গরীব
সাউথ কোরিয়া
----------------------------------------------------------------------
আমরা বাংলাদেশের মানুষ, সুনাম আমদের সবদিক থেকেই আছে, সেটা একসময়ের ধন দৌলতের জন্য আবার মীরজাফরের বেঈমানীর জন্য, আধুনিক কালে এসে দুর্নীতিতে সেরা হবার জন্য হোক , সুনাম আমাদের সব সময়ই ছিল। দেশ ভাগ হয়েছে কিন্তু আজ এ বাংলার মানুষ ও বাংলার জন্য কাঁদে, ও বাংলার মানুষেরাও কষ্টে উদাস হয়। কি হতে কি হয়ে গেল আমরা জানি না কিন্তু ইতিহাস বলে এ উপমহাদেশের মানুষ কখন বিভাজন চায়নি, কিন্তু কপালে থাকলে ঠেকায় কে? একবার শের-ই-বাংলা ফজলুল হক কে একজন প্রশ্ন করেছিলেন “আপনারা যে এত বিভাজন বিভাজন করছেন , দেশ ভেঙ্গে গেলে শক্তি কমে যায় সেটার কি হবে ভেবে দেখেছেন কখনো?” না, আজকের লেখাটা এই সব নিয়ে নয়। আসলে যেই মানুষকে নিয়ে আজ লিখব সেই মানুষ আমাদের গর্ব, কিন্তু আমরা তাকে অনেকেই চিনিনা, কেন চিনিনা সেটাও খুব সহজ , ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাঙ্গালিদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস প্রায় মুছেই ফেলতে চলেছে। ২০০ বছর ঐপনিবেশিক শাসন কখনোই মেনে নেয় নাই বাঙ্গালী কিন্তু তারপর ও একটা কথা বলতেই হয় , প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে আমরা ভারতবাসি কবে স্বাধীনতা পেতাম সেটা বড় প্রশ্ন। এই উপমহাদেশ স্বাধীন হবার কথা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরই কিন্তু ব্রিটিশ ছাড়বে কেন? প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমান ক্ষতি ব্রিটিশের হয়েছিল তা তুলে নেবার জন্য এই উপমহাদেশের মানুষ ছাড়া আর কোন আদর্শ জায়গা ছিল না। পরিনতিতে আর কিছুদিন আমাদের থাকতে হল অন্যের গোলাম হয়ে! না, আজকে এইসবও বলব না । আজকের কথা আমাদের নাম না জানা এমন একজন মানুষ যাকে ধরা হয় আমাদের বাংলার মানুষের ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবের প্রথম আত্মত্যাগী হিসাবে।
প্রফুল্ল চাকীর জন্ম ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে (বর্তমানে যা বাংলাদেশের অন্তর্গত)। নবম শ্রেনীতে পড়ার সময় পূর্ব বঙ্গ সরকারের কারলিসল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহনের দায়ে তাঁকে রংপুর জেলা স্কুল হতে বহিস্কার করা হয়। তিনি এর পর রংপুর ন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে পড়ার সময় জীতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীর সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়, এবং তিনি বিপ্লবী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন। বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। যেখানে প্রফুল্ল যুগান্তর দলে যোগ দেন। তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে (১৮৫৪-১৯৩৫) হত্যা করা। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয় নাই। এর পর প্রফুল্ল চাকী ক্ষুদিরাম বসুর সাথে কলকাতা প্রেসিডেন্সী ও পরে বিহারের মুজাফফরাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাকে ১৯০৮ খ্রীস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা বেলায় হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশদ্বারে তাঁরা কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ির জন্য ওঁত পেতে থাকেন। একটি গাড়ি আসতে দেখে তাঁরা বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না, বরং দুইজন ব্রিটিশ মহিলা মারা যান। প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম তৎক্ষনাৎ ঐ এলাকা ত্যাগ করেন। প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম আলাদা পথে পালাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ট্রেনে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক পুলিশ দারোগা সমস্তিপুর রেল স্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন। ধাওয়ার সম্মুখীন হয়ে প্রফুল্ল পালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোণঠাসা হয়ে পড়ে প্রফুল্ল ধরা দেওয়ার বদলে আত্মাহুতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম পরবর্তীতে ধরা পড়েন এবং তাঁকে ফাঁসী দেওয়া হয়।
ধরা পড়ার কাহিনীও খুবই কষ্টদায়ক কারন প্রফুল্ল চাকী কে সন্দেহ করা হয় তার কথা শুনে, তিনি যেহেতু এই বাংলার সুতরাং সেই পুলিশ তাকে সন্দেহ করেন কথা শুনে। ক্ষুধিরামকে ও ধরিয়ে দেওয়া হয় একই ভাবে , পালাতে গিয়ে তিনি অন্য এলাকায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে এক দোকানদার তাকে সন্দেহ করে এই ভেবে যে সে ছিল অপরিচিত এবং এত সকালে ক্ষুদিরাম সেই এলাকায় ঘুরাঘুরি করছিলেন তাই। দোকানদার আগেই শুনেছিলেন বোমার কথা তাই তিনি ক্ষুধিরাম কে বসিয়ে রেখে পুলিশ কে খবর দেন। এই হল আমাদের আসল পরিচয়। না পরিচয় আমাদের এখন ও প্রকাশ হয় নাই। একটু বাকি আছে। শ্মশান যাত্রীর নরক উল্লাস নামে একটি বই পড়েছিলাম , তো সেখানে লেখক সাজাহান সাকিদার লিখেছিলেন যে বিভাজনের পর প্রফুল্ল চাকিদের সমস্ত সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে , শুধু তাই নয় যে গ্রামের মানুষ ছিলেন তিনি সেই গ্রামের মানুষও তাকে চেনে না। সেখানে তার জন্য নির্মিত হয়নি কোন মিনার , আজ আমরা এই বাংলার মানুষ তার জন্য কেউ হয়তো বলিনা “তুমি ছিলে আমাদেরই একজন”। সময়টা হয়ত তখন ব্রিটিশদের ছিল কিন্তু তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন এই আমাদেরই মুক্তির জন্য , এই আমাদের মাথা উচুঁ করবার জন্য। আমাদের মাথা তিনি ঠিকই রেখে গেছেন উচুতে কিন্তু আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়োজন মনে করি কি? কিছুই করতে পারব না তার জন্য একক ভাবে কিন্তু এই মানুষটি থাক আমদের মাঝে অমর হয়ে , আমরা বলে যাব আমাদের সন্তানদের তার বিরত্বের কথা। মাথায় গুলি করবার আগে হয়ত তিনি ভেবেছিলেন আপনার আমার কথা...হয়তো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন দেশের মাটিতে তার সন্তান খেলা করছে...
আমি একদিন থাকবো না
তুমি রবে, তোমরা রবে।
আমার যে কাজ
আমি রেখে গেলাম অসমাপ্ত
রেখে গেছি তা তোমার ই জন্যে।
আমাকে থামিয়ে দিয়েছে সময়
তোমাকেও একদিন থামিয়ে দেবে
তবু ভয় করনাকো, থেকোনাকো বসে।
রেখে যেও এই দেশটাকে
যেমন পেয়েছিলে,
তার চেয়েও সুন্দর করে।
মন্তব্য
লাল সালাম।
রেনেসাঁ
এই অংশই সম্ভবত লেখক শুধু ইউকির থেকে নিয়েছেন। তথ্যসূত্র উল্লেখ করা উচিত ছিল।
রাগিব ভাই বললেন " সিংহভাগ" । এতটুকু সিংহভাগ হয় কিভাবে?
যাই হোক লেখক হয়ত পরবর্তিতে তথ্যসূত্র উল্লেখ করবেন বলে আশা করছি।
আমিও রাগিবের সাথে একমত। আমার মনে হয় লেখাটির মাঝের অংশ হুবুহু 'কপি পেষ্ট'। আমি মডুদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি লেখাটির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে। সচলের জন্য এটি ইতিবাচক নয়।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আমি কমেন্টস করেছি , কপি এর বিষয়ে। জন্ম পরিচয় একই এখানে লেখার ধরনটা ভিন্ন করা ছাড়া তথ্য পরিবর্তনের কোন অবকাশ ছিল না। তাই আমি এটা কপি করেছি। আমি পড়েই শিখেছি, তাই যেখানে যে তথ্য উল্ল্যেখ করা দরকার ছিল এবং পেড়েছি সেটা করেছি কিন্তু আমি এখন ও লিঙ্ক দেওয়া , ছবি দেওয়ার কাজটি করতে উস্তাদ হয়ে উঠতে পারি নাই বলে এই অনাকাংক্ষিত ভুলের জন্য দুঃখিত। এটা আমার দ্বিতীয় লেখা পরের বার অবশ্যই লিঙ্ক দেব। সাজাহান সাকিদারের বইটা আমি ১৯৯৯ সালে পড়েছিলাম ভুলে যাওয়াটায় স্বাভাবিক ছিল কিন্তু মনে ছিল বলেই উল্ল্যেখ করেছি।
রাগিব ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
গরীব
মোস্তফা
সাউথ কোরিয়া
- মাইনাস মারলো ক্যাঠায়?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এই লেখার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত। সচলায়তন কপিরাইট মেনে চলার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। নিজস্ব নয়, এমন কোন লেখা, গান, কিংবা চিত্র ব্যবহার করলে তার উৎস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
নবীন লেখকের প্রথম লেখা হওয়ায় এটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে অতিথি লেখকের নিজের ব্লগে নেওয়া হল না। ভবিষ্যতে কপিরাইটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ রইলো।
সচলায়তনে স্বাগতম। সচল থাকুন, সচল রাখুন।
আমরা কেন পেছনে...দায়ী কি শুধুই আমরা নাকি পৃথিবীর মোড়লরা চায়না এদেশে শান্তি আসুক...
এই লেখাটি ও আমার লেখা...কিন্তু শুরুতে নাম লিখতে হয় সেটা ও আমি জানতাম না। আসলে ইংরেজী ওয়েব পেজ দেখতে দেখতে এখন মনে হয় বাংলায় বুঝতেছিনা।
দীর্ঘদিনের অভ্যাস এত সহজে যাবে কিভাবে। অবশ্যই লিখব সময় করে, প্রীতিলতা পোদ্দার, বাঘা যতিন কে নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। প্রথম বার ভুল করেছি সবাই হয়তো মাফ করে দিলো এর পর ভুল গুলো ঠিক করতে হবে, বিশেষ করে লিংক।
আশা করছি ভুল গুলো শোধন করে খুব তারাতারি ফিরে আসব।
গরীব
সাউথ কোরিয়া
প্রীতিলতা পোদ্দার কে জানি না, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কথা জানি।
ইতিহাস নিয়ে কোনো কিছু লিখতে গেলে খুব খুব সতর্ক থাকা উচিত। নাহলে খামাখা হাস্যাষ্পদ হবেন।
আপনার লেখায় রেফারেন্স দেখার আগ্রহ ব্যক্ত করছি। নাহলে কোত্থেকে প্রীতিলতা পোদ্দার ধরে নিয়ে আসবেন, কে জানে!
"হল অভিরামের দ্বীপান্তর মা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি" - এই অভিরাম কুমিল্লার সন্তান।
**********************
"যুগান্তর"-এর কর্মীদের ঈমান নিয়ে কোন সন্দেহ না থাকলেও সংগঠনটির উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কিঞ্চিত দ্বিধা আছে। একে "অনুশীলন"-এর সাথে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করা নিয়েও দ্বিধা আছে। বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য যারা উঠে পড়ে লেগেছিলেন তাদের মধ্যে "যুগান্তর" গ্রুপ অন্যতম। লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার উদ্দেশ্যও তাই ছিল। দেবী কালীর প্রতিমার পায়ে বুকের রক্ত দিয়ে শপথ করার ব্যাপারটি এর সদস্যদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এদের ব্যাপারে হিন্দু মৌলবাদী আচরণের অভিযোগ ওঠে। ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগের ব্যাপারে কিন্তু এই গোষ্ঠীর (যুগান্তর তখন বিলুপ্ত) আচরণ পুরোই বিপরীত। তাহলে দেখা যাচ্ছে জাতীয়তাবাদের ধর্মীয় বা শ্রেণীচরিত্রটিও ফেলনা নয়। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরূদ্ধে লড়াই করা বীরদের জাতীয় বীর মানতে আমার আপত্তি নেই কিন্তু তাদের কারো মধ্যে বা তাদের সংগঠনে মৌলবাদ বাসা বাঁধলে তা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ১৯৭১-এর পরেও কিন্তু কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধার এমন পরিবর্তিত রূপ আমরা দেখেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের কিন্তু দ্বিধা নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন