২৭ আগষ্ট সকালে প্রথম আলো হাতে নিতেই একটা খবরে এসে চোখ আটকে গেল, মেয়ে জিপিএ- ৫ না পাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বদলি করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খবরটি পড়ে দারুনভাবে লজ্জিত হয়েছি। সন্তানের সাফল্য সব মা-বাবা কামনা করেন। মেয়ে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় মেয়র কষ্ট পেতে পারেন এবং পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই জন্য তিনি তো শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বদলি করার হুমকি দিতে পারেন না। চেয়ারম্যান তো আর তাঁর মেয়ের খাতা দেখেন নি বা প্রাপ্য জিপিএ-৫ আটকে রাখেন নি কিংবা খাতা পুনরায় নিরিক্ষার সময় সেখানে কোন ভুল ধরা পড়েনি। তাহলে বোর্ড চেয়ারম্যানের দোষটা কোথায় যে তাঁকে বদলির হুমকি দিতে হবে ? শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বদলি করার এখতিয়ার তো তার নেই। এই ধরনের কথা বলে মেয়র নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। মেয়র পদটি একটি নগরের সবচেয়ে দায়িত্বশীল পদ বলে বিবেচিত। তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি সঠিকভাবে পালন করবেন এটাই জনগন প্রত্যাশা করে। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়র কে নগর রক্ষক বা নগর পিতা বলা হয়। তবে কি তিনি ক্ষমতাসীন দলের মেয়র তাই ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়েছেন। তিনি কেন ভুলে গেলেন তাঁর কর্মকান্ডের সাথে নিজের দলের এবং তাঁর পিতা এ এইচ এম কামরুজ্জামান হেনার ভাবমূর্তি জড়িত।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সর্বস্তরে আধিপত্য বিস্তার করে তখন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিন বদলের ডাক মানুষকে খুবই আশান্বিত করেছিল। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেছিল এবার সত্যিকারের একটা পরিবর্তন আসবে। অতিতের রাজনৈতিক হানাহানি, মিথ্যাচার, ক্ষমতার প্রভাব, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ভুলে সত্যিকারের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি মিলবে। কিন্তু মানুষ এখন আশা-নিরাশার এক দোলাচলে দুলছে। সরকার বারবার দিন বদলের কথা বললেও খোদ নিজ দলের লোকজনই বেশ অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে সেই চিত্রই ফুটে উঠে।
বিগত দিনে টেন্ডার নিয়ে অনেক ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা সব সময় চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজটি নিজের আয়ত্বে নিতে। এর জন্য তারা টেন্ডারের বাক্স রেখেছে নিজেদের দখলে । বাইরের কোন মানুষ দরপত্র জমা দিতে পারেনি এমনকি দরপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। ঠিক একই ঘটনা ঘটালো ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা খাদ্য ভবনের টেন্ডার নিয়ে। প্রশাসনের লোকজনের সামনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তারা ক্ষমতাসীনদের ভয়ে নির্লিপ্ত ছিল। এই ঘটনা প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে।
রমজানের শুরু থেকেই বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ বাণিজ্যমন্ত্রী রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর সেই কথার বাস্তব কোন প্রতিফলন চোখে পড়েনি। ফলে রোজার মাসে নিন্ম এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি। সরকার টিসিবির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ফলপ্রসু হয়নি। আবার টিসিবি ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের কথা শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে দলীয় বিবেচনায় ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে যারা অনেকেই ব্যবসায়ী নয়। টিভিতে দেখলাম, সাংবাদিকরা মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, রাজনীতি করলে কি ব্যবসা করা যাবেনা ? ঠিকইতো বলেছেন, রাজনীতিবিদদের তো ব্যবসা করতে কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়। সমস্ত নাগরিক অধিকার তাদের আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে ব্যবসা করতে হবে নিয়ম নীতির মধ্যে থেকেই। রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়ম বর্হিভুতভাবে ডিলারশীপ নিলে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রশাসনের সর্বত্র একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। বিভিন্ন গনমাধ্যমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনেদা, যশোর নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সেখান থেকে যে তথ্য রেরিয়ে আসছে তা সরকারের জন্য মোটেই সুখকর নয়। সেখানে কার্যত কোন প্রশাসন নেই, সবই চালাচ্ছে সাংসদের ঘনিষ্টজনরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বললেও প্রতি দিনই এক বা একাধিক খুনের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া ঈদ সামনে রেখে বেড়ে গেছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ব।
নদী ভরাটের ফলে আমাদের নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। যেটা আমাদের পরিবেশের জন্য বিপদজনক। এব্যাপারে গত ২৫ জুন হাইকোর্ট এশটি নির্দেশনাও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একদিকে নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফেরানোর কথা বলছেন অন্যদিকে অব্যাহত রয়েছে নদী দখল। আর এই দখলদারিত্বের সাথে জড়িত খোদ সরকারী দলের লোকজন।
বিগত দিনে ঈদের আগে গার্মেন্টস শিল্পে এক ধরনের শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা গেছে। এবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই ধরনের পরিস্থিতি ঘটবে না বলে গার্মেন্টস মালিকদের আশ্বস্ত করেছেন। অথচ তিনি যেদিন এই আশ্বাস দেন ঠিক সেই দিনই ফতুল্লায় এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে।
বর্তমান সরকারের বয়স মাত্র আট মাস। এই আট মাসের কর্মকান্ড দিয়ে সরকার এবং সরকার দলীয় লোকজনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবেনা। উপরের ঘটনাগুলোকে অনেকেই হয়ত এক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা অভিহিত করতে পারে কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ছোট চারা গাছটিই একদিন প্রকান্ড মহীরুহে রুপান্তরিত হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন বলতে শুরু করেছে, আওয়ামী লীগের দিন বদল শুরু হয়ে গেছে! আশা করি, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে কর্মীদের লাগাম টেনে ধরবেন, তা না হলে তাদের পরিণতিও বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের থেকে ভিন্ন কিছু হবেনা।
রেনেসাঁ
মন্তব্য
এসব নিয়ে কথা বলে কোন লাভ নাই। আমাদের দেশের সরকার এমনই হয়।
ধন্যবাদ।
সরকার এতদিন আমার গুডবুকে ছিলো। এখন অন্যরকম ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।
এরকম চললে আপনার মত অনেকেই অন্যরকম ভাববে.........
যারা দেশের চেয়ে দলকে বড় মনে করে, দলের চেয়ে ব্যাক্তিকে বড় মনে করে, তাদের থেকে এর চেয়ে আর কি বেশি আশা করতে পারি আমরা। সমাধাণ হল আসুন আমরাও , হয় নৌকা না হয় ধাণের শীষে, নাম লেখাই। সবচেয়ে অভাগা আমরাই, যাদের কোন দল নেই।
প্রচলিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।
আপনার কথা শুনে এই মুভির কথা মনে পড়ে গেলো - এতো আশা দিয়ে আরো বেশি কেড়ে নেয়া.
ধন্যবাদ।
দিন বদলায় ঠিকই। কিন্তু আমাদের চরিত্রেরই কেবল পরিবর্তন হয় না!
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আসলে চেনা মানুষগুলিই আমাদের চারপাশে!!!!!!!!!!!
এত হতাশ হওয়ার কিছু নাই। নতুন সরকার। ছয় মাসেই পাঁচ বছরের সরকারকে মূল্যায়নের সময় আসেনি। আগের সরকারের কর্মকাণ্ড তো আরও খারাপ ছিল, সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না। আমি মনে করি, এই সরকারকে আরও সময় দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এখনও সদিচ্ছা আছে বলেই মনে হয়। দেখা যাক, তারা দলীয় ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা?
লীনা
এরকম যদি চলে আবার রাজাকারের গাড়িতে উড়বে আমাদের প্রিয় লাল সবুজের পতাকা !
হতাশ এখনও হইনি তবে সরকার প্রতিদিনই হতাশ করছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখতে চাই না।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ধন্যবাদ ফিরোজ জামান চৌধুরী।
তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না রাজাকাররা এখনও সক্রিয়!
নতুন মন্তব্য করুন