সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৯/২০০৯ - ৯:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ড. আনু মুহাম্মদ পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শোনার পর খুবই মন খারাপ হয়েছিল। ধিক্কার জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একজন শিক্ষকের ওপর এই বর্বরোচিত হামলার ধিক্কার বা নিন্দা জানাবার ভাষা আসলে আমার জানা নেই। যেটুকু লেখাপড়া করেছি সেখানে শিক্ষক লাঞ্চিত হলে কি বলে তার নিন্দা জানাতে হবে তা আমাদের শেখানো হয়নি। কারণ শিক্ষকরা কখনো লাঞ্চনার শিকার হতে পারেন না, এটাই চিরায়ত সত্য।

ড. আনু মুহাম্মদ এর ওপর হামলার পর ভেবেছিলাম কিছুই লিখব না কাউকে কিছু বলব না। বলে লাভ কি? জয়নাল হাজারী যদি জামিনে মুক্তি মুক্তি পায় তাহলে আনু মুহাম্মদ কে পেটাতে কোন দোষ কোথায়? বাঘকে খাঁচার বাইরে ছেড়ে দিলে তো মানুষকেই খাঁচাতে ভরতে হবে। মনে আছে ১৯৯২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক কে পিটিয়েছিল তৎকালিন বিএনপি সরকারের পুলিশ বাহিনী। তার অপরাধ ছিল তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে র‌্যালী বের করেছিলেন। আজও সেই ঘটনার কোন বিচার হয়নি । আর শিক্ষকের বিচার করবেই বা কে? শিক্ষকের তো আর কোন বিশেষ কোন শক্তি নেই যে তার বিচার না করলে সরকারের গদি উল্টে যেতে পারে। বরং ছোট কাল থেকেই ব্যাকরণে পড়ে আসছি-”The teachers are poor”

দেশের ও দেশের মানুষের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই নির্মম লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ড. আনু মুহাম্মদ তাঁদেরই একজন। সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষই কোন না কোন ভাবে নির্যাতন নিপিড়নের শিকার হয়েছে এই পুলিশ বাহিনীর দ্বারা। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা পুলিশ কে ব্যবহার করেছে আন্দোলন সংগ্রাম দমনের মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে। আজীবন এই মেরুদন্ডহীন পুলিশ সরকারের দাসত্ব করে এসেছে সরকারের । এযেন সরকারের নিজস্ব এক লাঠিয়াল বাহিনী। বিস্তর উদাহরণ ও প্রমান আছে তাদের ক্ষমতা অপব্যাবহারের। ইতিহাস হয়ে আছে সেই সব জঘন্য অধ্যায়গুলো।। তার সর্বশেষ স্খলন হলো অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মত বিশিষ্টি জনকে লাটিপেটা করা। হেলমেট পরা দাঙ্গা পুলিশ পিটিয়ে শুধু তাঁর ঠ্যাং ভাঙ্গেনি, বরং পিটিয়ে হাড্ডি গুড়া করেছে "দেশপ্রেমের"।

জনগনকে পেটানোর ব্যাপারে আমাদের পুলিশ বরাবরই অতি উৎসাহী। আর পেটানার পর তাদের কোন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়ায় সেই উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। চিটাগাং ষ্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বেঢ়ড়ক লাঠিপেটা করেছিল এই পুলিশ। এসি আকবরের লাথি আর কিল-ঘুসির আঘাতে এক বয়স্ক সাংবাদিকের ধরাসায়ী হওয়ার দৃশ্য মনে হলে আজও বিষ্মিত হই। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় নির্মম পুলিশী হামলার শিকার হয়েছেন, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহম্মেদ, দিলীপ বড়ুয়া সহ অসংখ্য নেতা কর্মী। আসাদুজ্জামান নূর ও রেহাই পাননি তাদের হাত থেকে। মহিলাদের জাপটে ধরে টেনে হিচড়ে পুলিশের গাড়িতে উঠানোর দৃশ্য আমরা আজও ভুলিনি। মাত্র কয়েকদিন আগে ব্যবসায়ী আজাদের উপর নির্যাতনের অধ্যায় শেষ হলো তার জামিনের মাঝ দিয়ে। সাগরের তিনটি ব্লগ ইজারা বাতিলের দাবিতে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বন্দর রক্ষা কমিটির পেট্রোবাংলার অফিস ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ আরেকটা লজ্জার অবতারণা হলো মাত্র।

যদিও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন । সরকারের উচিত নিজেদের স্বার্থেই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দোষী পুলিশদের শাস্তি নিশ্চিত করা। শিক্ষক হেনস্তার ফল কত ভয়াবহ হতে পারে তা টের পেয়েছে গত তত্বাবধায়ক সরকার। আশা করি সেই ঘটনাটি বর্তমান সরকারের জন্য শিক্ষনীয় হবে।

রেনেসাঁ


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি:
যদিও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইতোমধ্যে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ।

সব সরকারের আমলেই আমাদের এমন দৃশ্য বাধ্য হয়ে দেখতে হয় আর এমন কথা শুনতে হয়। কী করলে যে এমন অস্থার অবসান হবে...
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ জুলিয়ান সিদ্দিকী। এই তথাকথিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

'শিক্ষক হেনস্তার ফল কত ভয়াবহ হতে পারে তা টের পেয়েছে গত তত্বাবধায়ক সরকার। আশা করি সেই ঘটনাটি বর্তমান সরকারের জন্য শিক্ষনীয় হবে। '

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ফিরোজ জামান চৌধুরী।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সাহসি লেখার জন্য্ ধ‌‌ন‌্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদের দালালরা কি মানুষর কথা ভাবে?
অনন্ত মাহফুজ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অনন্ত মাহফুজ ।

অফটপিক: আপনি কি রাবি থেকে? জিয়া হল, ইংরেজী বিভাগ, অনুশীলন নাট্যদল, এখন মাষ্টারী, ঘরণী লাইজু ইত্যাদি ইত্যাদি---

যদি তাই হয় আমি রবিন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।