আভা নিজের রুমে বসে সাজসজ্জা করছিলো বের হয়ার জন্য। আকাশের সাথে আজ তার প্রথম সাক্ষাত হবে। অনেক দিন ধরে ফোনে আভা-আকাশে মন দেয়া নেয়া চলছে। কাল রাতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর ফোনে প্রেম নয়, এখন থেকে সরাসরি দেখা সাক্ষাত করবে। বিকাল পাচঁটায় ধানমন্ডি লেকের পশিম পাশে দেখা হবে। এরি মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের কে চেনার মাধ্যমটা সেরে নিয়েছে। তারপর হাতের মুঠোয় মোবাইলতো আছেই।
আপন মনে গুন গুন গান ধরে-“লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প, তারপর হাতছানি অল্প, চায় চায় উড়তে উড়তে, মন চায় উড়তে উড়তে।” আড়ং থেকে কেনা মাটির কানের দুলটা পড়ছিলো। দরজায় শব্দ পেয়ে গান বন্ধ করে মাটির গহনাটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দরজা খুলে দাড়ালো। দেখে তার মা দাঁড়িয়ে। মাকে দেখে বিচলিত না হয়ে -“ও মা তুমি” ঘুমাওনি? আসো ।” - বলে নিজে সরে দাড়ালো। মা মিসেস সায়মা বেগম রুমে ঢুকে মেয়ের খাটে গিয়ে বসলো। মেয়ের দিকে তাকিয়ে - “কোথাও বের হচ্ছিস?” আভা মায়ের পাশে এসে বসে, মাকে জরিয়ে ধরে বলে -“হ্যা মা একটু বের হবো ৮টার মধ্যে চলে আসবো।” সায়মা বেগম নিজের শরীর থেকে মেয়ের হাত নামিয়ে দিয়ে বললো- “তোর বাবা আজ বের হতে নিষেধ করেছে, বাসায় কিছু মেহমান আসবে।” আভা একটা ধাক্কা খেলো, কি বলবে মাকে বুঝতে পারলো না। প্রশ্ন করার ছলে প্রশ্ন করলো -“কারা আসবে? আমার কি না থাকলে হয় না?” সায়মা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা আদেশের সুরে -“ না হয়না। ওনারা তোমাকে দেখার জন্যই আসতেছে।”
আভা যেনো আকাশ থেকে পড়লো, নিজের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কেনো তাকে দেখার জন্য আসবে। সে মায়ের দিকে তাকিয়ে -“ মা আমি বড় হয়েছি, আমার মতামতটা কি তোমাদের জানার দরকার ছিলো না?” সায়মা বেগম কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। মেয়ের কাছে এসে মেয়ের কাধে হাত দিয়ে -“তোর বাবার বন্ধুর ছেলে, অস্ট্রেলিয়া থেকে এমবিএ করে ফিরেছে। বাবার বিরাট ব্যবসা দেখা শুনা করছে। ছেলে দেখতে শুনতেও ভালো। তোর বাবা ওদের কথা দিয়েছে, ওরা আজ আসবে , তোকে পছন্দ হলে আজি এনগেজমেন্ট করে ফেলবে।”
কথা গুলো আভার কানে বিদ্যুতের বাজের মত লাগলো। ধপ করে খাটে বসে পড়লো। মাথাটা ঘুরে গেল। কি বলবে মাকে ভেবে পাচ্ছিলো না। আকাশের কথা মনে পড়লো। আজ তাদের প্রথম দেখা হবে। উঠে দাড়ালো। মায়ের দিকে তাকিয়ে -“ মা, আমি কোন অপরিচিত ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। আর যারা বিদেশ থেকে ফিরে তাদের আমার তেমন পছন্দ না। বাবা কে বলে দাও আমি রাজী না, তাছারা আমি লেখা পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না।” আভা কথা গুলো অনেক জোর নিয়ে বললো। সায়মা বেগম মেয়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনবেন কল্পনাও করেননি। হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলেন। আভার ফোনে রিং বাজতে লাগলো। আভা বিছানা থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আকাশের ফোন। ফোন সাইলেন্স করে মায়ের দিকে তাকালো। সায়মা বেগম বললো- “ তোমার বাবা কথা দিয়েছে, তাছাড়া ভালো ছেলে পাওয়া গেছে আমরা হাত ছারা করবো না। তুমি রেস্ট নাও, কোথাও যেতে পারবে না। আমরা চাই এখানে তো্মার বিয়ে হোক। আর একটা কথা বিয়ের পর লেখা পড়ার ব্যপারে ছেলের কোন আপত্তি নাই। তুমি নিজের মত করে লেখা পড়া করতে পারবা। আর কোন কথা শুনতে চাইনা। রুমে বসে বিশ্রাম নাও।” কথা গুলো কর্কশ গলায় বলে রুম থেকে চলে গেলেন।
আভা কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আকাশ বার বার ফোন করে যাচ্ছে। সময় ৪টা ৩০মিনিট। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না বলে ফোন রিসিভ করছেনা। সে কোন দিন তার বাবার সামনে স্বাভাবিক কথাটাও ভয়ে বলতে পারে না। সে তার বাবা কে অনেক ভয় পায়। বাবার সামনে গেলে নিজের নামটা পর্যন্ত ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই বাবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বলবে। আকাশ পাতাল ভাবতে থাকলো। বাবা আনিস সাহেব মেয়ের সাথে কোন দিন প্রাণ খুলে কোন কথা বলেছে বলে আভার মনে পরে না। আভা বাবা বলতে বুঝে একটা ভারিক্কী গম্ভীর টাইপের পাজী পাজী চেহারা। যে সব সময় শাষন করতে জানে, আদর কি জিনিস জানেনা। আভা বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করার সাহস নিজের মধ্যেও সঞ্চয় করতে পারেনি। পারেনি বাবার সামনে যুক্তি দিয়ে কোনদিন কথা বলতে। সেই বাবার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিভাবে আকাশ কে নিজের করবে। ভাবতে পারছিলো না আর। আভার ভীষন কান্না পেলো। বাথ রুমের দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষন কেদেঁ নিলো। বাথ রুম থেকে বের হয়ে মোবাইল অফ করে বিছানায় শুয়ে রইলো।
সন্ধ্যা ৬টায় মোবাইল অন করলো। অন করার সাথেই দেখে আকাশের এসএমএস। মেসেজটা ওপেন করে পড়ে-“To live I need heartbeat, To have heartbeat I need a heart, To have heart I need happiness, To have happiness I need you.” আভার চোখ থেকে অঝর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগলো। বাসায় ততক্ষনে মেহমান চলে এসেছে। নিজেকে সামলতে পারছিলো না। বুক ফেটে আকাশের জন্য কান্না আসছে। মা সায়মা বেগম এরি মধ্যে দুইবার এসে তৈরীতে হতে বলে গেছে। আভার কিছুতেই শাড়ী পরতে ইচ্ছে করছিলো না। শাড়ী নিয়ে নিজের খাটে বসে আছে। মা সায়মা বেগম আবার এলেন। মেয়েকে খাটে বসে থাকতে দেখে ক্ষেপে গেলেন। বড় বড় চোখ করে মেয়ের রুমের দরজা বন্ধ করে বললেন -“ তুমি কি আমাদের সবাইকে অপমান করতে চাও? তুমি কি তোমার বাবা কে জানোনা? আজ তুমি যদি কোন রকমের সিনক্রিয়েট করো তাহলে তোমার বাবা কি করবে ভেবে দেখেছো? নাও তারতারি ফ্রেশ হয়ে শারী পড়ে ড্রয়িং রুমে আসো।” নিষ্ঠুর মহিলার মত কথা গুল বলে সায়মা বেগম রুম ত্যাগ করলেন। আভা অগ্যতা বিছানা থেকে উঠে বাথ রুমে গেলেন ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
রাত ১১টা, অনামিকায় হীরের আংটি। টিউব লাইটের আলোতেও কেমন চকচক করছে। আংটিটার দিকে চেয়ে আছে আভা। এই একটি আংটি তার স্বপ্নের সাজানো ভালোবাসার বাগানে বৈশাখী ঝড় হয়ে এসে সব উলট পালট করে দিয়ে গেলো। এই আংটি তার ভালোবাসার পায়ে লোহার বেরী পরিয়ে দিলো। হাতে শিকল লাগিয়ে দিয়ে গেলো। কতগুলো অপরিচিত লোক এসে তাকে আশীর্বাদের নামে তার ভালোবাসার পাখিটাকে হত্যা করে গেলো। আংটিটা কে একবার খুলে আবার পরে এই ভাবে খেলা করতে লাগলো আভা। বিছানায় পরে থাকা মোবাইল সেটা কান্নার আওয়াজ শুরু করলো। আভা শুনেও না শুনার মত আংটিটা নিয়ে বাচ্চাদের মত খেলায় মেতে উঠলো। বিছানায় পরে থাকা মোবাইল সেটটা কেদেঁ যাচ্ছে। আভার সেই দিকে কোন খেয়াল নেই। রাত বাড়তে লাগলো, মোবাইলের কান্নাও থেমে আসলো। শুধু আভার চোখে ঘুম এলোনা।
মন্তব্য
গল্প হিসেবে এটাকে খুব দুর্বল লেগেছে।
আমি নবীন ও কাচাঁ লেখক, দূর্বল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি কি এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খেয়াল করেছেন? আমাদের সমাজে এখনও অনেক মেয়ে আছে যারা বাবা-মায়ের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পায়না। এটার উপর ভিত্তি করেই আমার লেখা।
কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আভা নামটা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগলো না।
_____________________________________________
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ধন্যবাদ। নামটাতো আপনার ভালো লেগেছে। আশা করি পরবর্তীতে লেখাও ভালো লাগবে। দোয়া প্রার্থী।
- লেখার মাঝে লাইনগুলো বোল্ড করে ফেলার কারণটা কী বলেন তো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার কাছেও গল্পটি দুর্বল মনে হয়েছে। কাহিনী কিংবা বর্ণনাভংগী কোনটাই তেমন দাগ কাটেনি।
লিখুন, আমাদের কথা শুনে কিন্তু থামবেন না। কে যেন একবার বলেছিল যে ভালো লেখার পূর্বশর্ত নাকি প্রচুর লেখা।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
লিখে যান হাত খুলে।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য। আপনাদের সুন্দর মতামত আমাকে পথ দেখাবে। আমি লেখা শুরু করেছি, আশা করি আরো ভালো লিখতে পারবো, আপনাদের সবার দোয়া প্রার্থী। আমার জন্য দোয়া করবেন। আবারও সবাইকে ধন্যবাদ।
আরো অনেক ভালো করার সুযোগ রয়েছে গল্পটাতে। আপনি লেখা চালিয়ে যান। নিয়মিত লিখুন। অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ। ভালো করার চেষ্টা আমার সারা জীবনের। দোয়া করবেন যেনো আরো ভালো করতে পারি। আমার --------তারপরও থাকে অপেক্ষা ।।।।পড়েচেন? না পড়ে থাকলে প্লিজ পড়বেন।
বোল্ড অংশগুলো খুব চোখে লাগছিলো। আর এতো ঘন ঘন হওয়ায় পড়তে খুব অসুবিধা হচ্ছিলো। তাই পুরোটা পড়তে পারলাম না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
একটু কষ্ট করে পড়ে নেন। এরপর থেকে আর বোল্ড করবো না।
লেখা যেন থেমে না থাকে দলছুট। লিখতে থাকেন একের পর এক। আর আরো ভালো করার চেষ্টাটাও চালু রাখবেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
ভয়াবহ!
পুরো গল্প বোল্ড করে দেয়া উচিত ছিল, পড়তে আরাম হতো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন