাত্র দুইটা গল্প লেখার চেষ্টা করেছি) নিজেরি ভালো লাগেনা। মনে হয়, কিছুই হয়নি।

অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।

রেনেট এর ছবি

একসাথে অনেককিছু মনে করিয়ে দিলেন। নিয়মিত লেখা পাবার আশা করছি।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

তাই !
অনেক ধন্যবাদ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনার মনের দহন (বানানটা নিয়ে সন্দিহান)টুকু বুঝতে পারছি। হয়তো একই পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিলো বলেই, একবার, কয়েকবার, বারবার। এই যাতনা থেকে সহসা পরিত্রাণ পাবেন না, এইটুকু বলতে পারি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

বইখাতা [অতিথি] এর ছবি

হুম, ঠিকই বলেছেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।