বাক্সবন্দী জীবন-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০২/০৯/২০০৯ - ১:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবনটা এখন বাক্সতেই কেটে যাচ্ছে। গত এক বছর ধরেই শুরু। আজ এই হোটেল, কাল ঐ দেশ, চাকরী খুজ, চাকরী পাইলে ১ সপ্তার নোটিশে ব্যাগ গুছাও, টিকেট কাট, নতুন জায়গায় নতুন মানুষের সাথে মীট কর, ভীষন বদরাগী মাঝে মাঝে খুবই অমায়িক ‘কাস্টমারের’ সাথে রিলেশন তৈরী কর, আবার ৩/৬ মাস পর কি হবে সেই দুশ্চিন্তা কর... এইতো বেশ কেটে যাচ্ছে আমার ছন্নছাড়া জীবন।

কালকে এসে উঠলাম লেবাননের রাজধানী বৈরুতের মেট্রোপলিটন হোটেল। খুবই ভাল হোটেল, আমার দেখা সেরা, কিছুখন পরে দেখা করলাম আমার এই নতুন এসাইনমেন্টের পার্টনার আন্ধিকার সাথে। কথা বলে জানলাম এই হোটেল এ খেতে গেলে আর এক টাকাও দেশে নিয়ে যেতে হবে নাহ... হোটেল বিল আমাকে দিতে না হলেও খাওয়া আমার পকেট থেকেই দিতে হয়, তো বের হয়ে পড়লাম রাতের বেলা আশে পাশের কোন ফাস্ট ফুড চেইন শপ যদি পাওয়া যায়!!!

এখন বৈরুতের কথা কিছু বলি, বৈরুত অনেকটাই পাহাড় কাটা শহর, আমার দেখা অন্য শহর গুলার সাথে মিল খুজতে গেলে বলতে হবে অনেকটা সিমলার আদলে তৈরী। খালি পার্থক্য হল সিমলায় সমুদ্র ছিল নাহ। যাইহোক ফাস্ট ফুড শপ খুজতে বের হয়ে দেখলাম আমার হোটেল হোচ্ছে আশে পাশের সব থেকে উচু জায়গায়। সব রোডই নিচে নেমে গেসে। যাহোক আন্ধিকা আগে ডিরেকশন দিয়ে দিছিল কোন দিক দিয়ে গেলে কাছের মলে বার্গার কিং পাওয়া যাবে, কিন্তু নিচে নেমে দেখি হোটেলে একটা বিয়ের অনুস্ঠান হোচ্ছে। আমার হোটেলটা খৃস্টান অধ্যুষিত এলাকাই, পাশেই চার্চ। তো কনের বান্ধবীর (bridesmaid) ড্রেস দেখে তো আমার চোখ সরে নাহ। একেতো লেবানীজ মেয়েরা খুবই সুন্দর তারপর বিয়ের অনুসঠান।

যাইহোক ভাঙ্কুভারবাসীর কথা মনে করে রওনা দিলাম নিচের দিকে। কিছুদুর যাওয়ার পর টের পাইলাম রাস্তা হারাইছি। এদিক ওদিক ঘুরতে গিয়ে বুজলাম, নিচে নামা যত সোজা, উপরে উঠা তত সোজা নাহ। বেশ কিছুদুর ঘোরার পর এক গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম আশে পাশে কোন খাওয়ার দোকান আসে কিনা? বলে বামে যাবা, আবার বামে যাবা, আবার বামে যাবা, গিয়ে দেখবা ‘ফাত্তুস’ আসে। ফাত্তুস শুনে তো খিদা চাঙ্গে উঠলো। এমিরাটসের পরের খাওয়া বেশি শুবিধার হয় নাই। আমি লেবানীজ ফুড খুবই ভালা পাই। তো ২ বার বামে যাবার পর দেখলাম পাশে একটা রেস্তরা। ঢুক্তে গিয়ে দেখি এন্ট্রান্স অন্যদিক দিয়ে এবং অন্যদিক আরেকটা পাহাড় টপকায়ে। যাব কিনা এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই পিছে ঘুরে দেখি একটা ব্লাড হাউন্ড ঠিক ১০ হাত দূরে দাঁড়ায় আছে।

বুকে কিছু ফু দিয়ে হাটা শুরু করলাম দেখি সেও পিছে পিছে আসলাম। থেমে পড়লে সেও থেমে পড়ে। ধুকপুক করতে করতে চিন্তা করলাম ঝেড়ে দৌড় মারব নাকি? পরে আস্তে করে হাটা শুরু করে দেখি ব্যাটা চুড়ান্ত এক ধমক মেরে ভাগল অবশেষে।
খাওয়া তখন মাথাই উঠছে। আশে পাশে একটা পেট্রল পাম্প থেকে পিজ্জা কিনে খেয়ে নিলাম আর ফাত্তুসের কথা মনে করে দীর্ঘসশাস ফেললাম।

এইবার আসার আগে দীর্ঘ ৪ মাস বেকার ছিলাম। এই ৪ মাসে সব থেকে বড় কাজটা যেটা হইছে সেটা হচ্ছে ভাঙ্কুভারবাসীর সাথে দেখা। আমার ছন্নছাড়া জীবনটাকে ছকে বাধতে তার চেস্টার অন্ত্য নাই। আমিও বোধহয় লাফাইতে লাফাইতেই যাব। কিন্তু সেটার এখনও অনেক দেরি আছে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিশাল একটা রাজকীয় স্টাইলে শাওয়ার দিলাম। বাথরুমে দেখি একটা শাওয়ার গাউন আছে। ঐটা পরে আয়নার সামনে যাওয়ার পর নিজেকে বাংলা সিনেমার নায়িকার বাপের মত মনে হচ্ছিলো।

এখন অফিসে এসে সবার সাথে পরিচয় হোল। টিম বেশ বড়ই। প্রোজেক্ট ম্যানাজার খুবই ভাল মানুষ মনে হল। মীটিং রুমে বসে এই লেখা লিখতে লিখতে আসে পাশের সুন্দরীদের দেখলাম। লেবানীজ মুসলীমরা আসলেই টেকনিকাল দিকে বেশি নাই। কারন মোটামুটি সবাই এ খৃসঠান এখানে এরিক্সনে। লেবাননে থাকব আর এক সপ্তাহ। সুতরাং জেনে নিচ্ছি কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব। আমার ছন্ন ছাড়া জীবনের পরবর্তী গন্তব্য কাবুল, আফগানিস্তান।

ছন্নছাড়া


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাহ, ব্লগটা দম্পতিতে ভরে যাচ্ছে। খাইছে

তুমি তো ভাই আমার স্বপ্নের চাকরি করো। আমার খুব শখ দুনিয়া ঘুরে ঘুরে কাজ করার। বানান কি এই লেখায়ই ধরে দেবো, নাকি পরের পর্ব থেকে? চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

ইশতি,

প্রথম লেখা হিসাবে নাহয় মাফ করে দিলা।। ঃপ

ভাই আমার চাকরী এই আফ্রিকা আর এশিয়া। "মেরিকা" না বলে খোটা কম শুনতে হয় নাহ।। ঃ(

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তথাস্তু। হাসি

আফ্রিকা আর এশিয়াই ভালো রে ভাই। মেরিকা যে কী কষ্টের জায়গা, তা কেউকে বললেও বুঝবে না। আফ্রিকা থেকে যারা আসে, তারা আমেরিকা একেবারেই পছন্দ করে না। মানুষের সারল্য আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলে প্রায় প্রতিদিন। আমি নিজে তো "কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার" দেখে ঠিক করে ফেলেছি জগতে কোথাও না গেলেও কিছুদিনের জন্য আফ্রিকা যাবো। "আউট অফ আফ্রিকা", "টারজান", "অরণ্যদেব", এমন আরও কতো প্রিয় স্বপ্নের মহাদেশ! [নিক হিসেবে টারজান মন্দ হতো না কিন্তু!]। এশিয়ার জীবন অনেক প্রাণময়। এই ব্যাপারটাও আমেরিকায় নেই। এখানে আছে শুধু কাজ আর কাজ। মন খারাপ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সাধ আছে, বাঁইচা থাকলে একবার আফ্রিকাতে সাফারী করতে যামু। গডস মাস্ট বি ক্রেজি'র কালাহারী না দেখে মরলে পরকালে জবাব দিমু কী?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হায় হায়, কালাহারির কথা তো ভুলেই গেছিলাম! আফ্রিকা যাবোই যাবো। আর দুইটা বছর অপেক্ষা করেন, এক সাথে জঙ্গলে যামু নে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আফ্রিকা যাবোই যাবো।

আমাকে ছাড়া??

...........................
Every Picture Tells a Story

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

'ব্লাড ডায়মন্ড ' বাদ দ্যান ক্যা বস ?? আফ্রিকা একটা অসাধারণ জায়গা।...

লেখকেরে সাধু চলুক
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

এইরকম চাক্রিওয়ালাগুলিরে আমি প্রাণ ভরে হিংসা করি ...

আমার চাকরি শেষ আর তিন দিন পর মন খারাপ

লেখা ভালৈসে, বানান খেয়াল করিস, আর ইমেইল এড্রেস এম্নে দিস না, tanvir321z এট ইয়াহু ডট কম এই ফর্মেটে লিখিস ... নাইলে দেখবি কালকে থেকেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অফার পাওয়া শুরু করসিস দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রবাসিনী এর ছবি

অন্য দিকে তাকাও, মনে রাইখো আমিও তাকাব!

লিখতে থাক, ভাল লাগে পড়তে।

হইয়া আমি দেশান্তরি দেশ বিদেশে ভিরাই তরি রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আল্লা চোখ দিছে তো তাকানোর জন্যই নাকি? এমুন কর ক্যান? দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রবাসিনী এর ছবি

সেও তাকাবে, আমিও তাকাব। সব কিছুই সমান সমান, তাই না?

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরি দেশ বিদেশে ভিরাই তরি রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

অবশ্যই ... দ্যাটস দ্য স্পিরিট ... তবে তুমিও ওর দেখাদেখি মেয়েদের দিকে তাকায়ো না দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সেটা করলেই তো বালক খুশি থাকার কথা। ফাহিম দেখি ডেভিল'স অ্যাডভোকেট!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ভাই জামানা বদল গেয়া, মেয়েরা মেয়েদের দিকে তাকাইলে সেইটা কিঞ্চিত দুশ্চিন্তার ব্যপার দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তাহাকে ক্ষমা করা হইলেও তোমাকে আর ক্ষমা করা হইবে না।
"তাকাবো", "ভালো"।
"হইয়া আমি দেশান্তরি, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে" হওয়া উচিত।
এবার যেদিকে খুশি তাকাও গিয়ে, যাও। হাসি

প্রবাসিনী এর ছবি

ঠিক করে দিসি।

চোখ টিপি

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরি, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

দেশান্তরি, নাকি দেশান্তরী? চিন্তিত
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রবাসিনী এর ছবি

ঠিক জানিনা, বানান আমার weak point!
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরি, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

তোমাকে না, ইশতিয়াককে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কনফিউজড এই বানানটা নিয়ে ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

দেশান্তরী। স্টুপিড ভুল। অন্যগুলো ঠিক করতে গিয়ে এটায় যে টাইপো হচ্ছে খেয়াল করি নাই। হাসি

সমুদ্র এর ছবি

তোর পার্টনার "আন্ধিকা"?! মহিলা না পুরুষ? চোখ টিপি

"Life happens while we are busy planning it"

ছন্নছাড়া এর ছবি

আন্ধিকা ইন্দোনেশিয়ার ছেলে... কোরের এক্সপার্ট

সারোয়ার এর ছবি

ছেলেটা বিশাল কাবিল। খুবই ভাল কাজ জানে। বাংলাদেশে ছিল অনেকদিন।

শাহান এর ছবি

লেখা ভাল হইছে।
দুই দিনের দুনিয়া, ভাল করে দেখে নে। কি আছে জীবনে।
আর কাবুল গিয়া ভাল করে ছবি তুলিস; মুজতবা আলীর কাবুল, আফগানিস্তান!! জীবনে তো যাওয়া হবে না, তোর চোখেই দেখতে হবে।

ছন্নছাড়া এর ছবি

কাবুলে বেশি দেখার চান্স পাব বলে মনে হয় না। হোটেল বন্দি হয়েই থাকতে হবে মেইনলি।

মামুন হক এর ছবি

লিখলা তাইলে তানভীর , ডেইলী অপডেট দিও পারলে হাসি

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্বাগতম। হাসি

কিন্তু না বলেই চলে গেলি! ব্যাটা ফাজিল। নিয়মিত লেখ। পোস্ট করার আগে একবার দেখে নিলে, বানান ভুল যতটা সম্ভব এড়ানো যাবে। বাকিটা আস্তে ধীরে অভ্যাসে ঠিক হয়ে যাবে।

তা, 'সাজিয়া'-ই সেই বালিকা! এইভাবে এইখানে দেখা হয়ে যাবে ওর সাথে, ভাবিনি খাইছে

miLu এর ছবি

জ্যোতি ভাই লেখা ভাল হইছে। ছবি upload কইরেন। আরেকটা কথা meeting এর সময় কেমনে লিখলেন?

মীম এর ছবি

পরে ভালো লাগলো

মীম এর ছবি

ভালো লিখছিস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।