ভাবনাঃ
মেয়ে তোর এলোচুলে ফুল গুঁজলো কে?
মেয়ে তোর আঁধার রাতে বাসর সাজায় কে?
স্বপ্নগুলো সাজাতে গিয়ে ক্রমাগত এক ধোঁয়াশার মাঝেই ঘুরপাক খায় নীর। গোধূলী যখন সন্ধ্যার বুকে এলিয়ে পড়ছে, ঠিক তখন ব্যাথা ব্যাথা অনুভবে বুক ভার হয়ে আসে।
বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে ফাঁকে খন্ড খন্ড আকাশে চোখ পড়লে অনেক অগোছালো ভাবনার পোকা কচকচ করে মস্তিষ্কে। গল্প হলে বলতো- ‘হৃদয়ের ভাবনা।’
মনে নাকি মস্তিষ্কে “রূপকথা সমগ্র”র রঙচঙে মলাটের ঢাল-তলোয়ার-যুদ্ধবেশী রাজার কুমার উঁকি দেয়। শৈশবে কি প্রেম হয়? মা বকলে যার আদলের কারও আশ্রয় একান্ত কাম্য; তাকে কি প্রেমিক প্রবর বলা চলে? তবেতো ঐ রাজকুমারই প্রথম প্রেম - এ ভাবনা একটুকরো হাসি জমা করে উদাস ক্ষণে।
নীর ভাবে; অতঃপর? ‘শেষের কবিতা’র অমিত রায়? ক্যান্টিনে, প্যারেড গ্রাউন্ডের হৈ-হুল্লোড়ে কোন এক অমিত রায় খুঁজে ফেরা। অনন্য, অন্যরকম, আর দশজন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাদা থানের ধুতি, পাঞ্জাবী, বৃন্দাবনি থলি - বেশভুষা এমন হলে বেশ হয়!
সময় তখন এমনই, যখন ‘প্রেম’ উচ্চারণে তীব্র জড়তা ঠোঁটের কোণে, ‘ভালবাসা’ তবু বলা চলে, ‘এ্যাফেয়ার’ ঝটপট মুখরতা আড্ডাস্থলে।
স্বপ্নেরা ডালপালা মেলে বড় হয়, পরিণত হয়। অনেক অতীত স্বপ্ন আবেগী খেলা ভেবে ভুলে যাওয়া হয়। আকাঙ্খার মাঝে তফাৎ থাকে বিস্তর। কেউ একজন; যে খেলবে,ঘুরবে তার বদলে নীর খুঁজে এমন কাউকে যার সাথে মেজাজ চরমে ওঠলে নিদেনপক্ষে জিদ্ করা চলে। অথবা গোপনে, চুপি চুপি মাতাল ভাললাগা খুঁজে নীর।
গল্প কী তখন এসেছিলো যখন সময়গুলো পরিণত হচ্ছে ধীরলয়ে। নাকি তারও আগে? এখন আর ঠিক মনে পড়ে না।
নীরের খন্ড খন্ড আকাঙ্খায় গড়ে তোলা গল্প ওর সাথে থেকে হয়তো আজও বেড়ে উঠছে। গল্পকে সব বলা চলে। এই যেমন রাত গভীর হলে কিছু চাপা অনুভব শব্দে শব্দে সাজায় একান্ত নীরের হৃদয়ের সোপানতলে। রাত গভীর ক্রমাগত... নীরবতাময় ক্ষণে শুধু গল্প আর নীর, নীর আর গল্প.....
আত্নপ্রেম, তবুওঃ
পথের কাছেই পথ খুঁজেছি আমি।
তাই পথের সাথেই -
বোঝাপড়া বাকি।
জলজ্যান্ত কোন মানুষকে ভালবাসার জন্য পরিণতির কথা কতোটা চিন্তা করা উচিত ভেবে দেখেনি নীর। অথবা ভাবার প্রয়োজন বোধ করেনি হয়ত। আকাশ- হুটহাট অগোছালো, অস্থির দিনগুলোয় এসে হাজির হয়েছিলো। টুক-টাক আলাপনে বিকেল সাজে। নৌকোর পাটাতনে বসে টলমলে নদীর জলে হাত ডুবানোর স্বপ্ন দ্যাখে নীর। আকাশ কবিতা বোঝেনা। নীর ভাবে - যদি বুঝতো।
আকাশের ভাবনায় কতোটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেল, তারচে’ নিজের ভাবনা প্রাধান্য পায় বেশি। আত্নপ্রেমের গল্পই রচিত হয় বোধহয়।
যেখানে তরূণ আকাশ যুবতী নদীর কোলে মাথা রাখে, সেখানে চোখ রেখে হাঁটবে কারও সাথে। সেই ‘কোন একজন’ এর অভাববোধ প্রবল হয় নীরের দিনগুলোয়। তাই ‘আকাশ’ একটি নাম হয়ে থাকে। স্বপ্ন দেখার সাধ মেটাতে যা গুঞ্জরণ তোলে নীরের মাঝে। স্বপ্নের ঘরে যার আবাস, রক্তমাংসের অবয়বে কোথাও আছে সে- ভাবতে ভাল লাগে।
অমানিশাময় রাত যখন নীলচে অম্বরে জড়িয়ে দেবে কালচে আঁধার, তখন রাতের প্রহরগুলো মাতিয়ে রাখবো দুজনে মিলে- নীর ভাবে। আকাশ ভাবে কিনা কে জানে?
পুকুরের জলে গভীর আন্দোলন, বিকেলের বাতাসে ঢেউগুলো জলে ডুবোনো পা দুটোকে সোহাগী আদরে ছুঁয়ে যায়। আকাশের ব্যস্ততা চরমে ওঠে। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর লোভে আকাশের ছুট্ ছুট্ জীবন। নীর কি চাইছে আকাশ বোঝেনা। বুঝবে কি করে, নীর যে নিজেই জানেনা। শুধু জানে টুকরো টুকরো মোহনীয় মাতাল সময়ের বিসর্জন অবোধ-অস্থির মন মানেনা।
কোথায় যেন সুতো কেটে যায়। কিংবা রশির গিট হালকা হতে হতে গুটিকতক চিকন সুতোর অবশেষ শুধু থাকে। নীর ভাবে, গোছানো স্বপ্নেরা সব ফাঁকি; অগোছালো স্বপ্ন দেখা বাকি।
অবশেষেঃ
দিনগুলোতে এলোমেলো ইচ্ছেরা করে বাস,
রাতজুড়ে অগোছালো স্বপ্নের নিবাস।
আকাশের শূণ্যতা থাকে। তবে গল্প নাকি উচ্চারণহীন আত্ন-আলাপন ‘অবসাদ’, ‘উদাসীনতা’ কিংবা ‘গ্লানি’ (জানেনা এ অনুভূতির যথার্থ শব্দপ্রয়োগ কোনটি) বুকের ভেতর দুমড়ে-মুচড়ে দেয়া কোন এক অনুভব ক্ষণিকের জন্য ম্লান করে বটে।
নীর - ব্যর্থতা সফলতার টানাপোড়েন বড় জ্বালায়। এই ইঁদুর দৌড় আমার ভাল্লাগেনা। ব্যর্থতার সংজ্ঞা কি বলতো?
গল্প - ওসব ভেবোনা। দেখো, গোধূলির আকাশে কত্তোগুলো রঙ। এসো আমরা রঙ গুনে দেখি।
-----------------------------------------------------------------
মন্তব্য
বাহ্। দূর্দান্ত।
ফোনে পাঠানো মেসেজও কাজে লাগে দেখছি।
_____________________________________________
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
বন্ধুদের কবিতার ঢঙে বার্তা দিতে বেশ লাগে,
তাই বার্তাগুলোয় মউ'র কবিতা ভালই কাজে আসে.....
"দূর্দান্ত" র জন্য ধন্যবাদ
জুয়েইরিযাহ, আপনার লেখনী বেশ লাগে আমার কাছে। একটু অন্যরকম। এটাও তেমনি। কিন্তু কেন জানি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না আজকেরটা পাঠ করে।
মন্তব্য করেন; ভাল লাগে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ধন্যবাদ সিমন
ভালো লাগলো...
সবিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।
প্রিয় মউ
বাহ্ সু্ন্দর!!! অনুভব আর মনের না বলা কথা গুলো যেনো মিশে আছে তোমার লিখার মাঝে!! আরো সুন্দর লিখা পড়তে চাই ।ভাল থেকো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন আপনিও
চমৎকার লাগল
জানাই ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী
মউ, আপনার এবারের লেখাটাও ভালো লেগেছে, কেমন কবিতার মতো, তবে ঠিক প্রত্যাশাপূরণ হলো না। আপনি তো আরো ভালো লিখেন।
ভাল লাগা না লাগাটুকু জানানোর জন্য ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন