এনস্কেডে নামের জার্মানী-নেদারল্যান্ডস এর এই সীমান্ত ঘেঁষা শহরটায় এসেছি মাস তিনেক আগে, কোন এক আলো ঝলমলে সকালে। পেছনে রেখে এসেছিলাম তার চেয়েও কিছু ঝলমলে মুখ আর তাদের দেয়া সুখস্মৃতিগুলো। মুদ্রার অপর পিঠের মতই এমন কিছু স্মৃতিও ছিল বলা যায় ওগুলোর কাছ থেকে পালিয়েই এসেছিলাম। আজ ঐ দরজাটা বন্ধ রাখি। কোন একদিন হয়ত ঝাঁপি খুলে দেব, স্মৃতিগুলোর ভারে ক্লান্ত হয়ে।
প্রবাসী ছাত্র জীবনের অভিজ্ঞতা এই প্রথম নয়। দূরপ্রাচ্যের একটি দেশে কাঁটিয়েছি টানা প্রায় দু’বছর। তখনও এতটা একাকী লাগেনি। হয়ত প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। আসলে আমার এখনকার ফেলে আসা বন্ধুগুলোর উপর আমি অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। আর ঐ যে কিছু ঝাঁপি বন্ধ স্মৃতি; এখানে আসার কিছুদিন মাত্র আগের ঘটনা। মাস তিনেক পরে আজ লিখতে লিখতে বুঝলাম মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। আমি তো দিব্যি বেঁচে আছি, ওদের সাথে আড্ডা না দিয়েও। তবে মাঝে মাঝে যে চোখ দু’টো ঝাপসা হয়না তা নয়। তখন সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরি একাকী রাতটাকে সঙ্গ দেবার জন্যে।
এমন একটা দেশেই এসেছি যে দিকে চোখ যায় শুধু সাইকেল আর সাইকেল। এটা চালাতে না পারা এখানে পাপ। ঐ পাপের ভাগীদার ছিলাম কিছুদিন আগ পর্যন্তও। আর এখন বেচারা সাইকেলটার উপরে লাগামহীন অত্যাচার চলছে। যখন তখন রাত বিরাতে তার ছুট দিতে হয় এখানে ওখানে। প্রথমদিকে বেশ কয়েকবার পড়ে গিয়ে বেচারার কিছু ভৌত পরিবর্তনও ঘটেছে বৈকি। এই ফাঁকে একটা কথা জানিয়ে রাখি যাঁরা সাইকেল চালাতে পারেন না তাঁদের জন্য। পড়ে গেলেই শিখবেন আর যদি কোন সুন্দরীর সামনে পড়তে পারেন আরো তাড়াতাড়ি শিখবেন।
সময় কাটানোর আর একটা নতুন মাধ্যম খুঁজে পেয়েছি ক’দিন হল। নাহ। খুঁজে পেয়েছি আগেই; এক ধরনের আসক্তি বোধ করছি এখন জিনিসটার প্রতি। আমাদের ‘সচলায়তন’। সবার লেখাই পড়া হয়; কয়েকজন লেখক আছেন, তাঁদের লেখা গোগ্রাসে গেলা হয়। আর মনে মনে নিজেকে আরো তুচ্ছ মনে হয়। আমি এতটাই অধম যে কোন কোন লেখা আমার সীমা পরিসীমার বাইরে দিয়ে যায়। তবু দমে যাই না; যদিও মন্তব্য করা হয় খুবই কম। কিছু পাই না যে বলার মতন। এ প্রসঙ্গে বলি, এ যাবৎ আমি যত গবেষণাপত্র পড়েছি, অবশ্যই সনদ প্রাপ্তির জন্য; সখ করে নয়, সবগুলোই আমার কাছে ‘সিরাম’ কাজ মনে হয়েছে। দোয়া করেন যাতে এইসব গবেষণাপত্রের ফাঁক-ফোঁকর ধরতে পারি। নইলে আমি নিজেই ফাঁকে পড়ে যাবো যে।
এখানে এসেই ঠিক করেছি ইহকালে যে সব সখ আছে সব পূরণ করে ফেলতে হবে। পরকালে হয়ত এই সব সখ পূরণের জন্যই দৌড়ের উপর থাকতে হবে। সে যাকগে। এই প্রকল্পের প্রথম ফসল আমার নাইকন ডি৯০। সাথের লেন্সটা অবশ্য নিতান্তই সাদামাটা ১৮-৫৫ মিমি। তবে সাথে একটা ২এক্স টেলিফটো আর ০,৪৫এক্স ওয়াইড অ্যাংগেল লেন্স মুফতে পাইছি। বাঙালী, ফ্রি পাইলেই খুশি। সেই এক ক্যামেরার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে শুরু হল ফোটুরে ফোটুরে খেলা। ক্যামেরাটাকে কষ্ট দিয়ে আমার আনন্দ পাওয়া। তাঁরই নিদর্শন হিসেবে অনেক সাহসে গোটা পাঁচ ছবি তুলে দিলাম। এখানের এত এত ভালো ফোটুরেদের মাঝে আমি ছবি সত্যিই তুলে দিলাম! সত্যই আমি ‘টাইগার’।
ছবি ১- ম্যাটেনওয়েগ, এনস্কেডে
(আমার এই বাসাটার পিছনে যেয়ে তোলা। ক্যামেরা কিনে বাসায় আসার আধঘন্টা খানেক পরের ছবি।)
ছবি ২- ক্যাম্পাসে
(ঐদিন রাতেই চন্দ্রাহত আমি। জ্যোৎস্না ছিল ঐ রাতে।)
ছবি ৩- ক্যাম্পাসে
(আমার অনুষদ ভবনের কাছেই। মাঝে মাঝে ঐ সেতুটার উপরে দাঁড়িয়ে আমি ছায়ার সাথে খেলি।)
ছবি ৪- ফলস পার্ক, এনস্কেডে
(কোন এক অলস বিকেলে। ধূসর জীবনে তোলা এক রঙ্গিন ছবি।)
ছবি ৫- আব্রাহাম লেদেবেওয়র পার্ক, এনস্কেডে
(শেষ শনিবারে তোলা। সকালে বাজারে যাওয়ার পথে হঠাৎ পার্কে ঢুঁকে পড়লাম। ঝলমলে আবহাওয়া ছিল সেদিন)
আমি দেশের বাইরে গেলেই মনে হয় বাংলাদেশ এত ভালো খেলে। শ্রীলংকাকে হারানোর দিনও আমি দেশের বাইরে ছিলাম। এবারো। তবে এই সূত্রে আবার টি২০ ফেলতে যেয়েন না যেন। আর কিছু ব্যতিক্রম তো থাকবেই। কয়েকটা অনুসিদ্ধান্ত পরে দিয়ে দিব।
আগামীকাল মানে বৃহস্পতিবার আমি নতুন বাসায় যাচ্ছি। এখনো গোছগাছ হয়নি। বিরক্তিকর কাজটা শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি। এই বাসাটা ছাড়ার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। নতুন বাসাটাও ক্যাম্পাসের মধ্যে, একই রকম প্রায়। একটা কারণই আছে মনে হয়। মনটা যাযাবর হয়ে গেছে রে ভাই। কোথাও থিতু হতে পারলাম না। না এই পৃথিবীর বুকে, না কোন মানবীর মনে। খুব কাছের একজন ছিল। ভেবেছিলাম ও হয়ত ধরে রাখবে। রাখেনি।
তাইতো আমিও কোন বাঁধনে জড়াই না আর।
মন্তব্য
- বস, হা-হুতাশ ক্লাবে স্বাগতম। জায়গাটার উচ্চারণ সম্ভবত এনস্কেডে না, "এনশেডে"। জার্মানী পেরিয়ে হল্যাণ্ডের প্রথম শহর। যাওয়া হয়নি, তবে শুনেছি অনেক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চলে আসেন না একদিন?
আমিও আসার আগে "এনশেডে"ই জানতাম। এখানে বলে এনস্কেডে [Enschede]। ইউরোপে আমেরিকান উচ্চারণ।
রেশনুভা ঠিকই বলেছে, "এনস্কেডে"ই উচ্চারন করে লোকে ডাচে। যেমন, নেদারল্যান্ডসের মেইন এয়ারপোর্ট যেটা schiphol অনেকেই "সিফল" বলে কিন্তু ডাচ উচ্চারন স্কিপল।
আর জামার্নীর কোন পাশ থেকে হল্যান্ডে ঢুকছো সেটা প্রমান করবে, কোনটা প্রথম শহর।
এনস্কেডে ইউনিতে এসেছেন রেশনুভা? ঐ জায়গাটা প্রচন্ড গ্রাম গ্রাম। আমার ভালো লাগে। হেংলো, ঘোর। টুয়েন্টেতে ঐদিকে একটা পানির ব্যরাজ আছে, কখনো দেখতে যেয়েন ভালো লাগবে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নিকটতম সচল প্রতিবেশীর মন্তব্য না পাইলে তো এই অচলের মন ভরত না ... । টোয়েন্টে ইউনিতে আসছি আপু। পুরাই গাঁও-গেরাম। আমার আবার চিল্লা-পাল্লা না হইলে মন ভরে না; যদিও অদ্ভূত ব্যাপার হইল ঐ রকম জায়গায় গেলে আমি আবার নিশ্চুপ হয়ে যাই। পানির ব্যারাজ কোন দিকে? একখান গুগল ম্যাপ দিয়া দিতেন লগে।
/রেশনুভা
উইকিপিডিয়া বলছে উচ্চারণ "এনস্কেডে" আর Twente এর লোকালদের ভাষায় "এনস্কে" , আমার শোনার ভুল না হয়ে থাকলে
ফুলের ছবিটা এত্ত ঝকঝকা, কৃত্রিম রং লাগান নাই তো?! মোবাইল কোর্ট ধরবো কিন্তুক!
সুন্দরী রমণীদের সামনে তাইলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রায়শই ভূমিশয্যা গ্রহণ করতেছেন?!
"Life happens while we are busy planning it"
ফুলের ছবিটা তোলা হইছিল নিদারূণ অযত্নে। ল্যাপিতে দেখার পরে আমার মাথাই আউলায় গেছিল।
ভূমিশয্যা অধিকাংশক্ষেত্রে অনিচ্ছায়। কেউ কেউ ফিরে তাঁকায় অভাগার দিকে, রেখে যায় এক চিলতে হাসি। ওটুকুই তো সম্বল আমার ...
/
রেশনুভা
স্বাগতম রেশনুভা।
সচলায়তনের বিষাদ সভার অঘোষিত সভাপতি হিসেবে আমারই উচিত ছিল আপনাকে প্রথম স্বাগত জানান। কিন্তু আমার তৎপর ডেপুটি শ্রীমান ধু গো সেটি সেরে ফেলেছেন।
যাই হোক, প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।
আপনার মন খারাপ হলেই চলে আসবেন এখানে। মন ভাল থাকলেও আসবেন।
দেখবেন...... আমরা সকলে মিলে বুড়ি চাঁদটারে করে দেব কালীদহে বেনোজলে পার---তারপর সবে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার--
আপনার লেখাটা খুব ভাল লাগল। ছবির কিছুই বুঝি না।
যেটা বুঝি সেটা হল---দেখে ভাল লাগে কি না।
সে বিচারে আপনাকে ১০০ এর মাঝে ১১০ দেয়া হল!
লিখতে থাকুন,আসতে থাকুন, হাসতে থাকুন----
এক্কেবারে মাথায় তুলছেন কিন্তু; অহন যত চেষ্টাই করেন বান্দর আর নামাইতে পারবেন না। কিচিরমিচির শোনা লাগবই ...
অফ টপিকঃ আপনারে তো চিনবার পারছি মনে কয়। আমার এক অনুজপ্রতিম দোস্ত এইবার ডেলাওয়ার এ গেল। আপনের কথা কইছিল মনে হয়।
/
রেশনুভা
চমৎকার লাগল লেখাটা ! আপনার এই ডাইরী স্টাইলে লেখা বেশ ভাল হয়। ছবি তো আগেই দেখছি, তবু বলি- ৪ আর ৫ নম্বরটা বেশি ভাল লাগল।
আপনে তো চরম দেখাচ্ছেন; ৩ মাসের ব্যবধানে সাঁতার, সাইক্লিং আর ফোটো তোলা শিখে ফেলতেছেন
......
আগের মত ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডাইতে মন চায় বস
শাহান......অ-নে-ক ধন্যবাদ। হমম, ছবি তো আগে তোমগো দেখাইয়া বুঝি কোনগুলা ভাল হইছে।
সাইক্লিং টা বেশি 'জোশিলা'।
দিলা তো মিয়া পোড়া মনটা আবার পুড়ায়। ইনশাআল্লাহ, নেক্সট সামারে তুমি দেশে গেলে, আমিও চইলা আসুম।
চমৎকার পোস্ট। ছবি লেখা উভয়েই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কষ্ট করে পড়ছেন এবং উৎসাহ দিচ্ছেন। অশেষ ধন্যবাদ।
লেখা তো মন্দ নয়, তবে ঐ চিরচেনা চন্দ্রবিন্দু দোষ চোখে পড়ে। কণ্টক থেকে এলে হয় কাঁটা, আর কর্তন থেকে এলে হয় কাটা। কাঁটাকুঁটি বললে কিছুই হয় না যে। অতিবাহিত করাতেও চন্দ্রবিন্দু নেই, কাজেই "কাঁটিয়েছি"ও হয় না। "ঢুঁকে পড়লাম"টাও ভুল।
বানানগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। চন্দ্রবিন্দু নিয়ে সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে ইদানীং। লিখতে গেলে ভয়েই মনে হয় একটু বেশি করে দিয়ে ফেলি।
দিনপঞ্জিগুলো পড়তে সবসময়ই ভালো লাগে। আপনার লেখাটাও ভাল্লাগল।
ছবির মধ্যে ফুলেরটা তো এক্কেবারে ফাটাফাটি! অসাধারণ! যেন ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে নেয়া, এমন সুন্দর।
শেষ ছবিটাও খুব সুন্দর। শুধু যদি ক্রপ করে আরেক গাছের মাথার সামান্য অংশ নিচ থেকে বাদ দিতেন, তাহলে আরো সুন্দর দেখাতো (আমার মতে)।
লিখুন আরো। ছবি দিয়েন নিয়মিত। ভালো থাইকেন।
ফুলের ছবিটা কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে নেয়া হয় নাই ... :D। তারপরও যখন ওরকম লাগছে ফোটুরের সব ক'টা দাঁত বের হয়ে গেছে।
'সিরাম' চোখ। ঠিক কথা। আমিও খেয়াল করেছিলাম। পরে আর ঠিক করা হয়নি।
আমার কাছে ১ নম্বরটা বেশি ভালো লাগছে। ২ চলে, ৩ ভালোই লাগে নাই আর ৪ এবং ৫ এর কৃতিত্ব আপনেরে দিতে রাজী না...
চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চলুক...
আমরা আসি পিছে পিছে... ঃড
চলুক
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ছবিগুলো খুব সুন্দর।
-জুহের, ঢাকা
আপনার ৩৬০ পাতায় মনে হয় লেখা দেখছিলাম, মাস্টার্স করে বিরক্ত, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারায়ে ফেলছি টাইপ একটা লাইন। যাই হোক, আপনার আবার নেদারল্যান্ড যাবার শুনে ভালো লাগছিল। কোপান মিয়া।:D
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
পড়ালেখার বাদে আর সব ব্যাপারেই আগ্রহ আছে মিয়া; বিশেষ করে নারী জাতি কি ভাবে চিন্তা করে এইটা জানতে মন চায়।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
নতুন মন্তব্য করুন