আমার তেমন একটা সাধ আহ্লাদ নাই বল্লেই চলে। পেলে ভালো, না পেলেও সমস্যা নাই, এই টাইপ। তার ওপর অলসের শিরোমনি। এত অলস যে আলসেমির ওপর অতি সহজেই পি এইচ ডি করতে পারি, করি না শুধু আলসেমির কারনে। এই সমস্ত গূঢ় কারনে জীবনে অনেক কিছু করা হয় না।
যেমন গত পাঁচ বছর ধরে আম খাওয়া হয় না। এদেশি সুপারমারকেটগুলিতে পাওয়া যায় না এমন জিনিসের তালিকা ছোটো। আমও পাওয়া যায়, তবে তা পাকিস্তানি। কাজেই কথা আর এগোয় না। যে পাড়ায় থাকি, সেখান থেকে দেশী দোকানে যেতে কম-সে-কম ঘন্টাখানেক লাগে। আমেরিকার সচলরা হয়তো ভাবছেন, এ আর এমন কি! সচল জুনিয়রদেরকে স্কুলে আনা-নেয়া করতেই তো আমাদের এক ঘন্টার ওপরে লেগে যায়! কিন্তু ইউরোপিও সচলরা একমত হবেন যে ভুরিভোজ কিংবা হৃদয়ের ব্যাপার জড়িত না থাকলে আমরা সচরাচর এতদূর যাই না। এরমধ্যে হঠাত্ করে একদিন কোন এক কারনে নিজেকে দেশী এলাকায় আবিস্কার করলাম। এতদূর এসে দেশী খাবার না কেনার বান্দা আমি না, কাজেই "দি গ্রেট সোনার বাংলা সুপারস্টোর" -এ পাড়ি জমালাম। সেই দোকানে প্রাণ তেঁতুলের চাটনী থেকে শুরু করে লুলু পাগলার জীবনী, কি নাই! আর এক পাশে ম'ম' গন্ধ বিলিয়ে পড়ে আছে বাক্স-বাক্স আম। অতি কষ্টে কামানো টাকার বেশ অনেকখানি খরচ করে কিনে ফেললাম এক বাক্স।
ঝটাপট দুটা আম খেয়ে ফেললাম। আহ্ আজ রাতে আর হাঁড়ি না চড়ালেও চলবে ভেবে যেই মাত্র শোবার ঘরের দিকে যাব ঠিক তখনই চোখে পড়ল বাক্সের কোনায়, অতি স্পষ্ট অক্ষরে লেখা "প্রডাক্ট অফ পাকিস্তান"। আমের গন্ধে মাতাল হয়ে এই কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছি, বোকার মত ধরেই নিয়েছি দেশী দোকানে দেশী আমই বেঁচবে। কিন্তু ঘটনা যখন উদ্ঘআটন হয়েই গেছে তখন তো আর জেনে-শুনে পাকিস্তিনি আম খেতে পারি না। আবার এদিকে আমের "গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই" অবস্থা। ফেলেও দিতে পারি না, হাজার হোক, এতটা অপচয়!
ফোন করলাম এক বন্ধুকে।
"আম খাবি?"
"ব্যাপার কী? কোনোদিন তো যেচে কিছু খাওয়াস না?" কথা ঠিক, গ্যাটের পয়সা খরচ করে লোকজন খাওয়ানোর সুনাম বন্ধুমহলে নাই।
"না, প্রচুর আম কিনে ফেলেছি। এখন দেখা যাচ্ছে এগুলি পাকিস্তানি আম। আমি আবার পাকিস্তানি কোনো কিছু কিনি বা খাই না..."
"ওরে ব্যাটা! ভন্ডামির আর জায়গা পাও না, না? নিজে দেশপ্রেমিক সাধু সেজে আমাকে পাকিস্তানি আম সাধতে এস্ছিস, লজ্জা করে না তোর?আমি পাকিস্তানি আম খাই কে বল্ল তোকে? ব্যাটা দেশপ্রেম কি তোর একলার?"
"না মানে, মনে কর অবিভক্ত ভারতবর্ষের আম..."
"একদম ফাইজলামি করবি না। অবিভক্ত ভারতবর্ষের আম! তাইলে তুই খা!" এই যুক্তির সাথে তর্ক করতে পারলাম না। মাঝখান থেকে বন্ধুটির বাড়ির ঈদের দাওয়াতটা হাতছাড়া হয়ে গেল!
এদিকে যত দিন যাচ্ছে, আমের গন্ধ বেড়েই চলেছে। রান্নাঘরে গেলেই দশটা আম আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। ওজনই কমে গেলো খানিকটা, লোকে ভাবলো বাহ্! ধর্মে-কর্মে মতি হয়েছে, রোজা রেখে শুকিয়ে গেছে বেচারা! আরো ক'টা বন্ধুকে সাধলাম, কেউ পাকিস্তানি আম নিতে রাজি না! এমন অবস্থা হলো, কাউকে এমনি ফোন করলেও বলে, "এ্যই, পাকিস্তানি আম গছাতে ফোন করছিস না তো?" কী দুঃসহ যন্ত্রণা!
গতরাতে মা'র ফোন পেলাম। গলার স্বর কঠিন।
"তোর কি মাথা খারাপ হলো নাকি? এসব কী শুনছি?"
অতি সাবধানে লুকিয়ে রাখা নানা কুকান্ডের কোনটা মা'র কানে পৌঁছালো এবং তা কীভাবে সামাল দেয়া যায়, এই জটিল অংক যখন মাথায় ভাজছি তখন মা বল্ল-
"তুই নাকি একগাদা পাকিস্তানি আম কিনে মানুষকে সেধে বেড়াচ্ছিস? এটা কী ধরনের পাগলামি?"
ভাই, কানে ধরেছি, আমি নিজ হাতে পৌঁছে দিয়ে আসবো, যেকোনো শহরে, সে যত দূরই হোক, এই আমের যন্ত্রণা থেকে বাঁচান! মাইনক্যার চিপায় আর কয়দিন থাকা যায়?
মন্তব্য
হাহাহা... মজা লাগলো
আপনার নামটা জানা হলো না।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
রেনেট ভাই, অনেক ধন্যবাদ, পড়ার জন্য, কমেন্টের জন্য। নামটা ভুল করে দেয়া হয় নাই।
আহির ভৈরব।
দারুন। আমি নিজেও চেষ্ঠা করি পাকিস্তানী প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলতে।
ধন্যবাদ শান্ত।
আশা করি পাকিস্তানি জিনিস এড়াতে আমার চেয়ে বেশী সফল আপনি!
আহির ভৈরব
হাহ হাহ হাহ... মজা পেলাম, ভাই। নাম দিলেন না যে?
ইশতি ভাই, একটু মজা দিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
বর্তমান মানসিক অবস্থার কারনে নামটাও মাইনক্যার চিপায়...
মজা পেলাম, খুব ঝরঝরে লেখা, আমের মতোই উপাদেয়। তা বলে শুধু গ্রীষ্মে ফলালে হবে না, সারা বছর ধরে লিখুন।
অনেক ধন্যবাদ পাঠক ভাই।
সারা বছর তো লিখতেই চাই, কিন্তু এমন আনাড়ি, যে এক লেখা টাইপ করতে সপ্তাহ পার! লেখা একবার জমা দিয়ে দেখি অর্ধেক লেখা উধাও! আবার মডুদের কে "দয়া কর বাপ" ই-মেইল লিখে সে লেখা বাতিল করা গেল। পরেরবার লেখা পুরাটা দিলাম তো নাম দিতে গেছি ভুলে।
ফোনেটিকালি টাইপ করি, অ বা য এখনও কী-বোর্ডে খুঁজে পেলাম না। আর ভাই "খিও" কেমনে টাইপ করে? সারা লেখায় একটাও "খিও" যুক্ত শব্দ ব্যাবহার করতে পারলাম না, এ দুঃখ জাতির।
ক্ষ লিখতে পারেন না! আপনের তো ভাই জীবনটাই বৃথা
'ক্ষ' লিখতে হইলে ফোনেটিকে k+S চাপবেন, হয়ে যাবে
আরে বাঃ, এই তো পারছি! ক্ষ ক্ষ ক্ষ!
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
হা হা হা
মজা পাইলাম।
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ আপা, পড়ার জন্য, আমাকে জানাবার জন্য। প্রতিষ্ঠিত সচলদের এইটা একটা বিরাট গুন, অতিথিদের লেখা আপনারা পড়েন আর জানিয়েও যান যে পড়েছেন। খুব ভালো লাগে, উত্সাহ যোগায়।
হাহা...যতদিন পর্যন্ত সেজান ম্যংগো জুসের দেশের নামটা খেয়াল করে দেখিনি ততদিন পর্যন্ত খুব ভক্ত ছিলাম। জানার পর থেকে সব গেলো।
আপনার লেখা পড়ে খুব মজা পেলাম।
হা হা সব গেলো! ঠিকই। তবে প্রাণের শরবত নাকি বেশ ভালো? খাওয়া হয়নি কখনও।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
হা হা হা ,খুবই মজা পেলাম আপনার পাকিস্তানী আমের কাহিনী শুনে। শেষ পর্যন্ত আমগুলোর কি পরিণতি হয়েছিল ?
আপনি কি কিছুদিন আগে তান্দুরী রন্ধনের গল্পটা লিখেছিলেন ?
-----------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
অশেষ ধন্যবাদ ভাই।
শেষ পর্যন্ত আমগুলি আমার নিচতলার চৈনিক প্রতিবেশীকে গছানো গেছে। তাদের আবার পাকিস্তানি জিনিসে আপত্তি নাই।
না ভাই তন্দুরী আমার লেখা না।
"অবিভক্ত ভারতবর্ষের আম", হাহাহাহা!
"Life happens while we are busy planning it"
হা হা, কী করব ভাই, বিপদে পড়ে মরিয়া হয়ে শেষ কোপ মেরেছিলাম, কোনো লাভ হয় নাই।
লেখাটা পড়ে মজা পেলাম
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ নিবিড়। পড়া/লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
দারুণ লেখা। খুব মজা পেলাম। নামটা জানালেন না যে..
প্রহরী ভাই, দারুণ বল্লেন, দাড়ান, একটা লাফ দিয়া আসি, আমার তো আর খুশী ধরে না!
অনেক ধন্যবাদ বদ্দা। আপনার কমেন্ট দেখেই ভেবেছি, এই রে, কতগুলি বানান যেন ভুল লিখেছি, সেগুলি বোধ হয় ধরিয়ে দেবেন।
বাংলাদেশ থেকে আম আমদানী করে না কেনো, এটা একটা বিরাট রহস্য।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সেটাই। খেত (ভাই খিও কেমনে লেখে?) নষ্ট করে চিংড়ি চাষ, আমদানী করা গেলে আম কেনো করা হয় না!
kSh = ক্ষ
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ধন্যবাদ রেশনুভাই।
যেই ক্ষ লেখা শিখলাম, মাথা থেকে সব ক্ষ-যুক্ত শব্দ উধাও! কী ক্ষান্ড
দেশের বাজারেই পাকি আমে ভর্তি থাকে অফ সিজন। আর সেটাতো বৈদেশ।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ব্যাপক মজা পাইলাম
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
ব্যাপক ধন্যবাদ ভাইজান - পড়বার জন্য, কমেন্টের জন্য, ক্ষ-র জন্য।
হা হা হা হা... আপনি তো দারুণ মজা করে লিখতে পারেন
আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অশেষ ধন্যবাদ জান্তা ভাই, আপনারা সচলরা এত উত্সাহ যোগান যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, মনে হয় লিখে ফেলি! কী আছে জীবনে!
লেখা মজার! াপনার নিকটাও পছন্দ হলো!
ধন্যবাদ স্নিগ্ধাদি।
নামটা প্রিয় রাগের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখাটি পড়ে মজা পেলাম......
অনেক ধন্যবাদ, পড়ার জন্য, কমেন্টের জন্য
মজার লেখা ভাই, ভালো লাগসে। আর পনির নিয়া একবার একটা লেখা পড়সিলাম- নামটা মনে নাই কার। সেখানে এক ব্যাটা গন্ধওলা পনির নিয়া দিশেহারা হয়ে যায়... আপনার লেখা পড়ে ঐ গল্পটা আবার পড়তে মঞ্চাইতেসে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ধন্যবাদ ভাই। পনিরের লিংকটা পেলে একটু দিয়েন, পড়তে আমারও মঞ্চায়।
বিয়াপক মজা পাইলাম!
------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বিয়াপক ধন্যবাদ!
হীরক রাজার দেশ আমারও প্রিয় ছবি। আপনার সিগনেচারটা দেখে মজা লাগলো।
নতুন টার্ম পেলাম, 'অবিভক্ত ভারতবর্ষের আম'
ধন্যবাদ ভাই, তবে জীবনের প্রতি মায়া থাকলে টার্মটা বুঝে-শুনে ব্যবহার কইরেন, আমার তো মার খাওয়ার যোগাড় হয়েছিল
আপনি তো ভাই নতুন টার্ম এ্যাড করলেন-'অবিভক্ত ভারতবর্ষের আম'। এইবার আমাদের দেশের ক্ষুদে রাজাকারও বলবে-'আমরা অবিভক্ত ভারতবর্ষের বীজ' পাকিস্তানি না।
রেনেসাঁ
সার্সে! ভাই এর দায়-দায়িত্ব আমার ঘাড়ে দিলে কেম্নে কি?
আপনার লেখা পড়ে মজা পেলাম
*****
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
অনেক ধন্যবাদ বিপ্রতীপদা, পড়ার জন্য। বুড়া আঙ্গুলের জন্য ডবল ধন্যবাদ
আহির ভাই, ইউরোপে থেকে আপনি আমাকে চোখে দেখলেন না? নীচের চৈনিককে দিয়ে দিলেন!!! মাগনা পেলে আমি সমস্ত দেশের জিনিস খাই, ভবিষ্যতের জন্য মনে রাইখেন।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
হায় হায়, এরশাদাদুর বান্ধবীকে হাতে রাখার কী দুর্দান্ত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল
এই ভুল আর জীবনে হবে না আপু!
নতুন মন্তব্য করুন