দুশ্চিন্তা তাকে আর এই অর্জনের পরমানন্দগুলো পেতে দিচ্ছে না। তাছাড়া, আনন্দানুভূতিগুলো গত ছয়মাস ধরে ছিন্ন ছিন্ন করে তিনি বহুবার পেয়েছেন। যে একই সময়টাতে তিনি প্রণালীবদ্ধভাবে বিভিন্ন নিরীক্ষা পরিচালনা করছিলেন এবং প্রাথমিক আশাব্যঞ্জক ফলাফলগুলোকে যাচাই করে যাচ্ছিলেন। সে সময়টাতে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন তার ছাত্রজীবনে। যখন সফলতার ইঙ্গিত করে, গবেষণার এমন প্রতিটি ফলাফল তাকে পরমপ্রাপ্তির আনন্দ দিত।
কিন্তু এখন তার কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা। তাকে ফিরে আসতে হচ্ছে আবার তার মধ্যবয়সের দায়িত্বপূর্ণ জীবনে।
ধ্রুব পিছন ফিরে দেখলেন। ওখানটায় তার আয়নাটা বসানো। কিন্তু ঠিক নিজের অবয়বকে দেখবার জন্য তিনি পিছন ফিরেননি। ফিরেছেন অতীতের ধ্রুবকে দেখার জন্য। যেন পিছন ঘুরেই তিনি তার অতীতকে দেখে ফেলেছেন, এমন ভঙ্গিতে তিনি আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
তার দৃষ্টি আয়নায় স্থির। কিন্তু তার অবস্থান এখন দূর অতীতে। প্রায় কুড়ি বছর আগে।
...
অন্তর্জাল আর্কাইভ থেকে পাওয়া যায়, ধ্রুব ছাত্রাবস্থায় তার স্বজাতি-ভাষার একটি স্বনামধন্য জার্নালে লিখছেনঃ
জীবনকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বুঝতে হলে তার সংজ্ঞাকে ভেঙ্গে অনুপুঙ্খস্তরে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে রয়েছে কেবল ইন্দ্রিয়লব্ধ ইনপুট এবং ক্রিয়া সঞ্চালন বা আউটপুট। মাঝখানে রয়েছে একটি যাদুরবাক্স - প্রাণময় অস্তিত্ব। এই যাদুরবাক্স তার যাদুবলে জীবনকে যাপন করে যাচ্ছে - তথা অসংখ্য অপশনের মাঝে পছন্দসই ক্রিয়াসম্পাদনের চেষ্টা করে যাচ্ছে, যে ক্রিয়া সে বাছাই করছে মূলত তার ইন্দ্রিয়লব্ধ ইনপুট তথা অনুভূতিগুলোর উপর ভিত্তি করে।
জীবনকে বোঝার অর্থ তখন দাঁড়ায় এই যাদুরবাক্সের যাদুকে বোঝা, এই যাদুকে আবিষ্কার করা। আমাদের অনুরূপ প্রাণ তৈরি করার অর্থও তখন তাই দাঁড়ায়। এবং অবাক হবার ব্যাপার নয় যে, যখন এই যাদুর বাক্স করায়ত্ত হয়ে যাবে অনুপুঙ্খস্তরে, গাণিতিক শ্রেণীমালায়, সেই একই ক্ষমতা দিয়ে তখন সম্ভব হবে সমাজ, দেশ, জাতি, কোন বিশেষ প্রাণীকূল - যেমন মানবজাতি এবং তদ্রুপ যেকোনকিছুর ভবিষ্যত সন্তোষজনকভাবে অনুমান করা।
...
তরুণ সেই ধ্রুব ও মধ্যবয়স্ক বিজ্ঞানী ধ্রুব নির্ঘাত একই সত্তা নয়। দুটি ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। এমনকি দুজনের স্মৃতি বা সঞ্চিত অভিজ্ঞতাও এক নয়। প্রথম জনের সঞ্চিত অনেক স্মৃতি এখন দ্বিতীয়জনের কাছে বিলীয়মান, অন্তত অস্পষ্ট। অন্যদিকে দ্বিতীয়জন আহরণ করেছেন আরো অজস্র নতুন অভিজ্ঞতা। ছাত্র ধ্রুব নিজেকে যেভাবে চিনতেন, বিজ্ঞানী ধ্রুব অতীতের সেই ধ্রুবকে তাই সম্ভবত সেভাবে আর চেনেন না। স্মৃতি ধোঁকা দিয়ে থাকে। তাই অতীত-সত্তার স্বরূপ উদ্ঘাটনের সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর একটি হল নিজের পুরনো লেখাগুলো খুলে দেখা। যে পথ পাড়ি দিয়ে বিজ্ঞানী ধ্রুবের আবির্ভাব, এভাবে সেই পথকে ফিরে দেখা।
...
সে শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষদিকে লেখা ধ্রুবের সেদিনের জার্নালটি শেষ হয়েছিল এভাবেঃ
আমাদের গবেষণা কর্মে আমরা ক’জন বিশ্বাস করে থাকি, জীবনের অর্থ উদ্ধার বলতে বোঝায় ইনপুট আউটপুট সম্বলিত এই যাদুরবাক্সের বা মানবপ্রাণের স্বরূপ উদ্ঘাটন, অথবা অনুরূপ প্রাণময় অস্তিত্বের উদ্ভাবন।
সেই যাদুরবাক্স করায়ত্তের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অবদান যেমন মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর মস্তিষ্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ ক্রিয়াপদ্ধতি উদ্ঘাটনের মাধ্যমে ঘটছে, তেমনি নিরপেক্ষ, তাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমেও ঘটছে। অনেকটা এভাবে চিন্তা করা যায়, যেন গণনাতত্ত্বে অজ্ঞ একটি গোষ্ঠির হাতে এসে পড়েছে একটি আধুনিক কম্পিউটার। তাদের একদল চেষ্টা করছে কম্পিউটারটির প্রতিটি অংশ, চিপ ব্যবচ্ছেদ করে এর কর্মপদ্ধতি উদ্ঘাটনের। আর আরেকটি দল চেষ্টা করছে স্বাধীনভাবে কম্পিউটার তৈরির তত্ত্ব ও কৌশলকে পুনর্নির্মাণের। একটি হল পুনরুদ্ঘাটন-গবেষণা, আরেকটি হল নিরপেক্ষ, তাত্ত্বিক গবেষণা। যাদুরবাক্স করায়ত্তের গবেষণায় প্রথম ধরণের প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে নিউরোবিজ্ঞানকে। আর সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধরণের প্রচেষ্টা হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা বা এ.আই. (আর্টিফিশল ইন্টেলিজান্স)।
‘নিরপেক্ষ’, তাত্ত্বিক গবেষণার দর্শন এবং অনুপ্রেরণা অনেক সময় পুনরুদ্ঘাটন-গবেষণার লব্ধফল থেকেই এসে থাকে। তথাপি আমার অনুমান, মানব মস্তিষ্কের ক্রিয়াপদ্ধতি নিউরোবিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বুঝে উঠার আগেই এআইয়ের তাত্ত্বিক গবেষণা নিরপেক্ষভাবে একটি প্রাণময় যাদুরবাক্স উপহার দিবে, যা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে হবে ভিন্ন প্রকৃতির। কিছু কিছু অভাবনীয় প্রকৃতি তার মাঝে দেখা যাবে, যা মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। মানুষের কিছু কিছু অবিচ্ছেদ্য গুণও তার মাঝে থাকবে অনুপস্থিত। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তারা হবে মানুষের ক্ষমতার সমকক্ষ। এবং শক্তিশালী যান্ত্রিক শরীরে ভর করে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সে হবে মানুষের চেয়েও ক্ষমতাধর।
মন্তব্য
সচলায়তনে প্রথম লিখলেন, আপনার নাম আগে দেখি নি ?
স্বাগতম জানাই ।
ভাষাটা একটু মসৃণ করতে পারলে আমার মত যারা, এআই নাই তারাও বুঝতে পারত ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আপনার এআই ঈর্ষণীয় এনকিদু। আমার রোবটটা এখনো আমাকে স্বাগতম জানাতেও শেখেনি, তেমন কোনো ইচ্ছাও পরিলক্ষণ করা যাচ্ছে না।
প্রথম লিখছি।
কঠিন ভাষা ব্যবহার আমার ভাষা ব্যবহারের একটি দুর্বলতা। এই শিল্প কোনকালে করায়ত্ত করে উঠতে পারবো সে কথা দিতে পারছি না। তবে বিষয়বস্তু আরো বিস্তর ব্যাখ্যার মাধ্যমে কিছুটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো।
ধ্রুব বর্ণন
dhrubo bornon
সচলায়তনে স্বাগতম।
আপনার প্রথম লেখা দিয়েই আপনি আমার নিয়মিত পাঠ তালিকায় ঠাই করে নিলেন। আরো লিখতে থাকুন। পরিভাষা ব্যবহারে বেশ যত্ন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে আপনার চিন্তার জগৎ সম্পর্কে কৌতুহল স্রৃষ্টি করেছে এই লেখা।
শুভেচ্ছা।
লিখতে থাকুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনার এই যত্ন দিয়ে পড়া আমার জন্য অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। চিন্তাগুলোকে লিপিবদ্ধ করা কঠিন কাজ। তথাপি চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এতটা বিশদ দেবার চেষ্টা করবো যাতে আপনারা বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনাও করতে পারেন।
ধ্রুব বর্ণন
dhrubo bornon
অলঙ্কারময় ভাষার কারণে ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
পুনরালোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো। আর মন্তব্য আদান-প্রদানের এই সুবিধাটুকু যদি দিতে চান, তাহলে এখানেই জানতে চাইতে পারেন, কোন অংশগুলো সহজ করতে পারিনি।
ধ্রুব বর্ণন
dhrubo bornon
মনে হলো খটোমটো কোন অনুবাদ পড়ছি, তাই আগ্রহটাও কমে গেলো। সহজ করে না বললে (আমার মতন) সাধারণ পাঠক এই উচ্চতর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক আলাপ কিভাবে বুঝবে বলুন।
আগামীবারের লেখায় আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি কিছু সহজ করতে পারি।
বিজ্ঞানের অনেক পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারই বাংলায় সীমিত। হয়তো ব্যাপারগুলো নিয়ে বাংলায় আমাদের আলোচনার অভাবের কারণেই। কিন্তু শব্দগুলোর প্রতিবর্ণীকরণে আমার আপত্তি রয়েছে। আমরা ব্যাপারগুলোকে নিজের ভাষার শব্দে আলোচনা করতে থাকলে এই অভাব দূর হতে পারে।
আর পরিভাষার ব্যবহার ছাড়া বাকি যে কারণগুলোর জন্য লেখাটি অনুবাদ মনে হয়েছে, তা একান্তই আমার ভাষার দুর্বলতা।
ধ্রুব বর্ণন
dhrubo bornon
লেখাটা সম্ভবত আরেকটু বড় পরিসর দাবী করেছিলো। কিছুটা ব্যাখ্যা, কিছুটা নমুনা উদাহরণ, এই আর কি ! জোর করে ছেটে দিলেন নাকি ?
সচলে স্বাগতম !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনি ঠিক ধরেছেন। তবে আমি লেখাটিকে আরো বড় লেখার একটি ছোট অংশ, সূচনা হিসেবে দেখছি।
যেহেতু কেবল লেখার জন্য তৈরী করিনি, ধারণাগুলো তাই আরো ব্যাখা এবং উদাহরণের দাবিদার। যা প্রদান করলে আপনাদের সাথে এ নিয়ে তর্কও করতে পারবো।
তবে ধ্রুবের ঐদিনের জার্নাল এভাবেই শেষ হয়েছিল কিনা!
ধ্রুব বর্ণন
dhrubo bornon
বিষয়বস্তুর ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে, যতটা বুঝেছি আরেকটু ব্যাখ্যা হলে ভালো হতো। আর ভাষাটা মোলায়েম হলে গড়গড়িয়ে পড়া যেত।
বিদেশী ভাষার ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করাটা খুবই ভালো লেগেছে। সচলে স্বাগতম!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আপনার আগ্রহ জেনে উৎসাহিত হলাম। আগামী লেখাগুলোতে ধীরে ধীরে বিশদ ব্যাখ্যায় যাবার চেষ্টা করবো। ওগুলো পরিহার করতে আমারও বেশ ভালো লেগেছে।
সচলে স্বাগতম!
প্রথম লেখা হিসেবে বেশ কোতুহলোদ্দীপক! [বানান গোলমাল হলে ক্ষমাপ্রার্থী!] একটু খটোমটো, তবে বাংলার ব্যবহারটা খুব পছন্দ হলো। আরও লিখুন।
---------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সচলে স্বাগতম!
প্রথম লেখা হিসেবে বেশ কোতুহলোদ্দীপক! [বানান গোলমাল হলে ক্ষমাপ্রার্থী!] একটু খটোমটো, তবে বাংলার ব্যবহারটা খুব পছন্দ হলো। আরও লিখুন।
---------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এই খটোমটো ভাষায় দ্বিতীয়টি লিখতে গেলে কৌতুহল কতটুকু থাকবে সন্দেহ।
সচলায়তনে স্বাগতম।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ইন্টারেস্টিং কিন্তু বেশ শক্ত। দ্বিতীয় লেখাটা অনেক সহজবোধ্য লিখেছেন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নতুন মন্তব্য করুন