http://www.sachalayatan.com/guest_writer/25702
জিসানের কখনই চিন্তা করার বিষয়বস্তু খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি। গাছের যেমন একের পর এক শাখা-প্রশাখা গজাতে থাকে ঠিক তেমনি ওর চিন্তাগুলো সব সময় বিস্তার লাভ করে। এক চিন্তা থেকে হাজারো চিন্তা জন্ম নেয়। ও যদি ঘুম নিয়ে চিন্তা করে সেক্ষেত্রে দেখা যায় ঘুমের সাথে সম্পর্কিত সববিষয় ধীরে ধীরে ওর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে ওর চিন্তাধারা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তেই থাকে। এত এত চিন্তার মাঝে ওর কোন চিন্তাই কখনো কোন ফল বয়ে আনে না। তবুও জিসান চিন্তা করে যায় অবারিত মুক্ত মন নিয়ে।
নীরব শ্রোতা হিসেবে জিসানের আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা। কেউ ওকে কোন কথা (সেটা সমস্যা বিষয়ক হোক বা অন্যকিছু) বলতে চাইলে যত লম্বা লেকচারই হোক না কেন অসীম ধৈর্য্যের সাথে শুনে যায়। সামান্য হু-হ্যাঁ ও বলে না। এর ফলে জিসানকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সহপাঠী থেকে শুরু করে পারিবারিক আত্মীয়-স্বজন সবাই তাদের যাবতীয় লেকচার ওকে শোনাবার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। হবেই বা না কেন? এমন আদর্শ শ্রোতা খুঁজে পাওয়াটাইতো মুশকিল।
ক্ষুদ্র পোকা-মাকড়গুলো যেমন বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার জন্য আশ্চর্য সব কৌশল অবলম্বন করে ঠিক তেমনি জিসানও বিরক্তিকর বক্তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটা কৌশল অবলম্বন করে। কেউ যদি জিসানের কানের কাছে বকবক করে সেক্ষেত্রে জিসান মনটাকে একেবারে খালি করে ফেলে। তখন ওর মনেহয় ওর আশে-পাশে কেউ নেই, সম্পূর্ণ একা। সময় যেন থমকে থাকে সে সময়। এরপর নিজের চিন্তাগুলোকে নিয়ে চিন্তাধারা বয়ে যায় ওর মনে। ওর কানের কাছে কে কি বলছে তার কিছুই তার মস্তিস্ক পর্যন্ত পৌছায় না। তবে আজ ওর কেন যেন কোন কৌশল অবলম্বন করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নীলা প্রতিদিন ওর কানের কাছে বকবক করে কিন্তু কখনই জিসান ওর কথা মন দিয়ে শোনেনি। আজ শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
নীলা জিসানের সহপাঠী। খুবই ছটফটে স্বভাবের একটি মেয়ে। সারাক্ষণ কথা বলে। ওর কথা বলার বিষয় সর্বদা একটাই। রাস্তায় কোন ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়েছে, কোন ছেলে কি বলেছে, কোন ছেলের হাসি সুন্দর, কোন ছেলে হ্যান্ডসাম ইত্যাদি ইত্যাদি। নীলার কথা বলার বিষয় নিয়ে সবাই বিরক্তবোধ করে। তাই ওকে দেখা মাত্রই সবার চেহারা "ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি" টাইপের হয়ে যায়। অনেকের আবার ভাব-ভঙ্গি "ছেড়ে দে মা, বেঁচে কাঁদি" ধরণেরও হয়। নীলার কথা শুনে সবাই বিভ্রান্ত হয়। কখনও মনেহয় গোটা পুরুষ জাতির প্রতি ওর যত ঘৃণা। আবার কখনও মনেহয় সুন্দর হ্যান্ডসাম কেউ ওকে সুন্দর বললে অনেক খুশি হয়। তাই ও কলেজের বন্ধ-বান্ধব সবার কাছে এক রহস্য। যদিও প্রকাশ্যে এটা কেউ স্বীকার করে না। সবাই নীলাকে আপদ মনে করে। সারাক্ষন মুখে খই ফুটে তাই সবাই ওকে 'খই কুমারী' বলে ডাকে।
রাহাত নামে একটি ছেলে নীলাকে অনেক পছন্দ করত। কিন্তু বেচারার এমন হাল হয়েছে যে জীবনে আর কোন মেয়ের প্রেমে পরবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নীলার অতিকথন প্রথম দিকে রাহাতের অনেক ভাল লাগত। কিন্তু একটা পর্যায়ে সে এতই বিরক্ত হয়েছিল যে নীলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু নীলা নাছোড়বান্দার মত রাহাতের বাসার ঠিকানা যোগাড় করে সেখানেও গিয়ে হাজির হয়েছিল। অনেকই মনেকরেছিল নীলা রাহাতের প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে নীলার কথা রাহাতের মত মনযোগ দিয়ে আর কেউই শুনত না। রাহাতের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে নীলা কথার স্টীমরোলার জিসানের উপর চালানো শুরু করল। জিসানের চাইতে আদর্শ শ্রোতা আর কেই বা হতে পারে?
চলবে..........
নিবন্ধন নাম - মেঘলা জীবন
ইমেইল -
মন্তব্য
- এই পর্বে গেলো 'নীলা কাহিনী'। পরের পর্বে...?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নারে ভাই আপনি যেটা ভাবছেন তা হবে না। প্রেম-পিরীতি জিসানরে দিয়াও হবে না নীলরে দিয়াতো হবেই না
- হা হা হা
আমি প্রেম পিরীতি টাইপের কিছু ভাবি নাই তো, ঈমানে কই। বললাম এই পর্বে নীলার গল্প হলো, পরের পর্বে কার গল্প হবে? যেমন আগের পর্বে হয়েছিলো মামা পর্ব!
লেখার দৈর্ঘ্য বাড়ালে মনে হয় মন্দ হবে না। চালিয়ে যান।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দুই অংশ একসাথে পড়লাম। প্রতি পর্ব আরেকটু বড় হলে মনে হয় ভাল হত তবে লেখা ভাল লেগেছে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ
ভাল হচ্ছে। চলুক...আগামী পর্বগুলো আরেকটু লম্বা হবে আশা করি।
--------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
নতুন মন্তব্য করুন