ভালোবাসা কী? প্রেম কী?
আমি জানি না। "জানি না" সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে গাঢ় ও নিখুত উত্তর। (সক্রেটিস তার জীবনে সবচেয়ে বেশি বলেছেন- আমি জানি না) জানা সম্ভবও না হয়ত, তবে জানতে গিয়েই বিপ্লব, জানতে গিয়েই বদলে গেল জীবন।
মানুষের চিরায়িত এক অদৃশ্য পাকস্থলী হল ভালোবাসার গুদামঘর। সেই পাকস্থলীতে ক্ষুদা জাগে, তৃষ্ণা জাগে। মন আর শরীরের ক্ষুধা মেটানোর টাটকা শাক সবজি হল ভালোবাসা। রোমান্টিক, আবেগগত, ধর্মীয়, রুপ-লাবন্য কেন্দ্রিক, সম্পর্ক সাপেক্ষ, আগ্রহগত কত বহরের ভালোবাসা, কত প্রকারের টান। মনে যে পোষা বৃক্ষটাকে পেলে পুষে বড় করছি তাকে কতটুকু বুঝতে পেরেছি(!)
গ্রিক মিথোলজী অনুযায়ী ভালোবাসার দেবতা ইরোস আর রোমান মিথ অনুযায়ী কিউপিড। বেশির ভাগ ধর্ম আবার কিছুটা স্বার্থপর হয়ে বলছে ভালোবাসার প্রবাহ থাকুক ঈশ্বর কেন্দ্রিক, যদিও হিন্দু ধর্ম কামাদেভা'কে যৌনতার দেবতা মনে করে। এটা একটা আদি কনফিউশন, অনেকেই ভালোবাসা আর যৌনতাকে এক করে দেখেন, অনেকে দুইটাকে ভিন্ন মনে করেন। তবে পন্ডিতদের ধারনা মতে ভালোবাসা একটা বিরাট প্রতিষ্ঠান, যৌনতা তার একটা ফ্যাকাল্টি মাত্র।
সক্রেটিস তার শিক্ষিকা ডায়োটিমা দ্বারা প্রচন্ড প্রভাবিত ছিলেন, ডায়োটিমার কাছ থেকেই তিনি গ্রিক ভালোবাসার দেবী সম্পর্কে জেনেছেন। যদিও ইতিহাসের সুচিপত্র ঘাটলে সক্রেটিসের কাছে পৌছানোর সরাসরি কোন মাধ্যম নেই, কেবল প্লেটোর সিম্পোসিয়াম থেকেই তার সম্পর্কে জানা যায়। সক্রেটিস-ডায়োটিমা তত্ত্বকে চাষ করে প্লেটো যে মতবাদ দিয়েছেন যা বর্তমানে 'প্লেটোনিক লাভ' বলে পরিচিত। এ মতবাদ মোতাবেক প্রতিটা মানুষই শারীরিকভাবে ও মানুষিকভাবে গর্ভ ধারন করে এবং এটাকে জন্ম দান করতে চায় একটি সুন্দর ও সাবলীল মাধ্যমে। প্লেটোর সিম্পোজিয়ামে ভালোবাসাকে জন্মদান হিসেবেই দেখানো হয়েছে। এখানে ভালোবাসাকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ দেখানো হয়েছে। ভালোবাসা শুধুমাত্র ভালোর জন্য, ভালোকে পাওয়ার জন্য এমনটাই লক্ষ্যনীয় এ মতবাদে। এখানে আরো বলা হয়েছে জ্ঞানের প্রতি প্রবল আকর্ষন হল ভালোবাসা। এধারনাটা আরো দৃঢতা পেয়েছে সমসাময়িক আলসেবিয়াডসের সক্রেটিসের মেধার প্রতি পরম আকর্ষনের ঘটনার মাধ্যমে। একজন পুরুষের প্রতি আরেকজন পুরুষের প্রবল আকর্ষন যে সমকামীতে নয় সেই ধারনার খুব সম্ভবত সেখান থেকে সুত্রপাত।
যারা বদলে দিলেন ভালোবাসার ধারনাঃ
সিলভিয়া প্ল্যাথ-
এক দূর্দান্ত ও অনবদ্য আমেরিকান কবি, ঔপন্যাসিক ও শিশুসাহিত্যিক। তার স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ কবিরাজ টেড হাগজ। টেডের প্রতি তার দূরন্ত ও বাধভাঙ্গা ভালোবাসাই তার সকল অনবদ্য সাহিত্যের মূল অনুপ্রেরণা। টেড কে নিয়ে তার অসংখ্য লেখা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো-
” I lust him, and in my mind am ripped to bits of words he welds and wields"
টেডের মেধা ও তার বিচক্ষনতা তাকে মুগ্ধ করত, দুটি লেখক মনের এমন ভালোবাসার ইতিহাস বেশ বিরল। সিলভিয়ার ধারনা মতে টেডের চিন্তার গভীরতা তাকে পূর্ণতা দান করত। সেই থেকে তাদের মধ্যে চঞ্চল আকর্ষন কাজ করত। তারা পরষ্পর থেকে ভাবনার চাহিদা মেটাতেন। এ সম্পর্কে তার এক পরিচিত লোক (যদিও সিলভিয়ার সাথে তার শত্রুতা ছিল) বলেছেন,
‘nobody could have come anywhere near a relationship with Ted that compared with what was between the two of them. Their working symbiosis (মিথোজীবিতা) was a generic “marriage of true minds”, a one-off (মাত্র একবার) confluence (মোহনা) that he prized above everything apart from his own writing.’
পরবর্তি্তে সিলভিয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে টেডের সার্বক্ষনিক সঙ্গ তার লেখাকে প্রভাবিত করছে। তাই তিনি টেডের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের সিন্ধান্ত নেন এবং তার কিছুদিন পর থেকেই তারা পৃথক বাসায় বসবাস শুরু করেন, এর পর থেকে শুরু হয়ে যায় তার বিরামহীন লেখা। তিনি এক মাসে ২৫ টি কবিতা লেখেন, অতঃপর একদিন গ্যাসের ওভেনে মাথা ঢুকিয়ে আত্বহত্যা করেন মাত্র ৩১ বছর বয়সে। তিনি বরাবরই টেডের লেখক প্রতিভার প্রতি দূর্বল ছিলেন।
ভার্জিনিয়া উ'লফঃ
ভার্জিনিয়া উ'লফ বিংশ সতাব্দির একজন অন্যতম ঔপন্যাসিক। তার স্বামী ছিলেন লিওনার্ড। কিন্তু ভার্জিনিয়া বরাবরই পুরুষ বিমুখী, তার স্বামীর মতে "শীতল"। তাদের যৌন জীবন খুব বেশি সুখকর ছিলনা। ভার্জিনিয়া বরাবরই বলেছেন তিনি লিওনার্ডের সংস্পর্ষে কিছুই অনুভব করেননি। বিয়ের কিছুদিন পর ভার্জিনিয়া মানুষিকভাবে বেশ ভেঙ্গে পড়েন এবং সমাধান হিসেবে লিওনার্ড ও ভার্জিনিয়া একি বাড়িতে দুটি ভিন্ন কামরায় বসবাস শুরু করেন। লিওনার্ড তা মেনেই নিয়েছিলেন, তবে ভার্জিনিয়া সমকামী ছিলেন নাকি তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তখন সমকামী বলতে বুঝাতো একজন নারীর শরীরে বন্দী একটি পুরুষ। তাদের দাম্পত্ব জীবন শারীরিক চাহিদা ব্যাতীতই সুখের ছিল। ভার্জিনিয়া তার মেধা আর প্রতিভার গুনে বেশ পরিচিতি লাভ করলেন। তার বয়স যখন চল্লিশ তখন তার সাথে পরিচয় হল তিরিশ বছর বয়সী ভিটা'র সাথে। ভিটাও তার ব্যাক্তিগত জীবনে সফল লেখিকা ছিলেন। অতঃপর তাদের মধ্যে অন্তুরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়। ভিটা ও ভার্জিনিয়া পরষ্পর পরষ্পরের মেধা আর প্রতিভায় প্রচন্ড মুগ্ধ হয়ে ওঠেন। পরবর্তিতে ভিটা পারস্যে তার স্বামীর সাথে পাড়ি জমালেও ভার্জিনিয়ার টানে বার বার ফিরে এসেছেন। ভার্জিনিয়া লিখেছেন,
"it tore the heart our of my body saying goodbye to you... oh my darling you have made me so happy"
তবে তারা বরাবরই অস্বীকার করেছেন একটি অপবাদ "তাদের মধ্যে প্রেম ছিল"। তবে ভার্জিনিয়া পরবর্তিতে তার একটি লেখায় লিখেছেন তিনি ভিটার শারীরিক উষ্ণতাকে জানতে চান। ভার্জিনিয়ার মতে ভালোবাসা মানেই ইলিউশন। দের ভালোবাসা তাদের সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে একটি লিঙ্গনিরপেক্ষ আবেগের যগান্তকারী দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করেছিলো।
(চলবে)
তথ্য সূত্রঃ অসংখ্য মানুষের সাথে আড্ডা,
গ্রেট রাইটারস এন্ড লাভার্স - ম্যারি এন প্রিস্ট
ফিলোসফি এন্ড লাভ- লিনেল সেকম্ব
কাজী আফসিন শিরাজী
মন্তব্য
ভার্জিনিয়া উ'লফের কিছু উক্তি মনে হয় হুমায়ুন আজাদের "নারী" তে পড়েছিলাম ।আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। আরো লিখলে খুশি হবো।
ভার্জিনিয়া উ'লফ খুবই শক্তিশালী চিন্তার অধিকারী ছিলেন, তার চিন্তার তীব্রতা আমাকে খুব মুগ্ধ করে। তিনি চিন্তার খুব গভীরে প্রবেশ করতেন। তবে ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয় বলে তার জীবনের অনেক চমকপ্রদ ব্যাপারকে পাশ কাটিয়ে গেছি।
বুঝলাম না ঠিক । ভালোবাসার ধারনা বদলায় কিভাবে ? আপনি বলতে পারেন ভালোবাসা ধারনাটারে এরা একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনতে চেয়েছেন মাত্র । এদের নাম না জেনেই সেই আদি কাল থেকে মানবজাতি ভালোবেসে আসছে ও সেই ভালোবাসার ধারনা গড়তে এদের সাহায্য তাদের বিন্দুমাত্র দরকার পড়েনি ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ভালোবাসার ধারণা কীভাবে বদলায় সেটা কেন বুঝলেন না তাই আমি বুঝলাম না!!
আপনার প্রশ্নটা 'অক্সিজেন আবিষ্কারের আগেও মানুষ নিঃশ্বস নিতো, তাহলে আবার অক্সিজেন আবিষ্কারের অর্থ কী' এমন শোনালো নয় কি? [এই অক্সিজেন সম্পর্কেও কিন্তু আমরা সবকিছু জানিনা এখনো। যেকোনো নতুন আবিষ্কার আবারো আমাদের পারমানবিক ধারণা বদলে দিতে পারে এক নিমেষে।]
ভালোবাসার কন্সেপ্ট যুগে যুগে বদলায়। এমনকি একই যুগে একেক শ্রেণির (হ্যা শ্রেণিবিভেদ আমরা কাটিয়ে উঠিনি) মানুষের কাছে ভালোবাসার ধারণা একেক রকম। একেক সংস্কৃতির মানুষের কাছে একেক রকম।
আজকের আধুনিক সমাজে ভালোবাসা নিয়ে আমাদের যে ধারণা। সেই ধারণা কিন্তু মধ্যযুগে ঠিক এরকম ছিলোনা। তারো অনেক আগে ছিলো আরো অন্য রকম। তাই এ বিষয়ক আলোচনা আগ্রহউদ্দিপক বই কি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
তানভীর ভাই, আপনি আমার ভাবটা ধরতে পেরেছে বেশ দক্ষতার সাথে। আমাদের ইতিহাস বেশ ছোট। পাঁচ হাজার বছর আগের ইতিহাস জানতে চাইলে ধর্ম আর ফসিলের কাছে ফিরে যেতে হয়, যা পুরোপুরি ধারনা নির্ভর। ধর্ম থেকে যা পাওয়া যায় তা নিখুত ইতিহাস নয়, তা বেশ ধর্মিয় ধোয়া দ্বারা প্রভাবিত। পাঁচ হাজার বছর পর হয়ত আমাদের সমসাময়িকতার কোন চিহ্ন থাকবেনা। তবে কালক্রমে মানুষের চিন্তার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ ভালোবাসাকে ভিন্নভাবে দেখেছে।
চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি, আমি বিভিন্ন রেস আর বিভিন্ন ধারনার মানুষের সাথে কথা বলে দেখেছি ভালোবাসার ধারনা আর ধরন একেবারেই ভিন্ন। তবে ভালোবাসা খুবই আদি ও পরম একটি অনুভব। হেক্সা ট্রিলিয়ন বছর(জুয়োলজিস্টদের মতে পৃথিবীর বয়স হেক্সা ট্রিলিয়ন বছর, যদিও জোতির্বিদরা বলেন কয়েক মিলিয়ন বছর) ধরে এ আবেগের ধারনা অনেক বিকাশ লাভ করেছে।
আমি কিন্তু বলিনি ওনারা ভালোবাসার আবিষ্কারক, আমি বলিনি ওনারাই ভালোবাসাতে শিখিয়েছেন। এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে রাখি, জ্ঞান রিকন্সট্রাক্ট হয় না এটা কো-কন্সট্রাক্ট হয়। ওনারা ভালোবাসার ধারনায় বাড়তি কিছু যোগ করেছেন। মানুষ যেমন ভাবে ভাবেনি আগে তারা তা সেভাবে ভেবেছেন, প্রয়োজনে তারা সমাজে প্রতিরোধের মুখেও তারা তাদের এই সূক্ষ কম্পনকে লাই দিয়েছেন।
এ কথাটি আপনার ধারনার সাথে না মেলাটা খুব স্বাভাবিক। আমি কিন্তু লেখাটা এখানে শেষ করিনি, আমি আমার লেখার শিরোনামের পিছনে যুক্তি দেখাইনি এখনো, কারন এখনো অনেক কিছু বলার আছে, তারপর নাহয় খোলসা করে বলব। তবে আপনার কৌতুহলকে কিছুটা স্বস্তি দেয়ার জন্য বলছি, যদি কিং কং মুভিটা দেখে থাকেন তাহলে বুঝবেন, মানুষ কল্পনায় বা বাস্তব জীবনে ভালোবাসাকে কতভাবে দেখে, কত ভাবে অনুভব করে, একটা বন্য যন্তুর সাথে মানুষের ভালোবাসা এমন গল্পই বা কজন লিখেছে বা বলেছে!
অথবা রুপবান ও রহিম বাদশাহর কথাও চিন্তা করা যেতে পারে।
"যারা বদলে দিলেন ভালোবাসার ধারনা"
বলতে মূলত আমি বুঝিয়েছি, কালক্রমে প্রমানিত হয়েছে ভালোবাসাকে আমরা যত বিচিত্র মনে করি আসলে ভালোবাসা তার চেয়েও অনেক বেশি বিচিত্র আর আনপ্রেডিকটেবল। এই ধারনাটা অনেক মানুষের কালজয়ী চিন্তা ও জীবন থেকে উঠে এসেছে। আমার লেখা লক্ষ্য করবেন আমি নিজের মতামতকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। পরবর্তি পর্বগুলো যদি এখানে পোস্ট করি তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও পরিষ্কার হবে শিরোনামের অর্থ কী, অনেকেই এই শিরোনামের স্পিরিটটাকে ভুল ভাবে নিয়েছেন, তবে সেখানেই আমার সীমাবদ্ধতা।
টেড হাগজ নয়, টেড হিউজ যথেষ্ট নামকরা কবি বলেই এ ভুলটা শোধরানো দরকার।
খবই দুঃখিত, আমি জানতাম এটা হিউজ কারন আমার পাশের সাবার্বের নাম হিউজ আর বানানও একি। কিভাবে ভুলটা করলাম বুঝতে পারছিনা, খুবই লজ্জিত।
জটিল বললেন বস।
এই অংশ পড়ে আমার কোন ভাবেই ভালো লাগল না, এতই যদি প্রেম আর মনের মিলন, তাহলে আলাদা থাকা কেন? ব্যাপারটা আমার কাছে সুখে থাকতে ভুতে কিলানোর মতই লাগল।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ভাই এটা খবই সাধারন ব্যাপার, মানুষ কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসলে তাকে হারানোর একটা ভয় কাজ করে, টেড হিউজ খবই সুদর্শন ও মেধাবী ছিলেন, তাই সিলভিয়া প্ল্যাথ সর্বদাই শংকায় থাকতে যদি তাকে হারাতে হয়। টেডের সাথে এসিয়া নামের এক নারীর ঘনিষ্ঠতা তার মনে সন্দেহ তৈরী করেছিলো। আর সিলভিয়া লেখা-লিখিটাকে খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেই থেকেই টেডের প্রতি আকর্ষন। তার বিবাহিত জীবনে তিনি চাকুরী বাদে কখনই টেড থেকে এক ঘন্টার জন্যও দূরে যাননি। তাই তারা পরষ্পর একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সিলভিয়ার শক্তিশালী প্রফেশনাল মনোভাব সম্পর্কে ইতি টানার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বিচ্ছেদটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তার মধ্যে আত্বহত্যার একটা প্রবনতা বরাবরই ছিলো। তাই তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতায় লিখেছেন-
লেখা ভালো লাগলো, তবে শিরোনাম প্রসঙ্গে হাসিবের সাথে সহমত।
কিছু বানান ভুল রয়েছে, মানুষিকভাবে বলতে কি মানসিকভাবে বলতে চেয়েছেন?
যখন অতিথি ছিলাম তখন লেখা পোস্ট হয়ে যাওয়ার পরে এধরণের ভুল ধরা পড়ত।
কিন্তু হায়...পরিমার্জনের সুযোগ নেই... অসহায় লজ্জা পাওয়া ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকতো না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হুম... টাইপিং মিসটেক। মার্জনা করবেন।
আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে লেখা এলো। সবারই এই বিষয়ের প্রতি অদম্য কৌতুহল।
কিন্তু বদলে যাওয়ার আগে "ভালোবাসার" ধারনাটা কি ছিলো ? সেখান থেকে শুরু করুন, প্লীজ।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আদিমকাল সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই, তখন হয়ত এটাকে নিয়ে তারা ভাবতেনও না। এটা তাদের কাছে খবই স্বাভাবিক একটা 'টান' হিসেবে কাজ করত (হয়ত)। কিন্তু নিউটন থেকে জানার ও বোঝার যে বিপ্লব সেই থেকেই হয়ত এর বিকাশটা ব্যাপক। তাই নিউটনের সমসাময়িকতাকে বলা হয় "এইজ অফ রিসন্স", মূলত ঐ সময় থেকেই ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ম্যাজিকের ধারনা বিলুপ্ত হয়েছে, মানুষ কারন অনুসন্ধান করেছে। আমি কিন্তু ভালোবাসার পরিবর্তনের কথা কোথাও বলিনি, আমি এটার ধারনাগত যত বিকাশ তার কথা বলেছি কিছুটা বিতর্কিত শিরোনামে।
- আশা করছি প্রসঙ্গক্রমে জন ডানের কথাও আসবে। তখন হয়তো ভালোবাসা আর যৌনতা'র মধ্যে একটা যোগসাজশও বের হয়ে আসবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চেষ্টা করব কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরন দিতে, তবে কতটা পরব জানি না। আমি কিন্তু ভালোবাসার সবগুলো ধরনকেই তুলে আনতে চাইছি। প্লাটোনিক লাভ, ইন্টার পার্সনাল এট্রাকসন, ইমোশনাল লাভ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ভালোবাসার কথা আসবে। ভিন্ন তরঙ্গের আলো যেমন ভিন্ন ভিন্ন রঙ তৈরী করে ঠিক তেমনি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভালোবাসার ভিন্ন রকমের সৌন্দয্য আছে।
বিষয়টা আকর্ষক, লেখার ভঙ্গিও তাই। শিরোনাম নিয়ে কনফিউজড যদিও!
পরের পর্বের অপেক্ষায় ...
আমিও কনফিউসড, তবে আমার কনফিউশন সব মৌলিক ভাবনা নিয়েই। ভিন্ন পার্সেপশনের তো কিছুটা ভিন্নতা থাকবেই।
পরের পর্বগুলো পড়ে কিছু বলবো...
আপনার মন্তব্যটা ভালো লাগল। কোন ঘটনা শেষ হবার আগে ইতিহাস লেখা শুরু করলে তাতে গলদের সম্ভাবনা থাকে। তাই এক ঝলক একটা ভাবনার একাংশ দেখে মন্তব্য করা মুশকিলই বটে। তবে শিরোনাম নিয়ে যে প্রশ্ন করেছে তা খুবই স্বাভাবিক। আমিও কিছুটা কনফিউশনে দিশেহারা... খিক খিক...
গল্পে আড্ডায় যখন এই বিষয়গুলো শুনেছেন, তখন নিশ্চয়ই বাঙলা সাহিত্যের অনেকের কথাই জানেন। লিখুন না সেগুলো নিয়েও।
রেজা ভাই, বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব বেশি জানার সুযোগ হয়নি, তবে জানার জন্য সর্বদাই চেষ্টা করি। প্রবাস জীবনে মনের ক্ষুধা নিবারনের জন্য হালকা পাতলা পড়া শোনা করি, তাও তেমন কিছুই জানি না, তেমন কিছুই শিখিও নাই। তবে কিছু জানতে পারলে অবশ্যই জুড়ে দিবো।
অসাধারণ একটা কথা।
লেখাটা দারুণ পরিণত। পুরোপুরি উপভোগ করেছি। জানার আনন্দ দিতে পেরেছে আমাকে।
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব চাই।
এ ব্যাপারে আরো জানতে চাই।
btw: সতর্কভাবে লেখা মনে হলো। বানান মোটামুটি ঠিক আছে। টাইপিং প্রমাদ বাদদিলে শুধু ণ-ত্ব আর ষ-ত্ব বিধানের ব্যাপারে সতর্ক হলেই চলবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আলসেবিয়াডস সক্রেটিস সম্পর্কে বলেছিলেন-
তিনি সক্রেটিসের সাথে একসাথে রাতে ঘুমিয়েছেন, সক্রেটিসকে বাহুতে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলেন। তিনি সক্রেটিসের জ্ঞান পিপাসু ছিলেন, যেটাকে তিনি প্রবল ভালোবাসা বলে বর্ণনা করেছেন। ফিলসফি এন্ড লাভ - বইটাতে লেখক লিখেছেন, এই ভালোবাসাটার অভিজ্ঞতা জ্ঞান অন্বেষনের সন্ধানী তাড়না ছিলনা, বরং এটা ছিল তার ভেতর রোপিত ইন্দ্রের যন্ত্রনা নিবারক একটা প্রচেষ্টা। লেখক এই ভালোবাসাটাকে বলেছেন- "লাভ অফ নলেজ"...
তবে এটা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রনহীন তীব্র একটা আকর্ষন। প্লেটোর সিম্পোসিয়ামে আলসেবিয়াডসের ভাষন "tears flood my eyes" এ দেখা যায় ডায়োটিমা-সক্রেটিস দর্শনের প্রতি তার এক নিদারুন আগ্রহ এক দুর্বোধ্য তীব্র ভালোবাসা!!
কিছু বাক্য গঠন অসাধারন হইসে ভাইয়া, সিলভিয়া প্লাথ কে নিয়ে একসময় আমি অনেক পড়াশুনা করেছিলাম, কেন জানিনা, মনে হয় কোনও পত্রিকায় তাকে নিয়ে লেখা হয়েছিল অনেক। আমার গুতাগুতির স্বভাব প্রবল, তাই তৎক্ষণাৎ অন্তর্জালে তাকে খুঁজতে শুরু করি। আর ছোটবেলায় যখন শাহরিয়ার কবিরের লেখা পড়তাম তখন ভার্জিনিয়া উলফ এর নাম দেখতাম বেশ কিছু বইয়েই [যেমন বার্চবনে ঝড়] তখন থেকেই তাকে নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল। হু. আ. এর বইয়ে তার কিছু কথা পড়েছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই তার লেখা নিয়েও মন্তব্য করতে পারব। ভাল লিখেছিস। আরও লিখ... যত লিখবি ততই ভাল হবে...
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমার ভেতর ঘুনের মত আলসতা প্রবেশ করসে, কামড়ে কামড়ে আমার সব শক্তি খেয়ে যায়। কিছু লিখতে ভালো লাগে না আর। এই লেখাটাও লিখতে গিয়ে অলসতার জন্য অনেক কিছু বাদ দিয়ে লিখসি। ব্লগ নিজেই একটা সিম্পোসিয়াম। এইটা হল ভাবনার খনি তাই এখানে এসে নিজের ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আসি। লেখাটা পড়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
ঘটনা চক্রে এ মুহুর্তে প্লাথের 'এ বেল জার' উপন্যাস (তার লেখা একমাত্র উপন্যাস, নাকি?) পড়ছি। আপনার লেখাটা তাই খুব প্রাসংগিক মনে হলো। শেষ করুন।
'লাভ ইন দ্যা টাইম অফ কলেরা' পড়ে আমার মনে আপনার শিরোনামের মতো একটা ভাবনার উদয় হইছিলো - ভালোবাসার কনসেপ্টটা আসলে কি?
বেল জার পরছেন!! আমিও পড়ব ভাবছি, তবে আগে হাতের কাছের বইগুলো শেষ করি তারপর। ঠিক বলেছেন কিছু লেখা বা জীবন কাহিনী পড়লে মনে হয় এটা কেমন ভালোবাসা! তারা হয়ত তাদের ভালোবাসা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। কী জানি!
মানুষ মাত্রই অস্থির,বাঙ্গালি জাহিরিতে অস্থির। এখানেও দেখি কানার হাট বাজার!!!!!!
শিরাজী, লেখার বিষয়বস্তুটা প্রায় সবকালেই সবচেয়ে আকর্ষণীয়,রহস্যময়,দূর্বোধ্য এবং কতকালে স্ববিরোধী বটে।আমি তোমার সাহসের প্রশংসা করি। ব্যতিক্রমভাবে যারা ভালবাসার একটা প্রতিমুর্তি তৈরী করতে চেয়েছেন তাদের কথা আমরা জানি না। তোমার আগামী লেখাগুলোতে নিশ্চয়ই আরো ব্যতিক্রম ভাবনার কথা জানব।
সবাই স্ব স্ব দৃষ্টিতে কেবল দর্শক, বাকিদের দৃষ্টি কলে অন্ধ। আমিও অন্ধ; সবার চোখ ঘুরে অন্ধকার দেখি, কেবল নিজের চোখে ফিরে এলেই দুনিয়াটা দেখি। হয়ত বাকিরা পৃথিবীটাকে যেমন দেখে, আমার দেখা পৃথিবীটা একদম ভিন্ন।
গুড স্টার্ট। চলতে থাকুক। অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারবো। এই পর্বে শিখলাম, বড় প্রেম শুধু দূরে ঠেলে না, ওভেনেও ঢুকায়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
দুঃখজনক, তবে হাসিও পাচ্ছে।
পুরোটা লেখার পর দেখবেন কিছুই শিখেননাই। সবই কনফিউশন তৈরী করে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি করবে।
চরম বলেছেন ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
এখনই মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। ভালোবাসার ব্যবচ্ছেদ পুরোটা দেখে নিতে চাই আগে। জলদি লেখা দিন।
পন্ডিতদের কথা বলে নিজের কথাটাই মেরে দিয়েছি, শুসসসস... কাউকে বলবেন না যেন... হাহাহা...
একটা জায়গায় এসে যেখানে দূরে থাকার কথা ছিলো, সেখানে এসে বাজবাহাদুর আর রূপমতীকে মনে পড়িয়ে দিল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তাই! সে গল্পখানা জানা নেই, তবে জানতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতাম। তাহলে মন্তব্যটার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ আস্বাদন করতে পারতাম।
বাজবাহাদুর মালবের সুলতান ছিলেন, খুব সঙ্গীতপ্রিয়। রূপমতী, এক অসাধারণ সঙ্গীতশিল্পী মহিলা, প্রাচীন এক সঙ্গীতসাধনার কাল্ট অনুসরণ করতেন। বাজবাহাদুর ভালোবাসলেন রূপমতীকে, রূপমতীও বাজবাহাদুরকে। কিন্তু এদের বিবাহে প্রথম বাধা ছিল ধর্ম, সেটা তারা অতিক্রম করলেন। তার পরের বাধা আরো গভীর, রূপমতী বললেন রাজপ্রাসাদে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে, নর্মদা নদীতে রোজ স্নান না করতে পারলেও তার চলবে না, আর বাজবাহাদুরের সঙ্গে রোজ রোজ দেখা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, কারণ বিরহ আর অপেক্ষা না থাকলে প্রেমের কোনো মানেই থাকে না, সে ভয়ানক ব্যাপার হয়ে যায়। "তোমার অনন্তের সঙ্গে আমার অনন্তের বিরহ মিটবে কেমন করে, যদি নিত্য কাছাকাছি থাকি?" ---এই ধরনের কিছু একটা বলেছিলেন। সব বলতেও হয় নি, বাজবাহাদুর নিজেও মনে মনে বুঝেই তো ফেলেছিলেন, তাদের দুইজনের মন সুরের অদৃশ্য সূত্রে বাঁধা ছিল কিনা!
তো, সেইমতন সব হলো, রূপমতীর জন্য মান্ডুতে যে প্রাসাদ নির্দিষ্ট হলো তার কাছেই ছিল এক বিশেষ উৎস, কথিত ছিল সেখানে নর্মদা আবির্ভূতা হন বিশেষ বিশেষ তিথিতে। রূপমতী দিনরাত সঙ্গীত চর্চা করতেন, বাজবাহাদুর বিশেষ বিশেষ তিথিতে জ্যোৎস্নাভেজা পথ দিয়ে আসতেন রূপমতীমহলে। খুবই রোমান্টিক ব্যাপার।
কিন্তু দুনিয়া খুব শক্ত, মালব আক্রান্ত হলো দিল্লির মোগলবাহিনির হাতে, মোগল সেনাপতি রূপমতীকে কিন্তু কেড়ে নিতে পারে নি, রূপমতী জহরব্রত নিয়েছিল, সেনাপতি এসে তার মৃতদেহ পেয়েছিল শুধু।
এই দুই সঙ্গীতশিলপী প্রেমিক প্রেমিকা বেঁচে রইলেন ইতিহাসে গল্পে উপকথা্য় তাদের আশ্চর্য দৃষ্টান্ত নিয়ে।
* এতকাল পরে নজরে পড়লো, চার বছর আগের কমেন্টের জবাব এতদিনে দিতে পারলাম, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দুর্দান্ত লাগল
উন্মুখ আগ্রহে অপেক্ষা করছি পরবর্ত্তি পর্বের।
পরবর্তি পর্বের জন্য রসদ সংগ্রহ করছি। সময়ের ব্যাপার, তবে হাল ছেড়ে না দিলে অবশ্যই লিখে ফেলব বাকি পর্বগুলো।
আচ্ছা, ভালোবাসার এই ক্ষুধা না থাকলে কি অবস্থা হতো?
আমার তো মনে হয় মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে যেতো।
লেখা ভালো লাগছে। তবে সিলভিয়া প্ল্যাথের জন্য খারাপ লাগে।
______________________________________
তুমি আমাকে চিনোই বা কতটুকু?
______________________________________
লীন
নতুন মন্তব্য করুন